Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আইন (ইংরেজি: Ine, লাতিন: Inus; আনুমানিক ৬৭০ খ্রিস্টাব্দ – ৭২৬ খ্রিস্টাব্দের পরে; অপর নাম আইনি (ইংরেজি: Ini) বা আইনা (ইংরেজি: Ina)) ছিলেন ওয়েসেক্সের এক রাজা, যিনি ৬৮৯ থেকে[1] ৭২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। আইনের সিংহাসনে আরোহণের সময় দক্ষিণ ইংল্যান্ডের অধিকাংশ অঞ্চলে ওয়েসেক্স আধিপত্য বিস্তার করেছিল। যদিও তিনি পূর্ববর্তী রাজা ক্যাডওলার অধিকৃত অঞ্চলগুলি ধরে রাখতে সমর্থ হননি। ক্যাডওলা পশ্চিম স্যাক্সনদের অধিকারভুক্ত আয়তন যথেষ্ট বৃদ্ধি করেছিলেন। কিন্তু আইনের রাজত্বকালের শেষভাগে কেন্ট, সাসেক্স ও এসেক্স আর পশ্চিম স্যাক্সনের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল না। অবশ্য অধুনা হ্যাম্পশায়ার অঞ্চলে আইন নিজ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন এবং পশ্চিম উপদ্বীপীয় এলাকায় ওয়েসেক্সের পরিধির বিস্তার ঘটিয়েছিলেন।
৬৯৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আইন একটি আইন সংহিতা (লিগাস আইনি বা "আইনের আইন") প্রবর্তন করেন। এই আইন সংহিতাই কেন্টের বাইরে কোনও অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজা কর্তৃক প্রবর্তিত প্রথম আইন সংহিতা। এই আইনগুলি অ্যাংলো-স্যাক্সন সমাজের ইতিহাসের উপর অনেকটাই আলোকপাত করে এবং সেই সঙ্গে রাজা আইনের খ্রিস্টান বিশ্বাসগুলিকেও প্রকাশ করে। রাজা আইনের শাসনকালে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং হ্যামউইক (অধুনা সাউদাম্পটন) গুরুত্ব অর্জন করতে শুরু করে। সম্ভবত রাজা আইনের শাসনকালেই পশ্চিম স্যাক্সনরা টাঁকশালে মুদ্রা উৎপাদন শুরু করে, যদিও আইনের নামাঙ্কিত কোনও মুদ্রাই পাওয়া যায়নি।
৭২৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসন ত্যাগ করে আইনে রোমে চলে যান। সমসাময়িককালের কালপঞ্জিকার বিড লিখেছেন যে, আইন সিংহাসন দিয়ে গিয়েছিলেন "কনিষ্ঠতর পুরুষদের" হাতে। আইনের পরে ওয়েসেক্সের রাজা হয়েছিলেন এথেলহার্ড।
আদি সূত্র-উৎসগুলি এই বিষয়ে একমত যে, আইনে ছিলেন সেনরেডের পুত্র এবং সেনরেড ছিলেন সিওলওয়াল্ডের পুত্র; তবে সিওলওয়াল্ডের পূর্বপুরুষদের বিষয়ে মতৈক্য কমই রয়েছে।[2] আইন জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৬৭০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ।[3] আইনের ভাইবোনেদের মধ্যে ছিলেন ভাই ইনগিল্ড ও দুই বোন কুথবার্গ ও সিয়েনবার্গ। অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজকীয় বংশলতিকা অনুযায়ী, ইনগিল্ড ছিলেন ওয়েসেক্সের রাজা এগবার্ট ও ইংল্যান্ডের পরবর্তীকালের রাজাদের পূর্বপুরুষ। [4] কুথবারহ্ বিবাহ করেন নর্থামব্রিয়ার রাজা অ্যাল্ডফার্থকে[5] এবং আইন নিজে বিবাহ করেন এথেলবার্গকে।[2] বিড লিখেছেন যে আইন ছিলেন "রাজরক্তের অধিকারী", যার দ্বারা বোঝায় যে তিনি গেউইসের (আদি পশ্চিম স্যাক্সন উপজাতি নাম) রাজবংশের সন্তান।[6]
আইন ও ওয়েসেক্সের রাজন্যবর্গের বংশলতিকার কথা জানা যায় দু’টি উৎস-সূত্র থেকে: অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকল ও ওয়েস্ট স্যাক্সন জিনিয়ালজিক্যাল রেগনাল লিস্ট। নবম শতাব্দীর শেষভাগে সম্ভবত মহামতি অ্যালফ্রেডের রাজসভায় অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকল রচিত হয়েছিল এবং ওয়েসেক্সের রাজাদের একটি ছোটো বংশলতিকাও এটির কয়েকটি কালপঞ্জির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তবে অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকল-এ প্রদত্ত তথ্যের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই রেগনাল লিস্টের অধিকতর বিস্তারিত তথ্যের কিছু বৈশাদৃশ্য লক্ষিত হয়।[7] মনে করা হয় যে, এই বৈসাদৃশ্যের কারণ পরবর্তীকালের কালপঞ্জিকারদের একটি প্রয়াস। অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকল অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে পশ্চিম স্যাক্সন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সার্ডিক। পরবর্তীকালের কালপঞ্জিকারেরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক রাজাকে সার্ডিকের বংশধর প্রতিপন্ন করতে গিয়েছিলেন বলে তথ্যের এই অসামঞ্জস্য ঘটে।[8]
