Loading AI tools
মিশরের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জামাল আবদেল নাসের (আরবি: جمال عبد الناصر حسين, মিশরীয় আরবি: ɡæˈmæːl ʕæbdenˈnɑːsˤeɾ ħeˈseːn) (১৫ই জানুয়ারি, ১৯১৮ – ২৮শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭০) ছিলেন মিশরের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি যিনি ১৯৫৬ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত উক্ত পদে আসীন ছিলেন। তার নেতৃত্বে ১৯৫২ সালের মিশরীয় বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয়েছিল যার মধ্য দিয়ে মিশরের তৎকালীন রাজা প্রথম ফারুকের পতন ঘটে ও মিশরে ব্যাপক শিল্পায়নের সূচনা হয়। এই বিপ্লবের মাধ্যমে নাসেরের বিশেষ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিকশিত হয়েছিল যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে আরব জাতীয়তাবদের চিন্তাধারার সূচনা ঘটে। নাসেরের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আলজেরিয়া, লিবিয়া, ইরাক, ইয়েমেনের মত মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোতে সমন্বিত আরব জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চিন্তাধারার সূত্রপাত ঘটে। ১৯৬৪ সালের গঠিত প্যালেস্টাইন লিবারেশান ফ্রন্ট (পিএলও)-র প্রতিষ্ঠায় নাসের প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছিলেন। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বা ন্যামের সংগঠনেও নাসেরের ভূমিকা প্রধান ছিল।
জামাল আবদেল নাসের | |
---|---|
جمال عبد الناصر | |
২য় মিশরের রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ২৩ জুন ১৯৫৬ – ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ | |
প্রধানমন্ত্রী | তালিকা
|
উপরাষ্ট্রপতি | তালিকা
|
পূর্বসূরী | মুহাম্মদ নজিব |
উত্তরসূরী | আনোয়ার সাদাত |
৩১তম মিশরের প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৯ জুন ১৯৬৭ – ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ | |
রাষ্ট্রপতি | নিজে |
পূর্বসূরী | মোহামেদ সেদকি সুলায়মান |
উত্তরসূরী | মাহমুদ ফাওজি |
কাজের মেয়াদ ১৮ এপ্রিল ১৯৫৪ – ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ | |
রাষ্ট্রপতি | মোহামেদ নাগিব নিজে |
পূর্বসূরী | মোহামেদ নাগিব |
উত্তরসূরী | আলী সাবড়ি |
কাজের মেয়াদ ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ – ৮ মার্চ ১৯৫৪ | |
রাষ্ট্রপতি | মোহামেদ নাগিব |
পূর্বসূরী | মোহামেদ নাগিব |
উত্তরসূরী | মোহামেদ নাগিব |
মিশরের উপ-প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৮ মার্চ ১৯৫৪ – ১৮ এপ্রিল ১৯৫৪ | |
প্রধানমন্ত্রী | মোহামেদ নাগিব |
পূর্বসূরী | গামাল সালেম |
উত্তরসূরী | গামাল সালেম |
কাজের মেয়াদ ১৮ জুন ১৯৫৩ – ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ | |
প্রধানমন্ত্রী | মোহামেদ নাগিব |
পূর্বসূরী | সুলায়মান হাফেজ |
উত্তরসূরী | গামাল সালেম |
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৮ জুন ১৯৫৩ – ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ | |
প্রধানমন্ত্রী | মোহামেদ নাগিব |
পূর্বসূরী | সুলায়মান হাফেজ |
উত্তরসূরী | জাকারিয়া মহিয়েদিনী |
বিপ্লবী কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান | |
কাজের মেয়াদ ১৪ নভেম্বর ১৯৫৪ – ২৩ জুন ১৯৫৬ | |
পূর্বসূরী | মোহামেদ নাগিব |
উত্তরসূরী | নিজে রাষ্ট্রপতি হিসেবে |
জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের মহাসচিব | |
কাজের মেয়াদ ৫ অক্টোবর ১৯৬৪ – ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ | |
পূর্বসূরী | জোসিপ ব্রজ টিটো |
উত্তরসূরী | কেনেথ কাউন্ডা |
অর্গানাইজেশন অফ আফ্রিকান ইউনিটের চেয়ারম্যান | |
কাজের মেয়াদ ১৭ জুলাই ১৯৬৪ – ২১ অক্টোবর ১৯৬৫ | |
পূর্বসূরী | প্রথম হাইলে সেলাসি |
উত্তরসূরী | কোয়ামে এনক্রুমা |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | আলেকজান্দ্রিয়া, মিশরের সালতানাত | ১৫ জানুয়ারি ১৯১৮
