উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গবেষণা দ্বারা এই প্রস্তাবনা করা হয়েছে যে, জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্ক এবং পুরুষের-যৌন অভিমুখিতার মধ্যে একটি আন্তঃসম্পর্ক আছে। রেয় ব্ল্যানচার্ড এই সংযোগকে বলেছেন, জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্কের প্রভাব ( fraternal birth order effect)। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, একই মায়ের যদি বেশ কয়েকজন ছেলে সন্তান থাকে, তাহলে প্রতিটা ছোট ছেলের জন্য সমকামী হবার সম্ভাবনা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।[১] একে অনেকসময় বড় ভাইয়ের প্রভাব (older brother effect) নামেও অভিহিত করা হয়। অনুমান করা হয়, যে পরিমাণ সমকামিতা দেখা যায়, তার ১৫ শতাংশ জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্কের কারণে হয়।[২]
জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্কের প্রভাবকে; এর একজন প্রবক্তা বর্ণনা করেছেন এইভাবে যে, "পুরুষের যৌন অভিমুখিতার; জৈব পরিসংখ্যানের জন্য আন্তঃসম্পর্কীয় সবচেয়ে বেশি সংগতিপূর্ণ গবেষণা।"[৩] ১৯৫৮ সালে প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সমকামী পুরুষদের, বিষমকামী পুরুষের তুলনায় সহোদর (একই পিতা-মাতার সন্তান) থাকার একটা প্রবণতা অধিকহারে দেখা যায়। ১৯৬২ সালে বিস্তারিতভাবে এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।[৪] ১৯৬৬ সালে রেয় ব্ল্যানচার্ড এবং এন্থনি বোগার্ট তাদের গবেষণায় বলেন, বড় ভাই থাকলে (বড় বোন নয়) পরবর্তীতে জন্মানো ছোট ভাইটির সমকামী হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।[৫] তারা তাদের গবেষণার মাধ্যমে আরো দেখিয়েছেন, প্রত্যেক বড় ভাইয়ের জন্য ছোট ভাইয়ের সমকামী হবার সম্ভাবনা দাঁড়ায় ৩৩%।[৫] পরবর্তীতে কিছু বছর পর, ব্ল্যানচার্ড এবং বোগার্ট কিনসের সাথে সাক্ষাৎকারে বলতে গিয়ে বলেন, "ঐতিহাসিকভাবে এটি একটি বৃহত্তর ডাটা-বেস"।[৬][৭] ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত গবেষণায় ব্ল্যানচার্ড এই অবস্থাকে (phenomenon) the fraternal birth order effect (জন্মসুত্রে ভার্তৃসম্পর্ক) বলে অভিহিত করেন।[৮]
গবেষকরা বেশকিছু বছর ধরে বিভিন্ন ফ্যাক্ট প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রথমত; সমকামী পুরুষের মায়েদের অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার হার দেখা যায় এবং সমকামী পুরুষদের বড় ভাই থাকার হারও অধিক লক্ষণীয়।[৯] কিছু গবেষণা অনুসারে, প্রত্যেক বড় ভাইয়ের জন্য ছোট ভাইয়ের সমকামী হবার সম্ভাবনা দাড়ায় ২৮-৪৮%।[৮][১০][১১][১২][১৩][note ১] যাইহোক, যদি সেইসব সমকামী ছেলেদের ছোট ভাই, ছোট বোন বা বড় বোন থাকে, তাহলে তার (সমকামী ছেলেটির) যৌন অভিমুখিতায় কোনো প্রভাব পরবে না।[৯] অর্থাৎ, বড় বা ছোট বোন এবং ছোট ভাইয়ের জন্য, কারো যৌন অভিমুখিতায় প্রভাব পরে না, এটাই গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সমকামী পুরুষদের মধ্যে প্রতি সাতজনে প্রায় একজন জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্ক প্রভাবের কারণে সমকামী হয়।[১৬] নারীর যৌন অভিমুখিতায়; জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃ বা বোন সংক্রান্ত কোনো প্রভাব এই গবেষণা থেকে দেখা যায় নি।[১৭][১৮]
