Loading AI tools
খাবার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
তঞ্চিত ননী (ইংরেজি: Clotted cream অথবা স্ক্যাল্ডেড ননী, ক্লাউটেড ননী, ডেভনশায়ার ননী অথবা কর্ণিশ ননীও বলা হয়) একধরনের পুরু ননী; গরুর দুধের সমগ্র ননী বাষ্প অথবা জলগাহ ব্যবহার করে পরোক্ষভাবে গরম করে এবং তারপর চেটালো পাত্রে তাকে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা করার মাধ্যমে এই ননী তৈরী করা হয়। এই সময়ে, ননীর উপকরণগুলি ওপরের তলে ভেসে ওঠে এবং দানা দানা জমাট বা তঞ্চনভাব (Clots/Clouts) তৈরী করে।[1] এটি ননী চায়ের একটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ।
অন্যান্য নাম | ক্লাউটেড ননী, কর্ণিশ ননী, ডেভনশায়ার ননী |
---|---|
উৎপত্তিস্থল | যুক্তরাজ্য |
অঞ্চল বা রাজ্য | কর্ণওয়াল, ডেভন |
যদিও এর উৎস অজানা, তবে এইজাতীয় ননীর উৎপাদনের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড এবং বিশেষত কর্নওয়াল ও ডেভনের কাউন্টিগুলির ডেয়ারী খামারের নাম জড়িয়ে আছে। কর্ণওয়ালের রেডরুথের রডেস হল বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সবথেকে বড় বাণিজ্যিক উৎপাদনকারী; এগুলি একদিনে ২৫টন (২৫,০০০ কেজি; ৫৫,০০০ পাউণ্ড) তঞ্চিত ননী উৎপাদন করতে পারে।[2] যতদিন পর্যন্ত এই দুধ কর্ণওয়ালে প্রস্তুত হবে এবং এর ন্যূনতম চর্বি উপাদান ৫৫% - এ স্থির থাকবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯৯৮ সালের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ততদিন "কর্ণিশ তঞ্চিত ননী" অভিধাটি "বংশোদ্ভুত সংরক্ষিত উপাধি" (Protected Designation of Origin / PDO) হিসেবে ভূষিত হবে।
"বসন্ত প্রভাতের স্নিগ্ধ কাঁচা তার রঙ,
কিংবা যেন শিশু হলুদ ঝুমকো ফুল, সদ্যোজাত;
এর সুবাসিত আঘ্রাণ, মনোহর মণ্ড,
যে কারুর সাধ জাগে এক গ্রাসে খায়,
মানুষ, নিশ্চিত, এমন উপহার পায়নি কখনো
তোমার দেওয়া লেহ্য ডেভনশায়ারের ননীর মত।"
"এক্সটারের এক মহিলা কর্তৃক প্রেরিত এক পাত্র ননীর স্তুতিবাদ"।(সারসংক্ষেপ)
—উইলিয়াম ব্যারি পিকক, ম্যাঞ্চেস্টার, ১৮৫৩[3]
তঞ্চিত ননী "বাদামী, রান্না-করা দুধের স্বাদযুক্ত" এবং "সুন্দর মিষ্টি স্বাদের" অধিকারী;[4] এটির বিন্যাস দানাযুক্ত এবং মাঝে মাঝে এর শক্ত আবরণের ওপর তৈলাক্ত ফোঁটাও দৃশ্যমান হয়।[5][6] এটি অতি উচ্চ চর্বিযুক্ত একটি পুরু ননী (ন্যূনতম ৫৫% চর্বি উপাদান সমন্বিত, গড়ে ৬৪%); মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একে 'মাখন' বলা হয়।[7] তুলনামূলকভাবে, একক ননীতে চর্বি উপাদান থাকে মাত্র ১৮%।[8]
