Loading AI tools
স্বধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ বলতে বুঝায় কোনো দ্বন্দ্ব বা সংঘাতের অযুহাতে কিংবা বিনা অযুহাতে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সমাজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার/তাদের উপর কোনো ধর্মীয় বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়া বা স্বধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা। গুপ্ত-ইহুদী, গুপ্ত-খ্রিস্টান, গুপ্ত-মুসলিম ,গুপ্ত হিন্দু ও গুপ্ত-পৌত্তলিক হলো আধুনিক সময়ের ঐতিহাসিক উদাহরণ।
সাধারণভাবে, নৃতত্ত্ববিদরা দেখিয়েছেন যে, ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল, বিশেষত যখন মানব বিস্তারের ইতিহাসের দিকে নজর দেয়া যায়। [1]
কোরআনিক নিয়ম "ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই"[2] অনুযায়ী (২:২৫৬) জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ নিষিদ্ধ বলা হলেও ইসলামের ইতিহাসে এর অনেক উদাহরণ রয়েছে।[3][4] প্রথিতযশা ইতিহাসবিদগণ এরকম [5] কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছেন।[2]
আবু হানিফা এবং আবু ইউসুফের মতে অমুসলিমরা যে ধর্মেরই হোক না কেন তাদের জিজিয়া কর প্রদান করতে হবে। কিন্তু পরে আরো চরমপন্থী ফকীহরা মূর্তিপূজারীদের জন্য জিজিয়া অনুমোদন করে না। পরিবর্তে অন্য ধর্মের লোকদের মৃত্যুদণ্ড এড়ানোর জন্য কেবল ধর্মান্তরের বিকল্প দেয়।[6]ইসলামী আইনের চারটির মধ্যে হানাফী ও মালেকীরা আরবীয় অন্য ধর্মাবলম্বীদের বাদ দিয়ে বাইরের অন্য ধর্মাবলম্বীদেরদের জিম্মি ঘোষণা করে। শাফি এবং হাম্বলীরা অবশ্য শুধুমাত্র খ্রিস্টান, ইহুদি এবং জরথুস্ট্রিয়ানদেরই এই শ্রেণীর যোগ্য বলে। [7]
ওয়ায়েল হালাক বলেন যে, তত্ত্ব অনুসারে, ইসলামী ধর্মীয় সহনশীলতা শুধুমাত্র খ্রিস্টান, ইহুদি এবং ম্যাজিয়ানদের মত একেশ্বরবাদী ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় যদি তারা জিজিয়া কর প্রদান করে। পৌত্তলিকরা ইসলাম গ্রহণ বা মৃত্যুদণ্ড দুটি বিকল্প পায়। কিন্তু জিম্মি হিসেবে হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ এবং অন্যান্যদের ও ঘোষণা করা হয়।[8]
সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধ, বিদ্রোহ এবং আন্তঃ সম্প্রদায় সহিংসতায় জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার হুমকি দেওয়া হয় ও করা হয়। ভারত বিভাজন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এবং পাকিস্তানে হাজার হাজার মানুষকে ধর্মান্তর করার ঘটনা জানা গেছে। তরুণীদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, মিশর ও যুক্তরাজ্যে প্রকাশ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।{নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র প্রয়োজন}
প্রথম খলিফা আবু বকর যেসব উপজাতি ইসলাম গ্রহণ করেছিল কিন্তু পরে নিজ ধর্ম ফিরে যায় ও তার খলিফা কর্তৃত্বকে অস্বীকার করত তাদের রিদার (ধর্মত্যাগের) যুদ্ধে জোরপূর্বক পুনঃধর্মান্তর করে।[9][10]
ইসলামী আইনের চারটির মধ্যে দুটি হানাফি এবং মালেকীরা অনারব অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে জিম্মি বলে। এই মতবাদের অধীনে আরবীয় ধর্মাবলম্বীরা ধর্মান্তরিত হওয়া এবং মৃত্যুর মধ্যে একটি বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল। অধিকাংশ ফকীহদের ধারণা সমস্ত আরব মুহাম্মদের জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহণ করেছিল। ৬৩২ সালে তার মৃত্যুর পর তাদের বহিষ্কারের সামান্য ব্যবহারিক গুরুত্ব ছিল।[7]
