কচুয়া উপজেলা, চাঁদপুর
চাঁদপুর জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চাঁদপুর জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কচুয়া উপজেলা বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।
কচুয়া | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে কচুয়া উপজেলা, চাঁদপুর | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°২০′৪৫″ উত্তর ৯০°৫৩′১৭″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | চাঁদপুর জেলা |
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ | ২৬০ চাঁদপুর-১ |
সরকার | |
• জাতীয় সংসদ সদস্য | সেলিম মাহমুদ (বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ২৩৫.৮১ বর্গকিমি (৯১.০৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ৩,৮২,১৩৯ |
• জনঘনত্ব | ১,৬০০/বর্গকিমি (৪,২০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৩.৮% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ১৩ ৫৮ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
কচুয়া উপজেলার আয়তন ২৩৫.৮১ বর্গ কিলোমিটার (৫৮,২৭১ একর)।[2] এ উপজেলার উত্তরে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলা ও দাউদকান্দি উপজেলা, দক্ষিণে হাজীগঞ্জ উপজেলা ও শাহরাস্তি উপজেলা, পূর্বে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলা ও চান্দিনা উপজেলা, পশ্চিমে মতলব দক্ষিণ উপজেলা ও হাজীগঞ্জ উপজেলা।
কচুয়া উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান উত্তর অক্ষাংশের ২৩°২৯' এবং ২৩°৪২' এর মধ্যে ৯০°৫৯' এবং ৯১°০৫' দ্রাঘিমাংশের মধ্যে।
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমলে কচুয়া থানা দাউদকান্দি থানার অর্ন্তভূক্ত ছিল। মহারানী ভিক্টোরিয়া রাজত্বকালে কচুয়া থানা ছিল হাজীগঞ্জের অন্তভূর্ক্ত। ১৯১৮ সনের ২৫জানুয়ারী হাজীগঞ্জ হতে পৃথক হয়ে কচুয়া থানা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে কচুয়া বাজার এক সময়ে ওলিয়ে কামেল হযরত শাহ নেয়ামত শাহ এর বাজার নামে পরিচিত ছিল। কচুয়া বাজারের তারিনীর দিঘীর পাড়ে ছিল হযরত শাহ নেয়ামত শাহ এর আস্তানা। তারিনীর দির্ঘীর পাড়ে ওলি আল্লার নিকট ছুটে আসত দূরে দূরান্তের মানুষ। এতে করে গড়ে ওঠে তারিনীর দির্ঘীর পাড় এলাকাকে ঘিরে বাজার। এই বাজারের নাম করন হয় ওলিয়া কামেলের নাম অনুসারে হযরত শাহ নেয়ামত শাহ এর বাজার। পরবর্তীতে এ নাম লোক মূখে পরিবর্তিত হয়ে কচুয়া থানার কচুয়া নামানুসারে কচুয়া বাজার নামে পরিচিতি লাভ করে।
কচুয়া থানার কচুয়া নাম করনের সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও জনশ্রুতি হিসাবে দুটি তথ্য পাওয়া যায়। প্রথমটি হচ্ছে সেনিটিক ভাষায় উপশহরকে কাচওয়া বলে। এ কাচওয়া শব্দ কালক্রমে লোকমূখে লোকান্তরিত হয়ে কচুয়া শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।
অন্যটি হচ্ছে- ১৯০৫ সালে হাজীগঞ্জ থানাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ২টি থানায় রুপান্তরিত করার জন্য সীমানা নির্নয়ের জন্য জরীপ কাজ চালানো হয়। একজন পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে এ জরিপ কাজ পরিচালিত হয়। জরিপ কাজ শুরু হয় দাউদকান্দি থানায় দক্ষিণ সীমানা থেকে অর্থাৎ কচুয়া থানা উত্তর প্রান্ত থেকে। জরিপ কাজ চলার এক পর্যায়ে কাজে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্যান্য লোকজন বর্তমানে কচুয়া বাজার সংলগ্ন উল্টর পার্শ্বের গ্রামের দক্ষিণাংশে এসে কয়েকটি তালগাছের সন্ধান পেয়ে তালগাছ এলাকার উঁচু স্থানে তাবু খাটিয়ে কয়েক দিন অবস্থান করেন। । এ গ্রামের জনৈক মৌলভী আলী আকমত পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনাদের জরীপ কাজ শেষ হয়েছে কি? উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন কুচ হুয়া। উর্দুতে কুচ মানে কিছু এবং হুয়া মানে হয়েছে। অর্থাৎ কিছু অংশ হয়েছে। এ কুচ- হুয়া শব্দ হতে কচুয়া নামের উৎপত্তি হয়।
কচুয়া উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম কচুয়া থানার আওতাধীন।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী কচুয়া উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৩,৮২,১৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৮০,৭৩৬ জন এবং মহিলা ২,০১,৪০৩ জন। মোট পরিবার ৭৬,৬৪২টি।[2] জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১,৬২১ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ২,০৯,৪৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৯৯,৮৬৪ জন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ১,০৯,৬২২ জন।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী কচুয়া উপজেলার সাক্ষরতার হার ৫৩.৮%।[2] বর্তমানে একটি সরকারি কলেজ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ ১ টি সরকারি পলিটেকনিক ইনিস্টিউট: চাঁদপুর পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট :২টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। শিক্ষা বিস্তারে রয়েছে ডিগ্রি কলেজ ৩টি, কামিল মাদ্রাসা নিশ্চিন্তপুর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা ১টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৬টি, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রায় ৩০টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ১৭১টি এবং বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে প্রায় একশতটি। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান গুলো হল : জামিয়া ইসলামিয়া আহমাদিয়া কচুয়া, কচুয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়,নিন্দপুর ডঃ মহিউদ্দিন খান আলমগীর উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, পালাখাল উচ্চ বিদ্যালয়,কহলথুড়ি হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, আশরাফপুর আহ্-সানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়,আশ্রাফপুর গনিয়া ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, চাঁদপুর এম.এ. খালেক মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, নিশ্চিন্তপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা ও ইয়াতিম খানা , কোয়াঁচাদপুর দাখিল মাদরাসা, আল ফাতেহা মাদ্রাসা, দরবেশগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, সাচার উচ্চ বিদ্যালয়, প্রসন্নকাপ উচ্চ বিদ্যালয়, তেতাইয়া আদর্শ স্কুল, রহিমানগর বি এ বি উচ্চ বিদ্যালয়। গাউছিয়া ছোবহানিয়া আলিম মাদ্রাসা,ডুমুরিয়া। আকানিয়া নাছিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়। চাপাতলী লতিফিয়া ফাযিল মাদ্রাসা।
মূলত কৃষি নির্ভর অর্থনীতি । জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৫.৪৭%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫৩%, শিল্প ৫.৭৬%, ব্যবসা ১২.৭৪%, পরিবহন ও যোগাযোগ ৩.৯৯%, চাকরি ১৩.৯৫%, নির্মাণ ২.০৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৫২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.৯৬% এবং অন্যান্য ৭.০১%।
কৃষিভুমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৮.৫৯%, ভূমিহীন ৩১.৪১%। শহরে ৫৭.৩৭% এবং গ্রামে ৬৫.০৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
শিল্প ও কলকারখানা আটা কল, হিমাগার, বরফ কল, ওয়েল্ডিং কারখানা আছে। কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, বিড়ি শিল্প, রেশম শিল্প। মৎস্য,গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি খামার রয়েছে।প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, সরিষা, তিল। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, কাউন, অড়হর। প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, আনারস, কলা, কুল।এখানে প্রচুর কুল বা বরই হয়। এখানে বিভিন্ন রকমের শাক-সব্জি উৎপাদিত হয় যা এখানের চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র রপ্তানি করা হয়। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ , কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা উপজেলার অর্থনীতির প্রধান চাবিকাঠি।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কুল, কলা, আলু।
কচুয়া বাজার, রহিমানগর বাজার, সাচার বাজার, বড়দৈল বাজার, বায়েক বাজার, শুয়ারুল গরু বাজার, মাঝিগাছা বাজার, নন্দনপুর বাজার, আলীয়ারা বাজার, নিন্দপুর বাজার, শিলাস্থান বাজার, মধুপুর বাজার, তুলপাই বাজার, ফতেপুর বাজার, সিংআড্ডা বাজার, বাইছারা বাজার, কাদলা বাজার, রঘুনাথপুর বাজার, চৌমুহনী বাজার, উজানী বাজার, তেতইয়া বাজার, হোসেনপুর বাজার, ডুমুরিয়া বাজার, নলুয়া বাজার, মিয়ার বাজার মাসনীগাছা বাজার
এখানে একটি এক গম্বুজ মসজিদ রয়েছে। মসজিদটি পাঁচশ’ বছরের প্রাচীন। এখানে রয়েছে বিরাট আকারের অসম্পূর্ণ দিঘি। দিঘির পাড়ে থানা বিবি ও দুলাল রাজার কবর, পাকাঘাট। মসজিদের অদূরে রয়েছে দু’টি প্রাচীন পাকা কবর। অনুমান করা হয় এটি নির্মাতার কবরই হবে। দুলাল রাজার দিঘিটি ১৯ একর। মসজিদের পূর্ব পাশে একটি প্রাচীন নৌপথ ছিলো। ক্যাঃ আঃ রব খন্দকারের দাদা জাহনী খন্দকার ১৮০২ সালে মসজিদটি ঝোঁপের মধ্যে দেখতে পেয়ে পুনঃসংস্কার করেন। ক্যাঃ আঃ রব ৯৮ সালে ৮১ বছর বয়সে মারা যান। দুলাল রাজা ও থানা বিবি সম্পর্কে মামা শ্বশুর ও ভাগ্নে বউ ছিলেন। প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও তাদের বিয়ে হয়নি বলে জনশ্রুতি আছে।
কচুয়া উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দারাশাহী তুলপাই গ্রামে রয়েছে নাগরাজ কন্যা রামেশ্বরী দেবী ও হযরত দারাশাহের অমর প্রেমের স্মৃতিতে নির্মিত তিন গম্বুজ মসজিদ, শেখ দারা রামেশ্বরীর ত্রিতল ভগ্নপ্রাসাদ। ষোড়শ’ শতাব্দীতে সুদূর আরব দেশীয় এক যুবক প্রশাসক দিল্লীর সম্রাট কর্তৃক নিয়োজিত হয়ে বর্তমান কচুয়ার তুলপাই অঞ্চলে আসেন। তিনি নাগরাজ কন্যা রামেশ্বরী দেবীর প্রেমে পড়েন এবং এক যুদ্ধের পর নাগরাজাকে পরাজিত করে রামেশ্বরী দেবীকে বিয়ে করেন। বর্তমানে দারাশাহী তুলপাই গ্রামে তার মাজার রয়েছে। প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর মাহ্ফিল হয়। দারাশাহের স্মৃতিতে তার মৃত্যুর দু’শ বছর পর নির্মিত মসজিদের শিলালিপিতে আছে, ‘‘মহান আল্লাহর নামে শুরু করিতেছি। আল্লাহ্ এক। মোহাম্মদ তার রাসূল। নুরুজ্জামান দ্বারা মসজিদটি ১২০২ হিজরী সনে স্থাপিত।’’
আশ্রাফপুরের তিন গম্বুজ মসজিদ। যেখানে রয়েছে আরবদেশীয় বণিকদের কবর। এখানে রয়েছে নিমাই দিঘি। মসজিদটি বাংলার স্বাধীন সুলতানদের আমলে নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এখানে রয়েছে অনেকগুলো প্রাচীন পাকা কবর। জনশ্রুতি রয়েছে, এগুলো আরবীয় বণিকদের তৈরি।
এই মন্দির ১২৭৭ বঙ্গাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় লোকদের নিকট হতে জানা যায়, গঙ্গা গোবিন্দ সেন রথযাত্রা উপলক্ষে জগন্নাথ দেবকে দর্শন করার জন্যে ভারতের শ্রীক্ষেত্রে যান। অনেক চেষ্টা করার পরেও তিনি জগন্নাথ দেবকে দেখতে না পেয়ে মনের দুঃখে কান্নাকাটি করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েন এবং স্বপ্নে দেখেন ‘তুমি দুঃখ করিও না, আমি নিজেই তোমার আবাসস্থল সাচারে নিজ বাড়িতে আবির্ভূত হইব’। তখন গঙ্গা গোবিন্দ বাড়িতে আসেন এবং কয়েকদিন পর তার বাড়ির দিঘিতে অলৌকিকভাবে ভেসে আসা নিম কাঠ দেখতে পান, যা’ দ্বারা কচুয়ার বিখ্যাত সাচারের রথ এবং দেব-দেবী নির্মিত হয়।
এই মুড়া কচুয়া থানায় অবস্থিত। বর্তমানে উক্ত স্থানে ১৩টি বাঁশঝাড় আছে। উক্ত ঝাড়ের চারদিকে অনেক সাপের গর্ত আছে। জানা যায়, হিন্দুদের মনসা দেবীর সেখানে অবস্থান। হিন্দুরা প্রতি বছর চৈত্র মাসে এই মুড়ায় পূজা-অর্চনা করে। এই উপলক্ষে মেলা বসে। হিন্দুরা অনেক মানত করে এবং দুধ-কলা দিয়ে পূজা করে। শুধু তাই নয়, এই বাঁশ ঝাড়ের বাঁশ কেউ কাটে না।
কচুয়া উপজেলার রহিমানগর বাজার হতে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে কচুয়া-কালিয়াপাড়া সড়কের পূর্ব পার্শ্বে এই দিঘি অবস্থিত। ৬১ একর আয়তন বিশিষ্ট এই দিঘির সুউচ্চ পাড় এবং পাড়ের ওপর সুবৃহৎ বৃক্ষরাজির চমৎকার দৃশ্য, যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। জানা যায়, বহুকাল পূর্বে এই এলাকায় ছিলো কড়িয়া রাজা নামে এক প্রতাপশালী রাজা। তার আমলে কড়ির মুদ্রা প্রচলিত ছিলো। একদা কড়িয়া রাজা ব্যাপক আয়োজনভিত্তিক এক পূজা অনুষ্ঠান উপলক্ষে পানীয় জলের সঙ্কট নিরসনকল্পে এবং নিজের নামকে কালজয়ী রাখার মানসে কড়ির বিনিময়ে একটি দিঘি খনন করেন এবং দিঘির নাম কড়িয়া রাজার দিঘি নামকরণ করেন। তার ইচ্ছা পূরণার্থে তার মন্ত্রী সাহাকে এই দিঘি খনন করার নির্দেশ প্রদান করেন। মন্ত্রী সাহা নির্দেশ পেয়ে দিঘি খনন করান। দিঘি খনন কাজে অংশ নেয় বহু নর-নারী। যারা খনন কাজে অংশ নেয় তাদেরকে প্রতি খাঞ্চি মাটি কাটার বিনিময়ে এক খাঞ্চি করে কড়িমুদ্রা দেয়া হয়। দিঘি খনন শেষে মন্ত্রী সাহা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তার নামে দিঘির নাম প্রচার করেন। দিঘি নামকরণে মন্ত্রীর চাতুরিপনার খবর পেয়ে কড়িয়া রাজা ক্ষুব্ধ হন এবং তাকে প্রাণদন্ডে দণ্ডিত করেন। মন্ত্রীকে প্রাণদন্ড দেয়া হলেও এই দিঘির নাম মন্ত্রীর নামে অর্থাৎ সাহার পাড়ের দিঘিই লোকমুখে থেকে যায়।
