Loading AI tools
বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
এম হামিদুল্লাহ খান (১১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ - ৩০ ডিসেম্বর ২০১১), যিনি উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান নামে সচরাচর পরিচিত, ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ প্রবাসী সরকারের প্রধান সামরিক প্রতিনিধি (গেরিলা যুদ্ধ) সর্ববৃহৎ গেরিলা ট্রেনিং ক্যাম্প চাকুলিয়া, বিহারে, ১১ নম্বর সেক্টরের (ডিভিশন) ১ম উপ-সেক্টরের (মানকাচর) অধিনায়ক এবং ১১ নম্বর সেক্টরের সেক্টর অধিনায়ক। প্ৰথম পেশা হিসেবে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কমিশন্ড প্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। ২৯এ মার্চ'৭১ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর চাকুরি পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে। ৭ই এপ্ৰিল তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে স্থানান্তরিত হন।[1] ১৯৭৮ সালে এলপিআর যান, এবং ১৯৭৯ প্রথমাংশে তিনি অবসর গ্ৰহণ করে রাজনীতিতে যোগ দেন।
এম. হামিদুল্লাহ খান | |
---|---|
জন্ম | ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ |
মৃত্যু | ৩০ ডিসেম্বর ২০১১ ৭৩) | (বয়স
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তানি (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশী |
পেশা | সশস্ত্র বাহিনী কর্মকর্তা/রাজনীতিবিদ |
পরিচিতির কারণ | তামঘা-ই-জুরাত, সিতারা-ই-হাৰ্ব, বীর প্রতীক, পাক-ভারত কাশ্মীর যুদ্ধ (১৯৬৫), বাংলাদেশ স্বাধীনতা ১৯৭১ (যুদ্ধ নেতা) |
সন্তান | ২ ছেলে |
পুরস্কার | বীর প্রতীক |
১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮ সালে এম হামিদুল্লাহ খানের জন্ম হয় তৎকালীন ইংরেজ শাসন কালে বিক্রমপুর পরগণায় লৌহজং থানার (র্বতমান মুন্সীগঞ্জে) পদ্মার নদীর নিকটে উত্তর মেদিনী মণ্ডল গ্রামে তার দাদা জমিদার "খান বাহাদুর" মোহাম্মদ আজিম খান এর খাঁন বাড়িতে। বাবা ইম্পিরিয়াল ফরেস্ট সাৰ্ভিস এর বেঙ্গল ফরেস্ট ডিপাৰ্টমেণ্টে ফরেস্ট অফিসার(ডেপুটি রেন্জার)- এম দবিরউদ্দিন খান এবং মা - জসিমুন্নেসা খানের নয় সন্তানের মধ্যে তার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। পিতার চাকুরিজনিত কারণে তিনি বিভিন্ন জায়গায় পড়াশোনা করেছিলেন।[2] তিনি আসামের গৌহাটীতে এঙগ্লো-বাংলাদেশ সিলভার জুবলী স্কুল এবং রাঙ্গামাটি ক্যাথলিক মিশনারি স্কুলে লেখাপড়া করেন। সে স্কুলেই সৰ্বপ্ৰথম তার ইংরেজি ভাষা শেখা ও চৰ্চা হয়। তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯৫৪ সালে লৌহজং এ. টি. ইনস্টিটিউশন(কাজীর পাগলা) থেকে। এরপর তিনি ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে এবং এ কলেজ থেকেই ১৯৫৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। জগন্নাথ কলেজে ব্যাচেলর অফ কমার্স কোর্সে দুই বছর অধ্যয়ন করে আইন বিভাগে ভৰ্তি হয়েও তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কমিশনপ্ৰাপ্ত চাকুরির চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে অনুমোদিত হন। পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমী রিসালপুরে তিনি ৩৪তম জিডি(পি) ১নং স্কোডরণ কোর্সে যোগদান করেন জুলাই মাসের ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে। এখানে দুই বছর প্রশিক্ষণ শেষে কমিশনপ্রাপ্ত হন(১৯৬২ সালের জুনে)। পরবৰ্তীতে তিনি জিডি প্ৰশাসনিক শাখায়(নিরাপত্তা ও তদন্ত) বদলি হন।[3]
এম হামিদুল্লাহ খান ১৯৬৫ সালে ব্রিটিশ দখল ও শাসন আমলে বাংলার মুখ্য সচিব রাজশাহী(নাটোর জেলা)র জনাব চয়ন উদ্দিন আহ্মেদের নাতনি ও পূৰ্ব পাকিস্তানে রাজস্ব ও কর কমিশনার জনাব মকবুল হোসেইন সিদ্দীকি ও বেগম জোহরা সিদ্দীকির তৃতীয় কন্যা রাবেয়া সুলতানা খানকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে তিন পুত্র - মুরাদ হামিদ খান সানি, তারেক হামিদ খান কনি, জিয়াদ হামিদ খান রনি। তন্মধ্যে জিয়াদ হামিদ খান রনি ৮ই অগাস্ট ১৯৮১ সালে পুকুড়ে ডুবে মারা যায়।
