Remove ads
বাংলাদেশের সিটি করপোরেশন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পূর্বতন স্থানীয় সরকার সংস্থা। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ নভেম্বর তারিখে জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধনী) বিল, ২০১১ পাসের মাধ্যমে ঢাকা শহর দ্বিখণ্ডিত হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিলুপ্ত হয়।[২]
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন | |
---|---|
ধরন | |
ধরন | |
ইতিহাস | |
শুরু | ১ আগস্ট ১৮৬৪ |
বিলুপ্তি | ২৯ নভেম্বর, ২০১১ |
উত্তরসূরী | ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন |
নেতৃত্ব | |
মেয়র | শূন্যপদ |
নির্বাচন | |
এফপিটিপি | |
সর্বশেষ নির্বাচন | ২৫ এপ্রিল, ২০০২[১] |
সভাস্থল | |
নগর ভবন |
বিভাজনের পূর্বে সার্বিকভাবে ঢাকা শহর পরিচালনের দায়িত্বে ছিল ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। তখন ঢাকা শহর ৯২টি প্রশাসনিক ওয়ার্ডে বিভক্ত ছিল এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন কমিশনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। প্রতি ৫ বছর অন্তর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে একজন মেয়র এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে কমিশনার নির্বাচন হওয়ার বিধান ছিল। মেয়র সিটি কর্পোরেশনের কার্যনির্বাহী প্রধান হিসাবে কাজ করতেন। এছাড়াও মহিলাদের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ৩০টি সংরক্ষিত কমিশনার পদ ছিল।
১৮৬৪ সালের ৩ নং আইন ছিল ঢাকা শহরের জন্য একটি মাইলফলক। এই আইনের মাধ্যমেই ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আইনে কোন কোন এলাকা ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির অন্তর্ভুক্ত হবে তাও বলে দেয়া ছিল। ১৮৫৯ সালে ঢাকা রেভিনিউ সার্ভেয়ার শহরের একটি মানচিত্র তৈরি করেন। এই মানচিত্রই ছিল ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির পুরো জায়গা। তবে আরও কিছু প্রত্যন্ত মহল্লা যেমন জাফরাবাদ, সুলতানগঞ্জ, দয়াগঞ্জ এগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একুশজন কমিশনার নিয়ে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি যাত্রা শুরু করে।[৩] ১৮৬৪ সালের ১ আগস্ট ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি'র সৃষ্টি হয় এবং ঢাকার তৎকালীন ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ স্কিনার পদাধিকারবলে ঢাকার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৮৮৫ সালে সর্বপ্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হন আনন্দচন্দ্র রায়। ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি ঘরবাড়ি, সম্পদের ওপর ট্যাক্স নির্ধারণ করেছিল। শহরের উন্নতির জন্যই এই কর বা ট্যাক্সের প্রবর্তন করা হয়েছিল। ১৮৬৩-১৮৬৪ সালে মোট ট্যাক্সের পরিমাণ ছিল ১৯৮৬০ টাকা। কমিটি শুধুমাত্র ঘরবাড়ি, সম্পদ ছাড়াও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে ট্যাক্স নির্ধারণ করে। যেমন তৎকালীন সময়ে ঢাকায় সকল চাকাওয়ালা গাড়ি, ঘোড়া এবং হাতির ওপর কর আরোপ করা হয়। যাতে করে ঢাকা শহরের রাস্তার উন্নতি করা যায়। আস্তে আস্তে ১৮৬৯ সালে বিভিন্ন ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন ইটের ভাটা, চুন, টালি, মাটির পাত্র তৈরি, সাবান ও রঙ তৈরির কারখানা, কসাইখানা এইসকল ক্ষেত্রেও কর আরোপ করা হয়। ১৮৭৮ সালে শহরের প্রতিটি বাড়ি থেকে মল নিষ্কাশনের জন্য শৌচাগার কর প্রবর্তন করা হয় যা হাউজ সার্ভিস ফি নামে পরিচিত ছিল। এতো এতো কর আরোপের ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। তবে এই কমিটি ১৮৮৫-১৮৮৬ সালে ১,৪২,০৯৮ টাকা কর হিসেবে তুলে। এই করগুলো দিয়েই শুরু হয় ঢাকা শহরের শ্রীবৃদ্ধি। রাস্তা বড় করা, পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা, সরু গলি চওড়া করা ইত্যাদি নানান কাজ শুরু হয় এবং ঢাকা শহরে চলাচল সুবিধাজনক হয়। মুসলমান সমাজের কবরের জন্য আগা সাদেক ময়দান পরিষ্কার করা হয় এবং মৃতদেহ যেন অন্তত ৬ ফুট গভীরে দাফন করা হয় সেজন্য কমিটি চৌকিদার নিয়োগ দেয়।[৪]
১৮৭৩ সালের ২ নং আইনে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার, চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার অধিকার জনগণের হাতে দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় প্রসাশন এই ব্যাপারে নাখোস ছিলেন। ইংরেজ বা ইউরোপিয়ো স্থানীয় প্রসাশকরা কখনই চাচ্ছিলেন না ঢাকার অধিবাসী বা স্থানীয়রা তাদের সাথে কাজ করুক। এর আগ পর্যন্ত ঢাকার জমিদার বা বিত্তবানরাই কমিশনার হিসেবে কমিটিতে থাকতেন। যার ফলে পক্ষপাতিত্তসহ নানান কিছুর অভিযোগ উঠতো। স্থানীয় প্রশাসন নির্বাচনের ব্যাপারে ঢাকায় বড় ভূমিকা রাখে ঢাকা জনসাধারণ সভা বা পিপলস এসোসিয়েশন। ১৮৮২ সালের ২৪ জুলাই তারা জগন্নাথ স্কুলের মাঠে এক বিশাল জনসভা আয়োজন করলো। যেখানে সমবেত হয়েছিল প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ। এতো বড় জনসভা ঢাকাতে আগে কখনই অনুষ্ঠিত হয়নি। মূলত পূর্ববাংলার দাবি দাওয়া, স্থানীয় প্রসাশনের প্রয়োজনীয়তা এইসব ছিল জনসভার মূল বিষয়বস্তু। জনগণের প্রবল রকম চাপ এবং অনেক বিবেচনা শেষে ১৮৮৪ সালে ৩ নং অ্যাক্ট পাশ করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে ঢাকার জনগণ ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার নির্বাচিত করার সুযোগ পায়। দুই তৃতিয়াংশ কমিশনার তারা নির্বাচিত করতে পারবে। অর্থাৎ ২১ জনের মধ্যে ১৪ জনকে তারা নির্বাচিত করতে পারবে। তবে ভোটার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকার কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল। যারা মাসে কমপক্ষে ৫০ টাকা আয় করেন এবং কর দেন, বিগত এক বছর ঢাকার অধিবাসী ছিলেন তারাই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৮৪ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকায় প্রথম পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।[৫]
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর হতে সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিই চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৭ সালের পৌরসভা অধ্যাদেশ জারি হবার পর হতেই চেয়ারম্যানের সাথে সাথে ওয়ার্ড কমিশানার নির্বাচিত হবার পদ্ধতি চালু হয়। ঐ অধ্যাদেশ বলে ১৯৭৮ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি ঢাকা মিউনিসিপ্যাল (পৌর) কর্পোরেশনে পরিবর্তিত হয়। ১৯৮৩ সালে 'ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অর্ডিন্যান্স' নামে সরকার একটি স্বতন্ত্র অর্ডিন্যান্স জারি করে।ঢাকা পৌর কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত।ঢাকা পৌর কর্পোরেশন সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয় ১৯৯০ সালে।পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ১৩০ বছর পর ১৯৯৪ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রথম প্রত্যক্ষ ভোটে মেয়র ও কমিশনার নির্বাচন হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদ হানিফ হলেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রথম মেয়র।২৯ নভেম্বর, ২০১১ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণ দুইভাগে ভাগ করা হয়। ।
২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধনী) বিল, ২০১১ পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিলুপ্ত করা হয়; এরফলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নামে স্বতন্ত্র দুইটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৩৬টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৫৬টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত হয়।[২]
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মিরপুর, শাহ আলী, রূপনগর, পল্লবী, দারুস সালাম, কাফরুল, ভাষানটেক, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরে বাংলা নগর, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, হাতিরঝিল, রামপুরা, বাড্ডা, ভাটারা, গুলশান, বনানী, ঢাকা সেনানিবাস, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর, দক্ষিণখান, উত্তরখান, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, ও তুরাগ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পল্টন, মতিঝিল, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা, শাহজাহানপুর, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, বংশাল, চকবাজার, লালবাগ, কোতোয়ালী, সূত্রাপুর, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, হাজারীবাগ, রমনা, ধানমন্ডি, কলাবাগান, শাহবাগ, নিউ মার্কেট, কামরাঙ্গীরচর ও কদমতলী।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.