কচুয়া উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে উজানী গ্রাম। বর্তমানে এ গ্রামে আছে একটি বিখ্যাত মাদ্রাসা। মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশে আছে একটি দিঘি। তার পশ্চিম পাড়ে আছে এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি সুদৃশ্য মসজিদ। এটি বক্তার খাঁ শাহী মসজিদ নামে খ্যাত। এক সময় উজানী গ্রামটি বনজঙ্গলে আচ্ছাদিত ছিলো। ক্বারী ইব্রাহিম সাহেব বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে এখানে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত কামেল পুরুষ। তিনি এ মসজিদটিকে ব্যবহার্য করে তোলেন। মসজিদে প্রাপ্ত একটি শিলালিপিতে আছে, ‘‘পরম দয়ালু আল্লাহ্তায়ালার নামে আরম্ভ করিতেছি। আল্লাহ্ এক, তাহার কোনো শরীক নাই। মোহাম্মদ তাহার রাসূল। বাদশাহ বাহাদুর শাহ্ গাজীর শাসনামলে খাদেম আবুল হোসেন খাঁর পুত্র ইলিয়াস খাঁর পৌত্র’’।উল্লেখ্য যে, এই উজানী গ্রামেই আছে হযরত নেয়ামত শাহের দরগাহ। যিনি হযরত শাহজালাল -এর একজন সঙ্গী ছিলেন। উজানী গ্রামে একজন বিখ্যাত ফৌজদার ছিলেন। তার নাম ছিলো বখতিয়ার খাঁ। তিনি মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। নির্মাণ সাল ১৭৭২। উজানী একটি প্রাচীন গ্রাম। এ গ্রামের নাম পাওয়া যায় মধ্যযুগের মনসামঙ্গল কাব্যে ‘উজানী নগর’ হিসেবে। শোনা যায়, বেহুলা লখিন্দরের লোহার তৈরি বাসরঘর এ গ্রামে ছিলো। যা মাটির নিচে দেবে গেছে। বেহুলার শীল নোড়ার কথিত অংশবিশেষ এখনো এ গ্রামে রয়ে গেছে। লোকজন এখনো এগুলো দেখতে আসে।
এটি কচুয়ার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দিঘী, এর অবস্থান আশ্রাফপুরে। দিঘীকে ঘিরেই উক্ত স্থানে একটি বাজার স্থাপিত হয়। যার নাম "আশ্রাফপুর নতুন বাজার"। এর পশ্চিম কূল ঘেসেঁ "আশ্রাফপুর গনিয়া ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা" এবং "১২ নং আশ্রাফুর ইউনিয়ন পরিষদ"। এই দিঘীতে বিশাল একটি ঘাট রয়েছে, যা সবসময় লোকের কর্মব্যাস্ততায় মূখরিত থাকে। এমন কথা প্রচলিত আছে যে, একসময় এই দিঘী থেকে সোনার থালা বাসন চেয়ে আনা যেতো। কারও বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে দীঘির পাড়ে সোনার থালা বাসন নিজে নিজেই দিঘী থেকে উঠে আসতো। এবং এগুলো দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হতো। আবার অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে, এগুলো এনে দিঘীর পাড়ে রাখলে নিজে নিজেই গায়েব হয়ে যেতো। লোক মুখে প্রচলিত আছে যে, কেউ নাকি একবার এই থালা বাসন নেওয়ার পর ফেরত দেওয়ার সময় একটা বাসন চুরি করে গোবরের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলো। সেই থেকে নাকি, আর এই থালা বাসন আর নেওয়া যায় না।
১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রঘুনাথপুর বাজারে স্থানীয় রাজাকারদের হামলায় ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ১৪ জন নিরীহ লোক নিহত হয়।
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[3] | সংসদ সদস্য[4][5][6][7][8] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
২৬০ চাঁদপুর-১ | কচুয়া উপজেলা | মহিউদ্দীন খান আলমগীর | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.