নবম শতাব্দীতে ফিলিস্তিনের সামেরীয় জনগোষ্ঠী বিদ্রোহী নেতা ইবনে ফিরিসার হাতে নিপীড়ন ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার প্রচেষ্টার শিকার হয়েছিল। তারা আব্বাসীয় খলিফা সৈন্যদের দ্বারা রক্ষা পেয়েছিল।[11]
দ্বাদশ শতাব্দীতে উত্তর আফ্রিকা ও আন্দালুসিয়ার আলমোহাদ রাজবংশের অধীনে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল। তারা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জিম্মি বলে অস্বীকার করে এবং তাদের ধর্মান্তর, নির্বাসন এবং হত্যা করে। খ্রিস্টানরা তাদের শাসন ছেড়ে সাধারণত উপদ্বীপের উত্তরে খ্রিস্টান রাজ্যগুলিতে স্থানান্তরিত হতে শুরু করে। ইহুদিরা তাদের সম্পত্তির জন্য সেখানে থেকে জাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল।[12]
আলমোহাদ বংশের সময় ইহুদি দার্শনিক মায়মোনাইডস ইবেরিয়ান উপদ্বীপে ইহুদি সংস্কৃতির স্বর্ণযুগে ধর্মভ্রষ্টতার উপর তার পত্র লিখেছিলেন। যেখানে তিনি ইহুদিদের গুরুতর অবস্থায় ইসলামে ধর্মান্তরকে সমর্থন করেন। যদিও তিনি এর পরিবর্তে দেশ ছাড়াকে সঠিক বলেছিলেন।[13] আলমোহাদ অঞ্চল থেকে অবাধে পালানোর জন্য মায়মোনাইডস নিজে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তারপর তিনি লেভান্ট বা মিশরে ইহুদি ধর্মে ফিরে আসেন।[14]পরে ধর্মত্যাগী হিসেবে তার নিন্দা করা হয় এবং ইসলামী আদালতে তার বিচার করা হয়। কিন্তু বিচারক রায় দেন যে তার ধর্মান্তর জোরপূর্বক ছিল সেজন্য তা অবৈধ। [15]
১১৬০ এর দশকের শেষদিকে, ইয়েমেনের শাসক আবদ-আল-নাব ইবনে মাহদী ইহুদিদেরকে ইসলাম গ্রহণ বা শাহাদাতের বরণ দুটোর একটি বেছে নিতে বাধ্য করেছিল।[16][17] মাহদী ইহুদীদের পাশাপাশি মুসলমানদের উপরও তার বিশ্বাস চাপিয়ে দিয়েছিল। তবে এটি যেমন ইহুদি ম্যাসিবাদকে পুনরুজ্জীবনের দিকে ধাবিত করেছিল, তেমনিভাবে গণ-ধর্মান্তরেও বাধ্য করেছিল।[17] ১১৭৩ সালে ইবনে মাহদীর পরাজয়ের সাথে সাথে সালাউদ্দিনের ভাই কর্তৃক ইয়েমেন বিজয়ে এই অত্যাচারের অবসান ঘটে এবং তারা নিজনিজ বিশ্বাসে ফিরে যায়।[17][18] দুটি কায়রো গেনিজ নথি অনুসারে, ইয়েমেনের আইয়ুবিদ শাসক আল-মালিক আল-মুযিজুল-ইসমাইল ১১৯৭-১২০২ রাজত্বকালে আদেনের ইহুদিদেরকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করেছিলেন। দ্বিতীয় নথিতে তার হত্যার পরে ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বস্তি এবং যাদের জোরপূর্রক ধর্মান্তর হয়েছিল তাদের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। [19] যখন সে বিদেশী বণিকদের উপর ইসলাম চাপিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়, তখন তাদের সাধারণ হারের চেয়ে তিনগুণ বেশি পোল ট্যাক্স দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। [17]
আল-শওকানির আইনী কাজের তালিকাভুক্ত একটি ব্যাপার হল ইহুদি অনাথদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা।[20]১৯২২ সালে ইমাম ইয়াহিয়ার অধীনে ইহুদি অনাথদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ পুনরায় চালু করা হয়। প্রথম দশ বছর ধরে অনাথদের ডিক্রি জারি করে আক্রমণাত্মকভাবে ধর্মান্তর করা হয়। এটি ১৯২৮ সালে পুনরায় চালু হয়েছিল। [21]
অটোমান সাম্রাজ্যে রক্তকর বা দেসরিমের বিস্তৃতির ফলে জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল। তৎকালে খ্রিস্টান বালকদেরকে অপহরণ করে, সংগ্রহ করে,ক্রীতদাস বানিয়ে, ইসলামে ধর্মান্তরিত করে এবং অটোমান সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করে অথবা সুলতানদের সেবার জন্য নিয়োজিত করে এ অমানবিক কার্য পরিচালিত হতো। [22]১৪ শতকের মাঝামাঝি থেকে ১৮ শতকের গোড়ার দিকে, দেবশিরমে -জেনিসারি পদ্ধতিতে আনুমানিক ৫০,০০০ থেকে এক মিলিয়ন অমুসলিম কিশোর -কিশোরীদের দাস বানানো হয়েছিল। [23]এই ছেলেরা ধর্মান্তরের পরে ইসলামী শিক্ষায় প্রশিক্ষত হতো। [24]
