Remove ads
বিজাপুর ও আহমেদনগরের ভারপ্রাপ্ত রানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চাঁদ বিবি (১৫৫০-১৫৯৯) একজন মুসলমান রাজপ্রতিনিধি ও যোদ্ধা ছিলেন। তিনি বিজাপুরের রাজপ্রতিনিধি (১৫৮০-৯০) ও আহমেদনগরের রাজপ্রতিনিধি (১৫৯৬-৯৯) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[১] তিনি আহমেদনগরকে রক্ষার জন্য ১৫৯৫ সালে মোগল সম্রাট আকবরের সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। ইতিহাসের পাতায় এই যুদ্ধের জন্য তিনি সুপরিচিত।[২]
চাঁদ বিবি ১৫৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আহমেদনগরের প্রথম হুসাইন নিজাম শাহের কন্যা ছিলেন।[৩] তিনি বুরহান-উল-মুলকের বোন ছিলেন, যিনি পরে আহমেদনগরের মসনদে বসেছিলেন। চাঁদ বিবি অনেক ভাষা জানতেন। তিনি আরবি, ফার্সি, তুর্কি, মারাঠি ও কন্নড় ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি সেতার বাজাতে পারতেন। তার শখ ছিল ছবি আঁকা।[৪]
চাঁদ বিবি বিজাপুর সুলতানাতের প্রথল আলী শাহের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[৫] তার স্বামী কর্তৃক বিজাপুর সুলতানাতের পূর্ব প্রান্তে একটি বাওড়ি নির্মাণ করেন। বাওড়িটির নাম চাঁদ বিবির নামানুসারে 'চাঁদ বাওড়ি' রাখা হয়।[৬]
আলী আদিল শাহের পিতা, ইব্রাহিম আদিল শাহ রাজ দরবারের ক্ষমতা সুন্নি আমির, হাবশি ও দাক্ষিণাত্য বাসীদের মাঝে ভাগ করেন। কিন্তু, আলী আদিল শাহ শিয়াদের পছন্দ করতেন।[৭] ১৫৮০ সালে তার মৃত্যুর পর শিয়া আমিরগণ তার ভাগ্নে দ্বিতীয় ইব্রাহিম আদিল শাহকে সিংহাসনে বসান।[৮] তখন দাক্ষিণাত্যবাসী কামাল খান তার রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত হন। তিনি চাঁদ বিবিকে অসম্মান করেন। তখন চাঁদ বিবি হাজি কিশভার খানের সাহায্য নিয়ে কামাল খানকে আক্রমণ করেন।[৮] পলায়নের সময় কামাল খান ধরা পড়েন এবং তার শিরশ্ছেদ করা হয়।
তখন কিশভার খান ইব্রাহিমের রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত হন। ধারাসেওতে আহমেদনগর সুলতানাতের বিরুদ্ধে সংঘটিত এক যুদ্ধে কিশভার খানের বিজাপুর সেনাবাহিনী জয়লাভ করে।বিজয়ের পর কিশভার খান বিজাপুরি সেনাপতিদের সব হাতি তার কাছে সমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। হাতিগুলো খুবই দামি ছিল। তাছাড়া, হাতিগুলো ছিল রণকৌশলে সুনিপুণ। তখন বিজাপুরি সেনাপতিরা নতুন ফন্দি আঁটেন। তারা চাঁদ বিবিকে সাথে নিয়ে বাঙ্কাপুরের সেনাপতি মুস্তাফা খানকে সাথে নিয়ে কিশভার খানের বিরুদ্ধে লাগেন। কিশভার খানের গোয়েন্দারা এটি তাকে জানায়। তখন মুস্তাফা খানের বিরুদ্ধে তিনি সৈন্য পাঠান। যুদ্ধে মুস্তাফা খান নিহত হন।[৮] এরপর চাঁদ বিবিকে সাতারা দুর্গে বন্দি করেন তিনি। এরপর নিজেকে রাজা ঘোষণা করেন কিশভার খান। কিশভার খান সেনাপতিদের মাঝে অজনপ্রিয় শাসক ছিলেন। হাবশি সেনাপতি ইখলাস খানের আক্রমণে তিনি পলায়ন করেন।[৭] গোলচান্দায় মুস্তাফা খানের এক আত্মীয়ের হাতে নিহত হন। এসময় অল্পদিনের জন্য চাঁদ বিবি রাজপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।[৮]
ইখলাস খান এরপর রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত হন। এসময় আহমেদনগরের নিজাম শাহি সুলতান ও গোলচান্দার কুতুব শাহি সুলতান যৌথভাবে বিজাপুর আক্রমণ করেন।[৮] এর ফলে ইখলাস খানকে ক্ষমতা ছাড়তে হয় ও দিলাভার খান ১৫৮২ সাল থেকে ১৫৯১ সাল পর্যন্ত রাজপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।[৭][৮]
১৫৯৫ সালে আহমেদনগরের সুলতান ইব্রাহিম নিজাম শাহ বিজাপুরের দ্বিতীয় ইব্রাহিম আদিল শাহের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে নিহত হন। এরপর মিয়া মঞ্জু দ্বিতীয় আহমেদ নিজাম শাহ নাম দিয়ে শাহ তাহিরের ১২ বছরের পুত্রকে সিংহাসনে বসান। এরপর সম্রাট আকবরের পুত্র মুরাদ মির্জা আহমেদনগর আক্রমণ করেন এবং আহমেদনগর সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন।
এরপর, শিশু বাহাদুর শাহ আহমেদনগরের মসনদে বসেন। চাঁদ বিবি তার রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত হন।
১৫৯৫ সালে মোগলরা আহমেদনগর আক্রমণ করে। চাঁদ বিবির নেতৃত্বে মোগলশক্তি পরাজিত হয় আহমেদনগরের কাছে।[৯]
এরপর আবারো মোগলরা আহমেদনগর আক্রমণ করে। কিন্তু, এবারো তারা আহমেদনগর দুর্গ দখল করতে পারে নি।
তার সেনাবাহিনীর অনেকেই ছিল, যারা নারী নেতৃত্ব মেনে নিতে পারে নি। ১৫৯৯ সালে তার সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্যদের হাতে নিহত হন তিনি।
তার মৃত্যুর চার মাস চার দিন পর মোগল শক্তি আহমেদনগর দখল করে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.