শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
গ্রিসের ইতিহাস
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
গ্রিসের ইতিহাস বলতে বোঝায় গ্রিক জাতি এবং অতীতে তাদের দ্বারা বিজিত অঞ্চল তথা বর্তমান গ্রিস রাষ্ট্রের ইতিহাস সংক্রান্ত অধ্যয়ন।

ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে গ্রিস জাতি অধ্যুষিত ও শাসিত অঞ্চলের সীমারেখায় নানা পরিবর্তন এসেছে। এই কারণে গ্রিসের ইতিহাসেও বিভিন্ন প্রকার বহিরাগত উপাদান এসে মিশেছে। গ্রিসের ইতিহাসের প্রতিটি যুগের সুনির্দিষ্ট লিখিত বিবরণ বিদ্যমান।
প্রথম আদি গ্রিক উপজাতিটি মাইসেনিয়ান নামে পরিচিত। এরা খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের শেষ ভাগে এবং দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রথমার্ধে গ্রিসে মূল ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন করে।[২] মাইসেনিয়ান উপজাতি যখন এই অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করেছিল, তখন এখানে একাধিক অ-গ্রিকভাষী ও দেশীয় আদি-গ্রিক উপজাতিগুলি বাস করত। এরা খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম সহস্রাব্দ থেকে এই অঞ্চলে কৃষিকার্য করে আসছিল।[৩]
ভৌগোলিক বিস্তারের মধ্যগগনে গ্রিক সভ্যতা গ্রিস থেকে মিশর ও আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। এই সময় থেকেই গ্রিক সংখ্যালঘুরা পূর্বতন গ্রিক সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে (যেমন: তুরস্ক, ইতালি, ও লিবিয়া, লেভ্যান্ট ইত্যাদি অঞ্চলে) বসবাস করছেন। বর্তমানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রিক অভিনিবেশকারীদের সন্ধান পাওয়া যায়। বর্তমানে অধিকাংশ গ্রিকেরা ১৮২১ সালে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত গ্রিস দেশ ও সিরিয়ায় বসবাস করেন।
Remove ads
প্রাগৈতিহাসিক গ্রীস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
নিওলিথিক
৭ খ্রীস্টপূর্ব সহস্রাব্দের দিকে গ্রিস এবং বলকানের মধ্য দিয়ে ইউরোপে নিওলিথিক যুগের সূচনা হয়। খ্রীস্টপূর্ব ২৮ শতকের দিকে ব্রোঞ্জ যুগের আগমনের মধ্য দিয়ে এ যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে।
খ্রীস্ট পূর্ব ১৯ শতকে মাইসেনিয়ান নামের এক প্রোটো-ইন্দো ইউরোপীয় জাতি বর্তমান গ্রিক ভাষার সূচনা করে।
ব্রোঞ্জ যুগ
সাইক্লেডিক এবং মিনোয়ান সভ্যতা
গ্রীসে আবির্ভূত হওয়া প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ক্রিটি দ্বীপের মিনোয়ান সভ্যতা যেটা ২৭০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৪৫০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল আর গ্রিক মূল ভুখন্ডের আদি হেলাডিক সভ্যতা যার স্থায়িত্বকাল ছিল ২৮০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ থেকে ২১০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। মিনোয়ানদের সম্পর্কে খুব কম খবরই পাওয়া যায়, তারা ছিল প্রোটো-ইন্দো ইউরোপীয় জাতের মানুষ, লিনিয়ার-এ (Linear A) নামের এক দূর্বোধ্য ভাষায় লেখতো যার অর্থ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তারা মূলত সামুদ্রিক বাণিজ্যে নিয়োজিত ছিল, নিজেদের দ্বীপের উর্বর প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করে উৎকর্ষ সাধন করেছিলেন, রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে মূলত ছিল কাঠ। রপ্তানি হত মূলত সাইপ্রাস সিরিয়া মিশর এবং এজিয়ান সাগরের দ্বীপগুলোতে।
মাইসেনিয়ানরা ক্রিটি অধিকার করার পর ক্রিটির সংস্কৃতি নিজেদের মধ্যে আত্মস্ত করে নেয়।
মাইসেনিয়ান সভ্যতা