এটি উচ্চ সম্পৃক্ত চর্বি সমন্বিত হওয়ার জন্য মনে করা হয় তঞ্চিত ননী নিয়মিত আহার করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, যদিও কিছু দুগ্ধজাত চর্বি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী বলেই ধরা হয়।[9] ২০০৬ সালের একটি সমীক্ষায় পুষ্টি বিজ্ঞানীরা ব্রিটিশ খাদ্যতালিকার ১২০টি খাদ্যের মধ্যে তঞ্চিত ননীকে সর্বনিম্ন পুষ্টিগুণ সমন্বিত বলে দেখিয়েছেন।[10] যুক্তরাজ্যের ফুড স্ট্যাণ্ডার্ডস্ এজেন্সীর বক্তব্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) তঞ্চিত ননী ৫৮৬ কিলোক্যালরি (২,৪৫০ কিলোজুল) পুষ্টি সরবরাহ করে যা মোটামুটিভাবে ২০০ গ্রাম (৭.১ আউন্স) চিজবার্গারের সমতুল।[11]
প্রকৃতপক্ষে দুধের অতিরিক্ত অপব্যয় কমাবার জন্য চাষ শুরু হলেও, তঞ্চিত ননী আজ দক্ষিণ-পশ্চিম ব্রিটেনের সংস্কৃতিতে এতটাই গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে গেছে যে এই অঞ্চল এখন একটা পর্যটক আকর্ষণ কেন্দ্র।[12] যদিও এ ব্যাপারে কোন সন্দেহই নেই যে কর্ণওয়াল ও ডেভনের সাথে এর বহুদিনের সংস্রব ছিল, তবুও তঞ্চিত ননীর আদি ইতিহাস সম্বন্ধে অথবা এর আধুনিক পর্যায়প্রাপ্তির সম্বন্ধে কোন তথ্যই সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি।
অক্সফোর্ড কমপ্যানিয়ন টু ফুড চিরাচরিত লোককাহিনী নির্ভর হয়ে জানায় যে এটি টিনের সন্ধানে আসা ফিনিশীয় বণিকদের দ্বারাই কর্ণওয়ালে এসেছিল।[13] এটি অনেকটা কেমার্কের (অথবা কাজমার্ক) মত একটি প্রায় প্রাচ্য খাবার এবং এটি মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পশ্চিম ইওরোপ, ইরান, আফগানিস্তান, ভারত এবং তুর্কী জুড়ে উৎপাদিত হত। একই ধরনের তঞ্চিত ননী ইউরাম (urum/өрөм) ও মঙ্গোলিয়ায় তৈরী হত।
তবে তৎকালীন প্রাচীন খাদ্যবিশারদগণ[14] ব্রিটেনের ওপর স্ট্র্যাবোর টীকার উল্লেখ করেছেন -
"তারা লতা-গুল্ম খেয়ে বাঁচে .... যেমন তাদের টিন ও সীসার খনি আছে, তারা এই ধাতু আর তাদের গবাদি পশুর চামড়া সমুদ্রবণিকদের দিয়ে দেয়.... তারা অলিভ অয়েলের পরিবর্তে মাখন ব্যবহার করে"
যা আমাদের জানায় যে আদি ব্রিটেনবাসীরা তাজা থাকবার জন্য সম্ভবত তঞ্চিত ননী ব্যবহার করত।
আরো সম্প্রতি স্থানীয় প্রত্নতত্ত্ববিদগণ,[14][15] ফোগু অথবা সোটেরেনস নামক পাথরের গঠনকে দুধ, ননী এবং বিশেষত পনির - এর ডেয়ারী উৎপাদনের একটির সম্ভাব্য 'হিম-ঘর' হিসাবে দেখিয়েছেন; এই পাথরগুলি অতলান্তিক ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং আয়ারল্যাণ্ডে মিলেছে। লিনহে (লিন্নে) (linhay বা 'linney') নামক পাথরগঠিত আকারটিও একই কাজের সাথে যুক্ত ছিল বলে মনে করা হয়; এগুলি একই অঞ্চলে পরবর্তীকালে মধ্যযুগীয় লংহাউসে ডেয়ারী হিসেবে ব্যবহৃত হত।[16]
