উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
তাপ সঞ্চালন হলো তাপের স্থান পরিবর্তন, যা সর্বদা উচ্চ তাপমাত্রা বিশিষ্ট স্থান থেকে নিম্ন তাপমাত্রা বিশিষ্ট স্থানে পরিবাহিত হয়।
তাপ তিনটি পদ্ধতিতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হতে পারে। যথা:
যে পদ্ধতিতে পদার্থের অণুগুলো তাদের নিজস্ব স্থান পরিবর্তন না করে শুধু স্পন্দনের মাধ্যমে এক অণু তার পার্শ্ববর্তী অণুকে তাপ প্রদান করে পদার্থের উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে তাপ সঞ্চালিত করে সেই পদ্ধতিকে পরিবহন বলে। তাপ পরিবহনের জন্য জড় মাধ্যমের প্রয়োজন। এ পদ্ধতিতে পদার্থের উষ্ণতর অণুগুলো তাপ গ্রহণ করে নিজের অবস্থানে থেকে স্পন্দিত হতে থাকে। এ স্পন্দনের মাধ্যমে উত্তপ্ত অণুগুলো পার্শ্ববর্তী শীতল অণুগুলোকে তাপ প্রদান করে, সেগুলো উত্তপ্ত হয়ে আবার তাদের পার্শ্ববর্তী অণুগুলোতে তাপ সঞ্চালিত করে। যে মাধ্যমের অণুগুলো যত বেশি সুদৃঢ় সেখানে পরিবহন তত বেশি হয়ে থাকে। কঠিন পদার্থের মধ্যদিয়ে তাপের পরিবহন সবচেয়ে বেশি হয়, তরলে তার চেয়ে কম, বায়বীয় পদার্থে অত্যন্ত কম এবং শূণ্যস্থানে কোন পরিবহন হয় না।[১] যেমন- একটি ধাতব দণ্ডের এক প্রান্ত আগুনে অন্য প্রান্ত হাতে ধরে রাখলে কিছুকক্ষণ পরেই হাতে বেশ গরম বোধ হয়। দণ্ডের যে প্রান্ত আগুনের মধ্যে আছে সেই অংশের অণুগুলো আগুন থেকে তাপ গ্রহণ করে নিজের অবস্থানে থেকে স্পন্দিত হতে থাকে। এই স্পন্দনের মাধ্যমে উত্তপ্ত অণুগুলো পার্শ্ববর্তী শীতল অণুগুলোকে তাপ প্রদান করে। সেগুলো উত্তপ্ত হয়ে আবার তাদের পার্শ্ববর্তী অণুগুলোতে তাপ সঞ্চালিত করে। এভাবে তাপ দণ্ডের উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে সঞ্চালিত হওয়ার পদ্ধতিই পরিবহন।
যে পদ্ধতিতে তাপ কোন পদার্থের অণুগুলোর চলাচলের দ্বারা উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে সঞ্চালিত হয় তাকে পরিচলন বলে।
এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যম আবশ্যকীয়। বিশেষত তরল ও বায়বীয় পদার্থগুলোতে এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়। তাপ গ্রহণ করে পদার্থের উষ্ণতর অংশের অণুগুলো শীতলতর অংশের দিকে প্রবাহিত হয়, এভাবে অন্য অণুগুলো স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজ গতির সাহায্যে তাপ সঞ্চালিত করে।[১] প্রকৃতপক্ষে, কঠিন পদার্থগুলোর আন্ত-আণবিক শক্তি প্রবল হওয়ায় এরা স্থান পরিবর্তন করতে পারে না, তাই কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপের পরিচলন পদ্ধতি সম্ভব নয়।
যে পদ্ধতিতে তাপ জড় মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াই তড়িতচৌম্বক তরঙ্গের আকারে উষ্ণ বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে সঞ্চালিত হয় তাকে বিকিরণ বলে। আলো যেমন তড়িতচৌম্বক তরঙ্গের আকারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় বিকিরণ পদ্ধতিতেও অনেকটা একইভাবে তাপ সঞ্চালিত হয়।[২] এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হতে কোন প্রকারের জড় মাধ্যম যেমন- কঠিন, তরল, বায়বীয় ইত্যাদি মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ বেশ দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে,তবে এটির দূরত্ব যত বেশি হবে,তাপমাত্রা তত কমে যায়। বিভিন্ন ধরনের স্বচ্ছ পদার্থ যেমন- কাচ, কোয়ার্টজ ইত্যাদির মধ্য দিয়েও তাপের বিকিরণ হতে পারে। তবে অস্বচ্ছ পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপের বিকিরণ হয় না যেমন- কাঠ, পাথর ইত্যাদি। আবার কিছু তরলের মধ্য দিয়েও বিকিরণ সম্ভব যেমন- কার্বন সালফাইড। জলের মধ্যদিয়ে আংশিক বিকিরণ ঘটলেও সাধারণত তরলের মধ্য দিয়ে বিকিরণ সম্ভব হয় না। উদাহরণ স্বরুপ- সূর্য থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ পৌছায়। বিকিরণের জন্য কোন মাধ্যমের দরকার হয় না, সেজন্য সূর্য আর পৃথিবীর ভেতরে মহাশুন্য থাকার পরেও দৃশ্যমান আলোর সাথে অদৃশ্য আবলেহিত রশ্মি এবং অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে চলে আসতে পারে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.