কামসূত্র (সংস্কৃত: कामसूत्र বা কামসূত্র pronunciation, Kāmasūtra) প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিত মল্লনাগ বাৎস্যায়ন রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের একটি প্রামাণ্য মানব যৌনাচার সংক্রান্ত গ্রন্থ। গ্রন্থের একটি অংশের উপজীব্য বিষয় হল যৌনতা সংক্রান্ত ব্যবহারিক উপদেশ।[1] গ্রন্থটি মূলত গদ্যে লিখিত; তবে অনুষ্টুপ ছন্দে রচিত অনেক পদ্যাংশ এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। কাম শব্দের অর্থ ইন্দ্রিয়সুখ বা যৌন আনন্দ; অপরদিকে সূত্র শব্দের আক্ষরিক অর্থ সুতো বা যা একাধিক বস্তুকে সূত্রবদ্ধ রাখে। কামসূত্র শব্দটির অর্থ তাই পুস্তকের আকারে এই জাতীয় উপদেশমালার গ্রন্থনা। এতে রমণীদের জন্য প্রযোজ্য চৌষট্টি কলা বিবৃত হয়েছে।

কামশাস্ত্র সাহিত্যধারার প্রাচীনতম ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল কামসূত্র[2] হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে শিবের দ্বাররক্ষক নন্দী কামশাস্ত্রের আদিরচয়িতা। তিনি শিব ও তার পত্নী পার্বতীর রমণকালে উচ্চারিত পবিত্র বাণী শুনে মুগ্ধ হন। পরে মানবজাতির কল্যাণার্থে সেই বাণী লিখে রাখেন।[3]

ঐতিহাসিক জন কেই মনে করেন, কামসূত্র একটি সারগ্রন্থ যা খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে তার বিভিন্ন রচনাসূত্র থেকে সংকলিত হয়ে তার বর্তমান রূপটি লাভ করে।[4]

বিষয়সূচি

Thumb
শিল্পীর চোখে যৌন ভঙ্গিমা, কামসূত্র মূলগ্রন্থে কোনো বিবরণীচিত্র না থাকলেও দ্বিতীয় ভাগে বিভিন্ন যৌন ভঙ্গিমা আলোচিত হয়েছে

মল্লনাগ বাৎস্যায়ন রচিত কামসূত্র গ্রন্থে ৭ ভাগে বিভক্ত ৩৬টি অধ্যায়ে মোট ১২৫০টি শ্লোক রয়েছে:[5]

