Loading AI tools
মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জন নর্থাপ শিভ (২২শে ফেব্রুয়ারি, ১৯১৩ – ১লা জুন, ১৯৮৪) ছিলেন একজন আমেরিকান পদার্থবিদ এবং উদ্ভাবক। তিনি বেল টেলিফোন গবেষণাগারে ট্রানজিস্টার আবিষ্কারের দিনগুলোতে ইলেক্ট্রনিক্স প্রকৌশল এবং কঠিন অবস্থা পদার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। বিশেষ করে তিনি পরীক্ষামূলক প্রমাণে দেখান যে, ইলেকট্রন হোলগুলো বাল্ক জার্মেনিয়ামের মাধ্যমে ছড়ায় যা আগের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণিত করে। এটি জন বারডিন এবং ওয়াল্টার হাউজার ব্র্যাটেইনের পয়েন্ট কন্টাক ট্রানজিস্টার থেকে উইলিয়াম শকলের রোবাস্ট জংশন ট্রানজিস্টার পর্যন্ত ধারা গুলোকে প্রশস্ত করেছিলো। শিভ ১৯৪৮ সালে ফটো ট্রানজিস্টার আবিষ্কার করেন এবং এটি আবিষ্কারের জন্যই তিনি বিখ্যাত। এটি হল একটি ডিভাইস যা, একটি ফটো ডায়োডের সংবেদনী আলো এবং ট্রানজিস্টারের প্রাপ্ত তড়িৎকে মিলিত করে। ১৯৫৯ সালে তিনি শিভ তরঙ্গ যন্ত্র তৈরির কাজে এবং তরঙ্গ গতি ব্যাখ্যাকরণে মূল উপকরণ হিসেবে এই তত্ত্বটি ব্যবহার করেন।
জন এন. শিভ | |
---|---|
জন্ম | জন নর্থ্রাপ সিভ ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৩ বাল্টিমোর, মেরী লেন্ড, আমেরিকা । |
মৃত্যু | জুন ১, ১৯৮৪ ৭১) লিনক্রফট, নিউ জার্সি, আমেরিকা । | (বয়স
জাতীয়তা | আমেরিকা |
মাতৃশিক্ষায়তন | রুটজার্স বিশ্ববিদ্যালয়(বি.এস.), জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়(পিএইচ.ডি.) |
পরিচিতির কারণ | ট্রানজিস্টার উন্নয়ণ, ফটোট্রানজিস্টর, সিভ তরঙ্গ যন্ত্র । |
দাম্পত্য সঙ্গী | হেলেনা সিভ |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | পদার্থ বিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | বেল গবেষণাগার |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন | উইলিয়াম শকলে |
জন নর্থাপ শিভ ২২শে ফেব্রুয়ারি, ১৯১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন[2] এবং নিউ জার্সিতে বাল্যকাল অতিবাহিত করেন।[3] শিভ ১৯৩৪ সালে পদার্থ এবং রসায়ন শাখায় রাটজারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। পিএইচডি কালীন সময়ে গবেষণার অংশ হিসেবে একটি অভিসন্দর্ভ পত্র জমা দেন। পত্রের বিষয়বস্তু হলো "যান্ত্রিক গণনার মডুলেশন তত্ত্ব এবং তার চর্চা।"[4] শিভ আমেরিকার ফিজিক্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি, ফাই বেটা কাপ্পা এবং সিগমা জাই সংগঠনগুলোর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।[2]
জন এন. শিভ ১৯৩৯ সালে বেল টেলিফোন গবেষণাগারে যোগ দান করেছিলেন।[2] শিভ প্রাথমিক ভাবে ফিজিক্স রিসার্চ, ডিভাইস উন্নয়নকারক এবং পরে শিক্ষা কেন্দ্র ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কাজ করেন।[3] শিল্প ক্ষেত্র থেকে অবসর গ্রহণ করার পর, তিনি জর্জিয়ান কোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়-এ পদার্থবিজ্ঞানের একজন উপরি অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং সেখানে অনেকদিন ধরে কাজ করেন। আজো কলেজ ক্যাম্পাসের গোলাকৃতি সূর্যঘড়ি, কলেজের সামনে বইয়ের দোকান এবং লাইব্রেরি, এগুলো জন এন. শিভের সারা জীবনের বাসনা এবং পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার উন্নতির জন্য সেগুলো উৎসর্গ করা।
