কলসী উদ্ভিদ
মাংসাশী উদ্ভিদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মাংসাশী উদ্ভিদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কলস উদ্ভিদ বা কলসী উদ্ভিদ (ইংরেজি: Pitcher plants) হচ্ছে কতিপয় আলাদা প্রকারের মাংসাশী উদ্ভিদ যেগুলোর পরিবর্তিত পাতাগুলো একধরনের বিপদের ফাঁদ হিসেবে কাজ করে । এই বিপদের ফাঁদগুলো শিকার-ধরার ফাঁদ-কৌশলী বৈশিষ্ট্য হিসেবে কলস উদ্ভিদের পাতাগুলোর গভীর গহ্বরটি তরল দ্বারা পূর্ণ থাকে।[1] এই কলসি উদ্ভিদকে সবচেয়ে ভয়ংকর মাংসাশী উদ্ভিদ বলে চিহ্নিত করা হয়।
। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো-Nepenthes alata
কলসি উদ্ভিদে ফাঁপা বিশেষ ধরনের পাতা রয়েছে যা একটি জগ কিংবা কলসির মত জল ধারণ করে রাখতে পারে। কলসির মত দেখতে এ পাতাগুলোই শিকার ধরার ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। এদের গঠন ও আকৃতি থেকেই এদেরকে নাম দেওয়া হয়েছে কলসি উদ্ভিদ।
কলস উদ্ভিদসমূহ পাওয়া যায় বৃহৎ Nepenthaceae এবং Sarraceniaceae পরিবারে। আরো পাওয়া যায় একই-ধরনের Cephalotaceae এবং অন্য কিছু Bromeliaceae পরিবারের সদস্যের ভেতরে। Nepenthaceae এবং Sarraceniaceae হচ্ছে প্রজাতি-বহুল অধিকাংশ কলস উদ্ভিদের পরিবার।
নেপেন্থাসি একটি মাত্র গণ দ্বারা গঠিত যার নাম Nepenthes, এবং এই গণে ১০০-এর অধিক প্রজাতি এবং অসংখ্য হাইব্রিড এবং চাষের প্রজাতি আছে।[2] এদের মধ্যে একটি হলো দক্ষিণ আমেরিকান কলসি উদ্ভিদ (North American Pitcher Plant)। মালয়েশিয়া, মাদাগাস্কার, ভারত ও শ্রীলংকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলাভূমিতেও বিভিন্ন প্রজাতির কলসি উদ্ভিদ দেখা যায়।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় কলসি উদ্ভিদে সাধারণ পাতা এবং উজ্জ্বল রঙের কলসির মত পাতা দুটোই রয়েছে। একটি আকর্ষী থেকে ধীরে ধীরে সুতোর মত একটি পাতা উৎপন্ন হয়। পাতাটি বড় হতে হতে ফুলে উঠে রঙিন একটি জগের মত আকৃতি লাভ করে। এর ওপরের দিকে পাতার তৈরি একটি ঢাকনাও তৈরি হয়। কোন কোন কলসি উদ্ভিদে ঢাকনাটি কলসির কিনারে শোভাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন প্রজাতির কলসি উদ্ভিদের পাতাগুলোর আকার, রঙ ও আকৃতি ভিন্ন হতে পারে। এগুলোর দৈর্ঘ্য মাত্র ২ ইঞ্চি (৫ সে.মি.) থেকে শুরু করে ২ ফুট (৬০ সে.মি.) পর্যন্ত হতে পারে।
ছোট ছোট কলসি উদ্ভিদগুলো মাছি, গুবরে পোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকামাকড় শিকার করে। বড় আকারের কলসি উদ্ভিদগুলো ছোট আকারের ব্যাঙ কিংবা ইঁদুর শিকার করে। কিন্তু সব কলসি উদ্ভিদই এক পদ্ধতিতে শিকার করে। কলসি উদ্ভিদের ফাঁদ পরোক্ষ ধরনের। অর্থাৎ এরা কোন নাড়াচাড়া ছাড়াই শিকার ধরে থাকে। কলসি উদ্ভিদের গঠন এমন যে এর ভেতরে হামাগুড়ি দিয়ে নেমে যাওয়া পোকামাকড়দের জন্য এটি বন্দিশালার মত কাজ করে। কলসের সঙ্গে আটকানো পাতাটি লম্বা নলের মত কাজ করে। নলের মাথায় থাকে রঙচঙে একটি প্রবেশ পথ। নলের তলদেশ অংশটি পেয়ালাকৃতির। যেসব কলসি উদ্ভিদ মাটির কাছাকাছি জন্মে তাদের মধ্যে বৃষ্টির পানি জমা হয়ে থাকে। অধিকাংশ কলসি উদ্ভিদের ঢাকনাটি প্রবেশ পথ দিয়ে বেশি পরিমাণে বৃষ্টির পানি ঢুকতে বাধা দেয়। ঢাকনাটি সবসময় খোলা থাকে। কলসির প্রবেশ মুখে এক ধরনের মধু উৎপন্ন হয়। কলসির উজ্জ্বল রঙ আর মধুর লোভে আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় ওড়ে কিংবা হামাগুড়ি দিয়ে কলসির ভিতরে প্রবেশ করে। ভেতরেই ঢুকে এটি মধু উৎপন্ন করে এবং আরো মধুর লোভে কলসির আরো ভিতরে ঢুকে যায়। পোকাটি কলসির নলের ভিতরেই ঢোকার পরই বিপদে পড়ে যায়। নলের ভিতরের দেয়ালটি বরফের মতই মসৃণ আর পিচ্ছিল। ফলে পোকাটি পিছলে গিয়ে নলের আরো তলের দিকে পড়ে যায়। নলের তলদেশে থাকে অসংখ্য শুঙ্গ। শুঙ্গগুলো সবই কলসির নিচে জমানো পানির দিকে ফেরানো থাকে। এগুলো পার হয়ে পোকাটি নিচে পড়ে গেলে তার পক্ষে আর আর ওপরের দিকে ওঠা সম্ভব হয়না। একসময় এটি তলদেশের পানিতে ডুবে যায়। এরপর পরিপাকে সাহায্যকারী উৎসেচকগুলো কলসির তলদেশে বেরিয়ে আসে। পোকাটির দেহের নরম অংশগুলো পরিপাক হয়ে উদ্ভিদের দেহে শোষিত হয়। শক্ত অংশগুলো কলসির নিচের তলদেশে জমা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.