Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জৈবআঞ্চলিকতাবাদ হল একটি রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশগত ব্যবস্থা যা প্রাকৃতিকভাবে সংজ্ঞায়িত বিভিন্ন জৈব অঞ্চল (বায়োরিজিওন) যা পরিবেশ অঞ্চলের (ইকো রিজিওন)-ই সমতুল্য, তার উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। কোন জৈব অঞ্চল সাধারণত সেই অঞ্চলের ভৌত ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য যেমন, সেই অঞ্চলের মাটির প্রকৃতি, ভূখণ্ডের অবস্থান, সেই অঞ্চলে অবস্থিত জলাশয় ও জলবিভাজিকা সীমানা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে সংজ্ঞায়িত করা হয়। জৈবআঞ্চলিকতাবাদের ধারণা অনুযায়ী একটি জৈব অঞ্চল সংজ্ঞায়িত করার সময় সেই অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, তাদের জ্ঞান ও স্বাক্ষরতা এবং তাদের ব্যবহারিক জ্ঞানের মাধ্যমে কোন সমস্যার সমাধানের ক্ষমতা এইসকল ক্ষেত্রের উপরও লক্ষ্য রাখা উচিত।[1]
জৈবআঞ্চলিকতাবাদের ধারণা অনুযায়ী, "একটি জৈব অঞ্চলের প্রাকৃতিক উপাদান (ভূগোল, জলবায়ু, উদ্ভিদকূল, প্রাণীকূল ইত্যাদি) সেই অঞ্চলে বসবাসকারী মনুষ্যগোষ্ঠীর জীবনযাপনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে, তাদের একে অপরের সহিত ব্যবহার, সংযোগ স্থাপন, যা তাদের সেই পরিবেশে টিকে থাকা এবং উন্নত জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন সেই সমস্ত কিছু জৈব অঞ্চলের প্রাকৃতিক উপাদানের উপর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নির্ভর করে। এছারাও জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, আত্মিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র প্রাকৃতিক উপাদানের উপর ভিত্তি করেই অঞ্চলবিশেষে বিভিন্ন হয়।" [2]
জৈবআঞ্চলিকতাবাদ এমন একটি ধারণা যাকে কোন বিশেষ আঞ্চলিক সীমানার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ; ক্যাসকেডিয়া জৈব অঞ্চল যার মধ্যে প্রধানত ওয়াশিংটন -এর অরেগন অঞ্চল, দঃ-পূঃ আলাস্কা, ক্যালিফোর্নিয়ার সুদূর উত্তর অঞ্চল এবং কানাডার পশ্চিম উপকূল অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, আবার কখনো কখনো পশ্চিম মন্টানার ইদাহো -কেও মাঝে মাঝে এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[3] এইরকমই আরেকটি জৈব অঞ্চলের উদাহরণ যাকে কোনও আঞ্চলিক সীমানা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যায়না তা হল, ওজার্ক মালভূমি অঞ্চল বা ওজার্ক পার্বত্য অঞ্চল যা, দক্ষিণ মিসৌরি অঞ্চল, উঃ-পঃ আরকান্সাস, ওকালোহামার উঃ-পূঃ সীমান্ত, এবং কান্সাস-এর দঃ-পূঃ অঞ্চল নিয়ে গঠিত।[4]
জৈব অঞ্চল ও পরিবেশ অঞ্চল সমতুল্য হলেও সমার্থক নয়। বিশ্ব বন্যজীবন তহবিল (ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড) এবং পরিবেশগত সহযোগিতা কমিশন (কমিশন ফর এনভাইরনমেন্টাল কো-অপারেশন) -এর মত অনুযায়ী পরিবেশ অঞ্চল বৈজ্ঞানিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় সেই অঞ্চলের বন্যজীবন এবং উদ্ভিদ প্রজাতির উপর লক্ষ্য রেখে অপরদিকে জৈব অঞ্চল সংজ্ঞায়িত করা হয় প্রাকৃতিক উপাদান সহ সামাজিক এবং রাজনৈতিক উপাদান সহ সংজ্ঞায়িত মানব জনগোষ্ঠী অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে। এই মতবাদ অনুযায়ী জৈবআঞ্চলিকতাবাদ হল বাস্তুতান্ত্রিক ভিত্তি সহ রাজনৈতিকভাবে অঞ্চলভিত্তিক বিভাজন।
জৈবআঞ্চলিকতাবাদ শব্দটি ১৯৭৫ সালে বায়োরিজিওনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট -এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেন ভ্যান নেউকির্ক আবিষ্কার করেছিলেন।[5] ১৯৭০ সালের শুরুর দিকে পিটার বার্গ এবং রেমন্ড দাসম্যান এই শব্দটির বহুল প্রচলন চালু করেন।[6] ডেভিড হেনকে [7] এবং কির্কপ্যাট্রিক সালের [8] ন্যায় নামী লেখকরাও এই শব্দটিকে সমর্থন করে এর ব্যবহার শুরু করেন।
জৈবআঞ্চলিকতাবাদের দৃষ্টিকোণ একটি সমজাতীয় অর্থনৈতিক এবং উপভোক্তা সংস্কৃতির বিরোধিতা করে কারণ এই মতবাদের দৃষ্টিকোণে পরিবেশগত উপাদানের অভাব দেখা যায়। জৈবআঞ্চলিকতাবাদের দৃষ্টিকোণে নিম্নলিখিত উপাদানগুলি পরিলক্ষিত করা প্রয়োজন,
