পঙ্কজ কুমার মল্লিক (জন্ম: ১০ মে, ১৯০৫ — মৃত্যু: ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও অভিনেতা। তিনি বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রথম যুগের এক অগ্রণী সঙ্গীত পরিচালক ও নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতেও তার সবিশেষ অবদান ছিল।[1][2][3][4]
১৯৭০ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।[5] ১৯৭২ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র সম্মাননা হিসেবে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত করে।[4][6]
প্রথম জীবন
১৯০৫ সালে কলকাতায় পঙ্কজ কুমার মল্লিকের জন্ম। তাঁর পিতার নাম মণিমোহন মল্লিক ও মায়ের নাম মনোমোহিনী দেবী। মণিমোহনের সঙ্গীতের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। পঙ্কজ কুমার দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেন। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে তিনি পড়াশোনা শেষ করেন।[7] এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অর্থাৎ দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। এরফলে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। পরে রবীন্দ্রনাথের স্নেহের পাত্রে পরিণত হন। অল্পকালের মধ্যেই পঙ্কজ কুমার রবীন্দ্রসঙ্গীতের এক অগ্রণী শিল্পীর খ্যাতি অর্জন করেন।[1][8][9]
কর্মজীবন
১৯২৬ সালে মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি "নেমেছে আজ প্রথম বাদল" গানটি ভিয়েলোফোন কোম্পানি থেকে রেকর্ড করেন।[1]
১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রলয়নাচন নাচলে যখন ও তোমার আসন শূন্য আজি তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড।[10] রবীন্দ্রসঙ্গীতকে জনপ্রিয় করে তোলার কাজেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের খেয়া কাব্যগ্রন্থের শেষ খেয়া কবিতাটিতে ("দিনের শেষে ঘুমের দেশে") সুর সংযোজন করে গেয়েছিলেন।
১৯২৭ সাল থেকে তিনি কলকাতার ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনে কাজ শুরু করেন। এই সংস্থা পরে অল ইন্ডিয়া রেডিও (এআইআর) (বর্তমানে আকাশবাণী কলকাতা) নামে পরিচিত হয়। এখানে তার সহকর্মী ছিলেন রাইচাঁদ বড়াল। প্রায় পঞ্চাশ বছর তিনি আকাশবাণীতে সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।[1][3]
১৯৩১ সাল থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর পঙ্কজ কুমার বাংলা, হিন্দি, উর্দু ও তামিল চলচ্চিত্রে অবদান রাখেন। তিনি কুন্দন লাল সায়গল, শচীন দেব বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, আশা ভোঁসলে প্রমুখ সঙ্গীত পরিচালক ও শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। চলচ্চিত্রে তিনি কুন্দন লাল সায়গল, প্রমথেশ বড়ুয়া ও কানন দেবীর মতো শিল্পীদের সঙ্গে অভিনয়ও করেন। নীতীন বসু ও রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠসংগীতের প্রবর্তন করেছিলেন।[3][9]
ভারতের প্রথম যুগের ফিল্ম স্টুডিও নিউ থিয়েটার্সের সঙ্গে তিনি ২৫ বছর যুক্ত ছিলেন।[3] ১৯৩১ সালে তিনি মহিষাসুরমর্দিনীর অনুষ্ঠানটির সুর দেন।
চলচ্চিত্রের তালিকা
সাল | চলচ্চিত্র |
---|---|
১৯৩১ | চাষির মেয়ে |
১৯৩৩ | ইহুদি কি লেড়কি |
১৯৩৬ | মঞ্জিল |
১৯৩৬ | মায়া |
১৯৩৬ | কারোড়পতি |
১৯৩৬ | গৃহদাহ |
১৯৩৬ | দেবদাস |
১৯৩৭ | মুক্তি |
১৯৩৭ | দিদি |
১৯৩৭ | বাড়ি বেহেন |
১৯৩৮ | জীবন মরণ |
১৯৪৮ | ধর্তি মাতা |
১৯৩৮ | দেশের মাটি |
১৯৩৮ | অভিজ্ঞান |
১৯৩৮ | অভাগিনী |
১৯৩৯ | কপালকুণ্ডলা |
১৯৩৯ | দুশমন |
১৯৩৯ | বড়ি দিদি |
১৯৪০ | জিন্দেগি |
১৯৪০ | নর্তকী |
১৯৪০ | ডাক্তার |
১৯৪২ | মীনাক্ষী |
১৯৪৩ | দিক্ষুল |
১৯৪৩ | কাশীনাথ |
১৯৪৪ | মেরি বেহেন |
১৯৪৫ | দুই পুরুষ |
১৯৪৭ | রামের সুমতি |
১৯৪৮ | প্রতিবাদ |
১৯৪৯ | মঞ্জুর |
১৯৫০ | রূপকথা |
১৯৫২ | জলজলা |
১৯৫২ | মহাপ্রস্থানের পথে |
১৯৫২ | যাত্রীক |
১৯৫৪ | চিত্রাঙ্গদা |
১৯৫৫ | রাইকমল |
অন্যান্য সম্মাননা
- ভারতীয় ডাকবিভাগ পঙ্কজ মল্লিকের জন্ম শতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ২০০৬ সালে একটি স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে।[11]
- ভারতের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন চ্যানেল দূরদর্শনও একই বছরের ১০ মে তদুপলক্ষ্যে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রচার করে।
- ১৯৫৯ সালে ভরতনাট্যম খ্যাত বিশিষ্ট চলচ্চিত্রাভিনেত্রী বৈজয়ন্তীমালা'র ন্যায় শীর্ষতারকাদের সাথে পঙ্কজের অনুষ্ঠান দেশব্যাপী চ্যানেলটির মাধ্যমে প্রচারিত হয়।[12]
- জন্মশতবর্ষে ২০০৫ সালে কলকাতায় তাঁর বাসভূমিতে পঙ্কজ মল্লিক সংগীত ও আর্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.