৩০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮ সালে শিভ আবিষ্কার করেন যে, জার্মেনিয়ামের একটি পি-টাইপ স্তরের সাথে সোনার প্রলেপ দেয়া টাংস্টেন ধাতুর সংযুক্তিতে একটি এন-টাইপ সাবস্ট্রেট এর মাধ্যমে "একটি ভয়ঙ্কর ট্রায়োড প্রভাব" এর সৃষ্টি হয়।[5]:১৫৩ ঠিক ঐ বছরের ১৩ই ফেব্রুয়ারি তিনি আরো একটি নতুন উদ্ভাবন করেন। এই আবিষ্কারের মূল নীতি ছিলো, একটি ব্রোঞ্জের তৈরি ট্রানজিস্টার পি-স্তরের "ক্ষমতা ৪০x" অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এন-টাইপ সাবস্ট্রেটের উপরিভাগের সাথে সংযুক্ত থাকবে।[5]:১৫৩
তিনি তার আবিষ্কারের বিস্তৃতির জন্য একটি ব্রোঞ্জের মাধ্যমে একটি ট্রানজিস্টার তৈরি করেন যার সামনে এবং পেছনে বাল্ক জার্মেনিয়ামের পাতলা ছানি দেয়া। তার এ কাজটি প্রমাণ করে দেয় যে, ইলেক্ট্রনিক হোলগুলো বাল্ক জার্মেনিয়ামের ভেতরে ছড়ানো ছিটানো থাকে। যা আগের ধারাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিলো।[5]:১৪৩[6]:১৪৫[7] এই তত্ত্বটি উইলিয়াম শকলির ধারণাকে নিশ্চিত করে যে, একটি জংশন ট্রানজিস্টার তৈরি করা সম্ভব। যা এযাবতকাল তিনি তার দলের কাছ থেকে তথ্যটি গোপন করে রেখেছিলেন। শকলি পরে কর্মীদের কাজগুলোকে স্বীকার করে বলেন, "তারা মিশুক এবং একে অপরের সহযোগী এবং তাদের মধ্যে একটি কার্যত প্রতিযোগিতা আছে।" তিনি আরও স্বীকার করেন যে, "১৯৪৮ সালে জন এন. শিভের "হ্যান্ড ওয়াজ ফোর্সড" প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত শকলি কিছু নিজস্ব গোপন কাজ করে রেখেছিলেন যা প্রকাশ করেননি।[8]
১৯৪৮ সালে শিভ ফটো ট্রানজিস্টার আবিষ্কার করেন। সেখানে তিনি তারের পরিবর্তে আলোর বিম্ব ব্যবহার করেন। এ ধারায় পয়েন্ট কন্ট্যাক ট্রানজিস্টারের বিকিরণে ইলেকট্রন হোলগুলো তৈরি করে যা সংগ্রাহক এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।[5]:২০৫ এ তত্ত্বটি তিনি ১৯৫০ সালের আগে প্রকাশ করেননি।[9] এই আবিষ্কারটি আধুনিক দিনগুলোকে দেশব্যাপী সরাসরি ডায়ালিং পদ্ধতিকে বিস্তৃত করে।[3]
শিভ একজন প্রতিভাধর বক্তা ছিলেন এবং বেল টেলিফোন গবেষণাগারে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।[10]
[11] তিনি পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষামূলক কর্মসূচির প্রশাসনিক ভূমিকায় বেল ল্যাবরেটরির কর্মচারীদের প্রধান পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[3]
বেল ল্যাবরেটরিতে থাকাকালীন সময়ে তিনি শিভ তরঙ্গ যন্ত্র (এছাড়াও এটি শিভ তরঙ্গ জেনারেটর নামেও পরিচিত) আবিষ্কার করেন। তরঙ্গ জেনারেটরটি এক সারি ধাতব ছেনির দ্বারা মুচড়ানো তারকে সংযুক্ত করে তরঙ্গের গতিকে চিত্রিত করে। মোচড়ানো তারটি এক ছিপ থেকে পরবর্তী ছিপে শক্তি প্রেরণ করে। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গে রূপান্তরের মত এর গতি উচ্চ কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট তরঙ্গাকার, তাই মানুষ এটি খালি চোখে দেখতে পারে না। প্রক্রিয়াটির শেষ মুহূর্তে মুচড়ানো তারগুলো স্বাভাবিক হয়ে আসে। যন্ত্রের স্বাভাবিক এই গতি জানিয়ে দেয় যে, তরঙ্গটি সারির ছিপগুলোকে আড়াআড়ি ভাবে স্থির করতে বেশ কয়েক সেকেন্ড সময় নিবে এবং এর মাধ্যমে মুচড়ানো তারের গতিকে সহজে পর্যবেক্ষণে করা সম্ভব। তরঙ্গ জেনারেটরটি তরঙ্গের প্রতিফলন, স্থায়ী তরঙ্গ, অনুরণন, ইম্পিডেন্স মিলানো এবং আংশিক প্রতিফলনকে ব্যাখ্যা করে। শিভ, দুটি শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। যেখানে তিনি তার আবিষ্কারের দৃষ্টান্তমূলক প্রমাণ ব্যাখ্যা করেন। যার একটির নাম "সিম্পল ওয়েভ"[12] ও অপরটি সিমিলারিটিস ইন ওয়েব বিহেবিয়োর,[1] এবং এই নামে একটি বইও রচনা করেন।[13] তার আবিষ্কারগুলো স্যান ফ্রান্সিসকোর এক্সপ্লোরেটরিয়াম বিজ্ঞান জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য প্রদর্শনী থেকে একটি বড় মাপের সংস্করণ রাখা হয়।[14]
শিভ সেলেনিয়াম সংশোধন এবং এর তৈরি পদ্ধতি সহ বিভিন্ন পেটেন্ট গ্রহণ করেন। [15]সরাসরি উত্তপ্ত তাপদ্বয়,[16]ফটোরেজিস্টিভ ট্রান্সকেটিং ডিভাইস ,[17]টেলুরিয়াম এবং তার তৈরি প্রক্রিয়াসহ সেলেনিয়াম সংশোধন,[18]সেলেনিয়াম রেকটিফায়ারের বিশোধন পদ্ধতির যন্ত্রপাতি,[19]অর্ধপরিবাহী আলোক তড়িৎ যন্ত্র,[20]অর্ধপরিবাহী অনুবাদকের শর্তাবলী,[21]অর্ধপরিবাহী বিবর্ধক,[22] এবং গেট কারেন্টের পরিবর্তন।[23]
শিভ তার জীবনে তিনটি বই রচনা করেন। যার শুরুটা দ্যা প্রপার্টিস, ফিজিক্স, এন্ড ডিজাইন অব সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস বই-এর মাধ্যমে। বইটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশ করেছিলেন। এই বইয়ের মূল ভিত্তি ছিলো অর্ধপরিবাহী ডিভাইস।[24] পরবর্তীতে তিনি ১৯৬১ সালে "সিমিলারিটিস অব ওয়েব বিহেবিয়োর" নামে আরেকটি বই প্রকাশ করেন। যেটার মূল উদ্দেশ্য ছিলো তার আবিষ্কৃত, তরঙ্গের ফটোট্রানজিস্টার যন্ত্রটি ব্যবহার করে কলেজের শিক্ষকরা যাতে সহজেই কলেজ শিক্ষার্থীদেরকে পড়াতে পারে।[1] তার সর্বশেষ বই, সিমিলারিটিস ইন ফিজিক্স ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয়। বইটির লেখনীতে দৈত্বসত্ত্বা ছিলো। অপরজন হলেন রবার্ট এল ওয়েবার।[13] সাধারণ অবদানে তিনি ছিলেন "ট্রানজিস্টার টেকনোলজি, ভলিউম-১" এর একজন সাধারণ অবদানকারী।[25]
জন এন. শিভ ছিলেন আমেরিকান ফিজিক্স সোসাইটির একজন ফেলো এবং ইন্সটিটিউট অব ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার এর একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। এছাড়াও তিনি ছিলেন আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব ফিজিক্স এর আন্তঃকলেজের পদার্থ বিজ্ঞান প্রোজেক্টের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি।[3]
ব্যক্তিগত জীবনে জন এন. শিভ, হেলেন শিভের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[24]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.