আইনের পূর্বে ওয়েসেক্সের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন ক্যাডওলা। কিন্তু ক্যাডওলার থেকে আইনের হাতে ক্ষমতার হস্তান্তর নিয়ে কিছু অনিশ্চয়তা আছে। ক্যাডওলা ৬৮৮ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসন ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের উদ্দেশ্যে রোমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ওয়েস্ট স্যাক্সন জিনিয়ালজিক্যাল রেগনাল লিস্ট অনুযায়ী, আইন ৩৭ বছর রাজ্য শাসন করে ৭২৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসন ত্যাগ করেন। এই তারিখগুলিই ইঙ্গিত করে যে, আইন ৬৮৯ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে সিংহাসনে আরোহণ করেননি এবং যা থেকে অনুমান করা যায় যে ক্যাডওলার সিংহাসন ত্যাগ ও আইনের রাজ্যাভিষেকের মধ্যে একটি অমীমাংসিত পর্যায় রয়েছে। আইন সম্ভবত কিছুদিন পিতা সেনরেডের সঙ্গে একযোগে রাজ্যশাসন করেছিলেন: যুগ্ম রাজপদের প্রমাণ দুর্বল; কিন্তু এই সময়ের অনতিকাল পূর্বে ওয়েসেক্সে একজন প্রধান শাসকের অধীনে যে উপরাজারা রাজ্যশাসন করেছিলেন তার প্রমাণ বেশ শক্তপোক্ত।[9] নিজের আইন সংহিতায় আইনে পিতার সাহায্যের কথা উল্লেখ করেন[10] এবং একটি ভূসম্পত্তি-দানের ঘটনা ইঙ্গিত করে যে আইনের রাজ্যাভিষেকের পরেও সেনরেড ওয়েসেক্সে রাজত্ব করেছিলেন।[11][12]
আইনের রাজত্বকালের গোড়ার দিকে পশ্চিম স্যাক্সন অঞ্চলের প্রসার কতটা ছিল তা মোটামুটি ভালোই জানা যায়। টেমস নদীর দুই তীরবর্তী উচ্চ টেমস উপত্যকা দীর্ঘকাল ধরেই গেউইসের অধিভুক্ত এলাকা ছিল। যদিও আইনের রাজ্যাভিষেকের পূর্বেই ক্যাডওলার থেকে নদীর উত্তর ভাগের ভূখণ্ড কেড়ে নিয়েছিলেন মার্শিয়ার রাজা। পশ্চিম দিকে তারও একশো বছর আগে সিওলিন ব্রিস্টল প্রণালী পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন বলে জানা যায়।[13] এরপর পশ্চিম স্যাক্সনরা দক্ষিণ পশ্চিম উপদ্বীপীয় অঞ্চলে রাজ্যের আরও বিস্তার ঘটায় এবং ডুমনোনিয়ার ব্রিটিশ রাজ্যটি (সম্ভবত অধুনা ডেভন ও কর্নওয়াল অঞ্চল) তাদের প্রতিবেশী রাজ্যে পরিণত হয়।[14] পশ্চিম স্যাক্সনদের পূর্ব সীমান্তে ছিল পূর্ব স্যাক্সন রাজ্য, যার অন্তর্গত ছিল লন্ডন এবং অধুনা সারে ভূখণ্ডটি। দক্ষিণপূর্বে ছিল দক্ষিণ স্যাক্সনস ও উপকূলভাগে ছিল উইট দ্বীপের পূর্বভাগ। সাসেক্সের পরে ছিল কেন্ট রাজ্য।[15] আইনের পূর্বসূরি ক্যাডওলা দক্ষিণের এই সকল রাজ্যের অধিকাংশেরই অধিরাজত্ব অর্জন করেছিলেন।[16] যদিও তিনি উচ্চ টেমস উপত্যকায় মার্শিয়ান অগ্রসরণ প্রতিরোধে সক্ষম হননি।[14]
আইন উইট দ্বীপের অধিকার লাভ করেন, ডুমনোনিয়ারও কিছু অঞ্চল জয় করেন। কিন্তু ক্যাডওলা সাসেক্স, সারে ও কেন্টের যে সকল অঞ্চলের অধিকার লাভ করেছিলেন নিজের শাসনকালের শেষের দিকে আইন তা হারান।[14]
৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে আইন কেন্টের সঙ্গে শান্তিচুক্তি সাক্ষর করেন। ৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে একটি কেন্টিশ বিদ্রোহের সময় ক্যাডওলার ভাই মুল নিহত হয়েছিলেন। তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে কেন্টের রাজা উইটরেড আইনকে প্রভূত অর্থ প্রদান করেন। উইথরেড আইনকে কত অর্থ দিয়েছিলেন তা সঠিক জানা যায় না; অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকল-এর অধিকাংশ পাণ্ডুলিপিতে নথিবদ্ধ হয়েছে "তিরিশ হাজার", কোনও কোনও পাণ্ডুলিপি নির্দিষ্টভাবে লিখেছে তিরিশ হাজার পাউন্ড। পাউন্ড যদি সিয়াটাসের সমান হয়, তাহলে এই অর্থের পরিমাণ রাজার ওয়্যারগিল্ডের (ব্যক্তির পদমর্যাদা অনুযায়ী তার জীবনের আইনসম্মত অর্থ) সমান।[17][18]
৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে ক্যাডওলা দক্ষিণ স্যাক্সন জয় করেছিলেন। আইন কিছুকালের জন্য তা ধরে রাখতে সমর্থ হন।[19] ৬৯২ খ্রিস্টাব্দের একটি সনদে সাসেক্সের রাজা নথহেমকে আইনের আত্মীয় (সম্ভবত বৈবাহিক সূত্রে) বলা হয়েছে।[11][20] ৭১০ খ্রিস্টাব্দেও সাসেক্স পশ্চিম স্যাক্সনের অধিকারভুক্ত ছিল। নথিতে উল্লিখিত হয়েছে, সেই বছর নথহেম আইনের সঙ্গে পশ্চিমে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন ডুমনোনিয়ার বিরুদ্ধে।[14]
সারে সম্ভবত কখনই একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল না। আইনের রাজত্বকালের পূর্বে এই রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ পর্যায়ক্রমে কেন্ট, মার্শিয়া, এসেক্স ও ওয়েসেক্সের হাতে ছিল। লন্ডনও এসেক্সের অধীনে ছিল এবং ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে উইনচেস্টারের ডায়োসিসের হাতে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে পর্যন্ত সারে লন্ডনের ডায়োসিসের অধীনে ছিল।[21] নিজের প্রবর্তিত আইনের প্রস্তাবনায় রাজা আইন লন্ডনের বিশপ এওরসেনওয়াল্ডকে "আমার বিশপ" বলে উল্লেখ করেন, যা থেকে প্রমাণিত হয় যে প্রথম দিকে আইন সারেও নিয়ন্ত্রম করতেন।[14][22] ৭০৪ অথবা ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপ বার্টওল্ডকে লেখা লন্ডনের বিশপ ওয়াল্ডহেয়ারের লেখা একটি চিঠিতে পূর্ব স্যাক্সনদের সঙ্গে পরবর্তী সম্পর্কের বিষয়টির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। চিঠিটিতে "পশ্চিম স্যাক্সনদের রাজার সঙ্গে আমাদের দেশের শাসকদের বিতর্ক ও বিবাদ" বাধার কথা উল্লিখিত হয়েছে। ওয়াল্ডহেয়ার কর্তৃক উল্লিখিত শাসকেরা হলেন পূর্ব স্যাক্সনদের সাইহার্ড ও সোয়েফ্রেড এবং বিবাদের কারণ হল পূর্ব স্যাক্সনদের দ্বারা নির্বাসিত পশ্চিম স্যাক্সনদের আশ্রয়দান। নির্বাসিতদের বহিষ্কার করা হবে এই শর্তেই আইন শান্তিস্থাপনে সম্মত হয়েছিলেন। বিবাদের সমাধান ঘটাতে ব্রেন্টফোর্ডে একটি পরিষদ গঠনেরও পরিকল্পনা করা হয়েছিল।[20][23] এই সময় সারে স্পষ্টতই পশ্চিম স্যাক্সনদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।[20]
বিডের রচনা থেকে জানা যায় যে, আইন সাসেক্সকে "বেশ কয়েক বছর" নিজের অধীনে রেখেছিলেন,[24] কিন্তু ৭২২ খ্রিস্টাব্দে এয়াল্ডবার্ট নামে এক নির্বাসিত সারে ও সাসেক্সে পালিয়ে গেলে ফলশ্রুতিতে আইন সাসেক্স আক্রমণ করেন। তিন বছর পর আইন আবার সাসেক্স আক্রমণ করেছিলেন, সেই বার এয়াল্ডবার্ট নিহত হন। নিঃসন্দেহে তার কিছুকাল আগে সাসেক্সের উপর থেকে পশ্চিম স্যাক্সন নিয়ন্ত্রণ লুপ্ত হয়েছিল।[2][14] কোনও কোনও গবেষক অনুমান করেন যে, এয়াল্ডবার্ট ছিলেন আইনের পুত্র অথবা আইনের ভ্রাতা ইনগিল্ডের পুত্র।[25]
অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকল অনুযায়ী, ৭১০ খ্রিস্টাব্দে আইন ও নথহেম ডুমনোনিয়ার গেরেইন্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন;[2] উস্টারের জন লিখেছেন যে এই যুদ্ধে গেরেইন্ট নিহত হন।[26] প্রথাগতভাবে মনে করা হয় যে, আইনের এই উদ্যোগের দলে অধুনা ডেভন ভূখণ্ড তাঁর নিয়ন্ত্রণে এসেছিল এবং ট্যামার নদী ডুমনোনিয়ার সঙ্গে আইনের রাজ্যের সীমান্তে পরিণত হয়েছিল।[20] যদিও এই ধারণার সঙ্গে পরবর্তীকালে ঘটা হেহিলের যুদ্ধ বা এথেলস্ট্যান কর্তৃক ইসকা (এক্সেটার) থেকে ব্রিটনদের বিতাড়নের মতো ঘটনাগুলির সঙ্গে মিল পাওয়া যায় না। অ্যানালেস ক্যামব্রি নামে দশম শতাব্দীর একটি কালপঞ্জিতে[27] নথিভুক্ত তথ্য অনুযায়ী, ৭২২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা হেহিলের যুদ্ধে তাদের শত্রুদের পরাজিত করেছিল। এই শত্রু সম্ভবত আইনের সেনাবাহিনী। কিন্তু যুদ্ধের স্থানটি শনাক্ত করা যায়নি। ইতিহাসবিদেরা এই স্থান হিসেবে কর্নওয়াল ও ডেভন দুই স্থানের নামই প্রস্তাব করে থাকেন।[14][28]
