গোণ্ড জাতি

নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

গোণ্ড জাতি

গোণ্ডি (Gōndi) গোঁড় অথবা গোণ্ড জাতি একটি ভারতীয় আদিবাসী জাতি যারা দ্রাবিড় ভাষায় কথা বলে। এই জাতির মানুষ মধ্যপ্রদেশ, পূর্ব মহারাষ্ট্র (বিদর্ভ)[] ছত্তিসগড়, উত্তরপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার পশ্চিম ওড়িশায় প্রভৃতি এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে।

দ্রুত তথ্য মোট জনসংখ্যা, উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল ...
গোণ্ড
Thumb
উমরিয়া জেলায় গোণ্ডি জাতির মহিলা
মোট জনসংখ্যা
১৩,২৫৬,৯২৮[][]
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
ভারত
মধ্যপ্রদেশ৫,০৯৩,১২৪[]
ছত্তিসগড়৪,২৯৮,৪০৪[]
মহারাষ্ট্র১,৬১৮,০৯০[]
ওড়িশা৮৮৮,৫১৮[]
উত্তরপ্রদেশ৫৬৯,০৩৫[]
অন্ধ্রপ্রদেশ (বিভাজন পূর্ব)৩০৪,৫৩৭[]
বিহার২৫৬,৭৩৮[]
কর্ণাটক১৫৮,২৪৩[]
ঝাড়খণ্ড৫৩,৬৭৬[]
পশ্চিমবঙ্গ১৩,৫৩৫[]
গুজরাত২,৯৬৫[]
ভাষা
গোণ্ডি, হিন্দি, মারাঠি, তেলুগু
ধর্ম
হিন্দুধর্ম []
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
দ্রাবিড় জাতি, মুরিয়া জনজাতিমাড়িয়া জাতি
বন্ধ

গোণ্ডদের রাজ গোণ্ডও বলা হয়ে থাকে। ১৯৫০-এর দশকে শব্দটির বহুলভাবে ব্যবহৃত হলেও, বর্তমানে এর ব্যবহার হয় না বললেই চলে, এর কারণ সম্ভবত গোণ্ড রাজাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার বিলোপ।[][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] গোণ্ডি ভাষা দ্রাবিড় ভাষা পরিবারের অংশ এবং তেলুগু ভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। গোণ্ডি জাতির প্রায় অর্ধেক লোক গোণ্ডি ভাষায় কথা বলে এবং বাকিরা হিন্দি, মারাঠি সহ অন্যান্য ইন্দো-আর্য ভাষায় কথা বলে।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী, তাদের জনসংখ্যা ৫.০১ মিলিয়ন। ১৯৯১-এর আদমশুমারিতে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯.৩ মিলিয়ন হয়[][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]এবং ২০০১ আদমশুমারিতে প্রয় ১১ মিলিয়ন হয়ে যায়। গত কয়েক দশক ধরে তারা ভারতের মধ্যাঞ্চলের নকশাল–মাওবাদী বিদ্রোহের সাক্ষী।[] নক্সাল বিদ্রোহীদে বিরুদ্ধে লড়তে গোণ্ডি জাতির লোকেরা, ছত্তিসগড় সরকারের নির্দেশে সালওয়া জুড়ুম নামে একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে।[]

ইতিহাস

ইতিহাসবিদগণ ধারণা করেন যে, গোণ্ড জাতির রাজাগণ ১৩ম শতক থেকে ১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময় গণ্ডোয়ানা নামক অঞ্চলটি শাসন করতেন; যা বর্তমানে পূর্ব মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও পশ্চিম ওড়িশার অন্তর্গত। মুসলিম লেখকগণ ১৪ম শতকরের পরবর্তী সময়ে গোণ্ড রাজত্বের উত্থানে বর্ণনা দিয়েছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

গোণ্ডরা ১৬ম শতক ও ১৮ম শতকের মাঝামাঝি সময়ে মধ্য ভারতের চারটি রাজ্যে (গার্হা রাজ্য, দেওগড়, চন্দ, ও খের্লা রাজ্য) রাজত্ব করেন। সেসময় তারা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দুর্গ, প্রাসাদ, হ্রদ, ও মন্দির নির্মাণ করেন। গণ্ডোয়ানা রাজ্য ১৬ম শতাব্দীর শেষার্ধ সময় পর্যন্ত ঠিকে ছিল। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে মারাঠাগণ কর্তৃক মুঘলরা পরাস্ত হলে মালবা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গোণ্ডরা ফিরে পায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দে মারাঠাগণ গণ্ডোয়ানা দখল করে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করে। মারাঠাগণ গোণ্ড রাজাদের উৎখাত করে এবং তাদের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নেয়, যদিও কিছু গোণ্ড জমিদারি সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত ছিল।[]

বিজ্ঞান ও ধর্ম

বহু জ্যোতির্বিদ্যাগত ধারণা সম্পর্কে প্রাচীন গোণ্ডরা অবহিত ছিলেন।[] সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্রপুঞ্জ ও ছায়াপথের জন্য গোণ্ডদের নিজস্ব স্থানীয় নাম ছিল। এই ধারণার অধিকাংশই ছিল তাদের সময়-পালন এবং পঞ্জিকাগত কার্যকলাপ ভিত্তিক। গোণ্ড জাতি ছাড়াও, লম্বাণিকোলাম জাতির লোকেরাও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান রাখত।[১০]

তাদের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী মৃত্যুকে তারা এক প্রকার রাগ হিসেবে বর্ণনা করে, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে এটি জাদুকর ভূতদের দ্বারা সৃষ্ট হয়।[১১] তাদের ধর্ম ছিল মূলত গোষ্ঠী ও গ্রাম-দেবতার উপাসনা, সেইসাথে পূর্বপুরুষগণের উপাসনা করা।[১২]

বর্গীকরণ

তারা অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড়, গুজরাত, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে তফসিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত।[১৩]

উত্তরপ্রদেশ সরকার গোণ্ডি জাতিকে তফসিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত করে কিন্তু ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ তারা উত্তরপ্রদেশে তাফসিলি জনগোষ্ঠী হিসেবে নিবন্ধিত ছিল।[১৪] ২০১৭ সালের হিসাবে, এই উপজাতীয় পদটি কেবল নির্দিষ্ট জেলাতেই প্রযোজ্য, সম্পূর্ণ রাজ্যে নয়।[১৫] ২০১১-এর জনগণনায় উত্তরপ্রদেশে তফসিলি উপজাতি ভুক্ত গোণ্ডদের সংখ্যা ২১,৯৯২ দর্শানো হয়।[১৬]

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.