জৈব অঞ্চলের মানচিত্রায়ন সেই অঞ্চলকে ভালোভাবে বোঝার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভাল মানের জৈব আঞ্চলিক মানচিতত্রে সময়ের সাথে সাথে ভূতত্ত্ব, উদ্ভিদ, প্রাণীজগতের বাসস্থানের বিস্তার ও স্তরগুলি পরিদর্শিত হয়। এই জাতীয় মানচিত্রে সংহত সমস্ত বিষয়বস্তু একটি পরিবেশগত পদ্ধতি চিত্রিত করার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। জৈব অঞ্চলের মানচিত্রের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল, ডেভিড ম্যাক্লস্কির ক্যাসকেডিয়ার নতুন মানচিত্র।[11]
কিছু চিন্তাবিদ একমত নন যে গভীর বাস্তুতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা জৈবআঞ্চলিকতাবাদের সঙ্গে সংযুক্ত, [12] বা জৈব আঞ্চলিকতাবাদ মানব সমাজকে সংগঠিত করার একটি বাস্তব উপায় হিসাবে পরিগনিত হতে পারে।[13]
জৈবআঞ্চলিকতাবাদের ধারনার সঙ্গে পরিবেশবাদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য দেখা যায়, যেমন প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপন করা ইত্যাদি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ২০ শতকের পুরাতন ভাবধারা অনুসরণকারী পরিবেশবিদদের সাথে মতের পার্থক্যও দেখা যায়।[14]
পিটার বার্গের মতে, জৈবআঞ্চলিকতাবাদ এক ক্রিয়াশীল পরিবর্তনকারী ব্যবস্থা যার মুল ভিত্তি হল প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপন এবং ইহা প্রতিবাদ-ভিত্তিক পরিবেশগত আন্দোলনের থেকে সম্পূর্ণই ভিন্ন। এছারাও যেমন পুরাতন আদর্শবাদী পরিবেশবাদীরা ক্রমবর্ধমান মানবসভ্যতা ও শিল্পের বিকাশকে পরিবেশ ও প্রকৃতির শত্রু হিসাবে বিবেচনা করে, কিন্তু তার বিপরীতে জৈবআঞ্চলিকতাবাদের ধারনায় মানবসভ্যতা ও তার সাংস্কৃতিক বিকাশকে প্রকৃতির অভিন্ন অঙ্গ হিসাবে ধরা হয় এবং এই মতবাদে প্রাকৃতিক সম্পদ ও বনভূমি কে মানবজগত থেকে পৃথক রাখার বদলে, পরিবর্তনশীল প্রকৃতির সাথে এক ইতিবাচক, সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের কথা বলা হয়।[14]
উত্তর আমেরিকার জৈবআঞ্চলিক সংগঠনগুলি ১৯৮৪ সাল থেকে পুরো আমেরিকা জুড়ে জৈবআঞ্চলিকতাবাদীদের দ্বি-বার্ষিক সমাবেশ হয়ে আসছে এবং তারা জাতীয় স্তরে সবুজ দল'-কে প্রতিষ্ঠা করেছে। জৈবআঞ্চলিকতাবাদীরা স্থায়ী আন্দোলনকে উৎসাহ দেয়। জৈবআঞ্চলিকতাবাদের ধারণা প্রায়ই সবুজ আন্দোলনে ব্যবহৃত হয়। এই আন্দোলনের মুল উদ্দেশ্য হল নির্বাচন ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করে ও জৈব আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব না দিয়ে যে সকল রাজনৈতিক দল অঞ্চলের সিমানা নির্ধারণ করে তাদের বিরোধিতা করা। এই আন্দোলন আঞ্চলিক এবং দেশীয় রাজনীতিতে নির্বাচনের সময় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
স্থানীয় স্তরে, বেশ কয়েকটি জৈব অঞ্চলবিশেষের সংগঠন রয়েছে যাদের সদস্যরা নিয়মিত মিলিত হন। উদাহরণস্বরূপঃ ওজার্ক মালভূমি জৈব অঞ্চলের সংগঠন থেকে একটি সম্মেলন ওএসিসি নামক একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয় এবং ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছর তারা সভা করে আসছে।[15] কানসাস অঞ্চলেও এরুপ একটি সংগঠন বর্তমান যারা কেএডাব্লু [16] নামে বেশি পরিচিত এবং ১৯৮২ সাল থেকে তারা নিয়মিত সভার আয়োজন করে আসছে।কেএডব্লু সাধারণত প্রতি বসন্তে একটি বার্ষিক সভা করে।
কানাডার আলবার্তা প্রদেশের সরকার সম্প্রতি তাদের ভূমি ব্যবহার নীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে এবং অঞ্চলের প্রধান নদী অববাহিকা অঞ্চলের ভূমি ব্যবহারের জন্য নতুন ফরমান জারি করেছে। স্থানীয় উদ্যোগকারী কিছু সংস্থা যেমন বিভার হিলস [17] ইনিশিয়েটিভ, যারা এল্ক দ্বীপ জাতীয় উদ্যানকে ঘিরে একটি বিশাল সংরক্ষিত জীবমণ্ডল অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা করছে, তারা সরকারের এই নীতিকে সমর্থন জানিয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.