৭১৫ খ্রিস্টাব্দে আইন উডেন’স বারোতে একটি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এই যুদ্ধে তিনি হয় সিওলরেডের নেতৃত্বাধীন মার্শিয়ানদের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন অথবা তাদের সঙ্গে নিয়ে এক অনামা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধের ফলাফল নথিবদ্ধ হয়নি। উডেন’স বারো হল একটি সমাধিস্তুপ; বর্তমানে অ্যাডাম’স গ্রেভ নামে পরিচিত এই স্থানটি উইল্টশায়ারের অ্যাল্টন প্রায়রে অবস্থিত।[29] আইন সম্ভবত ইতিপূর্বে পশ্চিম স্যাক্সনদের পূর্ববর্তী রাজাদের নিয়ন্ত্রণাধীন টেমস নদীর উত্তর তীরের কোনও ভূখণ্ডই পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। কিন্তু তিনি যে টেমসের দক্ষিণ তীরবর্তী অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতেন তা জানা যায়: ৬৮৭ খ্রিস্টাব্দের একটি সনদে দেখা যায় আইন টেমসের তীরে স্ট্রেটলিতে ও বাসিলডনের কাছে চার্চকে ভূমি দান করেছিলেন।[14][30]
অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকল-এর তথ্য অনুযায়ী, ৭২১ খ্রিস্টাব্দে আইন জনৈক সিনেউলফকে হত্যা করেছিলেন। এই ব্যক্তির সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না, তবে নামটি ইঙ্গিত করে ইনি ওয়েসেক্স রাজবংশীয় কোনও ব্যক্তি ছিলেন। এরপর স্পষ্টতই রাজপরিবারে একটি বিবাদের সূত্রপাত হয়: অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকল অনুযায়ী, ৭২২ খ্রিস্টাব্দে আইনের রানি এথেলবার্গ টউনটন ধ্বংস করে দেন, যেটি এথেলবার্গের স্বামী রাজত্বকালের গোড়ার দিকে নির্মাণ করেছিলেন।[2]
ওয়েসেক্সে এয়াল্ডোরম্যানের কার্যালয়ের প্রথম উল্লেখ তথা সেই কার্যালয়ের অধীনস্থ শায়ারগুলির প্রথম উল্লেখ আইনের রাজত্বকালেও পাওয়া যায়। সম্ভবত আইনই ওয়েসেক্সকে অধুনা হ্যাম্পশায়ার, উইল্টশায়ার, সমারসেট, ডেভন ও ডোরসেট কাউন্টিগুলির সমতুল্য বিভাগে বিভক্ত করেছিলেন, যদিও প্রথম দিকের প্রশাসিক সীমান্তগুলি হয়ত এই সীমান্তগুলিকেও প্রভাবিত করেছিল।[19] গবেষকেরা এও মনে করেন যে এই কাউন্টিগুলির সূত্রপাত ঘটেছিল রাজপরিবারের সদস্যগুলির মধ্যে রাজ্যের বণ্টিত অংশ হিসেবে।[9]
৭১০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ অর্থাৎ আইনের রাজত্বকালের মধ্যভাগে ইচেন নদীর পশ্চিম তীরে হ্যামউইকের বাণিজ্যিক বসতিটি স্থাপিত হয়, এই স্থানটি বর্তমানে সাউদ্যাম্পটন শহরের অংশ। এই বন্দর থেকে যে সকল দ্রব্য বেচাকেনা হত তার মধ্যে অন্যতম হল কাচের পাত্র। এখান থেকে প্রাপ্ত জন্তুজানোয়ারের হাড় ইঙ্গিত করে যে এখানে পশুচর্মের ব্যবসাও হত। বাণিজ্যের আরও প্রমাণ পাওয়া যায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে আবিষ্কৃত আমদানিকৃত কোয়ার্নস্টোন, হোয়েটস্টোন ও মৃৎশিল্পের নিদর্শনগুলি থেকে। এছাড়াও শহরে প্রাপ্ত স্কিয়াটগুলির মধ্যে ফ্রিজিয়ান মুদ্রাও রয়েছে। শহরে যে বিশেষায়িত ব্যবসাবাণিজ্য চলত তার মধ্যে ছিল বস্ত্রবয়ন, কামার শিল্প ও ধাতুশিল্প। আইনের হ্যামউইকের প্রতি আগ্রহ ছিল কিনা জানা যায় না, তবে বিলাসদ্রব্য সহ আইনের পছন্দসই কিছু দ্রব্য সেখানে আমদানি করা হত এবং বণিকদেরও সম্ভবত রাজকীয় সুরক্ষাকবচের প্রয়োজন হত। হ্যামউইকের মোট জনসংখ্যা অনুমান করা হয় ৫,০০০। এই সুবিশাল জনসংখ্যাও আইনের জড়িয়ে থাকাকে ইঙ্গিত করে, কারণ একমাত্র রাজা ছাড়া কেউই এত জন মানুষকে বেতন বা গৃহ দান করতে পারেন না।[31][32]
