Remove ads
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
তথ্য জানার অধিকার (আর.টি.আই.) হল ভারতীয় সংসদ দ্বারা প্রচলিত একটি আইন যা ভারতীয় নাগরিকের তথ্য জানার অধিকার সম্বন্ধে বিধিগুলি এবং তার পদ্ধতিগুলি নির্দেশ করে। এই আইনটি আগের তথ্য জানার স্বাধীনতা আইন,২০০২ এর পরিবর্ত হিসাবে পরিগণিত হয়। আর.টি.আই. আইন অনুসারে, যেকোন ভারতীয় নাগরিক কোনো "রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ" (সরকারী সংস্থা বা "রাষ্ট্রীয় সহায়ক সংস্থা") এর কাছে তথ্য জানতে চেয়ে অনুরোধ করতে পারে, এবং তৎপরতার সঙ্গে তা ত্রিশ দিনের মধ্যে উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক। বিষয়টি যদি আবেদনকারীর জীবন এবং তাঁর স্বাধীনতা সংক্রান্ত হয়, সেক্ষেত্রে তথ্য ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জানানো বাধ্যতামূলক। এই আইন অনুযায়ী,প্রত্যেক রাষ্ট্রীয় সংস্থা তাদের সব তথ্যাবলী কম্প্যুটারে সংরক্ষিত করতে বাধ্য যাতে তা পরিব্যাপ্ত থাকে এবং অতি সক্রিয়ভাবে তথ্যাবলীর শ্রেণিবিভাগ করা যায় এবং নাগরিকেরা অতি স্বল্প সময়ে তথ্যানুসন্ধানের নিয়মানুগ আবেদন করতে পারেন।[১]
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৫ | |
---|---|
ভারতীয় সংসদ | |
দীর্ঘ শিরোনাম
| |
সূত্র | ২০০৫ সালে ২২ নং ধারা |
কার্যকারী এলাকা | সারা ভারত এবং জম্মু ও কাশ্মীর ৫ই আগস্ট,২০১৯, ধারা ৩৭০ বাতিল হওয়ার পর |
প্রণয়নকারী | ভারতীয় সংসদ |
প্রণয়নকাল | ১৫-জুন-২০০৫ |
সম্মতির তারিখ | ২২-জুন-২০০৫ |
প্রবর্তনের তারিখ | ১২-অক্টোবর-২০০৫ |
অবস্থা: বলবৎ |
সংসদে এই আইনটি ১৫ই জুন,২০০৫ এ পাশ হয়েছে যা ১২ই অক্টোবর, ২০০৫এ কার্যকরী হয়। প্রতিদিন প্রায় ৪৮০০টি আর.টি.আই.আবেদন নথিভুক্ত হয়। আইনটি বলবৎ হওয়ার প্রথম দশ বছরের মধ্যে ১৭,৫০০,০০০ টির বেশি আবেদন নথিভুক্ত হয়েছে। [২]
আর.টি.আই. হল প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের আইনী অধিকার। আর.টি.আই অন্তর্ভুক্ত কর্তৃপক্ষদের প্রায় বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ বলা হয়। ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকার 'বাক্ স্বাধীনতা'কে আরও মজবুত ভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই আইনটি বলবৎ হয়েছে। যেহেতু আর.টি.আই.ভারতীয় সংবিধানের ১৯ নং ধারা, বাক্ ও ভাবপ্রকাশের অধিকারকে সূচিত করে, তাই এটিকে মৌলিক অধিকার হিসেবেই সূচিত করা হয়।
ভারতে তথ্যাদি প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ এবং অন্যান্য যে বিশেষ আইনগুলি ছিল এই নতুন আর.টি.আই. আইনের মাধ্যমে শিথিল করা হয়েছে। তথ্য জানার অধিকার ভারতীয় নাগরিকগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে আইনানুগ চিহ্নিত হয়েছে। আর.টি.আই. খুবই প্রয়োজনীয় ও হিতকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে কিন্তু এর একটি পাল্টা ও বিপরীত আইন হল, হুইসিল ব্লোয়ারস প্রটেকশন অ্যাক্ট, ২০১১। [৩]