তঞ্চিত ননী ডেভনে না কর্নওয়ালে প্রথম উৎপন্ন হয়,[17] এবং কোন কাউন্টিতে এটি সর্বোৎকৃষ্ট তা নিয়ে বহুদিন ধরে বিতর্ক চলে আসছে।[18] ট্যাভিস্টক অ্যাবি (Tavistock Abbey) - এর সন্ন্যাসীরা খ্রীষ্টিয় চতুর্দশ শতকের গোড়ার দিকে তঞ্চিত ননী তৈরী করছেন বলে প্রমাণ মিলেছে।[19] ভাইকিংরা তাদের মঠ (Abbey) ৯৯৭ সালে ধ্বংস করে দেওয়ার পর, তারা ডেভনের আর্ল, অর্ডলফের সাহায্যে এটি পুনরায় তৈরী করে। মেরামতির কাজের জন্য স্থানীয় শ্রমিকদের নিয়োগ করা হয় এবং সন্ন্যাসীরা তাদের সঞ্চয় থেকে রুটি, তঞ্চিত ননী ও স্ট্রবেরী দান করে পুরস্কৃত করে।[20] ১৬৫৮ সালের রান্নার বই (Cookery Book) দ্য কমপ্লিট কুক (The Compleat Cook) - এ তঞ্চিত ননী তৈরীর প্রক্রিয়া বর্ণিত আছে।[21]
উনবিংশ শতাব্দীতে তঞ্চিত ননীকে কাঁচা ননীর থেকে বেশি পুষ্টিকর বলে মনে করা হত, কারণ কাঁচা ননী টকে যায় এবং তা সহজপাচ্যও নয়, ফলে ইহা অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।[22] ১৮৫৩ সালের একটি নিবন্ধের হিসেব থেকে জানা যায় যে তঞ্চিত ননী প্রস্তুত করলে তার মধ্যে সাধারণভাবে প্রস্তুত ননীের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি ননী উৎপন্ন হয়।[23] ডেভনে ১৯শ শতকে এটি এতই সহজলভ্য ছিল যে একে ননী অথবা দুধ ফেটিয়ে তৈরী করার পরিবর্তে মাখন উৎপন্ন করবার প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হত। এর ফলে মাখনটি আরো বেশিদিন টিকত এবং ফেটানোর ফলে বাজে গন্ধ তৈরী হওয়ারও সম্ভাবনা থাকত না।[24]
দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে অথবা যারা সেখানে ছুটি কাটাতে যেত তাদের মধ্যে একটা নিয়ম প্রচলিত ছিল; তারা ছোট ছোট টিনের বাক্সে অথবা টাবে তঞ্চিত ননী ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য প্রান্তে থাকা বন্ধুবান্ধব এবং জ্ঞাতিদের ডাক মারফৎ পাঠাত।[6]
যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালে চিরাচরিত প্রথায় উৎপাদিত ননীর "কর্নিশ ক্লটেড ক্রিম" নামটি বংশোদ্ভুত সংরক্ষিত উপাধি (Protected Designation of Origin বা PDO) হিসেবে ভূষিত করার জন্যে ১৯৯৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে একটি আন্দোলন হয়। এটি ১৯৯৮ সালে গৃহীত হয়।[25] কর্নিশ ক্লটেড ক্রিম যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালে উৎপাদিত দুধ থেকে প্রস্তুত হতে হবে এবং এর ন্যূনতম মাখন-চর্বি উপাদান ৫৫ শতাংশ হতে হবে।[26] ঘাস উচ্চ ক্যারোটিন সমন্বিত হওয়ায় "কর্ণিশ ক্লটেড ক্রিম" নামের তঞ্চিত ননী অনন্য, ঈষৎ হলুদবর্ণযুক্ত হয়।[26]
প্রথাগত পদ্ধতি অনুসারে, টাটকা গরুর দুধ প্রথমে পরিশ্রুত করা হয়, তারপর একে শীতল পরিবেশে অগভীর পাত্রের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা রেখে দেওয়া হয় যার ফলে এর ননী অংশটি উপরিতলে উঠে আসে। এরপর একে উত্তপ্ত কাঠকয়লার মাধ্যমে অথবা জলগাহে উত্তপ্ত করে, পরে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা করা হয়।[5][27] এর উপরিতলে একটি তঞ্চিত স্তর তৈরী হয়, লম্বা হাতলযুক্ত উকড়ি বা স্কিমার (Skimmer) দ্বারা উপরিভাগের এই দানাদার স্তরটিকে ফেলে দেওয়া হয়; এই উকড়ি/স্কিমারটি ডেভনে রীমার বা রেইমার (Reamer/Raimer) নামে পরিচিত।