ধর্মনগর
মানববসতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মানববসতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ধর্মনগর (ইংরেজি:Dharmanagar) ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরা জেলার একটি পৌরসভা -শাসিত শহর। ত্রিপুরার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ধর্মনগর। ধর্মনগরকে শান্তির শহরও বলা হয়। ধর্মনগর শহর জুরী ও কাকড়ি নদীর তীরে অবস্থিত। ধর্মনগর শহরের পূর্বের নাম ছিল ফটিকুলী বাজার। ফটিকুলী বাজার ধর্মনগরের মধ্যে সমৃদ্ধ বাজার ছিল। এখানে প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার হাট বসত। রবিবারে খুব একটা লোক সমাগম হয় না বলে রবিবারকে বলা হত ঐ হাটা বাজার, কিন্তু বৃহস্পতিবারের হাট হত খুবই জমজমাট। বৃহস্পতিবারের হাটে কেনাবেচার জন্যে দূর পার্বত্য পল্লী থেকে দের-দিনের পথ পায়ে হেটে উপজাতি ভাই বোনেরা অপরদিকে ব্রিটিশ ভারতের শ্রী-হট্ট জেলার জুরী, ফুলতলা, সমশের নগর, ভানুগাছ, কুলাওরা ইত্যাদি অঞ্চল থেকে অসংখ্য লোকজন কেনা বেচার জন্য আসতেন। সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত হাট চলত। দূর দূরান্তের লোকজন রাত থেকে পরদিন সকালবেলা যে যার বাড়ীতে চলে যেতেন। বর্তমানে ধর্মনগরে হাট বসে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার। ধর্মনগর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে আছে বিখ্যাত দিঘি যার নাম কালী-দিঘী। এই ছোট শহর এর কেন্দ্রস্থল কালী-দিঘী রাতের বেলায় স্থানীয় দোকান এবং কালী মাতার মন্দিরের আলোয় এবং দিঘীর আলোকিত ঝরনায় একটি বিস্ময়কর দৃষ্টিশক্তি করে তোলে, যা দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগে।
ধর্মনগর | |
---|---|
শহর | |
ত্রিপুরা, ভারতে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪.৩৭° উত্তর ৯২.১৭° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | ত্রিপুরা |
জেলা | উত্তর ত্রিপুরা |
উচ্চতা | ২১ মিটার (৬৯ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ৩০,৭৮৫ |
ভাষা | |
• অফিসিয়াল | বাংলা, ককবরক, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৭৯৯২৫০ |
টেলিফোন কোড | ০৩৮২২ |
শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৪.৩৭° উত্তর ৯২.১৭° পূর্ব।[1] সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ২১ মিটার (৬৮ ফুট)।
ভারতের ২০০১ সালের আদম শুমারি অনুসারে ধর্মনগর শহরের জনসংখ্যা হল ৩০,৭৮৫ জন।[2] এর মধ্যে পুরুষ ৫১% এবং নারী ৪৯%।
এখানে সাক্ষরতার হার ৮৫%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৭% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৮৩%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে ধর্মনগর এর সাক্ষরতার হার বেশি। এই শহরের জনসংখ্যার ৯% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
ধর্মনগরের প্রধান ভাষা হল বাংলা। এছাড়াও সিলেটি, হিন্দি, ককবরক, ইংরেজি, মণিপুরি, ভোজপুরি ইত্যাদি ভাষাও শহরে কথিত হয়ে থাকে।
ধর্মনগরে প্রত্যেক ধর্মীয় উৎসব, এই শহরে সর্বাধিক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে থাকে। দুর্গাপূজা ধর্মনগরের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে আশ্বিন-কার্তিক মাসে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দুদের অন্যান্য উৎসবগুলির মধ্যে পয়লা বৈশাখ, রথযাত্রা, ঝুলন যাত্রা, জন্মাষ্টমী, বিশ্বকর্মা পূজা, লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, পৌষ সংক্রান্তি, সরস্বতী পূজা, শিবরাত্রি, দোলযাত্রা, বাসন্তী পূজা, চড়ক পূজা ইত্যাদি এবং অবাঙালি হিন্দুদের উৎসবগুলির মধ্যে দীপাবলি, ছট-পূজা ইত্যাদি সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামি উৎসবগুলির মধ্যে ঈদুল ফিতর, মাহে রমজান, মহরম ইত্যাদি খ্রিষ্টান উৎসবগুলির মধ্যে বড়দিন, গুড ফ্রাইডে ইত্যাদি বৌদ্ধ উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমাও মহাসমারোহে পালিত হয়।
ধর্মনগর শহরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধর্ম স্থান হল: শিব বাড়ি- শ্রীশ্রী দেবাদিদেব শিব মন্দির, শ্রীশ্রী হরি মন্দির, টাউন কালীবাড়ি, রাজবাড়ি- ইসকন মন্দির, নয়াপাড়া- কালীবাড়ি, অফিস টিলা- কালীবাড়ি, শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ মিশন, নিউ মটরস্ট্যান্ড- শ্রীশ্রী ভুবনেশ্বর সাধু ঠাকুর সেবা আশ্রম, পদ্মপুর- শ্রীশ্রী অনুকূল ঠাকুর আশ্রম(সৎ সঙ্গ বিহার), শিব বাড়ি- শ্রীশ্রী রাম ঠাকুর আশ্রম, চন্দ্রপুর- হরি ওম আশ্রম, রেল স্টেশন- শ্রীশ্রী দেবাদিদেব মহাদেব মন্দির ও শ্রীশ্রী হনুমান মন্দির, শ্মশান কালীমন্দির ইত্যাদি। এছাড়া ধর্মনগর পূর্ব বাজারে একটি মসজিদ আছে।
