ছংজিন
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ছংজিন (কোরীয় উচ্চারণ: [tsʰʌŋ.dʑin]; কোরীয়: 청진시; এমআর: Ch'ŏngjin-si) উত্তর কোরিয়ার উত্তর হামগিয়ং প্রদেশের রাজধানী (함경북도) এবং দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। একে লোহার শহরও বলা হয়ে থাকে।[২]
ছংজিন 청진 | |
---|---|
পৌর শহর | |
কোরীয় প্রতিলিপি | |
• হাঙ্গুল | 청진시 |
• হাঞ্চা | 淸津市 |
• ম্যাককিউন–রাইশাওয়া | Ch'ŏngjin-si |
• কোরীয় সংশোধিত রোমানীকরণ | Cheongjin-si |
উপরে থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ডাউনটাউন ছংজিন (শহরের কিম ইল সুং স্মৃতিস্তম্ভ থেকে যেমন দেখায়), ছংজিন বিমানবন্দরে ফুসো বাস, ছংজিন বিমানবন্দরে এয়ার কোরিও বিমান, ছংজিন বিমানবন্দরে এয়ার কোরিও ক্রু | |
ডাকনাম: লোহার শহর | |
উত্তর হামগিয়ংয়ের মানচিত্রে ছংজিনের অবস্থান দেখানো হচ্ছে | |
![]() | |
উত্তর কোরিয়ার মধ্যে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৪১°৪৭′ উত্তর ১২৯°৪৬′ পূর্ব | |
দেশ | উত্তর কোরিয়া |
প্রদেশ | উত্তর হামগিয়ং |
প্রশাসনিক বিভাগ | ৭টি কুয়ক/গুয়ক |
সরকার | |
• উত্তর হামগিয়ং প্রদেশের ছংজিন সিটি পিপলস কমিটির চেয়ারম্যান | কাং জুন[১] |
আয়তন | |
• মোট | ২৬৯ বর্গকিমি (১০৪ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০০৮) | |
• মোট | ৬,২৭,০০০ |
• জনঘনত্ব | ২,৩৩০/বর্গকিমি (৬,০০০/বর্গমাইল) |
• উপভাষা | হামগিয়ং |
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ


প্রাগৈতিহাসিক
তুমেন নদীর নিম্নাঞ্চলের কাছাকাছি প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে, প্যালিওলিথিক যুগে মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যায়।[৩]
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইতিহাস
গ্র্যান্ড হিস্টোরিয়ানের রেকর্ড অনুসারে, এই অঞ্চলে বুয়েও, মোহে, ওকজিও, ইইলো, ইয়েমেক এবং সুশেনের উপজাতি রাজ্য বিদ্যমান ছিল। এলাকাটি পরে গোগুরিওর অঞ্চল অংশ হয়েছিল। ৬৬৮ সালে গোগুরিওর পতনের পর, অঞ্চলটি ট্যাং রাজবংশ কর্তৃক শাসিত হয়েছিল। বালহায়ের শাসনামলে, অঞ্চলটি মহকুমা ডংগিয়ংইয়ংওনবুর অধীনে ছিল। খিতানদের দ্বারা বলহায়ের পতনের পর অঞ্চলটি জিন রাজবংশ এবং ইউয়ান রাজবংশের শাসনাধীন ছিল।[৩]
আধুনিক ইতিহাস

কোরিয়ার জাপানি অধিভুক্তির আগে ছংজিন ছিল একটি ছোট মাছ ধরার গ্রাম; এর প্রতিষ্ঠার তারিখ অজানা। এর নামের জন্য চীনা অক্ষরটির মানে 'স্বচ্ছ নদী পারাপার'।[২] ১৯০৪-১৯০৫ সালের রুশো-জাপানি যুদ্ধের সময়, জাপানি বাহিনী ছংজিনে অবতরণ করে এবং মাঞ্চুরিযর কাছাকাছি থাকার কারণে এটিকে সরবরাহ সমর ঘাঁটি স্থাপন করে। জাপানিরা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও এখানে থেকে যায় এবং ১৯০৮ সালে শহরটিকে কোরীয় সম্পদ পরিবহনের জন্য একটি উন্মুক্ত বাণিজ্য বন্দর ঘোষণা করে এবং চীন থেকে সম্পদ লুটে নিজেদের দেশে নিয়ে যাবার পথে এটিকে স্টপিং পয়েন্ট ব্যবহার করে।[৪] এই সময়ের মধ্যে শহরটি "সেইশিন" নামে পরিচিত ছিল, এর নামের জন্য চীনা অক্ষরের জাপানি উচ্চারণ অনুসারে। ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আর্মির ১৯তম ডিভিশন ১৯১৮ সাল থেকে রানামে তাদের সদর দপ্তর ছিল, যেখানে জাপানিরা একটি আয়তাকার রাস্তার গ্রিডের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন পরিকল্পিত শহর তৈরি করেছিল।[২] ১৯৩০ সালে, নিপ্পন স্টিল কোম্পানি এই শহরে একটি বড় স্টিল মিল, সেশিন আয়রন অ্যান্ড স্টিল ওয়ার্কস তৈরি করে। রানামকে ১৯৪০ সালে ছংজিনের সাথে যুক্ত করা হয়েছিল এবং শহরের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই দিন আগে ১৩ আগস্ট ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষুদ্র প্রতিরোধকে জয় করে শহরটিকে মুক্ত করেছিল। উত্তর কোরিয়ার অংশ হিসেবে ছংজিন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও শিল্প কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ১৯৬০-১৯৬৭ এবং ১৯৭৭-১৯৮৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে এটি সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়েছিল।
১৫ই এপ্রিল, ১৯৬৯ তারিখে ১৩:৩০ MT (১:৩০ মধ্যাহ্নে), দুটি উত্তর কোরিয়ার মিগ-১৭ ফাইটার এসই গুলি করে ইউএস নৌবাহিনীর একটি লকহিড ইসি-১২১এম সুপার কনস্টেলেশন (১৩৫৭৪৯) ছংজিনের পার্শ্ববর্তী জাপানের সাগরের উপরে ভূপাতিত করে। এর বিমানের ৩৩ জন যাত্রীরই মৃত্যু হয়েছে। বিমানটি আতসুগি এনএএসর সামরিক ফ্লাইট ছিল।[৫]
১৯৯০-এর দশকে উত্তর কোরিয়ার দুর্ভিক্ষের সময়, ছংজিন ছিল দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোর মধ্যে একটি; মৃত্যুর হার এখানে ২০% পর্যন্ত হতে পারে।[২] খাদ্য প্রাপ্যতার অবস্থা সেখানে ভালো ছিল না।[২] এই সমস্যাটি উত্তর কোরিয়ার বিরল ঘটনা ছংজিনে নাগরিক অস্থিরতার বেশ কয়েকটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। ৪ঠা মার্চ ২০০৮-এ, কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রতিক্রিয়ায় মহিলা ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করেছিল।[২] ক্রমবর্ধমান শস্যের দাম এবং "বাজারে বেচাকেনা" নিষিদ্ধ করার সরকারি প্রচেষ্টাকে বিক্ষোভের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[২] প্রতিবাদের ফলস্বরূপ, ছংজিনের স্থানীয় প্রশাসন "বাজারে বেচাকেনার অনুমতি দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।"[৬] ২৪শে আগস্ট ২০০৮-এ, খাদ্য টহল এজেন্ট এবং মহিলা ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সংঘর্ষ হয়, যা একটি "বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশে" পরিণত হয়। এটা জানা গেছে যে ছংজিন স্থানীয় প্রশাসনের জারি করা মৌখিক নির্দেশাবলী বলা হয়েছে পরবর্তী শস্য রেশন সময় পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণ কার্যকলাপ শিথিল করা হলো।[৬]
প্রশাসনিক বিভাগ
১৯৪৮ থেকে ১৯৬০, ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ এবং ১৯৮৭ থেকে বর্তমান পর্যন্ত, ছংজিন উত্তর হামগিয়ং প্রদেশের অংশ ছিল। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত, এবং তারপর আবার ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত, ছংজিন একটি প্রত্যক্ষ শাসিত শহর হিসাবে ছিল।[৭]
ছংজিনে ৭টি ওয়ার্ড (구역, kuyŏk, কোরীয় উচ্চারণ: [kujʌk]
- চংগাম-গুয়ক (청암구역, [tɕʰʌŋam ɡujʌk])
- প'ওহাং-গুয়ক (포항구역, [pʰohaŋ ɡujʌk])
- পুয়ুন-গুয়ক (부윤구역, [pujun ɡujʌk])
