দীর্ঘস্থায়ী বৃক্কীয় রোগ
একটি দুরারোগ্য বৃক্করোগ যাতে ধীরে ধীরে বৃক্কের কর্মক্ষমতা কমে যেতে থাকে উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দীর্ঘস্থায়ী বৃক্কীয় রোগ (ইংরেজি: Chronic Kidney Disease) (CKD) বৃক্কের দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ, যেখানে ক্রমশ কয়েক মাস বা বছর ধরে বৃক্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।[২][৫] প্রথমদিকে, এটি কেবল প্রাণরাসায়নিক অস্বাভাবিকতা হিসেবে প্রকাশ পায় কিন্তু, কালক্রমে, বৃক্কের রেচনমূলক, বিপাকীয় ও অন্তঃস্রাবী কার্যক্রম বন্ধ হতে শুরু করলে বৃক্কীয় বৈকল্যের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে যা সামগ্রিকভাবে ইউরিমিয়া নামে পরিচিত। যখন বৃক্কীয় প্রতিকল্প চিকিৎসা (রিনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি) ব্যতীত মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী (৫ম দশা) তখন এটিকে অন্তিম-দশা বৃক্কীয় রোগ বলে।[১১] প্রথমদিকে কোনো উপসর্গ না থাকলেও পরবর্তীতে প্রকাশিত উপসর্গগুলো হলো পা ফুলে যাওয়া, ক্লান্তি অনুভব করা, বমি হওয়া, ক্ষুধামান্দ্য ও বিভ্রান্তি (কনফিউজন)।[২] বৃক্কের হরমোনের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার সাথে জটিলতার সম্পর্ক আছে, এগুলো হলো উচ্চ রক্তচাপ (প্রায়শই রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম সক্রিয় হওয়ার সাথে সম্পর্কিত), রক্তশূন্যতা ও রিনাল অস্টিওডিস্ট্রফি (বৃক্কীয় অস্থি অপগঠন)।[৩][৪][১২] এ-ছাড়া সিকেডি রোগীদের হৃদ্-বাহসংক্রান্ত (কার্ডিওভাস্কুলার) জটিলতা অনেক বেশি থাকে এবং এতে মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।[১৩]
দীর্ঘস্থায়ী বৃক্কীয় রোগ | |
---|---|
প্রতিশব্দ | দীর্ঘমেয়াদি বৃক্কীয় বৈকল্য, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি), ক্রনিক রিনাল ফেইলিউর।[১] |
![]() | |
দীর্ঘস্থায়ী বৃক্কীয় রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির বৃক্কের চিত্র। | |
বিশেষত্ব | বৃক্কবিদ্যা (নেফ্রোলজি) |
লক্ষণ | প্রারম্ভিক: থাকে না[২] পরবর্তী: পা ফুলে যাওয়া, ক্লান্তি লাগা, বমি হওয়া, ক্ষুধামান্দ্য, বিভ্রান্তি (কনফিউজন)[২] |
জটিলতা | হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা[৩][৪] |
স্থিতিকাল | দীর্ঘস্থায়ী[৫] |
কারণ | ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস (বৃক্কপিণ্ডপ্রদাহ), বহুস্থলী বৃক্কীয় রোগ[৫][৬] |
ঝুঁকির কারণ | জিনগত রোগপ্রবণতা, নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থা |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | রক্ত পরীক্ষা, মূত্র পরীক্ষা[৭] |
চিকিৎসা | রক্তচাপ, রক্তের গ্লুকোজ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধ, বৃক্ক প্রতিস্থাপন, বৃক্কীয় প্রতিকল্প চিকিৎসা (রিনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি)[৮][৯] |
সংঘটনের হার | প্রায় ৮৫ কোটি (২০১৯)[১০] |
মৃতের সংখ্যা | ১২ লাখ (২০১৫)[৬] |
দীর্ঘস্থায়ী বৃক্কীয় রোগের কারণগুলো হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস (বৃক্কপিণ্ডপ্রদাহ) ও বহুস্থলী বৃক্কীয় রোগ (পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ)।[৫][৬] এই রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।[২] রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করে প্রাক্কলিত বৃক্কপিণ্ডীয় পরিস্রাবণ হার (ই-জিএফআর) নির্ণয় ও মূত্র পরীক্ষা করে অ্যালবিউমিন পরিমাপ করা হয়।[৭] অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড ও বৃক্কীয় বায়োপসি (জৈব কলাচ্ছেদন) করা যেতে পারে।[৫] রোগটি কোন দশায় আছে তা নির্ণয়ের জন্য রোগের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি দশা নিরূপণ পদ্ধতি রয়েছে।[১৪][১৫]
ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের নিয়মিত স্ক্রিনিং করাতে হবে।[৭] প্রারম্ভিক চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের গ্লুকোজ ও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ গ্রহণ।[৯] রক্তচাপ কমানোর জন্য ব্যবহৃত প্রথম সারির ওষুধ হলো অ্যানজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটর (অ্যানজিওটেনসিন রূপান্তরক উৎসেচক সম্বাধক) বা অ্যানজিওটেনসিন II রিসেপ্টর অবরোধক কারণ এগুলো বৃক্করোগের অগ্রসরতা ধীর করে দেয় এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।[১৬] লুপ ডাইইউরেটিক ফোলা নিয়ন্ত্রণে ও প্রয়োজন হলে আরও রক্তচাপ কমাতে ব্যবহৃত হয়।[৯][১৭][১৮] এনএসএআইডি-জাতীয় ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা উচিত।[৯] অন্যান্য সুপারিশকৃত পদক্ষেপগুলো হলো সক্রিয় থাকা, কিছু পথ্যসংক্রান্ত পরিবর্তন যেমন খাদ্যে কম লবণ গ্রহণ ও পরিমিত প্রোটিন খাওয়া।[৯][১৯] রক্তশূন্যতা ও অস্থিরোগের জন্য চিকিৎসা লাগতে পারে।[২০][২১] গুরুতর অবস্থার ক্ষেত্রে হিমোডায়ালিসিস (ঝিল্লিক রক্তবিশ্লেষণ), পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস (অন্ত্রাবরকীয় ঝিল্লিবিশ্লেষণ) বা বৃক্ক প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়।[৮]
২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮৫ কোটিরও বেশি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী বৃক্কীয় রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন,[১০] ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৫ কোটি ৩০ লাখ (তন্মধ্যে ৪১ কোটি ৭০ লাখ নারী ও ৩৩ কোটি ৬০ লাখ পুরুষ)।[১][২২] ২০১৫ সালে প্রায় ১২ লাখ মানুষ এই রোগে মারা গিয়েছিল, ১৯৯০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৯০ হাজার।[৬][২৩]
কারণ
রোগ | শতকরা হার | মন্তব্য |
---|---|---|
ডায়াবেটিস | ২০-৪৫% | বিস্তর জাতিগত ও ভৌগোলিক পার্থক্য বিদ্যমান |
ইন্টারস্টিশিয়াল রোগ | ২০-৩০% | ওষুধ দ্বারা, রিফ্লাক্স নেফ্রোপ্যাথি |
গ্লোমেরুলার রোগ | ১০-২০% | সবচেয়ে বেশি হয় IgA নেফ্রোপ্যাথি |
উচ্চ রক্তচাপ | ৫-২০% | অন্য কোনো প্রাথমিক বৃক্কীয় রোগের কারণে হতে পারে |
সিস্টেমিক প্রদাহমূলক রোগ | ৫-১০% | সিস্টেমিক লুপাস এরিথিম্যাটোসাস, ভাস্কুলাইটিস |
রেনোভাস্কুলার রোগ | ৫% | অধিকাংশই অ্যাথেরোম্যাটাস |
জন্মগত ও বংশীয় রোগ | ১০% | পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ, অ্যালপোর্ট সিনড্রোম |
অজানা | ৫-১০% |
২০১৫ সালের ঘটনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে সিকেডির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো বহুমূত্ররোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ও গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস (বৃক্কপিণ্ডপ্রদাহ)।[২৪] উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রতি পাঁচজনে একজন ও বহুমূত্ররোগে আক্রান্ত প্রতি তিনজনে একজন দীর্ঘস্থায়ী বৃক্কীয় রোগে ভুগছেন। যদি কারণ জানা সম্ভব না হয় তাহলে তাকে ইডিয়োপ্যাথিক (স্বয়ম্ভূত) বলে।[২৫]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.