মাইসেনিয়ানরা এজিয়ান সাগরে আসতে শুরু করে ১৬০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দের দিকে, ১৪০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে তারা মিনোয়ান সভ্যতার কেন্দ্র ক্রিটি দখল করে নেয়। আদি গ্রীক ভাষা লেখার জন্য তারা ক্রিটির লিনিয়ার এ ভাষা ব্যবহার করতো পরে নিজেদের লিনিয়ার বি (Linear B) ভাষার প্রচলন করে। মাইসেনিয়ানরা এসেছে মাইসেনিয়া নামক অঞ্চল থেকে, অন্যান্য মাইসেনিয়ান অঞ্চল হল এথেন্স, পিলস, থীব, টিরান ইত্যাদী।
মাইসেনিয়ানরা ছিল যোদ্ধা, তাদের কবরে মৃতদেহের সাথে যুদ্ধের সরঞ্জাম সমাহিত করার প্রমাণ পাওয়া যায়। ১১০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে মাইসেনিয়ান সভ্যতা ধংস প্রাপ্ত হয়। কোন কোন গবেষক এর জন্য ডোরিয়ান নামের আরেকটি গোষ্টীর আক্রমণ করাকে দায়ী করে থাকে কিন্তু তার কোন উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মাইসেনিয়ান সভ্যতার পতনের পর গ্রিক একটা সাময়িক অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে। এসময় গ্রীসের জনসংখ্যা এবং শিক্ষার হার আশঙ্খা জনক ভাবে হ্রুাস পায়।
আদি লৌহযুগ
গ্রীসে অন্ধকার যুগের সূচনা হয়েছিল খ্রীস্টপূর্বাব্দে, মাইসেনিয়ান সভ্যতার পতনের মধ্য দিয়ে। অনেকে এর জন্য ডোরিয়ানদের আক্রমণকে দায়ী করেন। ডোরিয়ান দের সাথে ছিল লোহা নির্মিত শক্তিশালী অস্ত্র, যা দিয়ে দূর্বল মাইসেনিয়ান সভ্যতাকে সহজে পরাস্ত করা সম্ভব হয়েছিল। এ অন্ধকার যুগ টিকে ছিল ৮০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে গ্রীকে নগর রাস্ট্র উদ্ভবের আগ পর্যন্ত, কিংবা হোমারের আগ পর্যন্ত। অন্ধকার যুগে রাজারা খুব দূর্বল ভাবে টিকে ছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভিজাত তন্ত্রের কাছে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েন, এবং শেষে শেষে অভিজাততন্ত্রের ভেতরে আরো অভিজাত তৈরি হয়। এ যুগে সুলভ এবং সস্তা হওয়ার কারণে তৈজসপত্র এবং যুদ্ধাস্ত্র তৈরিতে ব্রোঞ্জের বদলে লোহার ব্যবহার শুরু হয়। সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে কিছুটা অর্থনৈতিক সমতা আসে, ফলে রাজাদের সিংহাসনচূত করে পরিবারগুলো সিংহাসনে আরোহণ করতে শুরু করে।
অন্ধকার যুগের শেষে গ্রীক নবজাগরণের সূচনা হয় যা কৃঞ্চ সাগর এবং স্পেন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, ফোনেশিয়ানদের কাছ থেকে লেখার কৌশল পুনরায় আয়ত্ত্বে আসে যা উত্তরে ইতালি এবং গাউল পর্যস্ত ছড়িয়ে পড়ে।
Remove ads
প্রাচীন গ্রীস
সারাংশ
প্রসঙ্গ

প্রাচীন গ্রীসের সূচনা ধরা হয় ৭৭৬ খ্রীস্টপূর্বাব্দে অলেম্পিক গেমস এর আয়োজনের মধ্য দিয়ে, অবশ্য অনেকে এটাকে ১০০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত করতে চান। প্রাচীন যুগের পরিসমাপ্তি ধরা হয় ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে।
বেশিরভাগ ঐতিহাসিক প্রাচীন গ্রীসকে আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার ভিত্তিভুমি বলে স্বীকার করেছেন। রোমান সভ্যতার উপর গ্রিক সংস্কৃতির প্রচন্ড রকম প্রভাব ছিল, যা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। আধুনিক পৃথিবীর ভাষা, রাজনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, দর্শন, শিল্পকলা এবং স্থাপত্যের উপর গ্রিক প্রাচীন যুগের প্রভাব অপরিসীম।
সাবেকী গ্রীস
অন্ধকার যুগের সাথে সাথে মাইসেনিয়ান যুগের জ্ঞান এবং বর্ণমালাও হারিয়ে ফেলেছিল গ্রীস। কিন্তু ৮০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দের দিকে নবজাগরিত গ্রিস ফোনেসিয়ান বর্ণমালা সংস্কার করে গ্রীক বর্ণমালার আবির্ভাব ঘটায়। তখন গ্রিক ছিল ছোট ছোট নগর রাস্ট্রে বিভক্ত। গ্রীসের সাবেকী যুগকে প্রাচ্যের সাথে মিলনের যুগ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। কারণ গ্রিস তখন নতুন এসিরিয় সভ্যতার প্রান্তে ছিল কিন্তু তার অধীনে ছিলনা। সেই যুগে গ্রীস তার ভান্ডারে প্রাচ্য থেকে প্রচুর জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্পকলাকৌশল, পুরাণ আমদানী করে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল।
ধ্রুপদী গ্রীস