- রণাম-গুয়ক (라남구역, [ɾanam ɡujʌk])
- সিনাম-গুয়ক (신암구역, [ɕʰinam ɡujʌk])
- সংপ'ইং-গুয়ক (송평구역, [sʰoŋpʰjʌŋ ɡujʌk])
- সুনাম-গুয়ক (수남구역, [sʰunam ɡujʌk])
ভূগোল
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ছংজিন উত্তর কোরিয়ার উত্তর-পূর্বে, উত্তর হামগিয়ং প্রদেশে, পূর্ব কোরিয়া উপসাগর (কিয়ংসাং উপসাগর)[৮] জাপান সাগরের পাশে অবস্থিত। সুসং নদী (수성천) শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে; শহরের মধ্যে রয়েছে সোডু প্রবাহ (서두수) এবং মাউন্ট কোমল (고말산)।
জলবায়ু
ছংজিন আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত (কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ : Dwa), এখানকার আবহাওয়ার রূপ হল শীতল ও শুষ্ক শীত এবং উষ্ণ ও বৃষ্টিপাতযুক্ত গরমকাল।
ছংজিন (১৯৯১–২০২০ সাধারণ, চরম ১৯৫৭–বর্তমান)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ৯.৩ (৪৮.৭) |
১২.২ (৫৪.০) |
২২.৩ (৭২.১) |
৩১.৮ (৮৯.২) |
৩৪.৫ (৯৪.১) |
৩৩.৪ (৯২.১) |
৩৬.১ (৯৭.০) |
৩৩.৮ (৯২.৮) |
৩৪.০ (৯৩.২) |
২৭.২ (৮১.০) |
২০.৫ (৬৮.৯) |
১৪.৩ (৫৭.৭) |
৩৬.১ (৯৭.০) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | −০.৪ (৩১.৩) |
১.৫ (৩৪.৭) |
৬.৪ (৪৩.৫) |
১২.৭ (৫৪.৯) |
১৭.০ (৬২.৬) |
২০.৪ (৬৮.৭) |
২৪.০ (৭৫.২) |
২৫.৬ (৭৮.১) |
২২.৬ (৭২.৭) |
১৬.৮ (৬২.২) |
৮.৫ (৪৭.৩) |
১.৯ (৩৫.৪) |
১৩.১ (৫৫.৬) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | −৪.৭ (২৩.৫) |
−৩.০ (২৬.৬) |
১.৯ (৩৫.৪) |
৭.৭ (৪৫.৯) |
১২.১ (৫৩.৮) |
১৬.৩ (৬১.৩) |
২০.৬ (৬৯.১) |
২২.১ (৭১.৮) |
১৮.০ (৬৪.৪) |
১১.৭ (৫৩.১) |
৩.৮ (৩৮.৮) |
−২.৫ (২৭.৫) |
৮.৭ (৪৭.৭) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | −৮.৮ (১৬.২) |
−৭.২ (১৯.০) |
−২.২ (২৮.০) |
৩.৪ (৩৮.১) |
৮.৪ (৪৭.১) |
১৩.৪ (৫৬.১) |
১৮.০ (৬৪.৪) |
১৯.১ (৬৬.৪) |
১৩.৬ (৫৬.৫) |
৬.৬ (৪৩.৯) |
−০.৫ (৩১.১) |
−৬.৫ (২০.৩) |
৪.৮ (৪০.৬) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | −২২.২ (−৮.০) |
−১৯.০ (−২.২) |
−১৬.১ (৩.০) |
−৬.০ (২১.২) |
০.০ (৩২.০) |
৫.০ (৪১.০) |
৮.৬ (৪৭.৫) |
৯.৪ (৪৮.৯) |
২.৪ (৩৬.৩) |
−৬.০ (২১.২) |
−১৫.০ (৫.০) |
−২০.০ (−৪.০) |
−২২.২ (−৮.০) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১২.২ (০.৪৮) |
৭.৪ (০.২৯) |
১৫.১ (০.৫৯) |
২৯.৬ (১.১৭) |
৬৪.৭ (২.৫৫) |
৭৩.৮ (২.৯১) |
১২৬.৭ (৪.৯৯) |
১২৬.১ (৪.৯৬) |
৭৯.৮ (৩.১৪) |
৩৪.০ (১.৩৪) |
২৯.২ (১.১৫) |
১৫.৩ (০.৬০) |
৬১৩.৯ (২৪.১৭) |
অধঃক্ষেপণ দিনগুলির গড় (≥ ০.১ mm) | ৪.০ | ২.৬ | ৩.১ | ৪.২ | ৮.৪ | ৯.৮ | ১১.৬ | ১০.৫ | ৬.৩ | ৩.৫ | ৪.০ | ৪.৪ | ৭২.৪ |
তুষারময় দিনগুলির গড় | ৮.০ | ৪.৯ | ৩.৯ | ০.৯ | ০.১ | ০.০ | ০.০ | ০.০ | ০.০ | ০.১ | ৩.৩ | ৭.৫ | ২৮.৭ |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) | ৬১.৬ | ৬১.৯ | ৬২.৮ | ৬৫.৭ | ৭৫.৪ | ৮৩.৭ | ৮৭.২ | ৮৪.২ | ৭৫.৮ | ৬৭.২ | ৬৩.০ | ৫৯.৯ | ৭০.৭ |
উৎস ১: কোরিয়া আবহাওয়া প্রশাসন[৯] | |||||||||||||
উৎস ২: Pogoda.ru.net (চরম)[১০] |
অর্থনীতি
ছংজিন হল উঃ কোরিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্পাত ও ফাইবার শিল্প কেন্দ্র। এখানে একটি শিপইয়ার্ড, একটি লোকোমোটিভ প্ল্যান্ট এবং একটি রাবার কারখানা রয়েছে। বন্দর এলাকার কাছাকাছি রয়েছে ছংজিন স্টিল কো, কেমিক্যাল টেক্সটাইল কো, মে ১০ কয়লা খনি মেশিনারি কারখানা, এবং কিমচেক আয়রন অ্যান্ড স্টিল (যা জাপানী দখলের সময় নিপ্পন স্টিল নামে পরিচিত ছিল);[২] তবে সম্পদের অভাবের কারণে শহরের শিল্প কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েছে। তা সত্ত্বেও, যদিও, উঃ কোরিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের ২৪ শতাংশের অংশ চোংজিনে উৎপন্ন করা হয় এবং এখানে একজন আবাসিক চীনা কনসাল রয়েছে যিনি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চালমান চীনা বণিক ও ব্যবসায়ীদের সেবা করেন।[১১] ছংজিনে সুনাম বাজারও রয়েছে, উত্তর কোরিয়ার বাজার অর্থনীতির একটি উদাহরণ।[১২] [তথ্যসূত্র প্রয়োজন][ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ] সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং পরবর্তীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তেলের ঘাটতির কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ১৯৭৭ সালে যখন উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক সঙ্কট চরমে পৌঁছেছিল তখন জাতিসংঘের প্রথম ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন তায়ান মায়াত এই এলাকাটি পরিদর্শন করতে এসেছিলেন, তিনি পর্যবেক্ষণ করে বলেছিলেন, "ছংজিন ছিল স্ক্র্যাপ ধাতুর বনের মতো, বিশাল বিশাল প্ল্যান্ট যা মাইলের পর মাইল ধরে বিস্তৃত এবং এই বিস্তৃত এলকা মরিচা বালতিতে পরিণত হয়েছে। আমি সারা বিশ্বে গিয়েছি এবং আমি কখনও এরকম কিছু দেখিনি।"[১৩]
ছংজিন বাস ফ্যাক্টরি, ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত, ছংজিনে প্রচুর পরিমাণে বাস এবং ট্রলিবাস উৎপাদন করে।[১৪] এখানে ট্রামও তৈরি করা হয়।[১৫] সাম্প্রতিককালে, কারখানাটি আরও অনেক বেশি ট্রলিবাস তৈরি করেছে অনেকটা পিয়ংইয়ংয়ের ট্রলিবাসের কারখানা চোল্লিমা-৩২১-এর মতো।[১৬]
এই শহরটির জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ছংজিন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লাগুলো কোয়ান-লি-সো নং ২২ এলাকা থেকে খনন করা হয়েছে বলা হয়ে থাকে[১৭] যদিও সেইসময় থেকে কারাগারটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।[১৮] প্ল্যান্টটির আনুমানিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৫০ মেগাওয়াট।[১৯]
অন্যান্য শিল্প
- চোসুন পোশাক কারখানা - ভিনালন কাপড়কে ইউনিফর্মে পরিণত করে
- উত্তর হামগিয়ং প্রাদেশিক সম্প্রচার সংস্থা
- মাজন ডিয়ার কোম্পানি - হরিণের শিং থেকে ওষুধ তৈরি করে[২০]
- সেকেন্ড মেটাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি
- অনফো উষ্ণপ্রস্রবণ
- সোয়েংগিরিয়ং খনি – কাওলিন খনি
- উত্তর হামগিয়ং প্রাদেশিক ই-বিজনেস ইনস্টিটিউট[২১]
এই অঞ্চলে স্বল্প পরিমাণ আবাদি জমি রয়েছে, তাই ১৯৯০-এর দশকের দুর্ভিক্ষ ছংজিনের বাসিন্দাদের বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে, শহরের বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের কারণে সর্বোচ্চ মৃত্যুর হারের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, যা জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশের মতো হতে পারে। ১৯৯৫ সালের মধ্যে, অতিরিক্ত শিকারের কারণে স্থানীয় ব্যাঙের সংখ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।[২]