আইনটি সারা ভারতে কার্যকর। আগে, জম্মু ও কাশ্মীর তথ্য জানার অধিকার আইন জম্মু এবং কাশ্মীরে বলবৎ ছিল। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারার, অনেকটাই বাতিল হওয়ার পর কেন্দ্রশাষিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর (এবং কেন্দ্রশাষিত অঞ্চল লাদাখও) কেন্দ্রীয় আইনের আওতায় এসে যায়।[৪]. সব সাংবিধানিক অঙ্গ যেমন প্রশাসন, আইনসভা,বিচার বিভাগ; যেকোনো সংস্থা যা সংসদ বা বিধানসভা আইনানুগ তৈরী করেছে; সবই এর আওতাভুক্ত। এই আইন ব্যাখ্যা করেছে সেই সকল সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ যেগুলি সরকারের কোনো দপ্তর, যারা সরকারের "অধীনস্থ, পরিচালিত এবং আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত" বা অ-সরকারী কোনো সংস্থা্,যারা "বিশেষভাবে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত",তাদের আদেশানুসারে প্রতিষ্ঠিত বা গঠিত হয়েছে।
বেসরকারী সংস্থাগুলি এই আইনের আওতায় সরাসরি পড়ে না। সর্বজিত রয় বনাম দিল্লী ইলেক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন [৫] মামলায় রায় দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন নিশ্চিত করেছেন যে, বেসরকারীকৃত গণ পরিষেবা সংস্থাগুলি আর.টি.আই. এর আওতাভুক্ত হবে। [৬] ২০১৪ সাল থেকে, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, এন.জি.ও., যারা পরিকাঠামোগত নিজস্ব তহবিলের ৯৫% এর বেশি সরকারী সাহায্য পায় তারা এই আইনের আওতাভুক্ত থাকবে। [৭]
কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন (সি.আই.সি.) এই মতামত প্রকাশ করেন যে, সমস্ত রাজনৈতিক দল যেহেতু জনগণকে পরিচালিত করে, তারাও আর.টি.আই. এর এক্তিয়ারভুক্ত থেকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। সি.টি.সি. বলেছে যে, ছ'টি জাতীয় দল যথাক্রমে কংগ্রেস, বি.জে.পি., এন.সি.পি., সি.পি.আই.(এম), সি.পি.আই., বি.এস.পি. ও বি.জে.ডি. -এরা কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পরোক্ষভাবে তহবিল সাহায্য পায় এবং আর.টি.আই. আইন অনুসারে গণ-পরিচালন সংগঠনগুলির মতো জনগণের জন্য নানাবিধ কাজ করে। [৮][৯] কিন্তু অগাস্ট, ২০১৩ সালে, সরকার তথ্য জানার আইনের সংশোধিত খসড়া পেশ করে, যেখানে সব রাজনৈতিক দলগুলিকে এই আইনের পরিধির বাইরে রাখা হয়। ইদানীং কোনও দলই আর এই আইনের আওতায় নয়, এবং একটি মামলা দায়ের হয়েছে যাতে দলগুলিকে আর.টি.আই. আইনের আওতায় আনা যায়। [১০]
তথ্য জানার অধিকার আইন ২০১৯, ২৫শে জুলাই, ২০১৯ সালে পাশ হয়,[১১] যেটিতে সি.আই.সি. এবং কেন্দ্রে ও রাজ্যে নিয়োজিত তথ্য কমিশনারদের কার্যাদির শর্তাবলীর পরিমার্জন করা হয়। [১২] এটিতে তথ্য কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে বলে আইনটি সমালোচিতও হয়েছে। [১৩]
শীর্ষ আদালতের রায়
ভারতের শীর্ষ আদালত ১৩ই নভেম্বর, ২০১৯ সালে, দিল্লী হাইকোর্টের রায়কে সমর্থন করেন যেখানে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ও তথ্য জানার অধিকার আইনের (আর.টি.আই.) আওতাভুক্ত থাকবে।
ভারতে তথ্য জানার অধিকার বিষয়টি পরিচালিত হয় দুটি প্রধান সংস্থা দ্বারাঃ