৭০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বাণিজ্যের বিকাশের সঙ্গে সমান্তরালভাবে সে যুগের সাধারণ মুদ্রা স্কিয়াটের প্রসারের এলাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল উচ্চ টেমস উপত্যকাও।[20] মনে করা হয় যে প্রথম পশ্চিম স্যাক্সন মুদ্রা আইনের রাজত্বকালেই টাঁকশালে নির্মিত হয়, যদিও আইনের নামাঙ্কিত কোনও মুদ্রাই পাওয়া যায় না—স্কিয়াটগুলি থেকে রাজার রাজত্বকালের কোনও ইঙ্গিতই মেলে না।[19]
যে প্রাচীনতম অ্যাংলো-স্যাক্সন আইন সংহিতাটি এখনও পাওয়া যায়, সেটি সম্ভবত ৬০২ বা ৬০৩ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়েছিল। এটি প্রবর্তন করেছিলেন কেন্টের অ্যাথেলবার্ট, যিনি ৬১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন।[33][34] ৬৭০-এর দশকে বা ৬৮০-এর দশকে কেন্টের হ্লোথহিয়ার ও এয়াড্রিকের নামে এক আইন সংহিতা জারি হয়।[35] তারপর দুই রাজা কেন্টের উইটরেড ও আইন এই ধরনের আইন সংহিতা জারি করেন।[36][37]
উইটরেডের ও আইনের আইন সংহিতার তারিখ কিছুটা অনিশ্চিত, তবে কয়েকটি কারণে মনে করা হয় উইটরেডের আইন সংহিতা জারি করা হয়েছিল ৬৯৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর,[38] অন্যদিকে আইনের আইন সংহিতাটি লেখা হয়েছিল ৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে বা তার অল্প কিছুকাল আগে।[14] আইন সেই সময় সদ্য মুলের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বিষয়ে উইটরেডের সঙ্গে শান্তিচুক্তি সাক্ষর করেছিলেন এবং এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যায় যে দুই শাসক নিজ নিজ আইন প্রবর্তনে কিছুটা পরস্পরের সহযোগী রূপে কাজ করেছিলেন। সমকালীনতা ছাড়াও উভয় আইন সংহিতায় এমন একটি সম্পূর্ণ ধারা রয়েছে যা প্রায় একরূপ।[39] সহযোগিতার অপর একটি নির্দশন হল উইটরেডের আইন সংহিতায় অভিজাত শব্দের কেন্টিশ প্রতিশব্দ এওরলকুন্ড-এর (eorlcund) পরিবর্তে পশ্চিম স্যাক্সন প্রতিশব্দ গেসিথ-এর (gesith) ব্যবহার। সম্ভবত আইন ও উইটরেড দু’জনেই দুই রাজ্যের সমস্যাদীর্ণ এই পর্যায়ের অবসানের পর কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মর্যাদাব্যঞ্জক একটি কাজ হিসেবে আইন সংহিতা প্রবর্তন করেছিলেন।[20]
রাজা আইন কর্তৃক প্রবর্তিত আইনগুলির টিকে যাওয়ার একমাত্র কারণ হল মহামতি অ্যালফ্রেড সেগুলিকে নিজস্ব আইন সংহিতায় সংযুক্ত করেছিলেন।[40] অ্যালফ্রেড ও আইনের আইন সংহিতা সম্বলিত প্রাচীনতম অধুনা-বিদ্যমান পাণ্ডুলিপি তথা একমাত্র সম্পূর্ণ প্রতিলিপিটি হল কর্পাস ক্রিস্টি কলেজ, কেমব্রিজে রক্ষিত ১৭৩ সংখ্যক পাণ্ডুলিপি, এটিই অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকল-এর একমাত্র প্রাচীনতম পাঠ যা আজও পাওয়া যায়। এছাড়া আইন সংহিতার দু’টি খণ্ডিত পাঠও পাওয়া যায়। এগুলির মএহ্যদ একটি হল আদিতে আইনের আইন সংহিতার একটি সম্পূর্ণ প্রতিলিপি, যার অংশবিশেষ রক্ষিত হয়েছে ব্রিটিশ গ্রন্থাগারে (পাণ্ডুলিপি কটন ওথো বি এগারো); ১৭৩১ সালে অ্যাশবার্নহ্যাম হাউসে একটি অগ্নিকাণ্ডে মূল পাণ্ডুলিপিটির বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়, শুধুমাত্র ৬৬তম অধ্যায় থেকে ৭৬তম অধ্যায় পর্যন্ত অংশটিই বর্তমানে অক্ষত রয়েছে। ব্রিটিশ গ্রন্থাগারের পাণ্ডুলিপি বার্নি ২৭৭-এও আইনের আইন সংহিতার একটি খণ্ডাংশ পাওয়া যায়।[36]
