নুরুল ইসলাম নাহিদ

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

নুরুল ইসলাম নাহিদ

নুরুল ইসলাম নাহিদ (জন্ম: ৫ জুলাই ১৯৪৫) বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ। তিনি সিলেট-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যশেখ হাসিনার দ্বিতীয় ও তৃতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।[১][২]

দ্রুত তথ্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ...
নুরুল ইসলাম নাহিদ
Thumb
২০১১ সালে নুরুল
বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৬ জানুয়ারি ২০০৯  ৬ জানুয়ারি ২০১৯
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা
পূর্বসূরীহোসেন জিল্লুর রহমান (উপদেষ্টা)
উত্তরসূরীদীপু মনি
সিলেট-৬ আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১২ জুন ১৯৯৬  ১ অক্টোবর ২০০১
পূর্বসূরীশরফ উদ্দিন খসরু
উত্তরসূরীসৈয়দ মকবুল হোসেন
কাজের মেয়াদ
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮  ৬ আগস্ট ২০২৪
পূর্বসূরীসৈয়দ মকবুল হোসেন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1945-07-05) ৫ জুলাই ১৯৪৫ (বয়স ৭৯)
দক্ষিণ নয়াগ্রামে, বিয়ানীবাজার, সিলেট, ব্রিটিশ ভারত
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
অন্যান্য
রাজনৈতিক দল
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
দাম্পত্য সঙ্গীজোহরা জেসমিন
সন্তানদুই মেয়ে
পিতামাতামােঃ আকদ্দস আলী (পিতা)
জয়তুরা খাতুন (মাতা)
শিক্ষাবিএ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মুরারিচাঁদ কলেজ
বন্ধ

২০২০ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।

প্রারম্ভিক জীবন

নুরুল ইসলাম নাহিদ ৫ জুলাই ১৯৪৫ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজারের দক্ষিণ নয়াগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মােঃ আকদ্দস আলী ও মাতার নাম জয়তুরা খাতুন। তিনি কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ হাইস্কুল, সিলেট এমসি কলেজঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন।[৩]

তার স্ত্রী জোহরা জেসমিন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। এই দম্পতীর দুই মেয়ে, নাদিয়া নন্দিতা ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও নাজিয়া সামানথা ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।[৪]

রাজনৈতিক জীবন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

নাহিদের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে ষাটের দশকের শুরুতে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী হিসেবে। তিনি ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সহ ঐ সময়কালের সকল রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।[৪]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে গেরিলা বাহিনী সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তার ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ‘ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ এর স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য তিনি।[৪]

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি

তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়াও এই ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।[৩]

১৯৯৩ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন।[৪]

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সিলেট-৬ আসন থেকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

১৯৯৪ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক।

১২ জুন ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য মনোনীত হন।[১]

সপ্তম জাতীয় সংসদের তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।

২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য মনোনীত হন।[৫]

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য মনোনীত হন।[৬]

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য মনোনীত হন।[৭]

তিনি ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে[৩] ৬ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।[৪]

একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।

তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।[৮]

তিনি ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৬ আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৯] দ্বাদশ জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তিনি সভাপতি।

৫ আগস্ট ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে গেলে পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙ্গে দিলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।[১০][১১]

সমালোচনা

২০১৩ এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটে। এসকল ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নাহিদ সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হন।[১২] নাহিদ পরবর্তীকালে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের শাস্তির বিষয়ে যে বিদ্যমান আইন রয়েছে তা আরো সংশোধনের জন্য ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।[১৩]

২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর এক সরকারি অনুষ্ঠানে নিজের ও মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের দুর্নীতির স্বীকারোক্তি করে নাহিদ বলেন, "আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে সহনশীল হইয়া খাবেন। অসহনীয় হয়ে বলা যায় আপনারা ঘুষ খাইয়েন না, এটা অবাস্তবিক কথা হবে। নানা জায়গায় এ রকম হইছে, সব জায়গাতেই এ রকম হইছে। খালি যে অফিসার চোর, তা না, মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর। এই জগতে এ রকমই চলে আসতেছে।”[১৪][১৫][১৬][১৭]

লেখালেখি

তার লেখা ‘বাঙালি রুখে দাঁড়াও’ (২০০৬), ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, লক্ষ্য ও সংগ্রাম’ (২০০৭), ‘রাজনীতির সুস্থধারা পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম’ (২০০৯), ‘শিক্ষানীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ (২০০৯), বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও গণতন্ত্রের পথ পরিক্রমা (২০১০) সালে প্রকাশিত হয়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য বহু বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক কয়েক শ’ নিবন্ধ বিভিন্ন সময়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি দৈনিক পত্রিকা এবং সাপ্তাহিক পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন।[৩][১৮]

পুরস্কার

শিক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা ও অবদানের জন্য ‘ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস’ বিশ্ব সম্মেলনে ২০১২ সালে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে ‘পরিবর্তনের অগ্রদূত’ আখ্যায়িত করে ‘World Education Congress Global Award for outstanding contribution to Education’ পদকে ভূষিত করা হয়।[১৮]

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.