সপ্তদশ শতাব্দীতে সাব্বাতাই জেভি নামে এক সেফারডিক ইহুদি যার পূর্বপুরুষেরা স্প্যানিশ ইনকুজিসনের সময় অটোমান সাম্রাজ্যে স্বাগত হয়েছিল সে নিজেকে মশীহ ঘোষণা করেছিল। সে প্রধান ইহুদি আইন এবং রীতিনীতি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি একটি বড় অনুসারীদের আকৃষ্ট করার পর তাকে অটোমান কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করে এবং মৃত্যুদণ্ড বা ইসলাম গ্রহণের বিকল্প দেয়। সে দ্বিতীয় বিকল্পটি বেছে নেয়।[25]
বিংশ শতাব্দীতে গ্রিকদের উপর অত্যাচারের সময় তাদের জোর করে ইসলামে ধর্মান্তর করা হয়েছিল।[26]
সাফভিড রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা শাহ ইসমাঈল প্রথম বারোজন ইমামপন্থী শিয়া ইসলামী মতবাদকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলে ঘোষণা করে এবং শিয়াবাদ অস্বীকারকারী সুন্নি বুদ্ধিজীবিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আদেশ দেন। [27][28] সেসময় অমুসলিমরা বিরামহীন নির্যাতনের শিকার হয় এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয় অনেককে।[29] একইভাবে, হরমুজ দ্বীপ লুণ্ঠনের পর আব্বাস প্রথম স্থানীয় খ্রিস্টানদের ইসলাম গ্রহণের নির্দেশ দেন, আব্বাস দ্বিতীয় ইহুদিদেরকে মুসলমান হতে বাধ্য করার জন্য মন্ত্রীদের কর্তৃত্ব প্রদান করেন, এবং সুলতান হোসেন জরাস্ত্রীয়দের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার আদেশ দেন।[30] ১৮৩৯ সালে, কাজার যুগে মাশহাদের শহরে ইহুদি সম্প্রদায়কে একদল মুসলিম আক্রমণ করেছিল এবং পরবর্তীতে তাদেরকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করেছিল। [31]
১০১৫ সালে কাশ্মীর উপত্যকায় আক্রমণ করে গজনির মাহমুদ গজনভি উপত্যকা লুণ্ঠন করে, অনেক বন্দীকে নিয়ে যায় এবং জোর পূর্বক ইসলামে ধর্মান্তর করায়।.[32]তার পরবর্তী আক্রমণে মথুরা, বারান এবং কনৌজে আবার অনেকে ধর্মান্তরিত হয়। যে সৈন্যরা তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল তাদের জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণ করানো হয়। বারান (বুলন্দশহর) এ রাজা সহ ১০,০০০ জনকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল।.[33] তারিখ-ই-ইয়ামিনী, রওসাত-উস-সাফা এবং তারিখ-ই-ফেরিশতাতে মাহমুদ এবং তার উত্তরসূরি মাসুদ দ্বারা মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ এবং প্রচারক ও শিক্ষক নিয়োগের কথা আছে । মাহমুদ যেখানেই গিয়েছিল মানুষকে জোর পূর্বক ইসলাম গ্রহণ করিয়েছিল।[34]মুহাম্মাদ ঘুরি এবং তার সেনাপতিরা আক্রমণ করে ১২ শতকের শেষের দিকে হাজার হাজার ক্রীতদাস নিয়ে আসে। যাদের অধিকাংশই ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছিল। [34][35][36][37] সিকান্দার বুশিকান (১৩৯৪-১৪১৭) হিন্দু মন্দির ভেঙে হিন্দুদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে। পর্তুগিজ উপনিবেশকারী দ্বারা ১৫ তম এবং ১৬ তম শতাব্দীতে পশ্চিম উপকূলে এরুপ জোরপূর্বক ধর্মান্তর হয়েছিল।[38]
