Remove ads
সিরাজগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চৌহালি উপজেলা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা যা ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি একটি কৃষিপ্রধান এলাকা। কুটির শিল্প এবং অনেকে মাছ ধরে জিবীকা নির্বাহ করে থাকে। ব্রিটিশ শাসনামলে এ অঞ্চেল অর্থনৈতিক এলাকা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে এখানে ইংরেজরা নীল চাষ করত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৪ সালে চৌহালিকে উপজেলা করা হয়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১,৪৭,১৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫১% এবং মহিলা ৪৯%। উপজেলার গড় সাক্ষরতার হার শতকরা ৫৬ ভাগ। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় এবং খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অন্যতম।
চৌহালি | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে চৌহালি উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°১২′৩৬″ উত্তর ৮৯°৪৩′৯″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | সিরাজগঞ্জ জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ২৪৩.৫ বর্গকিমি (৯৪.০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,৪৭,১৪৩ |
• জনঘনত্ব | ৬০০/বর্গকিমি (১,৬০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫৬ % |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫০ ৮৮ ২৭ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
নৌযোগাযোগ চৌহালি উপজেলার প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। সিরাজগঞ্জ সদর থেকে সিরাজগঞ্জ-এনায়েতপুর সড়ক হয়ে এনায়েতপুর নৌকাঘাট থেকে উপজেলা সদরে যাতায়াত করা হয়। চৌহালি উপজেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটন আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত শাহ সুফী হযরত ইউনুস আলী এনাযেতপুরীর সমাধি। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চৌহালির সংসদীয় আসন সিরাজগঞ্জ-৫। এ আসনটি জাতীয় সংসদে ৬৬নং আসন হিসেবে চিহ্নিত। তবে ১৯৯১ সালে পঞ্চম থেকে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত চৌহালি সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ২০১৮ সালের সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুল মমিন মন্ডল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
চৌহালি উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান অবস্থান ২৪°০১´ থেকে ২৪°১৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪১´ থেকে ৮৯°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এর উত্তরে বেলকুচি উপজেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা ও মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলা, পূর্বে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলা, পশ্চিমে শাহজাদপুর উপজেলা। চৌহালির উপর দিয়ে যমুনা নদী প্রবাহিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে উপজেলার স্থলভাব প্রায়শই নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৪৫ সালের এপ্রিলে মোমেনশাহী (বর্তমান ময়মনসিংহ) জেলার অধীনে সিরাজগঞ্জ মহকুমা ঘোষণা করা হয়। ১৮৫৫ সালে এ অঞ্চলকে পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৮৮ সালে চৌহালিতে প্রথমে একটি পুলিশ ক্যাম্প এবং ১৯০৪ সালে সেই পুলিশ ক্যাম্পটিকে থানায় উন্নীত করা হয়।[১] বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৪ সালে সিরাজগঞ্জকে আলাদা জেলায় উন্নীত করা হয় এবং একইসাথে চৌহালি থানাকে উপজেলায় উন্নীত করে এ জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১]
স্থানীয় লোককাহিনী অনুসারে, বর্তমান স্থল ইউনিয়নে চৌয়াইল নামক মৌজায় পাকরাশি জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত একটি বাজার ছিলো। বাজারে চার কেজি দুধ একসাথে এক কেজি হিসেবে বিক্রি হত। বাংলায় চারটি জিনিস একসাথে মিলিয়ে হালি হিসেবে বিক্রি করা হয় বলে এ অঞ্চলের নাম চৌহালি রাখা হয়েছে।[১][২] অপর একটি জনশ্রুতি অনুসারে, শের শাহ সুরির শাসনামলে, রাজার নির্দেশে এ অঞ্চলে ভূমি জরিপ করার জন্য একদল জরিপকারী আগমন করে। তারা চৌহালীতে এসে চারজন কৃষককে হালচাষ করতে দেখেন। সেখান থেকে এলাকাটির নামকরণ করা হয় চৌহালি।