সম্ভবত সপ্তম শতাব্দীতে রচিত আইনের আইন সংহিতার মূল আকারটি এখন আর পাওয়া যায় না। নিজ আইন সংহিতার প্রস্তাবনা অংশে অ্যালফ্রেড উল্লেখ করেছিলেন যে, পূর্ববর্তী আইনগুলিকে তিনি পছন্দ করতেন না। কোন কোন আইন তিনি বাদ দিয়েছিলেন তা উল্লেখ না করলেও সেগুলি যদি অ্যালফ্রেডের সময় অপ্রাসঙ্গিক আইনগুলি হয়ে থাকে, তবে আইনের আইন সংহিতার যে পাঠটি এখন পাওয়া যায় তাকেও সম্পূর্ণ বলে ধরে নেওয়া যায় না।[36]
আইনের আইন সংহিতার প্রস্তাবনা অংশে রাজার উপদেষ্টাদের নামের তালিকা পাওয়া যায়। এই তালিকায় তিন জনের নাম জানা যায়: বিশপ এওরসেনওয়াল্ড ও বিশপ হ্যাড এবং আইনের পিতা রাজা সেনরেড। এই আইন সংহিতা থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে একজন খ্রিস্টান রাজা হিসেবে আইনের উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্টধর্মকে উৎসাহ দান করা। উদাহরণস্বরূপ, একজন কমিউনিকান্টের (নিয়মিতভাবে যিশু খ্রিস্টের শেষ সান্ধ্যভোজ-স্মরণে আয়োজিত উৎসবে প্রসাদ গ্রহণকারী ব্যক্তি) শপথবাক্য ছিল এক অ-খ্রিস্টানের শপথবাক্যের তুলনায় দীর্ঘতর;[36] এবং ব্যাপ্টিজম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলির কথাও এই আইন সংহিতায় উল্লিখিত হয়েছে। দেওয়ানি বিধিগুলির উপরও গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে—যা সমসাময়িক কেন্টিশ আইনে ততটা দেওয়া হয়নি।[41]
একটি আইনে বলা হয়েছে যে সাধারণ জমিতে একাধিক সেওরল (স্যাক্সন স্বাধীন নাগরিকদের সমসাময়িক নাম) বেড়া দিতে পারবে। যদি কোনও সেওরল নিজের ভাগের জমিতে বেড়া না দেয় এবং তার গবাদি পশু যদি অন্যের মাঠে ঢুকে পড়ে তবে পশুর মালিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে।[40] এর অর্থ এই নয় যে জমি এজমালি ছিল: প্রত্যেক সেওরলেরই জীবিকা নির্বাহের জন্য নিজস্ব ভূখণ্ড ছিল। লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে অপেক্ষাকৃত মামুলি সমস্যার নিষ্পত্তিতেও যেখানে রাজার আইনের প্রয়োজন হত সেখানে আইন সংহিতায় সেওরলদের আনুগত্য অর্জনে স্থানীয় ভূস্বামীদের কী ভূমিকা ছিল তা এই আইন সংহিতায় উল্লেখ করা হয়নি।[42] এই বিষয়টি থেকে এবং অন্যান্য আইনগুলির থেকে স্পষ্ট যে জমির মালিকেরা স্থানীয় ভূস্বামীদের থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে জমির ভোগদখলের অধিকার পেতেন এবং এই বিষয়ে রাজার ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে থাকাই ইঙ্গিত করে যে ভূস্বামী ও জমির মালিকের সম্পর্ক ছিল রাজার নিয়ন্ত্রণাধীন।[43]
ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো গবাদি পশু-সংক্রান্ত আইনগুলি একটি মুক্ত-ক্ষেত কৃষি ব্যবস্থার আদিতম নথিবদ্ধ প্রমাণ দাখিল করে। এই আইনগুলি থেকে বোঝা যায় আইনের রাজত্বকালে ওয়েসেক্সে মুক্তি-ক্ষেত কৃষির অস্তিত্ব ছিল এবং সম্ভবত এই ধরনের কৃষিব্যবস্থাই ইংল্যান্ডের সমগ্র মিডল্যান্ডের এবং সুদূর উত্তর ও পূর্ব দিকে লিন্ডসে ও ডিয়েরা অঞ্চল পর্যন্ত ভূভাগের একমাত্র কৃষিব্যবস্থা ছিল। তবে সমগ্র ওয়েসেক্সে এই ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল না: যেমন ডেভনে এই প্রথায় চাষবাস করা হত না।[42] যে আইনটিতে জমির "ইয়ার্ড"-এর উল্লেখ রয়েছে, সেটিই এই এককের প্রথম নথিবদ্ধ উল্লেখ। এক ইয়ার্ড জমির পরিমাণ ছিল এক হাইড জমির এক-চতুর্থাংশ; এক হাইড জমির পরিমাণ অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হলেও তা মোটামুটি ছিল ১২০ একর (৪৯ হেক্টর) জমির সমতুল্য। পরবর্তীকালে মধ্যযুগীয় ভিলেইনদের স্বত্বাধিকারে থাকা জমির পরিমাপ ইয়ার্ডের এই পরিমাণ ধরেই করা হত এবং এককটিকে বলা হত ভারগেট। একজন ইতিহাসবিদের মতে, ম্যানর-ভিত্তিক অর্থনীতির সূত্রপাত আইনের আইন সংহিতাতেই স্পষ্ট লক্ষিত হয়।[43]