ঔরঙ্গজেব ইসলামে ধর্মান্তরিত করতে উৎসাহিত করার জন্য বেশ কয়েকটি মাধ্যম ব্যবহার করেছিল।[39][40]১৭১৫ সালে একটি মুঘল-শিখ যুদ্ধে বান্দা সিং বাহাদুরের ৭০০ অনুগামীদের শিরচ্ছেদ করা হয়েছিল।[41][42]প্রতিদিন ১০০ জন শিখকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং কিন্তু তাদের একজনও ইসলাম গ্রহণ করেনি।[43] বান্দা সিং বাহাদুর ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে ক্ষমা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।[44] কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এজন্য তাকে নির্যাতন করা হয়[45][46] ও তাকে তার ৫ বছরের পুত্রের সাথে হত্যা করা হয় ।[43]বান্দার মৃত্যুদণ্ডের পর মুসলিম সুলতান শিখদের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই তাদের গ্রেপ্তার করার আদেশ দেয়।[44]
১৮ শতকের শাসক টিপু সুলতান হিন্দু ও খ্রিস্টানদের উপর অত্যাচার করেছিল।[47][48][49]টিপুর পিতা হায়দার আলির কেরলে মহীশুর আক্রমণের সময় শত শত মন্দির এবং গীর্জা ভেঙে ফেলা হয়েছিল। দশ হাজার খ্রিস্টান, হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল ও জোর করে ইসলাম গ্রহণ করানো হয়েছিল।[50]
বাংলাদেশে, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইসলামিক রাজাকার বাহিনীর বিভিন্ন নেতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ মুসলিম আওয়ামী লীগ (ফরিদ উদ্দিন মওদুদ) এর কয়েকজন নেতার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করেছিল। হিন্দুদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণও অভিযোগের অন্তর্ভুক্ত ছিলো[51][52][53]
এছাড়া বাংলাদেশে প্রায়ই নানাভাবে সংখ্যালঘুদের ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটে।[54][55][56][57][58][59]
১৯৯৮ প্রাণকোট গণহত্যার সময়, ধর্মান্তরে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে ইসলামি জঙ্গিরা ২৬ জন কাশ্মীরি হিন্দুকে হত্যা করে। গ্রামবাসীরা ইসলাম ধর্মগ্রহণ ও গরুর মাংস খেয়ে তা প্রমাণ করার প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে ইসলামি জঙ্গিদল তাদের উপর হামলা করে।[60] ১৯৪৬ সালে নোয়াখালী দাঙ্গায় কয়েক হাজার হিন্দুকে মুসলিম উগ্রবাদীদের দ্বারা জোর করে ইসলামে ধর্মান্তর করা হয়েছিল।[61][62]
পাকিস্তানে তালেবান বিদ্রোহের উত্থান হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি নিপীড়ন ও বৈষম্যের একটি প্রভাবশালী এবং ক্রমবর্ধমান কারণ।[63]
পাকিস্তানের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল রিপোর্ট অনুযায়ী জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে।.[64][65] মুভমেন্ট ফর সলিডারিটি অ্যান্ড পিস (এমএসপি) -এর ২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পাকিস্তানে প্রতি বছর প্রায় এক হাজার নারীকে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয় (৭০০) খ্রিস্টান এবং ৩০০ হিন্দু)।.[66][67][68][69]
২০০৩ সালে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে আফ্রিদি নৃগোষ্ঠীর একজন ছয় বছর বয়সী একটি শিখ মেয়েকে অপহরণ করেছিল। অভিযুক্ত অপহরণকারী দাবি করে যে মেয়েটি ১২ বছর বয়সী এবং ইসলাম গ্রহণ করেছে এজন্য তাকে তার অমুসলিম পরিবারে ফিরিয়ে দেয়া যাবে না।[70]
২০০৭ সালের মে মাসে আফগানিস্তানের সীমান্তের কাছাকাছি পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের চরসাদ্দার খ্রিস্টান সম্প্রদায় জানায় তারা ইসলাম গ্রহণ না করলে বোমা হামলার হুমকির চিঠি পেয়েছে এবং পুলিশ তাদের অভিযোগ গ্রহণ করছে না। তাদের অবস্থা গুরুতর।[71] ২০০৯ সালের জুন মাসে আন্তর্জাতিক খ্রিস্টান কনসার্ন (আইসিসি) ইসলাম ধর্ম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোর জন্য পাকিস্তানে একজন খ্রিস্টান ব্যক্তিকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা জানায়।[72]
