Remove ads
প্রায় ৫৪.১০ কোটি বছর পূর্ব থেকে ৪৮.৫৪ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত পৃথিবীর সময়কাল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ক্যাম্ব্রিয়ান হল প্যালিওজোয়িক মহাযুগের প্রথম যুগ।[৫] এর স্থায়ীত্ব ছিল ৫৪.১ ± ০.১ থেকে ৪৮.৫৪ ± ০.১৯ কোটি বছর আগে পর্যন্ত এবং এর পরবর্তী যুগের নাম অর্ডোভিশিয়ান।[৬] এর সূচনাকাল, সমাপ্তিকাল এবং উপবিভাগ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো নির্দেশিকা এখনও তৈরি করা যায়নি। অ্যাডাম সেজউইক প্রথম "ক্যাম্ব্রিয়ান সিরিজ" নাম দিয়ে যুগটিকে চিহ্নিত করেন।[৫] এই নামকরণের কারণ হল ওয়েল্স অঞ্চল থেকে ব্রিটেনে অবস্থিত এই যুগের পাথর প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল, আর ওয়েল্সের লাতিন নাম ক্যাম্ব্রিয়া।[৭][৮] ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের পাথরের স্তরের স্বাতন্ত্র্য হল এর মধ্যস্থিত লাগাশ্টেটা পলিসঞ্চয়ের মাত্রাধিক্য। এই ধরনের পলিঘটিত পাথরে সুসংরক্ষিত জীবাশ্ম থাকে, যাতে জীবদেহের কঠিন খোলক প্রভৃতি অংশের সাথে সাথে অপেক্ষাকৃত নরম দেহাংশেরও সংরক্ষিত নমুনা পাওয়া যায়। এর ফলে ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের জীবন সম্পর্কে মানুষের গবেষণার সুযোগ ও তা থেকে লব্ধ জ্ঞানের পরিমাণ পরবর্তী কোনো কোনো যুগের তুলনায় বেশি।[৯]
ক্যামব্রিয়ান যুগ এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অযাচিত < অপারেটর।–এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অযাচিত < অপারেটর। কোটি বছর পূর্বে | |
৫০ কোটি বছর আগেকার আনুমানিক বিশ্ব-মানচিত্র; মধ্য ক্যাম্ব্রিয়ান | |
গড় বায়ুমন্ডলীয় O ২ পরিমাণ |
প্রায় ১২.৫ আয়তন %[১] (বর্তমান মাত্রার ৬৩ %) |
গড় বায়ুমন্ডলীয় CO ২ |
প্রায় ৪৫০০ পিপিএম[২] (প্রাক শিল্প স্তরের ১৬ গুণ) |
ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা | প্রায় ২১ °সে[৩] (বর্তমান তাপমাত্রার ৭ °সে উপরে) |
সমুদ্রপৃষ্ঠ (বর্তমান উচ্চতা থেকে যত উপরে) | ৩০ মিটার থেকে ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯০ মিটারে উপনীত[৪] |
টেমপ্লেট:ক্যামব্রিয়ান রৈখিক সময়ক্রম |
ক্যাম্ব্রিয়ান যুগে পৃথিবীর জীবগোষ্ঠীর আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। ক্যাম্ব্রিয়ানের পূর্ববর্তী প্রায় সমস্ত জীবই ছিল আণুবীক্ষণিক, এককোশী ও সরল; ব্যতিক্রম বলতে কেবল প্রাক্-ক্যাম্ব্রিয়ান প্রাণী চার্নিয়ার নাম করা যায়। ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের আরম্ভের ঠিক আগের কয়েক কোটি বছরে জটিল বহুকোশী জীবেরা অপেক্ষাকৃত বৃদ্ধি পায়, কিন্তু দেহে খনিজের আস্তরণযুক্ত - ও সেইসূত্রে জীবাশ্মীভবনের উপযুক্ত - প্রাণীকুলের যথাযথ সমৃদ্ধি শুরু হয় ক্যাম্ব্রিয়ানের সাথেই।[১০] ক্যাম্ব্রিয়ান যুগে সংঘটিত বিভিন্ন প্রকার জীবের এই অতি দ্রুত বিবর্তনের ঘটনাকে ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ বলা হয়। এই সময়ই জীবজগতের অধিকাংশ বর্তমান পর্বের উদ্ভব হয়েছিল। জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাসের ফলে বোঝা গেছে ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময় সমস্ত বহুকোশী প্রাণী একটি সাধারণ পূর্বসূরী প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়েছিল: এই প্রজাতিটি হল ফ্ল্যাজেলা নামক বিশেষ প্রকার উপবৃদ্ধিযুক্ত প্রোটিস্ট, যাদের বর্তমান জ্ঞাতি কোয়ানোফ্ল্যাজেলেট-রা।
মহাসাগরে নানা রকম জীবের উদ্ভব হলেও ক্যাম্ব্রিয়ান যুগে ডাঙায় কোনো জটিল প্রজাতির বিবর্তন হয়নি; শুধুমাত্র সাগরতটের মাটিতে এককোশী ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদির উপনিবেশ স্থাপিত হয়েছিল।[১১] কোনো কোনো কম্বোজ ঐ জৈব মৃত্তিকাস্তরে খাবারের খোঁজে সাময়িকভাবে ডাঙায় উঠত।[১২] উদ্ভিদের অনুপস্থিতির জন্য মহাদেশসমূহের উপরিভাগ ছিল পাথুরে আর শুকনো। প্যানোশিয়া অতিমহাদেশের ভাঙনের ফলে সৃষ্ট নতুন ভূখণ্ডগুলোর তীরে ছিল অগভীর সমুদ্র। এই যুগের অধিকাংশ সময়ে মেরু অঞ্চলে বরফের অস্তিত্ব ছিল না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রীয় ভৌগোলিক উপাত্ত কমিটি ক্যাম্ব্রিয়ান যুগকে নির্দেশ করতে একটি "পেটকাটা বড় হাতের সি" ⟨Є⟩ অক্ষর ব্যবহার করে।[১৩] সঠিক[১৪] ইউনিকোড অক্ষরটা হল U+A792 Ꞓ পেটকাটা লাতিন বড় হাতের 'সি'।[১৫]
পূর্ববর্তী প্রাক্-ক্যাম্ব্রিয়ান ও পরবর্তী অর্ডোভিশিয়ান সময়কালের পাথরের থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত হিসেবে অনেকদিন ধরে পরিচিত হলেও সবেমাত্র ১৯৯৪ খ্রিঃ ক্যাম্ব্রিয়ান যুগটির আন্তর্জাতিক ভূতাত্ত্বিক স্বীকৃতি মেলে। বহুসংখ্যক ছাপ জীবাশ্ম সংবলিত এক বিশেষ ও জটিল প্রস্তরক্ষেত্রকে ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের সূচনাকালের নির্দেশক গণ্য করা হয়। এই বিশেষ প্রস্তরক্ষেত্রের নাম ট্রেপটিক্নাস পেডাম।[১৬] অবশ্য এই পদ্ধতি নির্ভুল নয়, কারণ নামিবিয়া, স্পেন, পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্র এবং নিউফাউণ্ডল্যান্ডে ট্রেপটিক্নাস পেডাম এর অনেক নিচের পাথরের স্তরেও অনুরূপ ছাপ জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। ট্রেপটিক্নাস গণের স্তরবিদ্যাগত সময়কাল নামিবিয়ায় ইডিয়াকারান জীবাশ্মসমূহের সাথে সহাবস্থান করে, আর সম্ভবত স্পেনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।[১৭][১৮]
ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের পূর্ববর্তী যুগ ইডিয়াকারান এবং পরবর্তী যুগ অর্ডোভিশিয়ান। ক্যাম্ব্রিয়ান যুগ চারটে উপযুগ বা সিরিজ এবং দশটা অধোযুগ বা পর্যায়ে বিভক্ত। ২০১৫ খ্রিঃ আরম্ভ পর্যন্ত মাত্র দু'টো সিরিজ আর পাঁচটা পর্যায়ের নামকরণ হয়েছে আর জিএসএসপি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্তরবিদ্যাগত বিভাজন এখনও সম্পূর্ণ না হওয়ার ফলে বিভিন্ন আঞ্চলিক মাপকাঠির ব্যবহার প্রচলিত আছে। এই স্থানীয় পদ্ধতিগুলোর কোনো কোনোটাতে ক্যাম্ব্রিয়ানকে তিনটে উপযুগে ভাগ করা হয়, যে উপযুগগুলোর নাম স্থান বিশেষে আলাদা – আদি ক্যাম্ব্রিয়ান (অথবা ক্যার্ফাই অথবা ওয়াউকোবান, ৫৪.১ক্যাম্ব্রিয়ান এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অপরিচিত বিরামচিহ্ন অক্ষর "আ"। কোটি বছর আগে থেকে ৫০.৯ কোটি বছর আগে পর্যন্ত), মধ্য ক্যাম্ব্রিয়ান (সেন্ট ডেভিড্স অথবা অ্যালবার্টান, ৫০.৯ cambrian এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অপরিচিত শব্দ "middle"। কোটি বছর আগে থেকে ৪৯.৭ কোটি বছর আগে পর্যন্ত) এবং ফুরঙ্গিয়ান (অথবা অন্ত্য ক্যাম্ব্রিয়ান অথবা মেরিওনেথ অথবা ক্রোক্সিয়ান, ৪৯.৭ cambrian এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অপরিচিত শব্দ "late"। কোটি বছর আগে থেকে ৪৮.৫৪ কোটি বছর আগে পর্যন্ত)। এই সমস্ত উপযুগের পাথরগুলোকে যথাক্রমে নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ ক্যাম্ব্রিয়ান পাথর হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
ক্যাম্ব্রিয়ানের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে জৈব-স্তরবিদ্যাভিত্তিক আন্তঃসম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ট্রাইলোবাইট অঞ্চলের উপর নির্ভর করা হয়।
প্রত্যেকটা স্থানীয় উপযুগ অনেকগুলো করে পর্যায়ে বিভক্ত।
চীনা | উত্তর আমেরিকান | রুশ-কাজাখ | অস্ট্রেলীয় | আঞ্চলিক | ||
---|---|---|---|---|---|---|
ক্যা ম্ব্রি য়া ন | ফুরঙ্গিয়ান | আইবেক্সিয়ান (আংশিক) | আয়ুসোক্কানিয়ান | ডাট্সনিয়ান | ডলজেলিয়ান (ট্রেমপিলিউয়ান, ফেংশানিয়ান) | |
পেন্টোনিয়ান | ||||||
সুন্ওয়াপ্টান | সাকিয়ান | আইভেরিয়ান | ফেস্টিনিওজিয়ান (ফ্রাঙ্কোনিয়ান, চাংশানিয়ান) | |||
স্টেপ্টোয়ান | আকসায়ান | ইডামিয়ান | ম্যান্ট্রোজিয়ান (ড্রেসবাকিয়ান) | |||
মার্জুমান | বাতির্বায়ান | মিন্ডিয়ালান | ||||
ক্যাম্ব্রিয়ানের তৃতীয় সিরিজ | মাওজাঙ্গিয়ান | মায়ান | বুমেরাঙ্গিয়ান | |||
জুঝুয়াঙ্গিয়ান | ডেলামেরান | আমগান | আন্ডিলিয়ান | |||
ঝুংক্সিয়ান | ফ্লোরিয়ান | |||||
টেম্পলটোনিয়ান | ||||||
ডিয়েরান | ওর্ডিয়ান | |||||
ক্যাম্ব্রিয়ানের দ্বিতীয় সিরিজ | লংওয়াংমিওয়ান | তোয়োনিয়ান | লেনিয়ান | |||
চাংলাংপুয়ান | মন্তেজুমান | বটোমিয়ান | ||||
কুংজুসিয়ান | আতদাবানিয়ান | |||||
টেরেনিউভিয়ান | ||||||
মেইশুচুয়ান জিনিংগিয়ান | প্ল্যাসেন্টিয়ান | টমোশিয়ান নেমাকিট-ড্যালডিনিয়ান* | কর্ডুবিয়ান | |||
প্রাক্-ক্যাম্ব্রিয়ান | সিনিয়ান | হ্যাড্রিনিয়ান | নেমাকিট-ড্যালডিনিয়ান* সাখারান | অ্যাডিলেডিয়ান |
*রুশ মতবাদ অনুযায়ী ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের সূচনাকাল টমোশিয়ান উপযুগের গোড়ার দিকে, যখন থেকে বিশ্বব্যাপী খনিজ পদার্থঘটিত খোলকযুক্ত প্রাণীদের সমৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া আর্কিওসায়াথা জাতীয় প্রাণীকুলেরও এই সময়ই আবির্ভাব হয়েছিল।[১৯][২০][২১]
সাধারণত ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের সময়সীমা আজ থেকে ৫৪ কোটি ১০ লক্ষ বছর আগে থেকে আরম্ভ করে ৪৮ কোটি ৫৪ লক্ষ বছর আগে পর্যন্ত গণ্য করা হয়। ট্রাইলোবাইট এবং অভিনব আকৃতিবিশিষ্ট আর্কিওসায়াথা (আক্ষরিক অর্থ: "প্রাচীন পেয়ালা") গোত্রের প্রাণীদের আবির্ভাবের সময়কেই ক্যাম্ব্রিয়ানের সূচনাকাল ধরা হয়। আর্কিওসায়াথাদের মনে করা হিয় স্পঞ্জ-দের আদিমতম বংশধর, এবং প্রথম বহুকোশী প্রাচীর-নির্মাতা প্রাণীগোষ্ঠী।
ক্যাম্ব্রিয়ানের সমাপ্তিকাল হিসেবে একটি সুনির্দিষ্ট প্রাণী পর্যায়কে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যেটিকে বর্তমানে একটি বিলুপ্তি ঘটনার সাক্ষী মনে করা হয়। বিংশ শতাব্দীর শেষ চতুর্থাংশে অধিকতর জীবাশ্ম আবিষ্কার এবং তেজস্ক্রিয়মিতিক তারিখ গণনার ফলে এই সময়কালটিকে ক্যাম্ব্রিয়ানের শেষ বলার যৌক্তিকতা এখন প্রশ্নের মুখে। বিভিন্ন পুরাজীববিদ ও ভূতত্ত্ববিদের গবেষণায় সময়গত মতানৈক্য ২ কোটি বছর পর্যন্ত দেখা যায়। বৈশ্বিক স্তরবিদ্যার আন্তর্জাতিক উপকমিশন ২০০২ খ্রিঃ প্রস্তাব দেয় "আনুমানিক" ৫৪ কোটি ৫০ লক্ষ থেকে ৪৯ কোটি বছর — এই তারিখে আপাতত মীমাংসা করা হোক।
সম্প্রতি ক্যাম্ব্রিয়ানের সূচনাকালের অপেক্ষাকৃত নির্ভুল তারিখ হিসেবে আজ থেকে ৫৪·২ কোটি± ·০৩ কোটি বছর সময়কালটিকে তুলে ধরা হয়েছে। ঐ সময় একটি বিলুপ্তি ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল।[২২] এই তারিখ গণনাপদ্ধতির যুক্তিটি পুরাজীববিদ্যায় অবরোহী যুক্তিবাদের ব্যবহারের এক চমৎকার দৃষ্টান্ত। ঠিক প্রাক্-ক্যাম্ব্রিয়ান ও ক্যাম্ব্রিয়ানের সীমাস্থিত পাথরে কার্বন১৩ আইসোটোপের আকস্মিক হ্রাস লক্ষ্য করা যায়। এই হ্রাসের মাত্রা এতই ব্যাপক যে এর মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী এই দুই যুগের সীমারেখা চিহ্নিতকরণের কাজ করা হয়। ওমান থেকে প্রাপ্ত পাথরে এই হ্রাসের মাত্রা সবচেয়ে স্পষ্ট ও নিখুঁতভাবে বোঝা যায়। আমথর (২০০৩) দেখান যে একটি বিলুপ্তি ঘটনার সাথে কার্বন১৩ আইসোটোপের হ্রাসের ঘটনাটি সমাপতিত হয়; ঠিক সেই সময়ই প্রাক্-ক্যাম্ব্রিয়ান থেকে প্রাপ্ত অনেকগুলি জীবাশ্মের আকস্মিক অন্তর্ধান ঘটে। ওমান থেকে প্রাপ্ত পাথরে সেইসঙ্গে আগ্নেয় ছাইয়ের একটি স্তরেরও দেখা মেলে। এই ছাই থেকে প্রাপ্ত জারকন কেলাসের বয়স নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা গেছে: ৫৪·২ ± ০·০৩ কোটি বছর (দস্তার সাপেক্ষে ইউরেনিয়ামের বিভাজনের হার বিচার করে)। এই অপেক্ষাকৃত নিখুঁত সময় গণনার ফলে সাইবেরিয়া ও নামিবিয়া থেকে প্রাপ্ত নমুনাগুলোরও বয়স সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
টেকটনিক পুনর্নির্মাণের উপর ভিত্তি করে আন্দাজ করা হয়, ক্যাম্ব্রিয়ানের আরম্ভে অতিমহাদেশ প্যানোশিয়া ভাঙতে শুরু করেছিল।[২৩][২৪] এবং নতুন তিনটি ভূখণ্ড লরেন্শিয়া, বাল্টিকা এবং সাইবেরিয়ার জন্ম দিয়েছিল। অবশিষ্ট অধিকাংশ ভূভাগ তখনও গণ্ডোয়ানা অতিমহাদেশ হিসেবে একত্রে ছিল।[২৫] অধিকাংশ মহাদেশীয় ভূভাগ এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধে সন্নিবিষ্ট থাকলেও ক্রমশ উত্তর দিকে সরে আসছিল।[২৫] ক্যাম্ব্রিয়ানের প্রথম ভাগে গণ্ডোয়ানার অপেক্ষাকৃত দ্রুতহারে ঘূর্ণনের প্রমাণ পাওয়া যায়।[২৬]
ক্যাম্ব্রিয়ান যুগে পূর্ববর্তী মারিওনান তুষারগোলক পৃথিবীর সময়কার হিমবাহগুলো প্রায় সমস্তই গলে যাওয়ার ফলে[২৭] সমুদ্রতলের উচ্চতা ছিল বেশি। ফলে মহাদেশসমূহের উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল অগভীর ও উষ্ণ সমুদ্রে পরিণত হয়েছিল, যেখানে প্রাণের বিকাশের বিশেষ সুবিধে হওয়ার কথা। ক্যাম্ব্রিয়ান যুগ চলাকালের সাথে সাথে সমুদ্রতলের ওঠানামার প্রমাণ পাওয়া যায়, যা থেকে বোঝা যায় একাধিক তুষার যুগ এই সময় এসেছিল, আর তার সাথে সাথে দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে তুষারাবরণের ক্রমবিস্তার ও ক্রমসঙ্কোচন ঘটেছিল।[২৮]
ক্যাম্ব্রিয়ানের প্রথম ভাগে পৃথিবীর সামগ্রিক জলবায়ু ছিল শীতল; সম্ভবত দক্ষিণ মেরুতে গণ্ডোয়ানা অতিমহাদেশের স্থলভাগের অবস্থানের কারণে, যা মেরুপ্রদেশে সমুদ্রস্রোতের চলাচলে বাধা দিত। একাধিক তুষার যুগ ও অন্তর্বর্তী হিমযুগের সম্ভাবনাও আছে, যেহেতু তখনও পূর্ববর্তী তুষারগোলক পৃথিবীর জলবায়ুগত অবস্থার রেশ বজায় ছিল। ক্যাম্ব্রিয়ানের শেষদিকে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়; হিমবাহসমূহ ক্রমশ অবলুপ্ত হয়, এবং সমুদ্রতলের উচ্চতার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। অর্ডোভিশিয়ান যুগেও এই প্রবণতা বজায় ছিল।
