গেরিলা (চলচ্চিত্র)
নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত ২০১১-এর চলচ্চিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গেরিলা ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত। সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটি৷ যৌথভাবে চিত্রনাট্য রচনা করেছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও এবাদুর রহমান। গেরিলা ছবিটিতে অভিনয় করেছেন সহস্রাধিক শিল্পী। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, গাজী রাকায়েত প্রমুখ।[১] চলচ্চিত্রটি ২০১১ সালে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অংশগ্রহণ করে এবং ২০১১ সালের ১৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেটপ্যাক বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে।[২]
গেরিলা | |
---|---|
![]() গেরিলা চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক পোস্টার | |
পরিচালক | নাসির উদ্দীন ইউসুফ |
প্রযোজক | ফরিদুর রেজা সাগর ইবনে হাসান এশা ইউসুফ |
চিত্রনাট্যকার | নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবাদুর রহমান |
কাহিনিকার | সৈয়দ শামসুল হক |
উৎস | সৈয়দ শামসুল হক কর্তৃক নিষিদ্ধ লোবান |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | শিমুল ইউসুফ |
চিত্রগ্রাহক | সমীরণ দত্ত |
সম্পাদক | সামির আহমেদ |
পরিবেশক | আশীর্বাদ চলচ্চিত্র |
মুক্তি | ১৪ এপ্রিল ২০১১ |
স্থিতিকাল | ১৪০ মিনিট |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
নির্মাণব্যয় | ৳৩ কোটি |
কাহিনি সংক্ষেপ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
বিলকিস (জয়া আহসান) এই গল্পের মূল চরিত্র। শিক্ষিত-সংস্কৃতিমনা-বলিষ্ঠ চিত্তের অধিকারী বিলকিসের স্বামী, প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক হাসান (ফেরদৌস), ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে নিখোঁজ হন। আপন বোধ আর আর হাসানের সান্নিধ্যে বাঙ্গালীর স্বাধীনতা মন্ত্রে উজ্জীবিত বিলকিস অসুস্থ শ্বাশুড়ীর দেখাশোনা, নিজের ব্যাংকের চাকরি, নিখোঁজ হাসানের খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি ঢাকার গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেয়। তার মতোই আরো অনেক নারী চাকরি বা নিজ সামাজিক অবস্থানের ছত্রছায়ায় গেরিলা যুদ্ধের নানা সাংগঠনিক যোগাযোগ ও পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে নিয়োজিত থেকে গেরিলা যুদ্ধকে সম্ভব করে তুলেছিলেন। এ সময় হাসানের দুধভাই তসলিম সর্দার(এটিএম শামসুজ্জামান) আর সে সময়ের কিংবদন্তি সুরকার আলতাফ মাহমুদ (আহমেদ রেজা রুবেল) অভিভাবকের মতো স্নেহে-পরামর্শে বিলকিসকে ছায়া দেন। পাকিস্তানি বর্বরতা, বাঙ্গালীর প্রতিরোধ আর স্বাধীনতার দাবী দেশে বিদেশে ছড়িয়ে দিতে সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি বিলকিস সহযোদ্ধাদের সাথে একটি পত্রিকার কাজেও জড়িয়ে যায়, যার নাম "গেরিলা"।
সময়ের আবর্তে ১৯৭১ এর আগস্ট মাসের শেষ দিকে একটি বড় অপারেশনের পর ঘটনা পরিক্রমায় ঢাকা ছাড়তে হয় বিলকিসকে। তসলিম সর্দার নিহত হন, আলতাফ মাহমুদ মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র রাখার দায়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ধৃত হন। একাকী বিলকিস নিজগ্রাম রংপুরের জলেশ্বরী যাবার জন্য ট্রেনে পাড়ি জমায়। কিন্তু তারই ছোটভাই খোকনের দল ওদিকে একটি রেলব্রীজ উড়িয়ে দেওয়ায় তার ট্রেনযাত্রা ব্যাহত হয়। দৃঢ়চিত্ত বিলকিস হেঁটেই এগিয়ে চলে বাড়ীর পথে। খোকন বাহিনীর এক তরুন মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ বিলকিসের যাত্রাসঙ্গী হয়। বাড়ির পথে নানা ঘটনার পাশাপাশি নিজের বাড়ি লুট হওয়া আর আপন মামার উপর মিলিটারী-রাজাকারদের নির্যাতন দেখে শিউরে উঠে সে। অতঃপর একমাত্র ভাই খোকনকে দেখবার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় যুদ্ধের ডামাডোলে জীবনের সকল সূত্র হারানো এক নারী, বিলকিস। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এরইমধ্যে জবাই করা হয়েছে খোকনকে। ভাইয়ের লাশ দাফন করতে গিয়ে বন্দি হয় পাকিস্তানি মিলিটারীর হাতে। তবে শেষ পর্যন্ত বীরের মতো আত্নাহুতি দেয় বিলকিস। নিজের সাথে উড়িয়ে দেয় একটি গোটা মিলিটারী ক্যাম্প।
অভিনয়
- জয়া আহসান - বিলকিস বানু
- ফেরদৌস আহমেদ - হাসান আহমেদ
- এটিএম শামসুজ্জামান - তসলিম সর্দার
- রাইসুল ইসলাম আসাদ
- পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় - আনোয়ার হোসেন
- আহমেদ রুবেল - আলতাফ মাহমুদ
- শতাব্দী ওয়াদুদ - ক্যাপ্টেন শমসদ / মেজর সরফরাজ
- শম্পা রেজা - মিসেস খান
- আজাদ আবুল কালাম - তৈয়ব
- কচি খন্দকার
- মিরানা জামান
- এস এম মহসিন
- মোস্তফা মনোয়ার
- ইরফান মৃধা
- সাজ্জাদ আহমেদ রাজীব
- গোলাম মাওলা শ্যামল
- নয়ন হাসান
- জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
- অমর এলাজ
- মাসুম আজিজ
- কামাল বায়েজীদ
নির্মাণ নেপথ্য
সারাংশ
প্রসঙ্গ
চলচ্চিত্রটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১০ এর জানুয়ারি থেকে। বাংলাদেশে সরকারী চলচ্চিত্র অনুদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে আরিয়াল ক্রিয়েটিভ স্পেস এর সাথে যোগ দেয় ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এবং এতে নির্মাণ আরও গতিশীল হয়। পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ চিত্রনাট্য সংশোধনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করেন এবাদুর রহমান কে সাথে নিয়ে। চরিত্র নির্বাচক ও প্রযোজক এশা ইউসুফ এর সহযোগীতায় তিনি ঠিক করেন অভিনেতা-অভিনেত্রী, তাদের সাথে চরিত্র-সময়, পটভূমি-অভিনয় প্রভৃতি নিয়ে কথা হতে থাকে। তারই নির্দেশনাক্রমে শিমুল ইউসুফের নেতৃত্বে কস্টিউম ডিপার্টমেন্ট ও অনিমেষ আইচ এর নেতৃত্বে আর্ট ডিপার্টমেন্ট প্রস্তুত হতে থাকে। পরিচালকের পরামর্শ অনুযায়ী যুদ্ধে সামরিক প্রশিক্ষণ উপদেষ্টা লেঃ কর্নেল (অবঃ) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীরপ্রতিক চালিয়ে যান পাক মিলিটারীদের ট্রেনিং। অ্যাকশন-বিস্ফোরন দৃশ্যের পরিকল্পনা হয় আতিকুর রহমান চুন্নুর সাথে। অবশেষে শ্যুটিং সিডিউল, এফডিসির ক্যামেরা বুকিং, স্পার্ক লিমিটেডের সাথে কোডাক ফিল্ম স্টক সাপ্লাই, থাকা-খাওয়া, আসা-যাওয়া, মেকাপ, রেইন মেশিন, ক্রেন, ট্রলি এমন অনেক হিসাব নিকাষ শেষে দেশি বিদেশি কলা কুশলী আর কুশিলবদের নিয়ে প্রকৃত নির্মাণকাজ শুরু হয় মে মাসে। ২৭ মে থেকে শুরু করে- কখনো ঢাকার ইস্কাটন, গুলশান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কখনো তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, আবার সোনারগাঁও এর পানাম নগরী, ধামরাই, রংপুরের এখানে ওখানে, দিনাজপুরের পার্বতীপুর ঘুরে আবার ধামরাই, পুবাইল, মানিকগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৫ মাস ব্যাপী ১৮০ ক্যান ফিল্ম এক্সপোজ করে ২৬ অক্টোবর সকালে শুটিং শেষ হয়।
অবশ্য এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় সম্পাদনার কাজ, সামীরের দায়িত্বে, গাঁও প্রোডাকশনস স্টুডিও তে, সকল নেগেটিভ প্রসেস করা হয়েছে ভারতের চেন্নাইতে, প্রাসাদ ল্যাবে। কয়েক দফায় সেখান থেকে আসতে থাকে টেলিসিনে, এখানে হতে থাকে সম্পাদনা। ইতোমধ্যে মুম্বাইয়ের সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বিনোদ সুব্রামনিয়ান'র সাথে পরামর্শক্রমে সাইদ হাসান টিপুর রেকর্ডিং স্টুডিও ড্রিম-ডেস্ক নানাবিধ কারিগরী সংযোজনের মাধ্যমে ডাবিং এর জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং ডাবিং শুরু হয় ৯ নভেম্বর, ২০১০ থেকে। এরই মধ্যে কথাবার্তা পাঁকা হয় মুম্বাইয়ের পিক্সিয়ন'র সাথে ডিজিটাল ইন্টারমিডিয়েটের জন্য আর ইন্দ্রনীল রায়ের সাথে ভিজুয়াল স্পেশাল ইফেক্ট এর কাজ করার জন্য। পাশাপাশি শিমুল ইউসুফের আবহ সঙ্গীত করার কাজ এগিয়ে চলে। তারপর যথারীতি ডি আই, স্পেশাল সাউন্ড ইফেক্টও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ইত্যাদি শেষ করে মুম্বাইয়ের অ্যাডল্যাব থেকে বের হয় সেলুলয়েড প্রিন্ট ও নির্মাণ হয় স্বপ্নের।[৩]
সংগীত
গেরিলা | |
---|---|
শিমুল ইউসুফ কর্তৃক সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম | |
মুক্তির তারিখ | ২০১১ |
ঘরানা | চলচ্চিত্রের গান |
প্রযোজক | লেজার ভিশন |
গেরিলা চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন শিমুল ইউসুফ। ছবিতে মোট ৭টি গান ব্যবহার করা হয়েছে, এগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন চন্দন চৌধুরী, সাওয়ান মাহমুদ, শিমুল ইউসুফ, সমীর কাওয়াল ও অনিন্দিতা বৃষ্টি।
গানের তালিকা
ক্রমিক | শিরোনাম | কণ্ঠশিল্পী |
---|---|---|
১ | জয় সত্যের জয় | অনিন্দিতা বৃষ্টি |
২ | বল বীর বল উন্নত মমশির | চন্দন চৌধুরী |
৩ | তেপান্তরের মাঠে | শিমুল ইউসুফ |
৪ | আমি মানুষের ভাই স্পার্টাকাস | বিভিন্ন শিল্পী |
৫ | নিরস দগ্ধ সময় | শিমুল ইউসুফ |
৬ | জয় সত্যের জয় | সাওয়ান মাহমুদ, শিমুল ইউসুফ ও অনিন্দিতা বৃষ্টি |
৭ | আলী আলী, মাউলা আলী | সমীর কাওয়াল ও তার দল |
মূল্যায়ন
সারাংশ
প্রসঙ্গ
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এ অংশগ্রহণ
আন্তর্জাতিক সম্মাননা
নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র গেরিলা ১৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০১১-এ নেটপ্যাক পুরস্কার অর্জন করে ।[৫][৬] এদিন মোট ১২টি চলচ্চিত্রের সাথে প্রতিযোগিতা করে এই সম্মান অর্জন করে গেরিলা।[৭]
- সেরা চলচ্চিত্র - নাসির উদ্দীন ইউসুফ
মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার ২০১১
- সেরা চলচ্চিত্র(সমালোচক শাখায় )
- সেরা চলচ্চিত্র পরিচালক পুরস্কার (নাসির উদ্দিন ইউসুফ)
- সেরা চলচ্চিত্র অভিনয় শিল্পী (নারী) (জয়া আহসান)
- গেরিলা ছবিতে অভিনয়ের জন্য বিচারকমণ্ডলীর বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন এ টি এম শামসুজ্জামান।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
গেরিলা ২০১১ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ সর্বোচ্চ ১০টি শাখায় পুরস্কার লাভ করেছে. নিম্নে পুরস্কারসমূহের বর্ণনা করা হলো।[৮][৯][১০]
- শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র - ফরিদুর রেজা সাগর, ইবনে হাসান ও এশা ইউসুফ (প্রযোজক)
- শ্রেষ্ঠ পরিচালক - নাসির উদ্দীন ইউসুফ
- শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার - নাসির উদ্দীন ইউসুফ
- শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা - নাসির উদ্দীন ইউসুফ
- শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - জয়া আহসান
- শ্রেষ্ঠ খল চরিত্রে অভিনেতা - শতাব্দী ওয়াদুদ (যৌথভাবে মিশা সওদাগর বস নাম্বার ওয়ান ছবির জন্য)
- শ্রেষ্ঠ সম্পাদক - সামির আহমেদ
- শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক - অনিমেষ আইচ
- শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান - মো. আলী বাবুল
- শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা - শিমূল ইউসুফ
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.