২০১২ সালে ১৯ বছর বয়সী পাকিস্তানি ছাত্রী রিংকেল কুমারী, লতা কুমারী এবং বিউটি পার্লারে কর্মরত হিন্দু আশা কুমারীকে হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। এ বিষয়ে মামলা হয় যা সুপ্রিম কোর্টে যায়। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে তারা জানায় তারা তাদের অপহরণকারী 'তথাকথিত' স্বামীদের সাথে নয় বরং তাদের বাবা -মায়ের সাথে থাকতে চায়।[73][74][75]
হঙ্গু জেলার শিখরা জানায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে টাল তহসিলের সহকারী কমিশনার ইয়াকুব খান তাদের ইসলাম গ্রহণের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ইয়াকুব যা অস্বীকার করে।[76][77][78][79]
পাকিস্তানে বসবাসকারী অনেক হিন্দু মেয়েদের অপহরণ করে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয় এবং মুসলমানদের সাথে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়।[80] পাকিস্তান হিন্দু পরিষদের মতে ধর্মীয় নিপীড়ন বিশেষ করে জোরপূর্বক ধর্মান্তর পাকিস্তান থেকে হিন্দুদের অভিবাসনের প্রধান কারণ। ভার্চুন্ডি শরীফ এবং সারহান্দী পীরের মত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক ধর্মান্তরকে সমর্থন করে এবং সিন্ধুর শাসক রাজনৈতিক দলগুলোর এতে সমর্থন ও সুরক্ষা আছে ।[81] ন্যাশনাল কমিশন অব জাস্টিস অ্যান্ড পিস এবং পাকিস্তান হিন্দু পরিষদ (পিএইচসি) অনুসারে প্রায় ১০০০ খ্রিস্টান এবং হিন্দু সংখ্যালঘু মহিলাদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয় এবং তারপর তাদের অপহরণকারী বা ধর্ষকদের সাথে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়া হয়। সিন্ধুর থারপার্কার, উমরকোট ও মিরপুর খাস জেলায় এ ধরনের ঘটনা ক্রমবর্ধমানভাবে দেখা যাচ্ছে।[82] মুভমেন্ট ফর সলিডারিটি অ্যান্ড পিসের আরেকটি রিপোর্ট অনুযায়ী পাকিস্তানে প্রতি বছর প্রায় ১০০০ অমুসলিম মেয়েদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়।[83] পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের ভাইস চেয়ারপারসন অমরনাথ মোতুমালের জানান প্রতি মাসে আনুমানিক ২০ বা ততোধিক হিন্দু মেয়েদের অপহরণ করা হয় এবং ধর্মান্তরিত করা হয়। এ সংখ্যা আরও বেশি হবার সম্ভাবনা ।[84]শুধুমাত্র ২০১৪ সালে ২৬৫ জনকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার আইনি মামলাগুলিতে বেশিরভাগ হিন্দু মেয়েরা এর শিকার হয়েছে ।[85]
২০১০ সালের ১৪-১৫ মে পাঞ্জাবের পাসরুরে মোট ৫৭ জন হিন্দুকে জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল। ১৪ মে একই পরিবারের ৫ জন হিন্দুকে তাদের নিয়োগকর্তার দ্বারা ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল। মুসলমানরা তাদের খাওয়া -দাওয়ার জিনিসগুলি বয়কট করে তাদের বিক্রি কমিয়ে দেয়। হিন্দুদের দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছিল বলে তারা এমন করে। পাশের দোকানের মুসলিম কর্মচারীরা তাদের নিপীড়নও করা হয়। দরিদ্র হিন্দু পরিবারের কাছে উপার্জনের আর কোন উপায় ছিল না এবং বেঁচে থাকার জন্য চাকরি দরকার ছিল। তাই তারা হোটেলে কাজ করত। অন্য একটি পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে ১৭ মে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়। তাদেরকে মুসলিমরা চাকরি দিচ্ছিল না। পরে আরেকজন হিন্দু পুরুষ এবং তার পরিবারের আটজনকে মুসলমানরা তাদের জমি দখল করার ভয় দেখায় ও ধর্মান্তরিত করে।[86]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.