১৯৬০ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে জিডি পাইলট কোর্সে কমিশনপ্ৰাপ্ত হন। পরে তিনি প্রশাসনিক শাখায় নিয়োগপ্ৰাপ্ত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছু পূর্বে ১৯৭০ সালের শেষাৰ্ধে তিনি ঢাকা বিমান ঘাঁটিতে ৫নং (প্ৰভোস্ট এন্ড সিকিউরিটি) ইউনিটের কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব সহ তেজগাঁও আন্তৰ্জাতিক বিমান বন্দরে পদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিযুক্ত হন।[2] ১৯৭২-১৯৭৮ স্কোয়াড্ৰণ লীডার ও উইং কমান্ডার হিসেবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন তিনি। তিনি বিমান বাহিনীতে প্ৰভোস্ট মাৰ্শাল ও গ্ৰাউন্ড ডিফেন্স কমান্ডার নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৭৭ শনে তিনি উপ সামরিক আইন প্ৰশাসক হিসেবে মাৰ্শাল ল কমিউনিকেশন এন্ড কন্ট্ৰলের পরিচালক ছিলেন। তিনি মোট ২১ বৎসর চাকুরি করেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সি-ইন-সি কৰ্ণেল ওসমানী তাকে যুদ্ধ ময়দানে স্কোয়াড্রন লিডার পদে পদোন্নতি দেন।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে এম হামিদুল্লাহ খান পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘাঁটি ঢাকার সহকারী প্রভোস্ট মার্শাল ও তেজগাঁও আন্তৰ্জাতিক বিমান বন্দরে (নিরাপত্তা দায়িত্ব) হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ২৫ শে মার্চের রাত্রে গণহত্যা শুরু হলে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেরণা অনুভব করেন। এ সময় কবি বেগম সুফিয়া কামালের বাসায় তার যাতায়াত ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি ৩টি পদে দ্বিতীয় পালন করেন। সর্বপ্রথম প্রবাসী সরকার তাকে বিহারের চাকুলিয়ায় সর্ববৃহৎ গেরিলা ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রবাসী সরকারের সামরিক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন। অতঃপর স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কৰ্নেল এম এ জি ওসমানী তাকে উত্তর ফ্রন্টে নিযুক্ত করেন যা ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তেলঢালায় মেজর জিয়া রহমানের কমান্ডাধীন ১১ নং সেক্টরের উপ সেক্টর অধিনায়ক হিসেবে। হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট করার পর মেজর জিয়া তাকে বৃহত্তর রংপুর ও ময়মনসিংহ জেলার বিপরীতে মেঘালয়ের নদীবন্দরে স্থাপিত মানকাচর প্রথম সাব সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত করেন। হামিদুল্লাহ খান ঐ ঘাঁটি থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডি-ডের প্রেক্ষাপটে চিলমারী উভচর অভিযান সহ রংপুরের উলিপুর,কোদালকাটি, ছালিয়াপাড়া, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা সহ বহু এলাকায় অবস্থিত পাকিস্তান বাহিনীর ঘাটিতেঁ অভিযান পরিচালনা করেন। রৌমারি ও রাজিবপুর থানাধীন ৫৫০ বর্গমাইল মুক্ত এরাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্বও তাকে প্রদান করা হয়।[3]
অতঃপর ১১ নং সেক্টর এবং জেডফোর্সের অধিনায়ক মেজর জিয়ার রহমান তাকে ১১ নম্বর সেক্টরে 'উপ সেক্টর কমান্ডার' নিযুক্ত করেন। ১০ই অক্টোবরে মেজর জিয়াউর রহমান নিযুক্ত মহেন্দ্ৰগন্জে ২ উপ সেক্টর কমঃ মেজর আবু তাহের কে সেক্টরের দায়িত্ব দিয়ে যান। তাহের আহত হলে এম হামিদুল্লাহ ১৯৭১-এর ৩ নভেম্বর থেকে সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি পাক সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রবাসী সরকারে বাংলাদেশ ফোর্সেস সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানী এম এ জি ওসমানী তাকে সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যাটেল ফিল্ড প্রমোশন দিয়ে স্কোয়াড্রন লীডার পদে উন্নীত করে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন তিনি।[4] মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ও সবিশেষ অবদান রাখায় তিনি বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।
বাংলাদেশের বিমান বাহিনী থেকে L.P.R (লীভ পার রিটায়ারমেন্ট) গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দিযে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। মাটি ও মানুষের সঙ্গে কাজ করার তাগিদে তিনি ১৯৭৯ সালে ১০ই জানুয়ারি বিমান বাহিনী থেকে সম্পূৰ্ণ অবসরগ্রহণ করেন। এরপর শুরু হয় ভিন্ন এক জীবন মানুষের পাশে দাঁড়াতে বেছে নেন রাজনীতি। ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ এই তিন সালের নির্বাচনের আসন থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ এর নিৰ্বাচনে বৰ্তমান একমি ঔষধের মালিক মিজানুর রহমান সিনহা'র কাছে তার গোরা আসনটি অৰ্থের বিনিময় রদবদলতি হওয়াতে তিনি বিশ্বাস ঘাতকতার পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১৫ আসন থেকে পুনরায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করেন[3]
হামিদুল্লাহ খান মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে কয়েকটি বই লিখেছেন।[5] সেগুলো হলো:
৭৪ বছর বয়সে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০শে ডিসেম্বর, ২০১১, শুক্রবার বেলা আড়াইটায় মারা যান তিনি।[6]
২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ এম হামিদুল্লাহ খানের নামে ঢাকা শহরের অভিজাত বনানী এলাকার ২৩ নম্বর সড়কটি হামিদুল্লাহ খান সড়ক নামকরণ করা হয়।[7] [8]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.