দ্বিতীয়ত; জন্মসুত্রে ভার্তৃসম্পর্কিত এই প্রভাব শৈশবে বা বয়োঃসন্ধিক্ষণে নয়; জৈবিক ভাবে জন্মপূর্ব থেকে কার্যকরী হয়।[৭] এর জন্য সরাসরি যে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তা হলো; এই ভার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব কখনোই আপন ভাইদের সাথে বাড়ে না, এটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, আপন ভাইরা তাদের পরবর্তী ছোট ভাইয়ের সমকামী হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। এমনকি কয়েকজন বড় ভাই থাকলে, ছোট ভাইকে অন্য কোনো পরিবারে প্রতিপালন করা হলেও, তার মধ্যে সমকামিতার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে যদি কাজিন বা অন্য সুত্রে ভাই হয়, বা দত্তক নেওয়া ভাই হয়, বা সৎ ভাই হয়, তাহলে এই প্রভাব কার্যকরী হয় না।[৩] পরোক্ষ প্রমাণ থেকে এটাই নির্ধারিত হয় যে, জন্মসুত্রে ভার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব জন্মপূর্ব এবং জৈবিক; জন্মোত্তর বা মনস্তাত্ত্বিক নয়। অর্থাৎ একজন সমকামী ব্যক্তি নিজ ইচ্ছায় সমকামী হন না। গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মসুত্রে ভার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব কে কোন হাত সর্বদা ব্যবহার করবে;- তার সাথে সম্পর্কিত।[৭][১৯] যেসব সমকামীর বড় ভাই আছে; তাদের (সমকামী) ডানহাতি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।[১৮][১৯][২০][২১] যেহেতু কে কোন হাত ব্যবহার করবে, এটা জন্মপূর্ব থেকেই নির্ধারিত হয়,[২২] তাই এই অন্বেষণ আমাদের এটাই সূচিত করে যে, জন্মপূর্ব জৈব কলাকৌশলই; জন্মসুত্রে ভার্তৃসম্পর্কিত প্রভাবের জন্য দায়ী।[৭]
এটা দেখা গিয়েছে যে, সমকামী পুরুষদের যদি বড় ভাই থাকে, তাহলে বিষমকামী ভাইদের তুলনায় তার ওজন সুনির্দিষ্টভবে কম হয়।[২৩][২৪] যেহেতু জন্মের সময়ের ওজন, অনস্বীকার্যভাবে জন্মপূর্ব থেকে নির্ধারিত, তাই এটা বুঝা যায় যে, একটা সাধারণ ফ্যাক্টর জন্মের পূর্বেই সক্রিয় হয় এবং জন্মসুত্রে ভার্তৃসম্পর্কিত প্রভাবকে পরিচালনা করে এবং পুরুষের যৌন অভিমুখিতা নিয়ন্ত্রণে দায়ী থাকে।[২৫]
তৃতীয়ত, এই জন্মসুত্রে ভার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব যা পুরুষে সমকামিতার সৃষ্টি করে, তা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীতে,[২৬] বিভিন্ন সংস্কৃতিতে,[২৭] বিভিন্ন ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে,[৫][২৮] এবং ভৌগোলিক ভাবে বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত।[৯] জন্মসুত্রে ভার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডায, ফিনল্যাণ্ড, ইরান, স্বাধীন সামোয়াত, স্পেইন, নেদারল্যান্ড, ইতালি এবং তুরস্কে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।[৯][২৯] সমকামী মানুষের মধ্যে এই প্রভাব দেশ জুড়ে করা মানুষের মধ্যে[৫][৩০] নমুনা হিসেবে পরিলক্ষিত হয়।[৩১][৩২][৩৩]
ভ্রার্তৃগত সম্পর্কের উপর গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, প্রত্যেক বড় ভাইয়ের জন্য তার পরবর্তী সহোদর ভাইয়ের সমকামী হবার সম্ভাবনা ৩৩ শতাংশ হারে বাড়ে।[৫][১৫][১৬] বড় ভাই ব্যতীত কোনো ছেলে শিশুর সমকামী হওয়ার সম্ভাবনা ২ শতাংশ।[১৫][১৬][note ২]
যেসব সমকামী পুরুষ তার জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কের জন্য সমকামী; তার বড় ভাইয়ের জন্য সমকামী হবার সম্ভাবনার হার আনুমানিক ১৫.১ শতাংশ[১৬] থেকে ২৮.৬ শতাংশের মধ্যে থাকে।[৩৪] ১৫.১ শতাংশ অনুমানকে ধর্তব্যের মধ্যে নিলে বলা যায়, জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কের কারণে প্রতি ৭ জনে; ১ জন সমকামী হয়।[১১][১৬] ক্যান্টর এবং তার সহযোগীরা (২০০২) গবেষণায় দেখতে পারেন, যেসব ছেলের বড় দুই ভাই আছে তাদের ৪৩ শতাংশ সমকামী, যাদের বড় এক ভাই আছে, তার ২৪ শতাংশ সমকামী, আর যাদের কোনো বড় ভাইই নেই, তাদের কেওই সমকামী হয় না।[৩৫] যেসব পুরুষ সমকামীর কোনো বড় ভাই নেই, তারা হয়তো বিভিন্ন জিনগত (যেমনঃ "এক্সকিউ ২৮") ভ্রুণীয় অবস্থায় হরমোনের কারণে হয়ে থাকে।[১১][৩৫][৩৬]
প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় প্রমাণ থেকে দেখা যায় যে, জন্মের পরের সময়ে বা মনস্তত্ব গত দিক এর তুলনায় ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব জন্মপূর্বে এবং জৈবিকভাবে মুলত সক্রিয় হয়। প্রথম পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল, যখন দেখা গিয়েছিল, জন্মসুত্রে ভ্রাতৃসম্পর্কিত প্রভাবের সাথে জন্মকালীন ওজনের একটা সম্পর্ক আছে। এরপর বোগার্ট (২০০৬ সালে) সরাসরি প্রমাণ দেখান যে, জন্মপূর্ব থেকে এ প্রভাব নির্ধারিত। পরবর্তী গবেষণা গুলোর মধ্যে যেসব গবেষণা; কে কোন হাত অধিক ব্যবহার করবে, এধরনের বিষয় নিয়ে কাজ করেছে; সেগুলোও এবিষয়টিকে সত্য প্রমাণ করেছে।[৭]
যৌন অভিমুখিতা সংক্রান্ত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে জন্মসূত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব মায়ের গর্ভাবস্থায় সন্তানের ওজন নির্ধারণে প্রভাব ফেলে, যা এর পূর্বে কল্পনাও করা হয় নি। ব্ল্যানচার্ড এবং এলিস (২০০১) ৩২২৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উপর গবেষণা করেন। এই মানুষগুলোর উপর গবেষণা করা হবে তা পূর্বনির্ধারিত ছিল। তাই তাদের জন্মের পূর্বেই তাদের মায়েদের বিভিন্ন প্রশ্ন এবং গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য নথিবদ্ধ করা হয়েছিল।[১১] এই গবেষণা থেকে তিনটে বিষয় পর্যবেক্ষিত হয়েছিল।
এই যে তিনটি বিষয় পর্যবেক্ষিত হয়েছে, তা পুনঃপুন গবেষণায় পরবর্তীকালে আরো ভালোভাবে দেখা গিয়েছে।[২৪][৩৫][৩৫][৩৮][৩৯][৪০][৪১] এই অন্বেষণগুলো থেকে যা প্রস্তাবিত হয়েছে, তা হলো গর্ভাবস্থার পরিবেশ ছেলে শিশুর ভ্রুণকে প্রভাবিত করে, প্রভাবিত করে সন্তানের ওজনকে। যা থেকে প্রমাণিত হয়, ছেলে সন্তানের সমকামী হবার বিষয়টি কিছু ক্ষেত্রে জন্মপূর্ব থেকে নির্ধারিত হয়ে আসে।[১১][৩৫]
ব্ল্যানচার্ড এবং তার সহকারী গবেষকরা পরোক্ষ প্রমাণের মাধ্যমে দেখান, জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব মনস্তাত্ত্বিক ভাবে নয় বরং জৈবিকভাবে পুরুষকে সমকামী করে তুলে। তারা ৩১৪৬ জন মানুষের উপর করা প্রতিবেদনে দেখেন, হস্তপ্রাধান্যতার সাথে জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কের প্রভাব আছে। তাদের প্রতিবেদন থেকে এটা প্রকাশিত হয় যে, বড় ভাই থাকার কারণে যদি কোনো ছেলে শিশু সমকামী হয়, তবে তার মধ্যে ডানহাতি হবার প্রবণতা বেশি থাকে।[৭][২০] পরবর্তী গবেষণাগুলোও হস্তপ্রাধান্যতার উপর জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কের প্রভাব নিশ্চিত করে।[৭][১৮][১৯] যেহেতু হস্ততা বা কে কোন হাত জন্ম-উত্তর সময়ে অধিক ব্যবহার করবে; তা জন্মপূর্ব সময়ে নির্ধারিত হয়,[৭][২২] তাই এখান থেকে এটাই চিন্তা করা হয়, জন্মপূর্ব কোনো মেকানিজমই হয়তো, বড় ভাই আছে এরকম ডান হাতি পুরুষ ভ্রুণে সমকামিতার বিকাশ ঘটায়।[৭]