কারাগার
- ছংজিন রাজনৈতিক বন্দী শিবিরে (কোয়ান-লি-সো নং ২৫), সুসং-ডং (চংজিনের উত্তর অংশ) একটি বৃহৎ কারাগার কমপ্লেক্সে, ৩,০০০ এরও বেশি রাজনৈতিক বন্দীকে রাখা হয়েছিল। তারা সাইকেল এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্য তৈরি করত।[২২]
- চোঙ্গরি সংশোধনাগার শিবির (কিও-হওয়া-সো নং ১২) ছংজিন এবং হোয়েরিয়ং-এর মাঝখানে অবস্থিত।[২]
- নংপো ডিটেনশন সেন্টার, যা জাপানি দখলদারিত্বের সময় নির্মিত হয়েছিল, এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে কিন্তু নতুন ব্যবস্থাপনায়।[২]
জাহাজী পণ্য পরিবহন
চংজিনের বন্দর উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী অংশগুলির সাথে ব্যস্ত আন্তর্জাতিক শিপিং বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। উঃ কোরিয়ার আটটি আন্তর্জাতিক শিপিং বন্দরের মধ্যে, ছংজিনকে অর্থনৈতিকভাবে দ্বিতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় (পশ্চিম উপকূলে নামফো বন্দরের পরে)[২৩] এবং এটি রাশিয়া ও জাপানের সাথে বাণিজ্যের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ছংজিনে একটি নাবিক ক্লাবও রয়েছে যা বিদেশী ক্রুদের পাশাপাশি উত্তর কোরীয় এবং শিপিং বাণিজ্যে নিযুক্ত বিদেশীদের জন্য একটি মিটিং ব্যবহৃত হয়।[১১]
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং রাশিয়া ছংজিনে তাদের কনস্যুলেট নিয়োগ করেছে। ছংজিন হল উত্তর হামগিয়ং প্রদেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র।
পরিবহন
বায়ু
ছংজিন থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ওরাং কাউন্টিতে অবস্থিত ওরাং বিমানবন্দরটি একটি ২,৫০০ মি (৮,২০০ ফু) রানওয়েযুক্ত সজ্জিত সামরিক এবং বেসামরিক দ্বৈত বিমানবন্দর (CHO)। উত্তর কোরিয়া ২০০৩ সালের শেষের দিকে হামহুং-এর কাছে একটি পুরানো বিমানবন্দরকে উন্নত করার পরিকল্পনা করেছিল, যাতে এটিতে ৪,০০০ মি (১৩,০০০ ফু) রানওয়ে থাকতে পারে এবং এটি দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে কাজ করবে। তবে তা এর কাজ এখনও শেষ হয়নি।
রেলপথ
কোরিয়ান স্টেট রেলওয়ে নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক রেরপথ ওয়ানসন-রাসন রেলওয়ে এবং চোংজিন-রাসন রেলওয়ে (পিয়ংরা লাইন) রাসন এবং রাজধানী পিয়ংইয়ংকে যুক্ত করে।
শহুরে পরিবহন
পিয়ংইয়ং ছাড়া উত্তর কোরিয়ার একমাত্র শহর ছংজিন ট্রাম ব্যবস্থা চালু আছে। এই ট্রামগুলো সবই স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়। এটি দুটি ধাপে নির্মিত একটি লাইন নিয়ে গঠিত, প্রথম ধাপ, ৬ কিমি (৩.৭ মা) এবং দ্বিতীয় ধাপ, ৭ কিমি (৪.৩ মা)।[২৪] সাবংয়ে একটি ডিপো এবং পংচন ও নামচংজিনে একটি করে টার্নিং লুপ রয়েছে।
একটি ট্রলিবাস সিস্টেমও চোঙ্গাম - ইয়োকচন, হেয়ান - সাবং এবং নামচঙ্গিজন - রণম এই তিনটি লাউনে চলাচল করে।[২৫]
শিক্ষা
বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ
এখানে বেশ কিছু রাষ্ট্র-চালিত উচ্চ শিক্ষার সুবিধা রয়েছে, যেমন:
- ছংজিন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি
- ছংজিন মাইন ইউনিভার্সিটি
- ছংজিন ১ (ওহ জুংহেপ ইউনিভার্সিটি)
- ইউনিভার্সিটি অফ এডুকেশন নং ২
- হাম্বুক ইউনিভার্সিটি এটিকে ১৯৯৩ সালের পূর্বে হাম্বুক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বলা হতো।
- ছংজিন ইউনিভার্সিটি অফ মেডিসিন
- ছংজিন কলেজ অফ লাইট ইন্ডাস্ট্রি
- ছংজিন কলেজ অফ মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ছংজিন কলেজ অফ অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং
কিম জং-সুক টিচার্স কলেজ, যা কিম জং ইলের মা কিম জং-সুকের নামে নামকরণ করা হয়েছিল, এটি ছংজিনে অবস্থিত।[২]
বিদ্যালয়
প্রতিভাধর এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকগুলো বিদ্যালয় রয়েছে:
- চংজিন নং ১ সিনিয়র মিডল স্কুল : উত্তর কোরিয়ার মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান উচ্চ বিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি।
- ছংজিন স্কুল অফ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ
- ছংজিন স্কুল অফ আর্টস
সংস্কৃতি
একটি জলজ পণ্য গবেষণা কেন্দ্র আছে। বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে উষ্ণপ্রস্রবণ এবং মাউন্ট চিলবো। চংজিনের সবচেয়ে বিখ্যাত পণ্য প্রক্রিয়াজাত স্কুইড। শহরটি ফুটবল দল, চ'ংজিন চাঁদংচা-এর আবাসস্থল।
এখানকার স্থানীয় সংবাদপত্রটি হল হাম্বুক ডেইলি।[২]
বারবারা ডেমিকের লেখা নাথিং টু এভি: অর্ডিনারি লাইভস ইন নর্থ কোরিয়া বইয়ে ছংজিনে চিত্রিত হয়েছে।[২]
অন্যান্য সাংস্কৃতিক স্থান
- উত্তর হামগিয়ং প্রদেশ থিয়েটার (함경북도 극장)
- বিদেশী দর্শনার্থীদের থাকার জন্য চোনমাসান হোটেল; ১৯৭৭ সালে, অ্যাকশন সেন্টার লা ফাইমের একজন ফরাসি সাহায্য কর্মীকে সেখানে থাকতে দেওয়া হয়েছিল।[২]
- পোহাং স্কোয়ারে একটি ২৫ ফুটের ব্রোঞ্জের মূর্তি এবং বিপ্লবী ইতিহাস জাদুঘর রয়েছে
- ইনমিন দাহেকসেপ ডং (গ্র্যান্ড পিপলস স্টাডি হাউস)
- চংজিন চিলড্রেনস প্যালেস (청진학생소년궁전): শৈল্পিক প্রতিভাবান ছাত্ররা স্কুলের পরে এখানে পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপ করে।
ভগিনী শহর
চীনে ছংজিনের দুটি ভগিনী শহর রয়েছে:
ছংজিনের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
- জং সং-থায়েক, উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিবিদ এবং উত্তর কোরিয়ার বর্তমান নেতা কিম জং উনের চাচা
- কিম সু-জিউন, দক্ষিণ কোরিয়ার স্থপতি
- কিম ইক-ইয়ং, দক্ষিণ কোরিয়ার সিরামিক শিল্পী
- পাক চ্যাং-সিক, উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিবিদ
- রি সোল-জু, উত্তর কোরিয়ার ফার্স্ট লেডি এবং উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের স্ত্রী।
- রি উল-সল, উত্তর কোরিয়ার মার্শাল এবং রাজনীতিবিদ
- শিন সাং-ওক, দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক
ঐতিহাসিক গ্যালারি
- জাপানি ঔপনিবেশিক যুগে উত্তর হামগিয়ং প্রাদেশিক অফিস।
- জাপানি ঔপনিবেশিক যুগে ছংজিন বন্দর।
- জাপানি ঔপনিবেশিক যুগে রানাম শিন্টো মন্দির।
আরও দেখুন
- উত্তর কোরিয়ার শহরের তালিকা
- উত্তর কোরিয়ার ভূগোল
তথ্যসূত্র
আরো পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.