Remove ads
উপযোগবাদ তত্ত্বের জনক জেরেমি বেন্থাম (১৭৪৮-১৮৩২)। উপযোগবাদ সম্পর্কে আরও গভীর দৃষ্টিভঙ্গির সাথে উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইউটিলিটারিয়ানিসম বা উপযোগবাদ নীতি শাস্ত্রের একটি তত্ত যা মূলত উপযোগ বা লাভ বা ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। জেরেমী বেন্থাম এই তত্তের জনক, যিনি একে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন
অনেকেই এই তত্তকে ডেমোস্থেনাস-এর অনুবর্তনবাদ বা কন্সিকোয়েন্সিয়ালিসম এর একটি রূপ হিসেবে বাখ্যা করে থাকেন। সর্বোচ্চ সুখ বা ম্যাক্সিমাম হ্যাপিনেস হল এই তত্তের সারমর্ম। ১৭৮৯ সালে বেন্থাম তার An Introduction to the Principles of Morals and Legislation গ্রন্থে এই তত্তের কথা উল্লেখ করেন যা পরবর্তীতে জন স্টুয়ার্ট মিল এর বিশদ ব্যাখ্যার মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তোলেন।
এটি একটি নৈতিক দর্শন যা মানুষের কর্মকাণ্ডকে তার ফলাফল বা পরিণতির ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে। এই তত্ত্বের মূল ধারণা হলো, কোনো কাজ তখনই নৈতিকভাবে সঠিক বলে গণ্য হবে, যখন সেটি সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের জন্য সর্বাধিক সুখ বা মঙ্গল বয়ে আনে। এটি ফলাফলবাদী নৈতিক তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত, যেখানে কোনো কাজের সঠিকতা বা ভুল শুধুমাত্র তার পরিণতির ওপর নির্ভর করে।
ইউটিলিটারিয়ানিসম বা উপযোগবাদ একটি নৈতিক দর্শন, যা মানুষের কর্ম এবং সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন করে মূলত তাদের ফলাফলের ভিত্তিতে।[1] এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের জন্য সর্বাধিক সুখ বা আনন্দ সৃষ্টি করা। এই দর্শনে সুখ এবং কষ্টের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে আনন্দকে বাড়িয়ে কষ্টকে যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এই তত্ত্বের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, প্রতিটি মানুষের সুখ এবং কষ্টকে সমানভাবে বিবেচনা করা হয়। কোনো ব্যক্তির সুখকে অন্য কারও চেয়ে বেশি বা কম গুরুত্ব দেওয়া হয় না। প্রতিটি ব্যক্তির অনুভূতির মূল্য সমান, এবং সকলের উপকারিতাকে সমানভাবে গণ্য করা হয়।[2] এর ফলে, যেকোনো সিদ্ধান্ত বা কার্যকলাপ তখনই নৈতিক বলে বিবেচিত হয়, যখন তার ফলাফল সমাজের মোট আনন্দকে বৃদ্ধি করে এবং কষ্টকে কমিয়ে আনে। ইউটিলিটারিয়ানিসমের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি ফলাফলকেন্দ্রিক। কোনো কাজ কতটা সঠিক বা ভুল, তা নির্ধারণ করতে আমরা সেই কাজের ফলাফল দেখি। যদি একটি কাজের ফলাফলে অধিক সংখ্যক মানুষের জন্য সুখ সৃষ্টি হয়, তবে সেটি নৈতিক বলে গণ্য হয়। অন্যদিকে, যদি সেই কাজ কষ্ট বা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে, তাহলে সেটি অনৈতিক বলে বিবেচিত হয়। এই তত্ত্বের মাধ্যমে সমাজের মোট উপযোগিতা বা সুখকে সর্বাধিক করা হয়, যা প্রতিটি নৈতিক সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে থাকে। ইউটিলিটারিয়ানিসম, তাই, এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে যা সমষ্টিগত কল্যাণের ওপর জোর দেয় এবং ব্যক্তিগত লাভের চেয়ে সামগ্রিক সুখকে গুরুত্ব দেয়।
সর্বাধিক সুখ বা সর্বাধিক মঙ্গল তত্ত্ব হল ইউটিলিটারিয়ানিসম বা উপযোগবাদের মূল ধারণা। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, কোনো সিদ্ধান্ত বা কাজ তখনই নৈতিক বলে বিবেচিত হবে যখন তা সমাজের বৃহত্তম সংখ্যক মানুষের জন্য সর্বাধিক সুখ ও মঙ্গল বয়ে আনে।