![]() | এই নিবন্ধটি ইংরেজি উইকিপিডিয়ার সংশ্লিষ্ট নিবন্ধ অনুবাদ করে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। (জুলাই ২০১৮) অনুবাদ করার আগে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশাবলি পড়ার জন্য [দেখান] ক্লিক করুন।
|
জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাবের সাথে; পুরুষের যৌন অভিমুখিতার সম্পর্ক বেশ কয়েকবার নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।[৭]
জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন জাতি[২৬] যেমনঃ শ্বেতাঙ্গ, নিগ্রো, হিস্পানিক, পূর্ব ভারত, এশীয় মধ্য পূর্ব এবং পলিনেশীয়তে দেখা গিয়েছে।[২৭] এই প্রভাব এমনকি ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে যুগে দেখা গিয়েছে,[৫][২৮] কয়েক দশক পূর্বে করা গবেষণা এবং সাম্প্রতিক সময়ে করা গবেষণা সকল ক্ষেত্রেই এই প্রভাব দেখা গিয়েছে।[৭][২৭][৪২] ব্রাজিল, গুয়েতমালা, স্বাধীন সামোয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং তুরস্কে হওয়া গবেষণা থেকে দেখা যায়, অপশ্চিমা সংস্কৃতি হলে কী হবে, সেখানকার সমকামীদের মধ্যেও শৈশবে লৈঙ্গিক সঙ্গতিহীনতা অধিক হারে দেখা যেত।[৪৩][৪৪][৪৫][৪৬] এই বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে দেখা গিয়েছে সমকামিতার সাথে জৈবিক কারণের সম্পর্ক আছে। সেখানেও দেখা গিয়েছে জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কের প্রভাবের সাথে সমকামিতার ইতিবাচক সংযোগ।[২৭]
ভৌগোলিক গত দিক ভাবে এই ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাবও বহুদূর বিস্তৃত। বিস্তৃত ব্রাজিল,[৪৭] কানাডা,[৬] ফিনল্যান্ড,[২৯] ইরান,[৯] ইতালি,[৪৮] নেদারল্যান্ড,[৪৯] স্বাধীন সামোয়া,[২৭] স্পেন,[৫০] তুরস্ক,[৫১] যুক্তরাজ্য,[৫২] এবং যুক্তরাষ্ট্রে।[৫৩] অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এই প্রভাব যেমন শৈশবে দেখা গিয়েছে, তেমনই দেখা গিয়েছে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়ও।[২৯][৪৯][৫৪] এই প্রভাব ব্ল্যানচার্ড এবং তার সহযোগীদের দ্বারা বর্ণিত হয়েছে, আবার বর্ণিত হয়েছে স্বাধীন গবেষকদের দ্বারাও।[১৩][২৭][৩০][৩১][৪৮][৫২][৫৩][৫৫][৫৬] ব্ল্যানচার্ড ও তার সহযোগী[২৯][৩৫] এবং স্বাধীন গবেষক কর্তৃক[২৯] করা গবেষণা জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাবকে নিশ্চিত করার পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করেছে; পরীক্ষণের সময় কোনো পরীক্ষামুলক পক্ষপাতিত্ব করা হয় নি।[২৯]
পুরুষ থেকে নারীতে রুপান্তরকামীদের মধ্যেও এই জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব দেখা গিয়েছে। পুরুষ থেকে নারীতে রুপান্তরকারমীরা সাধারণত পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়, এবং তাদের প্রচুর সংখ্যক বড় ভাই থাকে, এমনটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে। এই তথ্য পর্যবেক্ষিত হয়েছে, কানাডায়,[৫৭] যুক্তরাজ্যে,[৫৫] নেদারল্যান্ডে,[৫৮] এবং পলিনেশিয়ায়।[৫৯]