১. সাধারণম্ (ভূমিকা)
শাস্ত্রসংগ্রহ (গ্রন্থের উপাদান সংক্রান্ত অধ্যায়সমূহ), ত্রিবর্গপ্রতিপত্তি (জীবনের তিন লক্ষ্য), বিদ্যাসমুদ্দেশ (জ্ঞান লাভ), নাগরকবৃত্তম (সুনাগরিকের আচরণ), নায়কসহায়দূতীকর্মবিমর্শ (নায়কের সহায়তায় দৌত্যকর্ম সংক্রান্ত অধ্যায়) (৫ অধ্যায়)
২. সংপ্রয়োগিকম (যৌন মিলন)
প্রমাণকালভবেভয়ো রত অবস্থাপনম (কামনা উদ্দীপ্তকরণ), আলিঙ্গনবিকারা (আলিঙ্গন), চুম্বনবিকল্পাস (চুম্বন), আদর, দশনচ্ছেদ্যবিহায়ো (দংশন), সম্বেশনপ্রকারাশ্চিতররতানি (স্ত্রীপুরুষের দৈহিক মিলন), প্রহণনপ্রয়োগাস তদ্যুক্তাশ শীৎকৃতক্রম (শীৎকারাদি), পুরুষোপসৃপতানি পুরুষায়িতম (নারীর পুরুষোচিত আচরণ), ঔপরিষ্টকম (মৌখিক যৌনাচার), রত অরম্ভ অবসানিকম রত বিশেষ প্রণয়কলহশ্চ (কামকেলির বিবরণী) (১০ অধ্যায়)
৩. কন্যাসম্প্রযুক্তকম (পত্নীলাভ)
বর্ণসম্বিধানম সম্বন্ধনিশ্চয় চ (বিবাহের ধরন), কন্যাবিস্রম্ভণম (পত্নীকে শান্ত করণ), বালায়াম উপক্রমা ইঙ্গিতাকারসূচনম চ (পত্নীলাভ), একপুরুষাভিয়োগা (একক ব্যবস্থাপন), বিবাহ দ্বারা সম্মিলন (৫ অধ্যায়)
৪. ভার্যাধিকারিকম (পত্নী সম্পর্কে)
একচারিণীবৃত্তম প্রবাসচার্য চ (এক পত্নী সংক্রান্ত), প্রধানা পত্নী ও অন্যান্য পত্নী সংক্রান্ত (২ অধ্যায়)
৫. পারদারিকম (অন্যান্য পত্নী সংক্রান্ত)
স্ত্রীপুরুষশীলবষ্ঠাপনম ব্যবর্তনকারণাণি স্ত্রীষু সিদ্ধা পুরুষা অযত্নসাধ্য যোষিত (স্ত্রী ও পুরুষের আচরণ), পরিচয়কারণায় অভিযোগ (পরিচিত হওয়া), ভাবপরীক্ষা (ভাবপরীক্ষা করণ), দূতীকর্মাণি (দৌত্য), ঈশ্বরকামিতম (রাজসুখ), অন্তঃপুরিকং দাররক্ষিতকম (অন্দরমহল) (৬ অধ্যায়)
৬. বৈশিকম (রক্ষিতা)
সহায়গম্যাগম্যচিন্তা গমনকারণং গম্যোপাবর্তনম (প্রণয়ী নির্বাচন সংক্রান্ত উপদেশ), কান্তানুবৃত্তম (স্থায়ী প্রণয়িনীর অনুসন্ধান), অর্থাগমোপায়া বিরক্তলিঙ্গানি বিরক্তপ্রতিপত্তির নিষ্কাসনক্রম (অর্থোপার্জন), বিশীর্ণপ্রতিসন্ধানম (পুরাতন প্রণয়ীর সহিত পুনরায় বন্ধুত্বকরণ), লাভবিশেষা (লাভ বিশেষ), অর্থানর্থনুবন্ধসংশয়বিচারা বেশ্যাবিশেষশ্চ (লাভ ও ক্ষতি) (৬ অধ্যায়)
৭. ঔপনিষদিকম (বশীকরণ)
সুভগংকারণম বশীকরণম বৃষ্যাশ্চ যোগা (শারীরিক আকর্ষণের উন্নতি করণ), নষ্টরাগপ্রত্যানয়নম বৃদ্ধিবিধায়শ্চরিতাশ্চ যোগা (হ্রাসপ্রাপ্ত যৌনক্ষমতা পুনরায় বৃদ্ধিকরণ) (২ অধ্যায়)

যৌনসুখ ও আধ্যাত্মিকতা

Thumb
যৌন ভঙ্গিমা, মুক্তেশ্বর মন্দির, ভুবনেশ্বর, ওড়িশা

কোনো কোনো ভারতীয় দার্শনিক পুরুষার্থ[6] নামক জীবনের চার উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন:[7][8]

(১) ধর্ম: ধার্মিক জীবন, (২) অর্থ: আর্থিক সমৃদ্ধি, (৩) কাম: নান্দনিক ও যৌন আনন্দ লাভ[9][10] ও (৪) মোক্ষ: আধ্যাত্মিক মুক্তি।

ধর্ম, অর্থ ও কাম দৈনন্দিন জীবনের লক্ষ্য। কিন্তু মোক্ষ জন্ম ও পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তিলাভ। কামসূত্র গ্রন্থে লিখেছে:

"ধর্ম অর্থ অপেক্ষা শ্রেয়, অর্থ কাম অপেক্ষা শ্রেয়। কিন্তু অর্থই রাজার জীবনে প্রথম উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। কারণ কেবল ইহা হতেই প্রজাগণ জীবনধারণ করিবেন। পুনরপি, কাম বেশ্যাদিগের উপার্জনপথ এবং তাহারা অন্য দুই অপেক্ষা ইহাকেই বাছিয়া লয়। ইহা সাধারণ নিয়মের ব্যতয়।" (কামসূত্র ১।২।১৪)[11]