[27] ১৯৩০ - এর দশকের মাঝামাঝি, ডেয়ারী থেকে আনা দুধ সরাসরি ব্যবহারের চিরাচরিত পদ্ধতি ডেভনে বন্ধ হয়ে যায়, কারণ এই সময় থেকে ননী-বিশ্লিষ্টকারী (Cream-Separator) নামক যন্ত্রের দ্বারা কেন্দ্রাতিগ বল ব্যবহার করে দুধ থেকে সক্রিয়ভাবে ননী পৃথক করা হতে লাগল, এতে একই পরিমাণ দুধ থেকে অনেক বেশি পরিমাণ ননী পাওয়া যেতে লাগল। পাউণ্ডস্গেটের এক কৃষকের স্ত্রীয়ের কথায় - "এই সেপারেটর যন্ত্রই সমস্ত গো-প্রজাতিকে বাঁচিয়েছে।"[27]
এখন, তঞ্চিত ননী তৈরীর জন্য দু-ধরনের স্বতন্ত্র ও আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। 'ভাসমান ননী পদ্ধতি" অনুসারে চ্যাটালো পাত্রে দুধের (সরবিহীন বা সরযুক্ত) ডবল ননীের ভাসমান স্তরটিকে গরম জলের মাধ্যমে উত্তপ্ত করা হয় - একে স্ক্যাল্ডিং বলে। এটি করার জন্য বাষ্প অথবা অত্যন্ত গরম জলের দ্বারা পাত্রগুলিকে উত্তপ্ত করা হয়। মিশ্রণটিকে এভাবে ঘণ্টাখানেক গরম করে ১২ ঘণ্টা অথবা তার বেশি সময় ধরে ধীরে ঠাণ্ডা করা হয়, এরপর ননীটিকে পৃথক করে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।[5] "স্ক্যাল্ড ননী পদ্ধতিটিও" অনুরূপ, তবে এক্ষেত্রে দুধের সরটিকে ফেলে দেওয়া এবং ননীের সরটিকে যান্ত্রিকভাবে পৃথক করে এর চর্বির পরিমাণে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে তবে এটিকে ব্যবহার করা হয়। ননীটিকে এরপর একইভাবে উত্তপ্ত করা হয়, তবে এটা করা হয় অনেক কম উষ্ণতায় এবং কিছু সময় পর একে ঠাণ্ডা করে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।[5] যুক্তরাজ্যে উক্ত উপায়ে প্রস্তুত ননীটিকে আইনি কারণে পাস্তুরাইজড্ হিসেবে ধরা হয়। যদিও পাস্তুরাইজেশনের মত এতে থার্মোগ্রাফ তালিকায় উষ্ণতা নথিবদ্ধ করবার প্রয়োজন পড়ে না।[28] যেহেতু এতে সাধারণ পাস্তুরাইজেশন অপেক্ষা কম উষ্ণতার প্রয়োজন হয়, তাই এর স্বাস্থ্যবিধির উচ্চমান বজায় রাখবার জন্য অতিরিক্ত নজর লাগে।
কর্ণওয়ালের স্করিয়ারে অবস্থিত একটি পরিবার-কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রড্ডাস হল যুক্তরাজ্যের সবথেকে বড় তঞ্চিত ননী প্রস্তুতকারী।[29] ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত[2] এই সংস্থা ১৯৮৫ সালে ১,০০০,০০০ পাউণ্ড (৪৫০,০০০ কেজি) ননী প্রস্তুত করত[7] এবং ২০১০ সালে এর পরিচালন অধিকর্তা জানান যে তারা জানুয়ারি প্রতিদিন মাত্র ৫ অথবা ৬ টন (৫,০০০ বা ৬,০০০ কেজি) ননী প্রস্তুত করতে পারবেন, তবে বড়দিনের সময় এলে তার ২৫ টন (২৫,০০০ কেজি) পর্যন্ত উৎপাদন বাড়াতে পারবেন।[2] ১৯৮০ - এর দশকের শুরুর দিকে রড্ডাস আন্তর্জাতিক বিমানগুলির সঙ্গে এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয় যে তারা কোম্পানীর তঞ্চিত ননীর ছোট ছোট বাটি উড়ান-অন্তর্বর্তী মিষ্টান্নের সাথে পরিবহন করতে পারবে।[7] কোম্পানী মনে করে উইম্বলডন টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের সময়টাই তাদের বিক্রির সবথেকে ভাল সময়। উপজাত হিসেবে, প্রতি ১০০ ইম্পেরিয়াল গ্যালন (৪৫০ ১; ১২০ মার্কিন গ্যাল.) দুধ ব্যবহার করলে, ৯৪ ইম্পেরিয়াল গ্যালন (৪৩০ ১; ১১৩ মার্কিন গ্যাল.) ননীবিহীন দুধ প্রস্তুত হয়, যে খাদ্য প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।[2]
দুটো ডেভন ডেয়ারীর একটি বন্ধ করে এবং সমস্ত উৎপাদন ওকেহ্যাম্পটনে স্থানান্তরিত করে, ডেভনের একটি ননী প্রস্তুতকারক কোম্পানী ডেফিনিটলি ডেভন রবার্ট ওয়াইসম্যান ডেয়ায়ীস -এর কাছে ২০০৬ সালের মার্চ মাসে বিক্রি হয়ে যায়।[30] আবার, ২০১১ সালে রবার্ট ওয়াইসম্যান ডেফিনিটলি ডেভন কোম্পানীটিকে রড্ডাসের কাছে বিক্রি করে দেন। কিন্তু কোম্পানীর নাম অপরিবর্তিত থাকার কারণে তা কিছু বিতর্কের সৃষ্টি করে,[31] যার ফলে ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ডস্ এ ব্যাপারে তাদের অনুসন্ধান শুরু করে।[32]
কর্ণওয়াল ও দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড জুড়ে তঞ্চিত ননী প্রস্তুতি একটি কুটির শিল্প যার সাথে ননী প্রস্তুতকারী অনেক খামার ও ডেয়ারী যুক্ত রয়েছে, এগুলি স্থানীয় বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করে। এছাড়াও, সমারসেট,[33] ডরসেট,[34] হেরেফোর্ডশায়ার,[35] পেমব্রোকশায়ার[36] এবং উইটের দ্বীপেও[37] তঞ্চিত ননী প্রস্তুত করা হয়।
যখন খাঁটি তঞ্চিত ননী পাওয়া যায় না, তখন ফেটানো ননীের সাথে মাস্কারপোন মিশিয়ে এবং তাতে অল্প চিনি ও ভ্যানিলার নির্যাস মিশিয়ে তঞ্চিত ননীের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[38]
বিশেষত কর্ণওয়ালে ও ডেভনে পর্যটকদের একটি প্রিয় খাবার হল ননী চা, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তঞ্চিত ননী। ইহা স্কোওন নামে বার্লি বা আটাময়দা দিয়ে তৈরী বিশেষ প্রকার কেক - অথবা কর্ণওয়ালে আরো চিরাচরিত আধ গ্লাস মদ (Splits) -এর সাথে[39] - স্ট্রবেরী জেলি মিশিয়ে (অন্যান্য গন্ধ কমই চলে)[40] এক পাত্র চায়ের সাথে পরিবেশন করা হয়। প্রথাগত পদ্ধতি অনুযায়ী প্রত্যেকটি কাউন্টিতে ননী চা খাওয়ার রীতি আলাদাঃ ডেভনে ননী প্রথমে স্কোওন কেকের ওপরে ছড়ানো হয়, এর ওপরে থাকে জেলির মণ্ড। কর্ণওয়ালে, জেলিটিকে প্রথমে ছড়ানো হয়, তার ওপরে দেওয়া হয় ননীর মণ্ড।[41] আদি অভিবাসীরা কর্ণওয়াল ও ডেভন থেকে তাদের চিরাচরিত রেসিপি অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যায়, তাই ননী চা যা কিনা ডেভনশায়ার চা নামেও পরিচিত তা দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে।[42] ২০১০ সালে, ডেভনের ল্যাঙ্গেজ ফার্ম "ডেভন ননী টি" নামটির জন্য কর্ণিশ তঞ্চিত ননীর মত বংশোদ্ভুত সংরক্ষিত উপাধি (Protected Designation of Origin বা PDO) পেতে আন্দোলন শুরু করে।[43][44] ননী চায়ের অন্য একটি রূপ হল 'বজ্র ও বিদ্যুৎ' ("Thunder and Lightning") যার মধ্যে থাকে রুটির গোল টুকরো ও এর উপরিভাগে তঞ্চিত ননী এবং সোনালী সিরাপ, মধু অথবা গুড় থাকে।[45]
উষ্ণ অথবা শীতল মিষ্টান্নের সাথে তঞ্চিত ননী ব্যবহার করা যায়। তঞ্চিত ননী, বিশেষত ডেভনের তঞ্চিত ননী, যা ঘাসের কম ক্যারোটিনের জন্য কম হলুদ বর্ণযুক্ত হয়, তা নিয়মিত সেঁকার কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড জুড়ে আইসননী ও ফাজজাতীয় (দই, মাখন প্রভৃতি সহযোগে প্রস্তুত একধরনের মিষ্টি) দ্রব্য প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
তঞ্চিত ননী বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারে ব্যবহৃত হয়,[46] এবং একে আলুভর্তা, রিজেত্তো অথবা ডিম ফেটিয়ে মাখনের সাথে খাওয়া যেতে পারে।[47]
ক্যাবেজ ননী (এর মধ্যে ক্যাবেজ/বাঁধাকপি থাকে না) সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ের একটি সুস্বাদু খাদ্য ছিলঃ তঞ্চিত ননীর স্তরগুলি চিনি ও গোলাপজলের সাহায্য বিক্ষিপ্ত করে এটি তৈরী করা হত, এর ফলে পরিবেশনের সময় একে বাঁধাকপির মত লাগত।[48] এটি সাধারণত জাঙ্কেট নামে একধরনের দুগ্ধজাত মিষ্টির সাথে পরিবেশন করা হত; বিংশ শতকের মধ্যভাগে জাঙ্কেট খাওয়ার চল উঠে যায়।
১৫৭৯ সালে রচিত এডমণ্ড স্পেনসার স্পেনসার রচিত "দি শেফিয়ার্ডস ক্যালেন্ডার" নামক কবিতায় তঞ্চিত ননীর উল্লেখ আছে -
না, সে সরল যুবক রাখালকে অবজ্ঞা করবে না,
কারণ, সে তাকে ডাকবে, প্রায়ই তাকে ডাকবে,
আর তাকে দই আর ক্লাউটেড ক্রিম প্রদান করবে।[17]
অনেক কর্ণিশ ও ডেভনীয় মূর্তির মত, তঞ্চিত ননীও স্থানীয় লোকগাথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি পৌরাণিক গাথা অনুসারে জেলি নামে একটি মেয়ে ব্লাণ্ডারবোর (কখনও কখনও একে মোরানও বলা হত) নামে একটি দৈত্যকে তঞ্চিত ননী খাইয়ে প্রলুব্ধ করেছিল। ফলে, দৈত্যটা মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায় ও তাকে তার চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে বরণ করে।[49] ডার্টমুরের আরেকটি গাথা আছে। সেখানে এক রাজকন্যার কথা বলা আছে যে একজন এলড্রেন রাজপুত্রকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, কিন্তু প্রথা অনুযায়ী তাকে প্রথমে বিশুদ্ধ ননীতে স্নান করতে হবে। ইতোমধ্যে এক ডাইনি মতলব করেছিল যে রাজপুত্রের সাথে সে তার মেয়ের বিয়ে দেবে, তাই সে সমস্ত ননী টকিয়ে দিল। অবশেষে, রাজপুত্র রাজকন্যাকে তঞ্চিত ননী উপহার দেয় এবং ডাইনি সেটা টকাতে অপারগ হয়।[50]
জে. আর. আর. টোকিয়েন বিরচিত লর্ড অফ দ্য রিংস বইয়ের হবিটের প্রধান খাদ্যগুলোর একটা ছিল এই তঞ্চিত ননী।[51]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.