Loading AI tools
মুঘল সম্রাজ্ঞী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রহমত-উন-নিসা ( ফার্সি: رحمت النساء بیگم ) (মৃত্যু: আনু. ১৬৯১ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর নওয়াব বাঈ নামে অধিক পরিচিত, তিনি মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। নবাব বাঈয়ের বংশপরিচয়ের পরস্পরবিরোধী বিবরণ রয়েছে, তবে তিনি হিন্দু ছিলেন এবং ১৬৩৮ সালে রাজনৈতিক জোটের অংশ হিসাবে আওরঙ্গজেবকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি প্রথম বাহাদুর শাহ সহ আওরঙ্গজেবের প্রথম দুই পুত্রের জন্ম দেন, বাহাদুর শাহ ১৭০৭ সালে মোগল সম্রাট হয়েছিলেন। নবাব বাঈ মুঘল দরবারে অপ্রিয় ছিলেন এবং জীবনের প্রথম দিকেই তিনি স্বামীর অনুগ্রহ হারিয়েছিলেন এবং পরবর্তী জীবনে দুই ছেলে মুহাম্মদ সুলতান এবং মুহম্মদ মুয়াজ্জমের দুর্ব্যবহারের ফলে তাঁর জীবন তিক্ত হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন স্বামী ও সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরে তিনি ১৬৯১ সালে দিল্লিতে মারা যান।
নবাব বাইয়ের বংশপরিচয়ের দুটি বিতর্কিত বিবরণ রয়েছে। [১] একটি বিবরণ অনুসারে, তিনি কাশ্মীরের রাজৌরি রাজ্যের রাজা রাজুর মেয়ে ছিলেন এবং জারাল বংশের লোক ছিলেন। [২] [৩]
তবে মোগল ইতিহাসবিদ কাফি খানের মতে তিনি ছিলেন আবদুল-কাদির গিলানির বংশধর সৈয়দ শাহ মীর নামে এক সাধু সন্তের কন্যা, যিনি রাজৌরীর পাহাড়ে অবসর জীবন যাপন করেছিলেন। রাজৌরীর রাজা এই পবিত্র ব্যক্তির সান্নিধ্য লাভ করে, তাঁকে তাঁর কন্যাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সৈয়দ শাহ মীর মেনে নিয়ে বিভ করেছিলেন এবং তাঁরা এক পুত্র এবং এক কন্যার জন্ম হন। তারপর এই সাধু মক্কায় তীর্থযাত্রায় গিয়েছিলেন, সেখান থেকে তাঁর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। [১] পরে শাহ জাহান যখন রাজার নিকট অর্থ [৩] এবং তাঁর বাড়ির এক কন্যা দাবি করেছিলেন, তখন রাজা তাঁকে এই নাতনী নবাব বাঈকে প্রেরণ করেছিলেন, যিনি তাঁর সৌন্দর্য, সহৃদয়তা এবং বুদ্ধিমত্তার জন্য খ্যাতিযুক্ত ছিলেন। [১] আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে বাহাদুর শাহকে নিজেকে সৈয়দ বলার অধিকার দেওয়ার জন্য তাঁকে এই ভুয়া বংশধর দেওয়া হয়েছিল। [১] [৩]
রাজকীয় হারেমে তাঁকে একাধিক শিক্ষক, শিক্ষয়িত্রী এবং দরবারের আদবকায়দায় দক্ষ ফার্সী মহিলারা ভাষা ও সংস্কৃতি শিখিয়েছিলেন, এবং ১৬৩৮ সালে তিনি আওরঙ্গজেবকে বিয়ে করেছিলেন [১] তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হয়ে উঠেন। বিয়ের পরে তাঁর নাম হয়েছিল রহমত-উন-নিসা। [১]
এক বছর পরে, তিনি আওরঙ্গজেবের প্রথম পুত্র নবাবজাদা মুহাম্মদ সুলতান মির্জার জন্ম দেন। তাঁর জন্ম মথুরায় ২৯ ডিসেম্বর ১৬৩৯ সালে। [১] পরবর্তী আট বছরে তিনি আরও দুটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তারা হলেন প্রিন্স মুহাম্মদ মুয়াজ্জাম মির্জা (ভবিষ্যত সম্রাট বাহাদুর শাহ প্রথম ), এবং কুরআনের হাফেজ, রাজকন্যা বদর-উন-নিসা বেগম । [১]
যদিও তিনি আওরঙ্গজেবের প্রথম পুত্রকে জন্ম দিয়েছিলেন, তবুও তাঁর প্রথম স্ত্রী পার্সিয়ান রাজকন্যা দিলরাস বানু বেগম তাঁর প্রধান সহবাসী ছিলেন এবং তাঁর অধিকতর প্রিয়ও ছিলেন। [৪]
তাঁর ছেলেরা, মুহাম্মদ সুলতান এবং মুহাম্মদ মুয়াজ্জামের দুর্ব্যবহার তাঁর পরবর্তী জীবনকে তিক্ত করেছিল। [১] ১৬৯৯ সালে পর পরের যুদ্ধে তাঁর বড় ছেলে মুহাম্মদ সুলতান, তাঁর চাচা শাহ সুজার সাথে যোগ দেন এবং চাচার মেয়ে গুলরুখ বানু বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে, শীঘ্রই তিনি রাজপুত্রকে ছেড়ে চলে যান এবং [৫] ১৬৬০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর পিতার কাছে ফিরে আসেন। [৫] আওরঙ্গজেবের নির্দেশে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সলিমগড় দুর্গে প্রেরণ করা হয়,[৬] এবং পরে ১৬৬১ সালে গোয়ালিয়র দুর্গে স্থানান্তর করা হয়। [৭]
১৬৬২ সালে, আওরঙ্গজেবের অসুস্থতার সময়, তাঁর বোন রোশনারা বেগম তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নিজের বিশ্বাসী ব্যতীত অন্য কাউকে তাঁকে দেখার অনুমতি দিতেন না। [৮] ভাইয়ের বেঁচে থাকার কোনও আশা নেই বলে বিশ্বাস করে রোশনারা রাজ্যের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নবাব বাঈ এই বিষয়টি জানতে পেরে অভিযোগ করলে, রোশনারা রেগে যান, এবং তাঁর চুল ধরে আওরঙ্গজেবের কক্ষ থেকে বার করে দেন।
১৬৬৯ সালে আবদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি নবাব বাঈয়ের কাছে একটি আবেদন জমা দিয়েছিলেন যে, তার পুত্রকে বরখাস্ত করার পরে আরানডোলের ফৌজদারের পদ তাকে মঞ্জুর করা হোক। তবে বিষয়টি আওরঙ্গজেবের কাছে জমা দেওয়া হলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। [৯]
১৬৭০ সালে, চাটুকাররা, মুহাম্মদ মুয়াজ্জমকে স্ব-ইচ্ছায় এবং স্বতন্ত্রভাবে আচরণের জন্য প্ররোচিত করেছিল। এই বিষয়ে আওরঙ্গজেবের পরামর্শমূলক চিঠিটির কোনও ফল না হওয়ায়, তিনি ছেলের আচরণ সংশোধন করতে, ছেলের কাছে প্রেরণের জন্য নবাববাঈকে দিল্লি থেকে ডেকে পাঠালেন। তিনি ১৬৭০ সালের এপ্রিলে সিকান্দ্রায় পৌঁছেছিলেন, সেখানে মুহাম্মদ আকবর, বখশিমুলক আসাদ খান এবং বাহরামন্দ খান তাঁকে রাজকীয় হারেমের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। [৭] ১৬৭০ সালের মে মাসে তিনি আওরঙ্গাবাদে যাত্রা শুরু করেন এবং পুত্র মুহাম্মদ সুলতানের সাথে দু'দিন গওয়ালিয়ায় কাটানোর আদেশ পান। কিছুদিন সেখানে থাকার পরে, সারবুলান্দ খান তাকে মুহাম্মদ মুয়াজ্জামের কাছে নিয়ে যান। [৭]
১৬৮৬ সালে তিনি গোয়ায় বিখ্যাত ইতালীয় লেখক ও ভ্রমণকারী নিকোলাও মানুচির সাথে দেখা করেছিলেন [২] যিনি দাবি করেছিলেন যে বছরে দু'বার নবাব বাঈকে রক্তপাত করেছেন। [১০]
১৬৮৭ সালে মুহাম্মদ মুয়াজ্জাম গোলকোন্ডার শাসক সুলতান আবুল হাসানের সাথে অবাধ্যতা করেছিলেন।। [১১] তাঁর পরামর্শ এবং এমনকি ব্যক্তিগত অনুরোধের কোনও প্রভাব পড়েনি এবং শেষ পর্যন্ত আওরঙ্গজেবের আদেশে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। [১] মুয়াজ্জামের ছেলেরা,[১২] এবং তার প্রথম ও প্রধান স্ত্রী নূর-উন-নিসা বেগমকেও পৃথক কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল। [১৩]
নবাব বাই গিরিখাতের পাদদেশে, ফারদাপুরে একটি সেরাই তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়, এবং আওরঙ্গবাদ শহরতলিতে বাইজিপুরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। [১]
স্বামী ও সন্তানদের থেকে দীর্ঘ বহু বছর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরে, তিনি ১৬৯১ সালের মাঝামাঝি সময়ে দিল্লিতে মারা যান। আওরঙ্গজেব তাঁর কন্যা জিনাত-উন-নিসা সহ সমবেদনা জানাতে মুহাম্মদ মুয়াজ্জামের কাছে এসেছিলেন। [৭]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.