[3] এর ভিত্তি হলো, প্রতিটি কাজের পরিণতি বিশ্লেষণ করে সেটির দ্বারা কতজন মানুষ সুখ বা কষ্ট অনুভব করছে তা বিচার করা। এই নীতির মূল ভিত্তি হল "আনন্দ ও কষ্টের ভারসাম্য।" ইউটিলিটারিয়ান তত্ত্ব অনুসারে, সুখ হলো আনন্দ বা প্রফুল্লতা এবং কষ্ট হলো বেদনা বা দুঃখ। কাজের মাধ্যমে যত বেশি সংখ্যক মানুষের আনন্দ বাড়বে এবং কষ্ট কমবে, তত বেশি সেটি নৈতিক হিসেবে গৃহীত হবে। ইউটিলিটারিয়ানিসম একটি ফলাফলবাদী দৃষ্টিভঙ্গি (consequentialist), যা নৈতিকতার বিচার করে কাজের পরিণতির ওপর ভিত্তি করে। কাজটি যদি বৃহত্তর সমাজের জন্য উপকারী হয় এবং অধিক মানুষের জন্য সুখ বয়ে আনে, তাহলে তা নৈতিক হিসেবে গণ্য হয়। এই তত্ত্বের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি সকল ব্যক্তির সুখকে সমানভাবে বিবেচনা করে। কোনো ব্যক্তির সুখ বা কষ্টের বিচার সমাজের অন্য সদস্যদের তুলনায় কোনো কম বা বেশি নয়। সকলের সুখ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ফলে একটি সর্বজনীন সুখের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। সুখের ক্ষেত্রে দুটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে—পরিমাণগত এবং গুণগত। পরিমাণগত দৃষ্টিভঙ্গিতে, যত বেশি মানুষের জন্য সুখ সৃষ্টি করা যাবে, ততই তা মঙ্গলজনক। অন্যদিকে, গুণগত দৃষ্টিভঙ্গিতে, সুখের মানকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন, শারীরিক সুখের চেয়ে মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক সুখকে উচ্চতর ও মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে সর্বাধিক সুখের ধারণায় কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। অনেক সময় এই নীতি ব্যক্তির মৌলিক অধিকারকে উপেক্ষা করতে পারে, যখন একটি বৃহত্তর সমাজের মঙ্গলার্থে একজন বা কিছু মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। এছাড়াও, এই নীতি সবসময় দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলের দিকে নজর দেয় না; তাৎক্ষণিক সুখ সৃষ্টি করলেও ভবিষ্যতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সর্বাধিক সুখের তত্ত্বের মাধ্যমে সামাজিক নীতি প্রণয়ন বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজের পরিণতি বিচার করে বৃহত্তর মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা করা হয়। এটি নৈতিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে ব্যক্তির সুখ এবং সমাজের সামগ্রিক মঙ্গলের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়।[4][5]
ইউটিলিটারিয়ানিসমের ফলাফল ভিত্তিক মূল্যায়ন হলো নৈতিকতার এমন একটি তত্ত্ব, যেখানে কোনো কাজের নৈতিকতা বা শুদ্ধতা বিচার করা হয় সেই কাজের পরিণতির ওপর ভিত্তি করে। এটি মূলত ফলিত নৈতিকতার (consequentialism) একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে কাজের ফলাফলই প্রধান বিচার্য বিষয়।[6] এই মূল্যায়নে কাজটি সঠিক না বেঠিক তা নির্ধারণ করা হয় তার দ্বারা কী ধরনের প্রভাব বা পরিণতি সমাজে বা ব্যক্তির ওপর পড়ে, সেটার ওপর ভিত্তি করে। ফলাফল ভিত্তিক মূল্যায়নের মূল প্রতিপাদ্য হলো, যদি কোনো কাজ সমাজের বৃহত্তর সংখ্যক মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে, তাহলে সেই কাজ নৈতিক বলে বিবেচিত হবে। এখানে কাজের প্রাথমিক উদ্দেশ্য বা সেটি করতে গিয়ে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে, তা গৌণ। বরং, কাজটির চূড়ান্ত ফলাফল বা পরিণতিই সবকিছুর মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, কাজের ফলাফল ভালো হলে সেটি সঠিক, আর ফলাফল খারাপ হলে সেটি বেঠিক। ভালো ফলাফল বলতে বোঝানো হয় সুখ, শান্তি, মঙ্গল, এবং সামাজিক উন্নতি, যেখানে খারাপ ফলাফল বলতে বোঝায় দুঃখ, কষ্ট, ক্ষতি, বা সামাজিক ব্যাধি। এই মূল্যায়ন প্রায়শই "সর্বাধিক সুখের নীতি" বা ইউটিলিটারিয়ানিসম-এর সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে কাজের নৈতিকতা নির্ধারিত হয় তার দ্বারা সর্বাধিক মানুষের জন্য সুখ নিশ্চিত হয় কি না, তার ভিত্তিতে। ফলাফল ভিত্তিক মূল্যায়ন একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ এটি প্রতিটি কাজকে ব্যক্তিগত বা সামাজিক প্রভাবের প্রেক্ষিতে বিচার করতে সক্ষম। এটি নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মনোভাব বা আবেগের পরিবর্তে যৌক্তিক ও বাস্তবভিত্তিক ফলাফলকে গুরুত্ব দেয়। তাই, সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ফলাফল ভিত্তিক মূল্যায়নে কোনো কাজের উদ্দেশ্য বা প্রক্রিয়া উপেক্ষিত হতে পারে, ফলে কোনো কাজের নৈতিক শুদ্ধতা শুধু তার চূড়ান্ত ফলাফলের ওপর নির্ভর করে দেখা কিছু সময়ে জটিল হতে পারে। যেমন, একটি ভালো উদ্দেশ্যে নেওয়া সিদ্ধান্ত যদি তাত্ক্ষণিকভাবে কিছু খারাপ প্রভাব ফেলে, তবুও তার দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল ভালো হতে পারে। এছাড়াও, ব্যক্তি বিশেষের মৌলিক অধিকার এবং নৈতিক দায়িত্বের প্রশ্নেও ফলাফল ভিত্তিক মূল্যায়ন সব সময় সঠিকভাবে কাজ করে না। ফলাফল ভিত্তিক মূল্যায়ন আমাদের কাজের পরিণতি ও তার প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে এবং নৈতিকতার বিচার করার ক্ষেত্রে একটি ব্যবহারিক ও যুক্তিসঙ্গত পন্থা হিসেবে কাজ করে।[7][8]
ইউটিলিটারিয়ানিসমের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কাজের ফলে সৃষ্ট সুখ (আনন্দ) ও দুঃখ (কষ্ট) এর পরিমাপ। "আনন্দ বনাম কষ্ট" হলো নৈতিক দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যেখানে জীবনের মূল উদ্দেশ্য এবং মানদণ্ড হিসেবে সুখ (আনন্দ) ও দুঃখ (কষ্ট)কে বিবেচনা করা হয়। এই ধারণাটি প্রধানত ইউটিলিটারিয়ানিসম বা উপযোগবাদ দর্শনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। এই দর্শন অনুসারে, মানুষের প্রতিটি কাজের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত কষ্ট হ্রাস করে সর্বাধিক আনন্দ অর্জন করা।[9] আনন্দ বলতে বোঝায় শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি, সন্তুষ্টি, এবং সুখ। এটি এমন এক অভিজ্ঞতা যা মানুষকে ভালো বোধ করায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা ও আনন্দ নিয়ে আসে। অন্যদিকে, কষ্ট হলো শারীরিক বা মানসিক যন্ত্রণা, যেটি মানুষকে অস্বস্তি, দুঃখ, বা বিপদে ফেলে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আনন্দের পরিমাণ যত বেশি হবে, জীবন তত মঙ্গলময় হবে বলে ধরা হয়, আর কষ্ট যত বেশি হবে, জীবন তত দুঃখময় বা অশান্তিতে ভরা হবে। ইউটিলিটারিয়ানিসম দর্শনে "আনন্দ বনাম কষ্ট" এর ধারণা মূলত একটি সমীকরণের মতো কাজ করে। একটি কাজ বা সিদ্ধান্ত তখনই নৈতিক বা শুদ্ধ বলে বিবেচিত হয় যখন সেই কাজ বা সিদ্ধান্তের ফলে সমাজ বা ব্যক্তির জন্য বেশি পরিমাণে আনন্দ এবং কম পরিমাণে কষ্ট তৈরি হয়। এখানে আনন্দের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং কষ্টের পরিমাণ হ্রাসই সর্বোচ্চ নৈতিকতা হিসেবে বিবেচিত হয়।[10] এটি শুধুমাত্র ব্যক্তির নিজস্ব জীবনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সমাজের বৃহত্তর পরিসরেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ, যদি একটি সিদ্ধান্ত বা কাজ সমাজের অধিকাংশ মানুষের জন্য সুখ বয়ে আনে, তাহলে সেটি নৈতিকতায় উত্তীর্ণ বলে গণ্য হবে। অন্যদিকে, যদি সেটি অধিকাংশ মানুষের জন্য কষ্ট তৈরি করে, তাহলে তা অনৈতিক বা বেঠিক বলে বিবেচিত হবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, আনন্দ ও কষ্টের ভারসাম্য জীবনের প্রতিটি দিকেই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে ব্যক্তি বিশেষের নৈতিক আচরণ—সবকিছুই এই দুই ধারণার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করে। সুখ বা আনন্দকে ইতিবাচক এবং কষ্টকে নেতিবাচক বলে বিবেচনা করা হয়, এবং কোনো কাজ বা সিদ্ধান্তের প্রাথমিক মূল্যায়ন করা হয় তার দ্বারা কতটুকু সুখ বা কষ্ট সৃষ্টি হয়েছে সেটির ওপর ভিত্তি করে। তবে, এই মূল্যায়নে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন, সব ধরনের আনন্দ সমান নয় এবং সব ধরনের কষ্টও সমান নয়। এক ব্যক্তির জন্য যে আনন্দ মানে, তা অন্য ব্যক্তির জন্য হয়তো তেমন আনন্দ বয়ে আনবে না, এবং কষ্টের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এছাড়া, কখনো কখনো অল্প সময়ের কষ্ট দীর্ঘমেয়াদী আনন্দের জন্য প্রয়োজন হতে পারে, যা তাৎক্ষণিকভাবে এই নীতির সঙ্গে বিরোধ তৈরি করতে পারে। "আনন্দ বনাম কষ্ট" নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর ধারণা, যা মানুষকে সঠিক ও নৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।[11]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.