যদিও পূর্ব বাংলায় ব্রিটিশ শাসন জারি ছিলো কিন্তু প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য ব্রিটিশরা মূলত স্থানীয় জমিদারদের দিয়ে শাসন করাতেন। মুঘল আমল থেকেই এলাকাটি স্থল পাকরাশীর জমিদাররা শাসন করতো। ১৮৭২-৭৩ সালে সিরাজগঞ্জ ও পাবনা অঞ্চলের জমিদারদের খাজনা বৃদ্ধি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়।[৩] এতে এ অঞ্চলের কৃষকরাও খুদি মোল্লা, রমজান সরকার (ঢুলিয়াবাড়ী) ইত্যাদিদের নেতৃত্ত্বে অংশগ্রহণ করেছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ১৯৫০ সালে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়। এ আইন অনুসারে ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হওয়ার পর চৌহালি স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী সিরাজগঞ্জ দখল করে। ২২ জুন পাকিস্তান সেনাবাহিনী চৌহালির মালিপাড়ায় এবং আগস্টে সম্ভুদিয়া সেনাক্যাম্প স্থাপন করে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। নভেম্বরে মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকিস্তান সেনাদের একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। ২৫ নভেম্বর চৌহালিকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়।[৪]
চৌহালি উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান অবস্থান ২৪°০১´ থেকে ২৪°১৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪১´ থেকে ৮৯°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এর উত্তরে বেলকুচি উপজেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা ও মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলা, পূর্বে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলা, পশ্চিমে শাহজাদপুর উপজেলা।[৫]
এর মোট আয়তন ২১০ বর্গ কিলোমিটার।[৬] এ উপজেলার প্রধান নদী যমুনা। যমুনা নদী চৌহালী উপজেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। নদীর পূর্ব দিকে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন যথা খাসকাউলিয়া, বাগুটিয়া, উমরপুর, খাসপুকুরিয়া ও ঘোড়জান এবং পশ্চিম পারে সোদিয়া ও চাঁদপুর নামে দুটি ইউনিয়ন অবস্থিত।[৭] যমুনা নদীর সাথে হওয়ায় চৌহালি একটি চরাঞ্চল এলাকা। সড়কপথে সিরাজগঞ্জ জেলা সদর থেকে চৌহালির দূরুত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার।
বিভিন্ন সময় যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে উপজেলার স্থলভাব প্রায়শই নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ২০১৪ সালে উপজেলার স্থলভাবে ১০ ভাগ নদীতে বিলীন হয়।[৮] একই বছর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সসহ আরো অনেক প্রশাসনিক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সেগুলো স্থানান্তর করা হয়।[৮] বিভিন্ন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারি স্থাপনা বেশ কয়েকবার করে স্থানান্তর করা হয়েছে।[৮] অঞ্চলটি প্রবল বন্যা দুর্গত এলাকা হিসেবে পরিচিত।[৯]
চৌহালি উপজেলা মোট ৭টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা, ১৩১টি গ্রাম ও ১০০টি মৌজায় বিভিক্ত। ইউনিয়নগুলো হলো, সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন , স্থল ইউনিয়ন, ঘোরজান ইউনিয়ন, উমারপুর ইউনিয়ন, খাসকাউলিয়া ইউনিয়ন, খাসপুকুরিয়া ইউনিয়ন এবং বাঘুটিয়া ইউনিয়ন। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০৪ সালে এখানে থানা বা পুলিশ স্টেশন স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৪ সালে চৌহালিকে উপজেলা করা হয়। সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তিনিই উপজেলার প্রশাসনিক প্রধান। এছাড়া, জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একজন উপজেলা চেয়ারম্যান জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ফারুক হোসেন চৌহালি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চৌহালি উপজেলায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় একটি থানা বা পুলিশ স্টেশন রয়েছে। এছাড়া একটি করে আনসার ও ভিডিপি এবং ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয় রয়েছে।
চৌহালির ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে খাষকাউলিয়া ইউনিয়নকে উপজেলা সদর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১০] ১৯৯৭ সালে বৃহত্তর মিরকুটিয়া ইউনিয়নকে ভেঙ্গে খাষকাউলিয়া ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়।[১০] যদিও ২০১৪ সালে উপজেলা সদরসহ এ ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ এলাকা যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চৌহালির সংসদীয় আসন সিরাজগঞ্জ-৫। এ আসনটি জাতীয় সংসদে ৬৬নং আসন হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর অনুষ্ঠিত ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম এবং ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এলাকাটি পাবনার অধীন নির্বাচনী এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৯৮৪ সালে উপজেলা প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চৌহালি ও বেলকুচি উপজেলা নিয়ে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনটি তৈরি হয়। এ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মফিজ উদ্দিন তালুকদার এবং ১৯৮৮ সালে চতুর্থ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শহিদুল ইসলাম খান সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে ১৯৯১ সালে পঞ্চম থেকে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত চৌহালিকে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৯১ সালে পঞ্চম এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) আনছার আলী সিদ্দিকী। ১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মো. শাহজাহান নির্বাচিত হন।[১১] ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে বিএনপির মনজুর কাদের।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে চৌহালিকে পুনরায় সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে সংযুক্ত করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ থেকে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস নির্বাচিত হয়ে নবম জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং একই সাথে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মজিদ মন্ডল এবং ২০১৮ সালের সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুল মজিদের ছেলে আব্দুল মমিন মন্ডল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১,৪৭,১৪৩ জন।[১২] এর মধ্যে পুরুষ ৫১% এবং মহিলা ৪৯%। মোট জনসংখ্যার ৯৯.৫% মুসলিম এবং ০.০৫% হিন্দু ধর্মালম্বী।[৬] উপজেলায় মোট ৭৪,৪৫০ টি পরিবার রয়েছে।[১২]
২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী চৌহালি উপজেলার গড় সাক্ষরতার হার শতকরা ৫৬ ভাগ।[১৩] উপজেলায় ৫টি কলেজ, ১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৫টি মাদ্রাসা রয়েছে।[১৪] উপজেলার সবচেয়ে প্রচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাকরাশি প্রাথমিক বিদ্যালয় যা ১৮৫৬ সালে এবং এনায়েতপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা যা ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[১৪] ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত স্থল ইউনিয়নে অবস্থিত স্থল পাকরাশী ইনষ্টিটিউট সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার সর্বপ্রথম উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।[১৫] উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সম্ভুদিয়া আজিজিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও হাই স্কুল (১৯৩২), খাসকাউলিয়া কে.আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), এনায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), বেতিল বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), এনায়েতপুর সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬৪), এস.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫), চৌহালি ডিগ্রি কলেজ (১৯৭০) এবং চৌহালি মহিলা কলেজ (১৯৯৮)।[১৪] উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় এবং খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ।
চৌহালি উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের অন্য সব শহরের মতই। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রধানত পাঁচটি ধাপ রয়েছে: প্রাথমিক (১ থেকে ৫), নিম্ন মাধ্যমিক (৬ থেকে ৮), মাধ্যমিক (৯ থেকে ১০), উচ্চ মাধ্যমিক (১১ থেকে ১২) এবং উচ্চ শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণত ৫ বছর মেয়াদী হয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়, ৩ বছর মেয়াদী নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণত নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), ২ বছর মেয়াদী মাধ্যমিক শিক্ষা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি), ২ বছর মেয়াদী উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়।
মূলত বাংলা ভাষায় পাঠদান করা হয় তবে ইংরেজি ব্যাপকভাবে পাঠদান ও ব্যবহৃত হয়। অনেক মুসলমান পরিবার তাদের সন্তানদের বিশেষায়িত ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন মাদ্রাসাতে প্রেরণ করেন। মাদ্রাসাগুলোতেও প্রায় একই ধরনের ধাপ উত্তীর্ণ হতে হয়। উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোন শিক্ষার্থী সাধারণত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হার তুলনামূলক কম হলেও এটি মূলত দারিদ্র্যতার সাথে সম্পর্কিত হওয়ায়, এর উন্নতির সাথে সাথে বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চৌহালি অঞ্চলে অপুষ্টি, পরিবেশগত স্যানিটেশন সমস্যা, ডায়াবেটিস, সংক্রামক রোগ প্রভৃতি বেশি দেখা যায়। উপজেলায় ১ একটি সরকারি হাসপাতালের সাথে সাথে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ নামে একটি বেসরকারী হাসপাতাল, ৩টি উপ-স্বাস্থ্য ও ৬টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে।[১৬]
উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে ৯৪.৫৫% নলকূপ থেকে, ০.২৩% ট্যাপ, ০.২৩% পুকুর এবং ৪.৯৯% অন্যান্য উৎস থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে থাকে।[১৬] চৌহালির ৫.৮৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবহার করে থাকে যার মধ্যে শহরে ২৩.২৮% ও গ্রামে ৩.২০%।[১৬] এছাড়া ৯০.৩৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবহার করে থাকে এবং ৩.৭৯% পরিবারের কোনো স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। ১৯৬৭ সালে গুটিবসন্ত রোগে এ উপজেলার ৩০ জন বাসিন্দা মৃত্যুবরণ করেন।[১৬]
চৌহালি উপজেলার প্রধান ভাষা বাংলা। তবে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এ উপজেলায় ভাষাগতভাবে আঞ্চলিকতার টান লক্ষ করা যায়। এ উপজেলায় ৫৩টি ক্লাব, ৬টি গ্রন্থাগার, ১ টি সিনেমা হল ও ১০টি খেলার মাঠ সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে উপজেলার বাসিন্দারে বিভিন্ন লোকগীতি পরিবেশন করতে দেখা যেত যদিও বর্তমানে তা খুব একটা দেখা যায় না। এসব লোকগীতির মধ্যে, বিয়ের গান, কীর্তন, যাত্রাপালা, কিচ্ছা, গম্ভীরা, গজল, ভাদুই, পাঁচালি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
লোকউৎসবের মধ্যে ঈদ উৎসব, দূর্গ পূজা ও চড়ক উৎসব উল্লেখযোগ্য।[১৭] এছাড়া আকিকা, গায়ে হলুদ, বউ বরণ, অন্নপ্রসান ও বৌউভাতের মত লোকাচার পালন করতে দেখা যায়।[১৮] বাংলাদেশের অন্য অনেক অঞ্চলের মত বিয়ের অনুষ্ঠানে ডুলি এবং পালকির প্রচলন ছিল। পূর্বে চৌহালিতে অতিথি আপ্যায়নের পর বস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী উপঢৌকনস্বরূপ দেওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এ উপজেলায় বিভিন্ন লোকক্রীড়া যেমন, হাডুডু, কানামাছিসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলা এবং ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয়।
চৌহালি মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। কুটির শিল্প এবং অনেকে মাছ ধরে জিবীকা নির্বাহ করে থাকে।[১৪] এ উপজেলার প্রধান কৃষি ফসলের মধ্যে রয়েছে কৃষি ফসল চীনাবাদাম, রসুন, পেয়াজ, ধান, পাট, গম, তিল, তৈলবীজ এবং শাকসবজি।[১৪] বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলের মত এ অঞ্চলে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে, পেয়ারা ও কলা পাওয়া যায়।[১৪] পূর্বে পাট, তিল, তিসি ও অড়হর চাষ হলেও বর্তমানে এগুলো বিলুপ্ত। জগোষ্ঠীর ৩৪.৩৮% কৃষি কাজ, ৮.৮৪% ব্যবসা ও বাকীরা অন্যান্য পেশায় জরিত।[৬] এখানে চাষযোগ্য ৭২৫০.৭৬ হেক্টর চাষযোগ্য জমি রয়েছে।[৬]
ব্রিটিশ শাসনামলে এ অঞ্চেল অর্থনৈতিক এলাকা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।[৬] ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে এখানে ইংরেজরা নীল চাষ করত।[৬] এছাড়া তাঁত শিল্প ও চুড়ির ব্যবসার জন্য এলাকাটি বিখ্যাত ছিল। উপজেলাটি যমুনা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।[৬] বর্তমানে এ উপজেলার ২০ হাজার তাঁত রয়েছে।[৬] অন্যান্য কুটির শিল্পের মধ্যে এ উপজেলার বাসিন্দাগণ স্বর্ণকার, কামার, কাঠের কাজ ও সেলাইসহ বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত।[৬] অনেকে মৎস ও পশু খামারের ব্যবসায় জরিত। এসব কিছুই এ উপজেলার অর্থনীতির চালিকা শক্তি।
চৌহালি উপজেলার বাসিন্দাদের ৯৯.৫% মুসলমান এবং ০.০৫% হিন্দু ধর্মালম্বী।[৬] এখানে ২৫৭টি মসিজিদ, ৩টি মন্দির এবং একটি মাজার রয়েছে।[১৪] উপজেলার ধর্মীয় স্থাপনার মধ্যে হযরত খাজা ইউনুস আলীর মাজার সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এটি উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের এনায়েতপুরে অবস্থিত।[৬] খাজা মোহাম্মদ ইউনুস আলী নামে একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এ এলাকায় এসে ইসলাম প্রচার করতেন এবং তাকে এ স্থানেই সমাধিস্থ করা হয়েছে। তার নাম অনুসারে মাজারের নামকরণ করা হয়েছে।[১৯] মাজার কমপ্লেক্সটিতে একটি মসজিদ, দরবার শরীফ এবং সমাধি রয়েছে। পুরো কমপ্লেক্সটির আয়তন ১৬ হাজার বর্গফুট।[২০] মাজর কমপ্লেক্সের মসজিদটি ১৯৫৬ সালে স্থাপিত হয়।[৬]
নৌযোগাযোগ চৌহালি উপজেলার প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের সাথে এ উপজেলার কোন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। উপজেলায় ৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে।[৬] সিরাজগঞ্জ সদর থেকে সিরাজগঞ্জ-এনায়েতপুর সড়ক হয়ে এনায়েতপুর নৌকাঘাট থেকে উপজেলা সদরে যাতায়াত করা হয়। উপজেলার এক ইউনিয়ন থেকে অপর ইউনিয়নে যেতেও বাসিন্দাগণ নৌকা ব্যবহার করেন। এছাড়া টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার সাথে চৌহালির সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। সাধারণত টাঙ্গাইল থেকে এ উপজেলার বাসিন্দাগণ রাজধানী ঢাকা যাতায়াত করেন।[২১]
চৌহালি উপজেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটন আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত শাহ সুফী হযরত ইউনুস আলী এনাযেতপুরীর সমাধি এবং যমুনা নদী ও নদীর পার।[২২] এছাড়া নদী রক্ষা বাধও এ উপজেলার অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.