ফার্ড (বাধ্যতামূলকভাবে রাজার সামরিক বাহিনীতে পরিষেবা প্রদান) অবহেলার জরিমানা নির্ধারিত হয়েছিল একজন অভিজাত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১২০ শিলিং এবং এক সেওরলের ক্ষেত্রে ৩০ শিলিং।[40] এই আইনটি থেকে বোঝা যায় যে সেওরলদের সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হত। সেওরলদের সামরিক মূল্য কী ছিল তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তবে সকল স্বাধীন নাগরিকই যে যুদ্ধ করত, তাতে কোনও আশ্চর্যের কিছু নেই, কারণ পরাজয়ের অর্থ ছিল সম্ভবত ক্রীতদাসত্ব।[44]
আরেকটি আইনে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে যে হত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তির "ওথ-হেল্পার"দের মধ্যে অন্তত একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি থাকতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপরাধের সন্দেহ থেকে মুক্ত করতে একজন ওথ-হেল্পারকে তার হয়ে শপথ গ্রহণ করতে হত। এই আইন থেকে মনে করা হয় যে আইন শুধুমাত্র কৃষকদের কৃত শপথে বিশ্বাস করতেন না। সম্ভবত এটির আগের থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সূচিত করেছিল, কারণ এই আইনের আগে অভিযুক্তের আত্মীয়রাই তার হয়ে শপথ গ্রহণ করত।[45]
আইনের ইংরেজ ও ব্রিটিশ প্রজাদের মধ্যে আইন সংহিতাটি পৃথক বিধানের ব্যবস্থা করেছিল, যাতে ব্রিটিশদের তুলনায় ইংরেজদের অধিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল; ব্রিটনদের জন্য প্রদত্ত ওয়্যারগিল্ডের পরিমাণ ছিল একই সামাজিক শ্রেণিভুক্ত স্যাক্সনদের জন্য প্রদত্ত ওয়্যারগিল্ডের অর্ধেক, এবং ব্রিটনদের শপথের মূল্য কম ছিল।[46] দুই জনসংখ্যার অসম্পূর্ণ একাঙ্গীভবনের যে প্রমাণ এই আইনগুলি থেকে পাওয়া যায়, তার সমর্থন স্থাননাম ইতিহাস, ধর্মীয় স্থাপনাগুলির ইতিহাস ও স্থানীয় প্রত্নতত্ত্ব-সংক্রান্ত গবেষণা থেকেও পাওয়া যায়, যে গবেষণা ইঙ্গিত করে যে আইনগুলির প্রবর্তনের সময় ওয়েসেক্সের পশ্চিমাঞ্চলে জার্মানিক নবাগতরা বহুল সংখ্যায় বসতি স্থাপন করেছিল।[16] লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে, এই আইনগুলি এক স্যাক্সন রাজ্যের স্যাক্সন রাজা কর্তৃক প্রবর্তিত হলেও আইনি পরিভাষায় রাজা আইনের জার্মানিক প্রজাদের বলা হয়েছে ইংলিস্ক (Englisc)। এই বিষয়টি থেকে সেই যুগেও ব্রিটেনের সকল জার্মানিক জাতিগোষ্ঠীর জন্য সামগ্রিকভাবে একটি সাধারণ ইংরেজ পরিচিতি গড়ে উঠেছিল।[47]
আইন ছিলেন খ্রিস্টান রাজা, তিনি রাজ্যশাসন করতেন চার্চের এক পৃষ্ঠপোষক ও রক্ষাকর্তা হিসেবে। আইনের আইন সংহিতার প্রস্তাবনায় উল্লিখিত রাজ-উপদেষ্টাদের মধ্যে এওরসেনওয়াল্ড ছিলেন লন্ডনের বিশপ এবং হ্যাড ছিলেন উইনচেস্টারের বিশপ; এছাড়াও আইন বলেছেন যে আইনগুলি প্রস্তুত করা হয়েছে "আমার সকল এয়াল্ডোরম্যান, এবং আমার প্রজাদের মুখ্য উপদেষ্টা এবং সেই সঙ্গে ঈশ্বরের ভৃত্যবর্গের এক মহাসভা" উপদেশ ও নির্দেশে আইনগুলি প্রস্তুত করা হয়েছে।[22][48] আইনগুলির মধ্যে দিয়েও রাজা আইনের খ্রিস্টান উদ্দেশ্যগুলি পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে, যেমন শিশুদের ব্যাপটাইজ করতে সমর্থ হলে গ্রামীণ পাদ্রিদের ভরণপোষণের জন্য প্রদত্ত জমির উৎপন্ন দ্রব্যের এক-দশমাংশ প্রদান না করলে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।[19] আইন ধর্মীয় সংস্থাগুলির পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে চার্চের ভরণপোষণ করতেন। এই সংস্থার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল শেরবর্নের ডায়োসিস,[19] যেটি ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে উইনচেস্টারের ডায়োসিস বিভাজিত করে সৃষ্টি করা হয়েছিল। আইন প্রথমে ক্যান্টারবেরির ধর্মসম্প্রদায় থেকে বহিষ্কারের ভয় উপেক্ষা করে এই বিভাজনের বিরোধিতা করেছিলেন। যদিও পরে বিশপ হ্যাডের মৃত্যুর পর তিনি মত পরিবর্তন করেন।[20]