গ্রীস তখন ছোট ছোট নগর রাষ্ট্রে বিভক্তছিল যাদের বলা হতো পলিস, পরিটিকস শব্দটার জন্ম এই পলিস থেকে যার অর্থ পলিসের জিনিস। নগররাস্ট্রগুলো কার্যত যাই হোক না কেন নামে স্বাধীন ছিল। হয়তো একটা নগর অন্য নগরের উপর অনেক দিক দিয়ে নির্ভরশীল কিন্তু নগর হিসেবে প্রত্যেকে ছিল সার্ভভৌম। ফলে যখন বাইরের কারো সাথে যুদ্ধ করার প্রয়োজন হতো তখন নগর রাস্ট্রগুলো যুথবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করতো, তবে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধও লেগে থাকতো সব সময়।
প্রধান দুটি যুদ্ধ ধ্রুপদী গ্রীসকে আকার দিয়েছে, তার একটি পারসিক যুদ্ধ (৫০০ খ্রি: পূ: থেকে ৪৪৮ খ্রি: পূ:), এই যুদ্ধে আয়োনিয়ার গ্রিক নগরগুলো পারস্য সভ্যতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল আর গ্রিক মূল ভুখন্ডের কিছু নগর, যেমন এথেন্স তাতে সমর্থন যুগিয়েছিল।
যুদ্ধ পরিচালনা এবং পারসিক আক্রমণ প্রতিহত করতে এথেন্স ৪৪৭ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে ডিলিয়ান লীগ নামে একটি নগর সমূহের একটি লীগ গঠন করে। লীগের সদস্য নগর গুলো একটা সর্বজনীন সেনাবাহিনী গঠন করে এবং প্রত্যেক সদস্য এই সর্বজনীন সেনাবাহিনীতে সৈনিক এবং নৌযান প্রদান করতো। এথেন্স প্রথম দিকে ছোট ছোট নগর রাস্ট্রগুলোকে লীগে অবদান রাখার সুযোগ করে দেয় পরে পরে অবদান রাখতে বাধ্য করে। লীগ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদকে অপরাধ হিসেবে গন্য করতে শুরু করে। পারসিক যুদ্ধের পর লীগের কোষাগার ডেলস থেকে এথেন্সে সরিয়ে আনা হয় এবং লীগের উপর এথেন্সের নিয়ন্ত্রণ আরো জোরালো করা হয়। এমন অবস্থা দাড়ায়যে ডিলিয়ান লীগকে এথেন্স সাম্রাজ্য বললে ভুল বলা হয়না।
৪৫৮ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে পারসীয়ান যুদ্ধের মধ্যেই ডিলিয়ান লীগ এবং স্পার্টার নেতৃত্বাধীন পেলোপনেসিয়ান লীগের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায়। কিছু বছর ফলাফলহীন যুদ্ধের পর ৪৪৭ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে এ দুটি লীগ একটা ৩০ বছর মেয়াদী শান্তি চুক্তি করে, কিন্তু চুক্তি সত্ত্বেও ৪৩১ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে পেলোপনেসিয়ান যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
যুদ্ধে এথেন্সের সেনাপতি পেরিক্লিস আত্মরক্ষামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করে, ফলে দিনের পর দিন এথেন্স স্পার্টা কর্তৃক অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। ৪৩০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মহামারি প্লেগের খপ্পরে পড়ে এথেন্স, এর চার ভাগের এক ভাগ মানুষ মারা যায়। পেরিক্লিসও মারা যায় এ সময়। পেরিক্লিস এর মৃ্ত্যুর পর নতুন নেতৃত্ব আক্রমণাত্বক ভূমিকা গ্রহণ করে। ফিলোসের যুদ্ধে এথেন্স ৩০০ থেকে ৪০০ স্পার্টান যোদ্ধা বন্দী করতে সক্ষম হয়। এই যোদ্ধারা স্পার্টান সেনাবাহিনীর এত গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলে যে স্পার্টা এদের হাতছাড়া করতে চাইছিলো না। অন্য দিকে ডেলিয়াম এবং এমিপিফোলিস এর যুদ্ধে এথেন্স শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। অবশেষে ৪২১ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে শান্তিচুক্তি হয় যা Peace of Nicias নামে পরিচিত। এই চুক্তির ফলে স্পার্টা তার যুদ্ধবন্দী ফেরত পায় আর এথেন্স ফেরত পায় হারানো নগর এমপোফোলিস। যুদ্ধের এই প্রথম পর্বকে বলা হয় আর্কেমিডিয়ান যু্দ্ধ।

Remove ads
পাদটীকা
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads