ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি ঘূর্ণিঝড় উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ছিল বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি ক্রান্তীয়-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়। এটি ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশও ভারতকে প্রভাবিত করেছিল। সিত্রাং শব্দের অর্থ পাতা। ২০১৭ সালের ঘূর্ণিঝড় মোরার পর এটিই ছিল সরাসরি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আঘাত হানা প্রথম ঘূর্ণিঝড়। ২২ শে অক্টোবর আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপকূল থেকে কিছুটা দূরে সমুদ্রে এটি গঠিত হয়ে ধীরে ধীরে তীব্রতর হতে হতে ২৫ অক্টোবর প্রথম প্রহরে উচ্চ-প্রান্তের ঘূর্ণিঝড় হিসাবে বরিশালের কাছে বাংলাদেশের উপর আছড়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় অশনির পর এটি ২০২২ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়।
ঘূর্ণিঝড় (আইএমডি স্কেল) | |
---|---|
ক্রান্তীয় ঝড় (স্যাফির-সিম্পসন মাপনী) | |
![]() ২৪ অক্টোবর ২০২২ তারিখে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং | |
গঠন | ২২ অক্টোবর ২০২২ |
বিলুপ্তি | ২৫ অক্টোবর ২০২২ |
সর্বোচ্চ গতি | ৩-মিনিট স্থিতি: ৮৫ কিমি/ঘণ্টা (৫০ mph) ১-মিনিট স্থিতি: ৮৫ কিমি/ঘণ্টা (৫০ mph) |
সর্বনিম্ন চাপ | ৯৯৬ hPa (mbar); ২৯.৪১ inHg |
হতাহত | কমপক্ষে ৩৫ [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
ক্ষয়ক্ষতি | অজানা |
প্রভাবিত অঞ্চল | বাংলাদেশ,ভারত |
২০২২ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের অংশ |
আবহাওয়াগত ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ

মানচিত্রের ব্যাখ্যা
ক্রান্তীয় নিম্নচাপ (≤৩৮ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ≤৬২ কিমি/ঘণ্টা)
ক্রান্তীয় ঝড় (৩৯–৭৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ৬৩–১১৮ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ১ (৭৪–৯৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১১৯–১৫৩ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ২ (৯৬–১১০ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১৫৪–১৭৭ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৩ (১১১–১২৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১৭৮–২০৮ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৪ (১৩০–১৫৬ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ২০৯–২৫১ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৫ (≥১৫৭ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ≥২৫২ কিমি/ঘণ্টা)
অজানা
ক্রান্তীয় ঝড় (৩৯–৭৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ৬৩–১১৮ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ১ (৭৪–৯৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১১৯–১৫৩ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ২ (৯৬–১১০ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১৫৪–১৭৭ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৩ (১১১–১২৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১৭৮–২০৮ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৪ (১৩০–১৫৬ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ২০৯–২৫১ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৫ (≥১৫৭ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ≥২৫২ কিমি/ঘণ্টা)
অজানা
ঝড়ের ধরন

২০২২ সালের ১৭ অক্টোবরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপের এলাকা থেকে সিতরঙ্গের উৎপত্তি হয়। সেসময়, ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) তাদের প্রথম বুলেটিনে এই নিম্ন চাপের অঞ্চলটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাকে "উচ্চ" হিসাবে বিবেচনা করেছিল।[১] কয়েক দিন পরে, যখন নিম্ন চাপের অঞ্চলটি উষ্ণ পানির মধ্যে থাকার পাশাপাশি সামান্য বায়ু "শিয়ার" (shear) ছিল, তখন আইএমডি তাদের তৃতীয় বুলেটিনে একে একটি নিম্নচাপ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে বিওবি ০৯ নাম দেয়।
অবিলম্বে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার ২২ অক্টোবরে বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় সিস্টেমে একটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় গঠনের সতর্কতা (টিসিএফএ) জারি করে।[১] কয়েক ঘন্টা পরে, বিওবি ০৯ গতি অর্জন করে এবং এজেন্সির পঞ্চম বুলেটিনে এটি একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানা যায়। ২৩ শে অক্টোবরে গভীর নিম্নচাপটি আরও শক্তি অর্জন করে ঘূর্ণিঝড়ের পর্যায়ে পৌঁছে যায়।[২] তখন থাইল্যান্ডের প্রদত্ত নামানুসারে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করে "সিত্রাং"।
২৩ শে অক্টোবরে বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায়, জেটিডব্লিউসি ঝড়টিকে ক্রান্তীয় তথা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় ০৫বি হিসাবে ঘোষণা করে।[৩] এটি বাংলাদেশের উপর আছড়ে পড়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ফলে সিত্রাং একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুষ্ক বায়ু বৃদ্ধির ফলে এটি ঘটেনি।[৪] ২৪ অক্টোবর মধ্যরাতে তথা ২৫ অক্টোবরের প্রথম প্রহরে বরিশালের পটুয়াখালীর কাছে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানলে ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি হারাতে শুরু করে এবং গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। জেটিডব্লিউসি ২৪ শে অক্টোবরে রাত ৩টায় সিস্টেমে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করে।[৫] পরে, সিত্রাং দুর্বল হতে থাকে এবং ত্রয়োদশ এবং চূড়ান্ত বুলেটিনে আইএমডি ঘোষণা করে, ঘূর্ণিঝড়টি ২৫ অক্টোবরে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় এটি শক্তি হারিয়ে নিম্ন চাপ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। একই রাতে এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের উপর দিয়ে চলে যায়।[৬]
প্রস্তুতি ও প্রভাব
সিত্রাং থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লক্ষ লোককে নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সারাদেশে কমপক্ষে ৩৫ জন মারা যায়[৭] এবং ১০,০০০ এরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা ও ভারী বর্ষণ শুরু হয়।[৮][৯][১০] সারাদেশের ৮০ লাখেরও বেশি গ্রাহক দীর্ঘসময় ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।[১১]
প্রতিক্রিয়া
ঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলরেখার কাছে আসায় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কয়েক হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে। সরকার মাছ ধরার নৌকাগুলিকে গভীর সমুদ্র থেকে ফিরে আসতে এবং বঙ্গোপসাগরে নোঙর রাখার জন্য অনুরোধ করেছে, তিনটি বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে এবং সারা দেশে সমস্ত নদী পরিবহন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।[৮]
আরও দেখুন
- ২০২২ সালের আবহাওয়া
- ২০২২ সালে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়
- ২০২২ উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুম
- ঘূর্ণিঝড় ভিয়ারু
- ঘূর্ণিঝড় আম্ফান
- ঘূর্ণিঝড় সিডর
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.