প্রথম পশ্চিম স্যাক্সন সন্ন্যাসিনী-মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আইনের শাসনকালেই। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আইনের আত্মীয়া তথা রাজা সেন্টউইনের কন্যা বাগা এবং আইনের ভগিনী কুথবারহ্ (নর্থামব্রিয়ার রাজা অ্যালডফার্থের স্ত্রী, যিনি স্বামীর থেকে বিচ্ছেদের পর কোনও এক সময়ে উইমবর্নের অ্যাবি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন)।[32][49] ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে বিশপ অ্যালডহেমের প্রস্তাব অনুযায়ী আইন যে গির্জাটি নির্মাণ করেছিলেন সেটিই পরে পরিণত হয় ওয়েলস ক্যাথিড্রালে।[50] অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকল-এ উল্লিখিত হয়েছে যে, আইনে গ্ল্যাস্টনবেরিতে একটি মিনস্টার নির্মাণ করেছিলেন। এটি নিশ্চিতই অতিরিক্ত ভবন নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণের ইঙ্গিত, কারণ গ্ল্যাস্টনবেরিতে একটি ব্রিটিশ মঠ আগে থেকেই ছিল।[51]
আইনকে ওয়েসেক্সে একটি সংঘবদ্ধ চার্চ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সাহায্যকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে এটা স্পষ্ট নয় যে সেই চার্চ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তিনিই নিয়েছিলেন কিনা। এছাড়াও তিনি প্রাচীনতম জ্ঞাত পশ্চিম স্যাক্সন সাইনডগুলির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন, একটিতে নিজে পৌরোহিত্য করেন এবং মনে করা হয় যে সমবেত যাজকমণ্ডলীর সম্মুখে অভিভাষণও প্রদান করেছিলেন।[52]
একটি প্রথা অনুযায়ী, আইন ছিলেন একজন সন্ত এবং তাঁর প্রতি উৎসর্গিত গির্জাটি হল ওয়েলসের নিউ কুয়ের কাছে ল্যানিনায় অবস্থিত সেন্ট ইনা’জ চার্চ। যদিও খুব সম্ভবত এই গির্জাটি প্রকৃতপক্ষে উৎসর্গিত হয়েছিল পঞ্চম শতাব্দীর ওয়েলশ সন্ত ইনার উদ্দেশ্যে।[53][54]
৭২৬ খ্রিস্টাব্দে কোনও নিশ্চিত উত্তরাধিকার ব্যতিরেকেই আইন সিংহাসন ত্যাগ করেন। বিডের মতে, পর্যটনের উদ্দেশ্যে তিনি রাজ্য ছেড়ে দিয়েছিলেন "তরুণতর পুরুষদের" হাতে। স্ত্রী এথেলবার্গকে নিয়ে আইন চলে যান রোমে, সেখানেই দু’জনের মৃত্যু ঘটে। উল্লেখ্য, আইনের পূর্বসূরি ক্যাডওলাও সিংহাসন ত্যাগ করে রোমে চলে যান এবং সেখানে পোপ কর্তৃক ব্যাপ্টাইজড হন। মনে করা হত যে, রোমে তীর্থযাত্রার মাধ্যমে স্বর্গের পথ সুগম হয়। বিড লিখেছেন যে, অনেক মানুষই সেই যুগে এই কারণে রোম যাত্রা করত: "... অভিজাত ও সাধারণ মানুষ, গৃহস্থ ও যাজক, পুরুষ ও নারী সবাই।"[6] হয় আইন অথবা মার্শিয়ার ওফাকে প্রথাগতভাবে রোমের স্কোলা স্যাক্সোনামের প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়, যা বর্তমানে বর্গোর রোমান রিয়ন বা জেলায় অবস্থিত। স্কোলা স্যাক্সোনামের নামটি এসেছে রোমে কর্মরত স্যাক্সনদের একটি রক্ষীবাহিনীর নামানুসারে, কিন্তু কালক্রমে সেটি পরিণত হয় শহরের ইংরেজ পর্যটকদের অতিথিশালায়।[55] ওয়েন্ডওভারের রজারের মতে, ৭২৭ খ্রিস্টাব্দে আইন স্কোলা স্যাক্সোনাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[56]
আইনের উত্তরসূরি ছিলেন রাজা এথেলহার্ড; তিনি আইনের আত্মীয় ছিলেন কিনা তা জানা যায় না, তবে পরবর্তীকালের কয়েকটি উৎস-সূত্রে এথেলহার্ডকে আইনের শ্যালক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[57] এথেলহার্ডের সিংহাসনে আরোহণ নিয়ে অসওয়াল্ড নামে এক এথেলিং-এর সঙ্গে বিরোধ বাধে। সম্ভবত আইনের সিংহাসন ত্যাগের পর অমীমাংসিত ফলশ্রুতিতে মার্শিয়ার সমর্থন এথেলহার্ডকে রাজা হতে সাহায্য করেছিল এবং তা এথেলহার্ডকে মার্শিয়ার রাজা এথেলবাল্ডের প্রভাবের বৃত্তেও নিয়ে এসেছিল।[2][25]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.