এন্থনি বোগার্ট তার কাজ শেষে এর সমাপ্তি করেন এইভাবে যে, এই প্রভাবটি বড় ভাইদের সংস্পর্শে, বড় হওয়ার সাথে সাথে বাড়ে না, বরং এটি(জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্কিত প্রভাব) মায়ের গর্ভে থাকাকালীন প্রভাব বিস্তার করে, যা পরবর্তী ছেলে সন্তানদের ক্রমান্বয়ে গর্ভকালীন সময়েই শক্তিশালী হয়। এই প্রভাবকে ব্যাখ্যা করার জন্য মার্তৃগর্ভে মায়ের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা নামক প্রকল্পের প্রবর্তন করা হয়েছে।[৫][১১][৬০][৬১] পুরুষ ফিটাস এইচ-ওয়াই এন্টিজেন উৎপাদন করে, যা ভার্টিব্রাটা উপপর্বের প্রাণিতে যৌন-অভিমুখিতা নির্ণয় করে থাকে;[৬০] যদি বড় ভাইরা দত্তক অথবা সৎ ভাই হয় তবে পরিবারের ছোট ভাইটি সমকামী হবে, এ ধরনের কোনো দাবী গবেষণায় করা হয় নি।
বোগার্ট (২০০৬ সালে) জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্কিত প্রভাব সংক্রান্ত গবেষণাটি পুনরায় করেন, পালক সন্তান এবং সহোদর;(একই মায়ের সন্তান) উভয়কেই এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করেন।[৩] শুধুমাত্র একই মায়ের কয়েকজন ছেলে সন্তানের মধ্যেই যৌন অভিমুখিতায় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। পালক সন্তানদের মধ্যে কোনো প্রভাব দেখা যায় নি। বোগার্ট গবেষণাটি শেষ করেছেন, এই বলে যে, তার অন্বেষণ নিশ্চিতভাবেই জন্মপূর্ব অভিমুখিতা থেকে জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্কিত প্রভাবকে সমর্থন করে। জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্কিত প্রভাব handness এবং সদ্যোজাতের ওজনের উপরও প্রতিক্রিয়া করে, এবং এসবকিছু থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, এই জন্মপূর্বেই এটিপ্রভাব বিস্তার করে। কারণ: handedness এবং সদ্যোজাতের ওজন কেমন হবে উভয়ই গর্ভেই ঠিক হয়।[৭][২৫]
এমসিকোনাঘি (২০০৬ সালে) পুরুষ এবং নারী- যারা নিজেদের সমকামী অনুভূতি হয় বলে, দাবী করেছেন- তাদের জন্মসুত্রিতা তদন্ত করেছেন, এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সমকামী হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। তিনি, যারা নিজেদের সমকামী হিসেবে দাবী করেছেন তাদের মধ্যে পুরুষের জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্ক খুজে পেয়েছেন এবং যখন এই প্রভাবের তীব্রতা ও সমকামমুলক অনুভূতির স্তর এর মধ্যে পার্থক্য করেন (rather than homosexual identity or homosexual behavior), তিনি উভয়ের মাঝে কোনো সংযোগ খুজে পান নি। যার ফলে তিনি এই বলে সমাপ্তি করেন, সমকামিতার যে অনুভূতি তা জন্মসূত্রে তৈরী হয় না, সামাজিকঅবস্থার কারণেই তৈরী হয়।[৬২] যাইহোক, বিভিন্ন গবেষণা এটা দেখিয়েছে যে, জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্কিত প্রভাব সামাজিক অথবা জন্মপরবর্তী কোনো নিয়ামকের উপর নির্ভর করে কাজ করে না (উদাহরণস্বরুপ: অর্জন, প্রতিপালন বা পরিবেশগত), বরং এটা প্রকৃতির জৈবনিক একটা বিষয়, যা জন্মপূর্ব থেকেই সক্রিয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করে।[৩][৭][২০][৬৩][৬৪] আরো জানা যায়, পারিবারিক কার্যক্রম অথবা বড় ভাইয়ের সাথে থাকলেই জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্কিত প্রভাব পুরুষের যৌন অভিমুখিতায় কোনো প্রভাব ফেলে না।[৬৪]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.