গোপালদাস মজুমদার
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গোপালদাস মজুমদার (ইংরেজি: Gopaldas Mazumdar) ( ২৬ জানুয়ারি,১৮৯০ – ১৮ জুন, ১৯৮০) ছিলেন একজন খ্যাতনামা প্রকাশক ও পুস্তকবিক্রেতা। কল্লোলযুগে বাংলা প্রকাশনা জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম।[1][2]
গোপালদাস মজুমদারের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের যশোর জেলার বাগডাঙ্গায় ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে জানুয়ারি। পিতার নাম প্রভাসচন্দ্র মজুমদার। বিপ্লবী পরিবেশে ছোটবেলা অতিবাহিত করেন। মানিকতলা বোমা-মামলাখ্যাত বিপ্লবী জোতিষচন্দ্র মজুমদার ছিলেন তার মধ্যম অগ্রজ। তার হাত ধরেই বিপ্লবী দলে নাম লিখিয়েছিলেন কৈশোরে। রাজশাহী বিভাগ থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়ে খুলনার দৌলতপুর কলেজে পড়ার সময়ই তিনি শ্রীঅরবিন্দ, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ , বাঘা যতীন প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন।
শ্রীঅরবিন্দের ভগিনী সুরোজিনী দেবীর সহায়তায় তিনি বারীন ঘোষের 'বিজলী' পত্রিকার সাথে যুক্ত হন। বিজলী পত্রিকার সহকর্মী ম্যানেজার বিধুভূষণ দে'র সাথে মিলিতভাবে একটি রাজনৈতিক পুস্তকের দোকান শুরু করেন - 'দে-মজুমদার' নাম দিয়ে। পরিচালনার ভার ছিল বিধুবাবুর উপর এবং তিনি ছিলেন স্বত্বাধিকারী। বছর দেড়েকের মধ্যে তাঁদের যৌথ চেষ্টায় ডি এম লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত হল বারীন্দ্র ঘোষের লেখা বই 'বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী', মুক্তির দিশা, নলিনী গুপ্তের 'স্বরাজ গঠনের ধারা' প্রভৃতি। কিন্তু ব্যবসায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিধুভূষণ সম্পর্ক ত্যাগ করেন।[3] অতঃপর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে একা তিনিই এই প্রকাশনা স্বত্বাধিকারী হন। 'বিজলী'-র অফিসে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে আলাপের সুবাদে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। গোপালদাস নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ "অগ্নিবীণা" প্রকাশ করলেন ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে। পরে একে একে 'দোলনচাঁপা', 'ভাঙার গান' সহ তার কবিতা, গদ্য, গান, স্বরলিপি— সবই। নজরুলের 'বিষের বাঁশী' প্রকাশের জন্য তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। বইপাড়ায় সে সময়ে তুমুল চাহিদা শরৎচন্দ্র আর নজরুলের। নজরুলের আনুকূল্যেই গোপালদাস মজুমদারের বিপ্লবীবান্ধব প্রতিষ্ঠান 'ডি এম লাইব্রেরী'র ব্যবসায়িক উন্নতি হয়। গোপালদাস 'স্মরণ-বরণ' নামের স্মৃতি কথায় লিখেছেন -
‘তখনকার দিনে বাইশশো করে ছাপা বই এক বছরের মধ্যে ফোর্থ এডিশন হওয়া দুঃস্বপ্নের কথা। নজরুলের ‘বুলবুল’ কিন্তু তাই হয়েছিল। দাম পাঁচ সিকা।পাঁচ সিকা থেকে কত সিকে যে লাভবান হয়েছি তা ঈশ্বরের অনুগ্রহ, নজরুলের বন্ধুপ্রীতি এবং আমার সৌভাগ্যের নিদর্শন।’
গোপালদাস শ্রম আর নিষ্ঠার সাথে প্রকাশনার কাজ করতেন কেননা সে সময়ে তিনি কাজটিকে দেশসেবা হিসাবেই ভাবতেন। তাছাড়া নতুন লেখকদের আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি। নতুন প্রতিভা আবিষ্কারে তার যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, অজিত দত্ত, অন্নদাশঙ্কর রায় প্রমুখ কবি ও লেখকদের প্রথম গ্রন্থ তিনিই প্রকাশ করেন। সুকুমার সেন তার ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’-এ লিখেছেন -
‘কল্লোল পত্রিকার মাহাত্ম্যের এক ব্যক্তি ভাগীদার আছেন। তিনি ডি এম লাইব্রেরীর অধ্যক্ষ গোপালদাস মজুমদার। কাজী নজরুল হইতে আরম্ভ করিয়া কল্লোল গোষ্ঠীর অধিকাংশের রচনা পুস্তকাকারে ইনিই প্রথম ছাপাইয়াছিলেন। তাহা না হইলে ইহাদের মধ্যে অনেককেই হয়ত তৎক্ষণাৎ সাহিত্যক্ষেত্র হইতে বিদায় লইতে হইত।’
এক স্মৃতিলেখায় রমাপদ চৌধুরী লিখেছিলেন—
‘এই অধম লেখকের যখন কোনও উপন্যাস পত্রপত্রিকায় বের হয়নি, তিনি ডেকে এনে চেক লিখে দিয়েছেন।...
বহু মূল্যবান প্রবন্ধের পুস্তকের প্রকাশক ছিলেন তিনি। তার প্রকাশনা সংস্থা ডি এম লাইব্রেরী হতেই প্রকাশিত হয় অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‘আকস্মিক’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘বেনামী বন্দর’, শৈলজানন্দের ‘বানভাসি’, অন্নদাশঙ্করের ‘সত্যাসত্য’, বনফুল, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, মণীন্দ্রলাল বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, সুকুমার সেন, জাহ্নবী কুমার চক্রবর্তীর বই সমূহ। [4]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.