মৃত্যু | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ ৫২) কায়রো, সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র | (বয়স
মৃত্যুর কারণ | হৃৎপেশীর রক্তাভাবজনিত মৃত্যু |
সমাধিস্থল | জামাল আবদেল নাসের মসজিদ |
জাতীয়তা | মিশরীয় |
রাজনৈতিক দল | আরব সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়ন |
দাম্পত্য সঙ্গী | তাহিয়া কাজেম (বি. ১৯৪৪) |
সন্তান | পাঁচটি, খালিদ আবদেল নাসের সহ |
জীবিকা | সামরিক কর্মকর্তা, এবং পরবর্তীতে রাজনীতিবিদ |
স্বাক্ষর | |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | মিশর রাজ্য মিশর প্রজাতন্ত্র সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র |
শাখা | মিশরীয় সেনাবাহিনী |
কাজের মেয়াদ | ১৯৩৮–১৯৫২ |
পদ | লেফটেন্যান্ট কর্নেল |
যুদ্ধ | ১৯৪৮ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ |
জামাল আবদেল নাসের অধুনা আরব ইতিহাস ও বিংশ শতাব্দীর উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকেন। নাসেরের জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা ও সমন্বিত আরব জাতীয়তাবাদ বা প্যান-অ্যারাবিজ্ম নীতি যাকে ক্ষেত্রবিশেষে নাসেরবাদ বা নাসেরিজ্ম আখ্যাও দেয়া হয়, ষাটের দশকসহ পরবর্তীকালে মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল জনসমর্থন লাভ করে ও সূত্রপাতের পর থেকে এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
জামাল আবদেল নাসের ১৯১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তারিখে আলেকজান্দ্রিয়া শহরের ১৮ আনাওয়াতি স্ট্রিট, বাকুস ঠিকানায় জন্মগ্রহণ করেন।[1] নাসেরের পিতা আবদেল নাসের হুসেইন (জন্মঃ ১১ জুলাই, ১৮৮৮) দক্ষিণ মিশরের বেনি মুর গ্রাম হতে আগত ছিলেন ও মা ছিলেন ফাহিমা হামিদ, যিনি একজন সম্পন্ন কয়লা ব্যাবসায়ীর কন্যা ছিলেন এবং নাসেরের আট বছর বয়সে ১৯২৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
নাসের তার চাচার সাথে কায়রোতে বসবাস করতেন যার কারণে তিনি তার মায়ের মৃত্যুর খবর তাৎক্ষণিক ভাবে জানতে পারেননি তথা মায়ের শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেননা। নাসেরের জীবণীলেখকদের মতে নাসেরের মা আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন এবং নাসেরকে প্রতিপালন করতে পারবেননা বলে তাকে তার চাচার কাছে রাখতেন। আরেকটি সূত্র হতে জানা যায় শৈশবেই নাসেরের মধ্যে বিশেষ প্রতিভার কথা উপলব্ধি করে তার পিতা তাকে শহরে পাঠিয়ে দেন যেন তার শিক্ষার্জনের কোন ব্যাঘাত না ঘটে। তবে অধিকাংশ জীবণীলেখকদের মতে নাসের তার মার খুবই অনুরাগী ছিল ও মায়ের অকাল মৃত্যু নাসেরের মনে অত্যন্ত প্রভাব ফেলেছিল, যা মায়ের মৃত্যুর এক বছরের কম সময়ের তার বাবার দ্বিতীয় বিয়ের কারণে আরও গভীর হয়।[2][3]
বেনি মুরে থাকাকালীন নাসের সেখানকার কুরআন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো ছাত্র হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন যেখানে তার শিক্ষক বাকি ছাত্রদের নাসেরের মতে হয়ে উঠবার জন্য তাগিদ দিতেন। মায়ের মৃত্যুর পর বাবা ও চাচার সাথে পালা করে থাকবার কারণে নাসেরের শৈশব কেটেছে বিভিন্ন শহরে। এগারো বছর বয়সের পর থেকে নাসের কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া, দামানহুর ও ইসমাইলিয়া অর্থাৎ ভিনভিন্ন শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। বারংবার এই বাসস্থান বদলে নাসেরের পড়ালেখার বিশেষ ক্ষতি তো হয়ইনি বরং বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করার ফলে নাসের মিশরীয়দের মধ্যে শ্রেণিবিভাজন প্রসঙ্গে স্পষ্ট ধারণা লাভ করেন। নাসেরের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছিল। ১৯৩৩ সালের নাসের যখন তার চাচার সঙ্গে থাকতেন, তখন তার বাসস্থানের কাছেই ছিল মশরের জাতীয় গ্রন্থাগার যা নাসেরের জন্য বিশেষ সহায়ক হয়। নাসেরের প্রিয় পাঠ্য বিষয় ছিল কুরআন, হাদীস ও হযরত মুহম্মদ-এর সাহাবীদের রচনাবলী। এছাড়াও সেই বয়সেই নাসের নেপোলিয়ন বোনাপার্টে, মহাত্মা গান্ধী, ভলটেয়ার, ভিক্টর হুগো, চার্লস ডিকেন্সের মত ব্যক্তিদের রচনাবলী পড়েছেন। বিশেষ করে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও জাতীয়তাবাদী কবি আহমেদ শাওকির লেখা পড়ে নাসের বিশেষভাবে প্রভাবিত হন।
১৯৩৬ সালে একটি ব্রিটিশবিরোধী সভায় যোগদান করেন ও বাধাগ্রস্থ হয়ে তিনিসহ সভায় অন্যান্য যোগদানকারীরা আহত হন। একই সময়ে তিনি গ্রেপ্তারও হন ও দুদিন জেল খাটেন যেখানে তার সাথে মিশরীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্যরা আটক ছিলেন। স্কুল জীবনেই নাসের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়েন।[4]
নাসের ১৯৪৪ সালে বাইশ বছর বয়সী বন্ধুভগ্নী ইরানি বংশদ্ভুদ তাহিয়া কাজেমকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময়ে নাসের ছিলেন একজন সামরিক কর্মকর্তা যিনি তার পরিবারকে নিয়ে কায়রোর মানশিয়াত এলাকায় বসবাস শুরু করেন। নাসের মৃত্যু পর্যন্ত এই বাড়িটিতেই বসবাস করেছেন।
নাসের তাহিয়া দম্পতি তিন পুত্র ও দুই কন্যার জন্ম দেন যারা হলেন খালিদ, আবদেল হাকিম, আব্দেক হামিদ, হুদা ও মোনা।[5]
সন্তানদের মাঝে জ্যেষ্ঠ হুদা আবদেল নাসের বর্তমানে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন গবেষক যার সাহায্যে সংশ্লিষ্ট অনেক প্রাচীন দলিল দস্তাবেজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। আরেক কন্যা মোনা আবদেল নাসেরের স্বামী ছিলেন মিশরীয় কোটিপতি আশরাফ মারওয়ান (মৃত্যুঃ ২০০৭)। মোনা ও আশরাফ দম্পতির পুত্র আহমেদ মারওয়ানের স্ত্রী হচ্ছেন আরব লীগের বর্তমান মহাসচিব ও সাবেক মিশরীয় মন্ত্রী আমর মুসার কন্যা হানিয়া মুসা।
নাসের ১৯৩৭ সালে মিশরীয় মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগদানের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু ওয়াস্তা নামক এক বিশেষ যোগ্যতা না থাকায় তার আবেদন ফিরিয়ে দেয়া হয়। সামরিক বাহিনীতে যোগদানে ব্যার্থ হয়ে নাসের আইন পড়ার উদ্দেশ্যে ল’স্কুলে ভর্তি হন। সেখানেও সাফল্য না পেয়ে তিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের আবেদন করেন এবং এখানেও সামরিক বাহিনী প্রদর্শিত একই কারণে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইব্রাহীম খায়েরী পাশার সাথে দেখা করে তার সাহায্যে নাসের মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। এখানে নাসেরের সাথে আবদেল হাকিম আমের ও আনোয়ার সাদাতের দেখা হয় যারা পরে নাসেরের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে নাসের একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন।[4]
১৯৩৯ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে নাসের ও আমের সুদান নিয়োগ লাভ করেন; সুদান সেসময়ে প্রশাসনিক ভাবে মিশরের সাথে সংযুক্ত ছিল।[6] নাসের সেখানে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ম পালন করেন। তিনি যুদ্ধ চলাকালে ঐ এলাকায় অবস্থান করছেন অক্ষশক্তির এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ করেন। বিশেষ করে সেখানে অবস্থানকারী ইটালির কিছুর কর্মকর্তার সাথে তিনি যোগাযোগ করেন এবং একটি পরিকল্পনা করেন যার দ্বারা নাসের অক্ষশক্তির সাহায্যে একটি অভ্যুত্থান করে মিশরের তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনকর্তাদের বিতাড়িত করবেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা পরে আর বাস্তবায়িত হয়নি।[7] নাসের ১৯৪২ সালের সুদান থেকে ফিরে আসেন ও পরের বছর মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে একজন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ম পালন শুরু করেন।[8]
আরউইন রমেলের আফ্রিকা কর্পস মিশরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার কারণে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তৎকালীন মিশরীয় প্রধানমন্ত্রী আলী মাহেরকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা শুরু করে ও তাকে অক্ষশক্তির একজন সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করে। এই কারণে মিশরে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লর্ড ল্যাম্পসন ১৯৪২ সালে একটি ক্ষুদ্র ব্রিটিশ বাহিনীর সাহায্যে মিশরের রাজা প্রথম ফারুকের প্রতি চাপ প্রয়োগ করেন যার ফলে ফারুক আলী মাহেরকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হন ও ল্যাম্পসনের পরামর্শে ব্রিটিশবান্ধব হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত মুস্তফা আল-নাহহাসকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। এই ঘটনায় নাসেরসহ সাধারণ মিশরীয়দের মধ্যে প্রচন্ড বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। নাসের এই সিদ্ধান্তকে মিশরের স্বাধীনতার প্রতি প্রচন্ড অপমান হিসেবে চিহ্নিত করেন ও সংশ্লিষ্ট সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে পড়েন। এই ঘটনার পর নাসের সশস্ত্র বাহিনীতে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার তরুণ অফিসারদের সংগঠিত করতে শুরু করেন। তরুণ অফিসারদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নাসের প্রধান মাধ্যম ছিল আবদেল হাকিম আমের যিনি স্বাধীনতাকামী অফিসারদের চিহ্নিত করে তাদের ব্যাপারে তথ্যসামগ্রী নাসেরকে সরবরাহ করতেন।[9]
এল আলামিনের যুদ্ধ চলাকালীন মিশর আনুষ্ঠানিকভাবে নিরপেক্ষ ছিল বিধায় কোন পক্ষ অবলম্বন করেনি। এক্ষেত্রে মিশরীয় সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় নাসেরের যুদ্ধের প্রথম অভিজ্ঞতা হয় ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে।[10] এ যুদ্ধে মিশর যোগ দেয়ার আগেই ঐ অঞ্চলের বিভিন্ন উপদল বা মিলিশিয়া যুদ্ধে লিপ্ত ছিল যেমন মুসলিম ব্রাদারহুড, আরব লিবারেশান ফ্রন্ট ইত্যাদি। নাসের এসব উপদলের উদ্দেশ্যর ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন ও এদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ ছিলেন। যার কারণে নাসের উপদলগুলোকে সমর্থন করার বদলে ফিলিস্তিনের তৎকালীন মুফতি আমিন আল-হোসায়নিকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে অবশ্য মিশর সরকার নাসেরকে সেই অনুমতি দেয়নি।[11]
১৯৪৮ সালের মে মাসে রাজা প্রথম ফারুক মিশরীয় বাহিনীকে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনে প্রেরণ করেন, যে বাহিনীতে নাসের ৬ষ্ঠ পদাতিক ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।[12] নাসের এই যুদ্ধে মিশরীয় বাহিনীর অপ্রস্তুত অবস্থার কথা লিখেছিলেন। নাসেরের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ফালুযা পকেট নামক একটি এলাকা অধিকারে আনতে সক্ষম হয়। অধিকারের পরপরই ঐ বছরের আগস্ট মাসে ইসরায়েলি বাহিনী নাসেরের বাহিনীকে ঘিরে ফেলে। পরে ইসরায়েল ঐ এলাকার দখল লাভ করেছিল ঠিকই কিন্তু সেটি হয়েছিল আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে, নাসের পুরো সময়ে কখনওই ইসরায়েলের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি।[12]
১৯৪৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাসের ইসরায়েলের সাথে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মিশরের প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরিত হন এবং আলোচনার বিষয়বস্তুকে মিশরের জন্য অপমানকর হিসেবে চিহ্নিত করেন।[13] যুদ্ধপরবর্তী সময়ে নাসের আবার কায়রোতে মিলিটারি অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।[14] ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট তৎপরতা চালিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড নাম্নী উপদলটির সাথে আলোচনার জন্য দূত পাঠান। কিন্তু নাসের অল্প সময়ের মধ্যে উপলব্ধি করেন যে ঐ উপদলটি জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে তার সমমত পোষণ করে না। এই উপলব্ধির পর থেকে নাসের তার রাজনৈতিক জীবনে এই দলটির সংস্পর্শ থেকে দূরে থেকেছেন।[12]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.