যখন কোনো নাগরিক কোনো বিশেষ গণ পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছে কোনো তথ্য জানতে ইচ্ছুক হন, তাহলে তাঁকে নির্ধারিত ফী (একটি পোস্টাল অর্ডার অথবা ডি.ডি.(ডিমান্ড ড্রাফট) অথবা একটি ব্যাঙ্কার্স চেক) সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির হিসাব আধিকারিকের নামে লিখে দরখাস্ত করতে হবে। আবেদনকারী যদি কোনো সুযোগবঞ্চিত শ্রেণির হন, সেক্ষেত্রে তাঁকে এই ফী দিতে হবে না। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] পরবর্তী সময়ে তথ্য সরবরাহের জন্য আর.টি.আই. নির্ধারিত বাড়তি ফী লাগলে, তা পি.আই.ও. আবেদনকারীকে দেওয়ার কথা জানাতে পারেন।[১৫]
একটি ডিজিটাল পোর্টাল তৈরী করা হয়েছে, নাম আর.টি.আই. পোর্টাল, নাগরিকদের কাছে, প্রথম আবেদন করার সংস্থা, পি.আই.ও.গুলি সম্বন্ধীয় তথ্যাদি, আর.টি.আই. সংক্রান্ত তথ্যাদি, এছাড়া রাজ্যসরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ গণ পরিচালন সংস্থাগুলি যা কিছু প্রকাশ করেছে ইত্যাদি অনুসন্ধানের প্রবেশদ্বার। এটি একটি ডিপার্ট্মেন্ট অফ পারসোনেল এন্ড ট্রেনিং, মিনিস্ট্রি অফ পারসোনেল, পাবলিক গ্রিভেন্স এন্ড পেনসনএর উদ্যোগ।[১৬]
ভারতে তথ্য জানবার অধিকার প্রায়শই বিভিন্ন বিতর্কে কালিমালিপ্ত হয়েছে; তা কোনো সময়ে রাজনৈতিক তরজাতে পর্যবসিত হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তার শিক্ষাগত ডিগ্রী দেখাতে বলা,কোন সময়ে বিশেষভাবে খ্যাত কোনো পরিকল্পনা যার অপব্যবহার নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রশ্নের উত্তর না দিতে চাওয়ার মতো অশোভন আচরণ ইত্যাদি। [১৭][১৮][১৯] আর.টি.আই. এর বিপক্ষে রাষ্ট্রের এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নাগরিকের তথ্য জানার অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করেছে। [২০]
কমনওয়েলথ মানবাধিকার উদ্যোগের (সি.এইচ.আর.আই) তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে সারা ভারতে প্রায় ৩১০টি হয়েছে যেখানে মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, খুন হয়েছে, মানসিক বা শারিরীকভাবে নির্জাতিত হয়েছে বা তাদের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যখনই তারা আর.টি.আই. এর মাধ্যমে কোনো তথ্য জানার দাবী করেছে। [২১] তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে প্রায় ৫০টির ওপর হত্যা ও দুইটি আত্মহত্যার অভিযোগের সরাসরি আর.টি.আই. আবেদনের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। [২২]
একটি ঐকমত্য তৈরী হয়েছে যে, যাঁরা এই আইনের মাধ্যমে তথ্য জানতে চাইছেন,তাঁদের সুরক্ষার জন্য আর.টি.আই . আইনটির পরিমার্জনার দরকার।[২৩] এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস সুপারিশ করেছে, "আর.টি.আই.এর অধীনে তথ্য জানার জন্য আবেদনকারীর সুরক্ষা" বলে একটি পৃথক পরিছছেদ আইনটির সাথে যুক্ত করা হোক।
সুরক্ষা সক্রান্ত সুপারিশ:
বহু সরকারী প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা মেধাসম্পদ অধিকারের যুক্তি দেখিয়ে তথ্য জানার আইনটিকে বিপর্যস্ত করেছে বলে ইদানীং নাগরিক সমাজ সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে মনে করেছেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যগুলি হল :
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.