প্রথম তিনটির মধ্যে ধর্ম সর্বোচ্চ লক্ষ্য। দ্বিতীয়টি জীবনের নিরাপত্তা ও শেষেরটি সুখের জন্য প্রয়োজনীয়। উদ্দ্যেশ্যের মধ্যে বিরোধ ঘটলে শ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্যটি অনুসরণ করা উচিত। তাই অর্থোপার্জনের জন্য ধর্মত্যাগ বা সুখের জন্য অর্থোপার্জনের পন্থাটিকে উপেক্ষা করা অনুচিত। যদিও এর ব্যতিক্রম আছে।

বাৎস্যায়নের মতে, শিশুকালেই এক ব্যক্তির অর্থোপার্জনের উপায় শিক্ষা করা উচিত। যৌবন আনন্দ উপভোগের কাল। বয়স অতিবাহিত হলে তার ধর্মকর্মে মনোসংযোগ করে মোক্ষলাভের উপায় চিন্তা করা উচিত।[12]

গৌতম বুদ্ধও একটি কামসূত্র শিক্ষা দিয়েছেন। এটি অত্থকবগ্গ গ্রন্থের প্রথম সূত্রে পাওয়া যায়। এই কামসূত্র অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এখানে বুদ্ধ ইন্দ্রিয়সুখের অনুসন্ধান কত ভয়ানক হতে পারে তা শিখিয়েছেন।

অনেক পাশ্চাত্য পণ্ডিত কামসূত্রকে তান্ত্রিক যৌনতার পাঠ্যগ্রন্থ মনে করেন। তা ভুল। হিন্দু তন্ত্র ঐতিহ্যে যৌনাচারের প্রয়োগ ব্যাপক হলেও, কামসূত্র তান্ত্রিক গ্রন্থ নয়। এখানে কোনো তান্ত্রিক ধর্মানুশীলনের কথা বলা হয়নি।

অনুবাদ

Thumb

কামসূত্র গ্রন্থের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ইংরেজি অনুবাদটি ১৮৮৩ সালে ব্যক্তিগতভাবে প্রকাশিত হয়। এই অনুবাদটি বিশিষ্ট প্রাচ্যবিদ ও লেখক স্যার রিচার্ড ফ্রান্সিস বার্টনের নামাঙ্কিত। তবে বার্টনের বন্ধু ইন্ডিয়ান সিভিল সারভেন্ট ফস্টার ফিজগেরাল্ড আরবুটনটের নির্দেশনায় মূল কাজটি করেছিলেন অগ্রণী ভারতীয় পুরাতত্ত্ববিদ ভগবানলাল ইন্দ্রজি। এই কাজে তাকে সহায়তা করেন শিবরাম পরশুরাম ভিদে নামক তার এক ছাত্র।[13] বার্টন এই অনুবাদের প্রকাশের কাজটি করেন। এছাড়া একাধিক পাদটীকা সন্নিবেশিত করে তিনি গ্রন্থটির সম্পাদনাও করেছিলেন। তার সম্পাদনার ভাষা ছিল একাধারে রসিকতা ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ। ভূমিকায় তিনি লিখেছিলেন:

বাৎস্যায়নকে পাদপ্রদীপের আলোকে এনে কীভাবে তাঁর রচনা ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা হল, তা জানবার জন্য অনেকেই উৎসুক হবেন। ব্যাপারটি ঘটেছিল এইভাবে। পণ্ডিতদের সঙ্গে বসে ‘অনঙ্গরঙ্গ’ অনুবাদ করতে গিয়ে বারংবার কোনো এক বাৎস্যার নাম রচনাসূত্র হিসেবে উঠে আসছিল। বাৎস্যা ঋষির মতে এই, বাৎস্যা ঋষির মতে তাই। বাৎস্যা ঋষি এই বলেছে, এবং এই রকম আরো কত কি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগল যে এই বাৎস্যা ঋষিটি কে। পণ্ডিতেরা উত্তর দিলেন বাৎস্যা সংস্কৃত সাহিত্যে প্রেমের উপর এক প্রামাণ্য গ্রন্থের রচয়িতা। কোনো সংস্কৃত পাঠাগারই তাঁর রচনা ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। এবং এও জানলাম যে তাঁর রচনার সম্পূর্ণাংশ একসঙ্গে পাওয়াও এখন দুষ্কর। বোম্বাইতে যে রক্ষিত পাণ্ডুলিপিটিতে অনেক ভুলভ্রান্তি ছিল। তাই পণ্ডিতেরা বারাণসী, কলকাতা ও জয়পুরের সংস্কৃত পাঠাগারগুলিতে লিখে সেখান থেকে পাণ্ডুলিপি আনানোর বন্দোবস্ত করলেন। সেখানকার পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি এসে পৌঁছালে, সেগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে তুলনা করে দেখা হল। তারপর ‘জয়মঙ্গল’ নামে এক টীকার সাহায্যে সমগ্র পাণ্ডুলিপির একটি সংশোধিত প্রতিলিপি প্রস্তুত করা হল। এই প্রতিলিপিটিই ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। নিচে মুখ্য পণ্ডিতের শংসাপত্রটি দেওয়া হল:

এই গ্রন্থের বিভিন্ন প্রতিলিপির সঙ্গে তুলনা করার পর সহকারী প্রতিলিপিটি আমি নিজে সংশোধন করেছি। প্রথম পাঁচটি খণ্ডের সংশোধনের কাজে সাহায্য করেছে ‘জয়মঙ্গল’ নামক টীকাটি। কিন্তু অবশিষ্ট কাজটি বেশ জটিল আকার নেয়। একটি প্রতিলিপি মোটামুটি সঠিক হলেও, অন্যগুলি প্রায় পুরোটাই ছিল ভুলে ভরা। যাই হোক, যে অংশটি একাধিক ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে, সেইটিই সঠিক বলে গ্রহণ করেছি।

তার নিজের অনুবাদের ভূমিকায় শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মীয় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপিকা ওয়েন্ডি ডনিগার লিখেছেন, "managed to get a rough approximation of the text published in English in 1883, nasty bits and all"। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ইন্দোলজির ভাষাতাত্ত্বিক ও সংস্কৃতবিদ অধ্যাপক ক্লোডুইগ ওয়েরবা মনে করেন ১৮৮৩ সালে অনুবাদের স্থান ১৮৯৭ সালের রিচার্ড সিমিড প্রকাশিত আকাদেমিক জার্মান-লাতিন গ্রন্থের পরে।[14]

ওয়েন্ডি ডনিগার ও হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর স্টাডি অফ ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়নের ভারতীয় মনোবিশ্লেষক ও সিনিয়র ফেলো সুধীর কক্কড় অনূদিত ইংরেজি অনুবাদটিই এই গ্রন্থের প্রামাণ্য অনুবাদ। ২০০২ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে এটি প্রকাশিত হয়। ডনিগার সংস্কৃত বিষয়বস্তু সম্পাদনা করেন এবং কক্কড় গ্রন্থের মনোবিশ্লেষণী ব্যাখ্যা দেন।[15]

ইন্দ্র সিনহা কৃত একটি উল্লেখযোগ্য অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে। ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে এই অনুবাদের যৌন ভঙ্গিমা সংক্রান্ত অধ্যায়টি ইন্টারনেটে ব্যাপক প্রচার লাভ করে। কেউ কেউ এই অংশটিকে সমগ্র কামসূত্র বলে ধরে নেন।[16]

দ্য কমপ্লিট কামসূত্র নামে আর একটি উল্লেখযোগ্য অনুবাদ ১৯৯৪ সালে অ্যালান ড্যানিলোর নামে প্রকাশিত হয়।[17] এই অনুবাদ প্রথমে ফরাসিতে ও পরে ইংরেজিতে করা হয়। মধ্যযুগীয় ও আধুনিক টীকা সহ বাৎস্যায়নের মূল রচনা এই অনুবাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অ্যালান ড্যানিলোর অনুবাদে অনেক মূল স্তবকচ্ছেদ রক্ষিত হয়েছে যা ১৮৮৩ সালের সংস্করণে করা হয়নি। এছাড়া তিনি মূল রচনার সঙ্গে পাদটীকাও যোগ করেননি। তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ টীকার ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থভুক্ত করেছিলেন:

  • পৃষ্ঠাপাদটীকা রূপে মধ্যযুগীয় টীকাকার যশোধর কর্তৃক সংস্কৃতে রচিত জয়মঙ্গল টীকা
  • গ্রন্থপাদটীকা রূপে দেবদত্ত শাস্ত্রীর আধুনিক হিন্দি টীকা

ড্যানিলো[18] ব্রাহ্মণ ছাড়া সকল সংস্কৃত শব্দের ইংরেজিতে আক্ষরিক অনুবাদ করেছিলেন। তিনি যৌনাঙ্গের নামের বিষয়ে মূলের সূত্র ত্যাগ করেন। গ্রন্থের পুরনো অনুবাদগুলিতে যেভাবে "লিঙ্গম " বা "যোনি " কথাদুটি ব্যবহৃত হয়েছে, তার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, বর্তমানে হিন্দুদের কাছে এই দুটি শব্দ কেবল শিব ও তার স্ত্রীর যৌনাঙ্গ বোঝায়। তার মতে, মানব যৌনাঙ্গের নাম হিসেবে এগুলির উল্লেখ ধর্মবিরুদ্ধ। "লিঙ্গম" শব্দের অর্থ কেবলমাত্র "যৌনাঙ্গ" – এই মত নিয়ে এস এন বালগঙ্গাধরের মতো পণ্ডিতেরও দ্বিমত আছে।[19]

পুরাণ মতে

পুরাণ মতে মহাদেবের অনুচর নন্দী হর পার্বতীর কথোপকথন শুনে রচনা করেন রতিশাস্ত্র। মহর্ষি উদ্দালিকের পুত্র শ্বেতকেতু তা থেকে একটি সুন্দর গ্রন্থ রচনা করেন। তারপর বাভ্রব্য নামে উত্তর ভারতের একজন ঋষি তাকে সুন্দর ভাবে ১৫০ টি পরিচ্ছেদে ভাগ করে তা বিশ্লেষণ করেন। বাভ্রব্যের এই পুস্তক সারা বিশ্বের পণ্ডিত ও লেখক সমাজে বিশেষ প্রশংসা লাভ করে। গ্রন্থটির বিভিন্ন অধ্যায়কে আরও বিশদ ভাবে ব্যাখ্যা করে ভারতের ঋষিরা বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। ১। চারায়ণ লেখেন-সাধারণ কাম বিচার। ২। সুবর্ণাভ লেখেন-যৌন কাম বিচার। ৩। ঘোটক মুখ লেখেন- যুবতী নারীর বিচার। ৪। গোমার্দীয় লেখেন-স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধের বিচার। ৫। গণিকা পুত্র লেখন-পরস্ত্রী গমন বিচার। ৬। দত্তক লেখেন-পতিতাদের কাম বিচার। ৭। কুচুমার লেখেন-দেহ সৌন্দর্য ও যৌনিক বৃদ্ধির উপায় বিচার। কিন্তু এই সব গ্রন্থ প্রত্যেকটি উৎকৃষ্ট হলেও পরস্পর বিচ্ছিন্ন ছিল বলে লোকের মনকে তা আকর্ষণ করতে পারেনি। তাই ঋষি বাৎস্যায়ন এই শাস্ত্র একত্রিত করে তার ‘কামসূত্রম’ নামক গ্রন্থ টি রচনা করলেন। এই গ্রন্থে তিনি বিভিন্ন ভাগে সব রকম কাম উদ্রেকের তত্ত্ব বিষয়ে সুন্দর ভাষায় ও স্পষ্ট করে আলোচনা করেছেন।[20]

বাৎস্যায়নের মতে কামের পথে প্রকৃতই অগ্রসর হতে হলে নারী বা পুরুষ উভয়ের কতকগুলি কলাবিদ্যা শিক্ষা করা উচিত। মোট চৌষট্টি কলা বাৎস্যায়ন দেখিয়ে গেছেন। এই সব কলায় একজন লোক হয়ত শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে না-তবে কয়েকটি কলায় সে ব্যুৎপত্তি লাভ করতে পারে। আর কলা ছাড়া জীবন ও কাম কিছুই মধুময় হতে পারে না।

আরও দেখুন

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.