মার্গারেশিয়া, ড্যালিইয়া প্রভৃতি বহুকোশী সামুদ্রিক উদ্ভিদের একাধিক প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেলেও ক্যাম্ব্রিয়ানে কোনো প্রকৃত স্থলজ উদ্ভিদ (এম্ব্রায়োফাইটা)-এর খোঁজ পাওয়া যায়নি। অবশ্য তৎকালীন সমুদ্রোপকূল ও প্লাবন সমভূমিতে অণুজীবদের নির্মিত জৈব স্তর বা বায়োফিল্ম এবং মাইক্রোবিয়াল ম্যাট বা অণুজীবীয় মাদুর প্রভৃতি গঠনের অস্তিত্বের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।[২৯] ডাঙার আরও অভ্যন্তরে লাইকেন জাতীয় মিথোজীবীর অস্তিত্ব নিয়েও বিতর্ক আছে।[৩০] এছাড়া মহাদেশীয় ভূভাগে বর্তমান মরুভূমি অঞ্চলসমূহে প্রাপ্ত ক্রিপ্টোবায়োটিক মৃত্তিকার অনুরূপ ছত্রাক ও অণুজীবদের উপনিবেশ পাওয়া গেছে। মাটি সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এই আদিম গঠনগুলির বিশেষ ভূমিকা ছিল।[৩১][৩২]
ক্যাম্ব্রিয়ান প্রাণীকুলের সিংহভাগ ছিল সামুদ্রিক, আর ট্রাইলোবাইটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল বলে মনে করা হত,[৩৩] যদিও পরবর্তীকালে এ'কথা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সন্ধিপদীরা পর্ব হিসেবে ও বৈচিত্র্যের বিচারে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ট্রাইলোবাইটরা ছিল সেই বৈচিত্র্যের এক সামান্য অংশ। তাদের দৈহিক গঠনে নতুনত্ব এনেছিল তাদের দৃঢ় বর্ম, যা অন্যান্য সন্ধীপদীদের ভঙ্গুর বহিঃকঙ্কালের চেয়ে অনেক বেশি টেকসই ছিল আর সহজে জীবাশ্মীভূত হতে পারত। এই কারণেই সমসাময়িক পাথরে প্রাপ্ত নমুনায় ট্রাইলোবাইটের প্রাচুর্য দেখা যায় আর ভুল ধারণা তৈরি হয় যে তারাই ছিল সংখ্যায় সর্বাধিক।[৩৪] এই যুগে পৃথিবীর জীবমণ্ডলের গঠন ও বৈচিত্র্যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। পূর্ববর্তী ইডিয়াকারান যুগে বিবর্তিত ইডিয়াকারান বায়োটা ক্যাম্ব্রিয়ানের গোড়ার দিকে একটি বিলুপ্তি ঘটনায় সংকটের মুখে পড়ে; এর ফলেই এই সময়ে তাদের গর্ত খুঁড়ে খাদ্য সন্ধান ও আত্মরক্ষার অভ্যাসের আকস্মিক আধিক্য ও জটিলতা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। এই অভ্যাসের ফলে সামুদ্রিক মৃত্তিকাস্তরের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয় এবং সামুদ্রিক ভূত্বকের বাস্তুতন্ত্রের পুনর্বিন্যাস ঘটে। ক্যাম্ব্রিয়ানের আগে সামুদ্রিক ভূত্বক অণুজীবীয় মাদুর দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। ক্যাম্ব্রিয়ানের শেষে সুড়ঙ্গ-খোদক প্রাণীরা জৈব আলোড়নের মাধ্যমে ঐ মাদুর নষ্ট করে ফেলে এবং সামুদ্রিক ভূত্বককে তার বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসে। এর ফলে অণুজীবীয় মাদুরের উপর নির্ভরশীল বহু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে কিছু প্রজাতি নবনির্মিত পরিবর্তিত বাস্তুতন্ত্রের নতুন বাস্তুতান্ত্রিক তাক (Ecological niche) গুলো দখল করে।[৩৫] একই সময় বর্তমানে প্রাপ্ত প্রায় সমস্ত খনিজযুক্ত প্রাণী পর্বের আপাত আকস্মিক বিবর্তন ঘটে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ব্রায়োজোয়ারা, যাদের প্রথম নিদর্শন পাওয়া গেছে আদি অর্ডোভিশিয়ান থেকে।[৩৬]
আদি ক্যাম্ব্রিয়ানে এইভাবে নতুন প্রজাতির বিবর্তনের অত্যধিক হার লক্ষ্য করা যায়, যে কারণে এই সময়কালকে ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ নামেও অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু এই যুগেরই পরবর্তী সময়ে জীববৈচিত্র্যের আকস্মিক হ্রাসও ঘটেছিল। প্রায় ৫১ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তিহার নতুন প্রজাতির বিবর্তনের হারকে ছাপিয়ে যায়। এর ৫০ লক্ষ বছর পর মোট গণের সংখ্যা পূর্ববর্তী সীমা ৬০০ এর কাছাকাছি থেকে কমে গিয়ে মাত্র ৪৫০ এর কাছাকাছি নেমে এসেছিল। এছাড়া বিভিন্ন গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ প্রজাতিকরণের হারও আগের এক তৃতীয়াংশ থেকে এক পঞ্চমাংশে নেমে এসেছিল। ৫০ কোটি বছর আগে মহাসাগরে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পায় এবং বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রাধিক্য ঘটে, ফলে জীবমণ্ডলে আরও একটি বিলুপ্তি ঘটনার প্রকোপ পড়ে। এই সমস্ত ঘটনার ফলে ক্যাম্ব্রিয়ানের দ্বিতীয়ার্ধে জীবজগতের বিবর্তনীয় সক্রিয়তা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। বার বার বিলুপ্তি ঘটনা ঘটে; আর্কিওসায়াথা-দের বিলুপ্তির পর তাদের পূর্ববর্তী প্রাচীর-নির্মাতা স্ট্রোমাটোলাইট-দের প্রত্যাবর্তন ঘটে। সামগ্রিকভাবে এই ক্রমবিপর্যয়ের ধারা অর্ডোভিশিয়ানের আগে বদলায়নি।[৩৭][৩৮]
ক্যাম্ব্রিয়ান জীবকুলের কোনো কোনো সদস্য ডাঙায় উঠে প্রোটিক্নাইট ও ক্লাইম্যাক্টিক্নাইট নামক ছাপ জীবাশ্ম সৃষ্টি করেছিল। জীবাশ্ম প্রমাণ থেকে বোঝা যায় বিলুপ্ত সন্ধিপদী ইউথাইকার্সিনয়েডরা অন্তত কিছু ক্ষেত্রে প্রোটিক্নাইট সৃষ্টি করেছিল।[৩৯][৪০] ক্লাইম্যাক্টিক্নাইট এর স্রষ্টাদের পরিচয় সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অবশ্য জীবাশ্মীভূত পদচিহ্ন ও দেহের ছাপ থেকে অনুমান করা হয় বিশেষ প্রকার কোনো কম্বোজ-এর কথা।[৪১][৪২]
পরবর্তী যুগগুলোর তুলনায় ক্যাম্ব্রিয়ান প্রাণীকুলের বিস্তার ছিল অপেক্ষাকৃত কম। স্বাধীনভাবে ভাসতে পারে এমন প্রাণী বেশি ছিল না; অধিকাংশই সমুদ্রের তলদেশের কাছাকাছি বাস করত।[৪৩] আর খনিজ পদার্থের খোলকওয়ালা প্রাণীদের সংখ্যাও পরবর্তী যুগসমূহের থেকে কম ছিল; সম্ভবত মহাসাগরের রাসায়নিক গঠনের প্রতিকূলতার জন্য।[৪৩]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.