ধর্মনগরে গণ-পরিবহন পরিষেবা দেয় রিকশা, বৈদ্যুতিক রিকশা, অটো, কমান্ডার জীপ ও মিনিবাস। বাস ও ছোট গাড়ি ধর্মনগর শহরের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিকে ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির শহরগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এছাড়া দৈনিক বাস সার্ভিস ধর্মনগর থেকে শিলচর, আগরতলা, শিলং এবং গুয়াহাটি যায়। সরকারী বাস পরিষেবার দায়িত্বে রয়েছে, ত্রিপুরা রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (টি.আর.টি.সি)।
ধর্মনগরে একটি রেলস্টেশন আছে: ধর্মনগর স্টেশন। ধর্মনগরে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া চারটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন, একটি শিলচর থেকে আগরতলা ও আরেকটি আগরতলা থেকে শিলচর যাওয়া-আসা করে। আরেকটি ধর্মনগর থেকে আগরতলা ও আরেকটি আগরতলা থেকে ধর্মনগর যাওয়া-আসা করে।
ধর্মনগরে বিমানবন্দর নেই। ধর্মনগরের নিকটতম বিমানবন্দর শিলচর ও আগরতলা।
ধর্মনগর বিদ্যালয়গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: বীর বিক্রম ইন্সটিটিউশন(বি.বি.আই), উচ্চতর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়(গার্লস স্কুল), দীননাথ নারায়ণী বিদ্যামন্দির(ডি.এন.ভি), রাজবাড়ী উচ্চতর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, পদ্মপুর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, চন্দ্রপুর সরকারি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, নয়াপাড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, গোল্ডেন ভ্যালি স্কুল, হোলিক্রস স্কুল, নর্থ পয়েন্ট স্কুল, শিক্ষা ভবন মন্টেসোরি স্কুল, আই টি আই, পলেটেকনিকেল কলেজ ইত্যাদি এবং ধর্মনগরে একটি ডিগ্রী কলেজ আছে।
ধর্মনগর পুর পরিষদ- শহরের পানীয় জলের প্রধান সরবরাহকারী। কাকড়ি নদী থেকে সংগৃহীত জল হুরুয়া পাম্পিং স্টেশনে পরিশোধিত করে সমগ্র শহরে পানীয় জল হিসেবে সরবরাহ করে। ধর্মনগরে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশন লিমিটেড। ত্রিপুরার দমকল পরিষেবার অধীনে, ধর্মনগরে ১টি দমকল কেন্দ্র রয়েছে। রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে ধর্মনগর মহকুমা হাসপাতাল।
১। C/o Footpath একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যারা ২০১৯ সালের ২০ শে অক্টোবর থেকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাদের সমাজ সেবা মূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
২। Growing Seed একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যা ২০১১ থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজের মাধ্যমে নগরের উন্নতির পথে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
৩। অখণ্ড বিকাশ পরিষদ
৪। ব্লাড ডোনার এ্যাসোসিএশন
৫। বিবেকানন্দ সেবা ন্যাস
৬। রামকৃষ্ণ মিশন
৭। ভারত সেবাশ্রম সংঘ
ধর্মনগরের জনপ্রিয় খেলা ফুটবল, ক্রিকেট ও বাস্কেটবল এছারাও বিভিন্ন খেলার চর্চা রয়েছে।
ধর্মনগরে প্রধান টেলিফোন ও মোবাইল ফোন পরিষেবা সরবরাহকারী হল সরকারি সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল) এবং ভারতী এয়ারটেল, ভোদাফোন ও রিলায়েন্স জিও বেসরকারি সংস্থা। বিএসএনএল সংস্থা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও হাই স্প্রিড ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করে থাকে। (ধর্মনগর- এস.টি.ডি কোড ০৩৮২২)
ধর্মনগর শহরের শ্মশানঘাট একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শ্মশানঘাট। ধর্মনগর শহরের জুরি নদীর তীরে এই শ্মশানঘাট অবস্থিত। শবদাহের জন্য দুইটি চিতা আছে। বর্তমানে এই শ্মশানে দাহকার্যে বৈদ্যুতিক ফেন চালিত চুল্লিও ব্যবহার করা হয়। এই শ্মশানে শ্মশান যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরার অন্যান্য শ্মশানের মতো ধর্মনগর শ্মশানঘাটেও অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন শ্মশানকালী। ধর্মনগরের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে এই শ্মশানে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.