শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

ইহুদি মহল্লা (জেরুসালেম)

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ইহুদি মহল্লা (জেরুসালেম)map
Remove ads

ইহুদি মহল্লা (হিব্রু ভাষায়: הרובע היהודי, হারুভা হাইয়েহুদি; আরবি: حارة اليهود, হারাত আল-ইয়াহুদ) জেরুসালেমের পুরনো শহরের চারটি প্রাচীন মহল্লার অন্যতম। এর আয়তন ১,১৬,০০০ বর্গমিটার।[] এটি পুরনো শহরের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত এবং দক্ষিণে জায়ন ফটক থেকে নিয়ে পশ্চিমে আর্মেনীয় মহল্লা, পূর্বে হারাম আল শরিফপশ্চিম দেয়াল, উত্তরে মুসলিম মহল্লা অবধি বিস্তৃত। ২০শ শতাব্দীর প্রথমদিকে এই মহল্লার ইহুদি জনসংখ্যা ছিল ১৯,০০০।[]

Thumb
ইহুদি মহল্লার গলি

এই মহল্লায় প্রায় ২,০০০ বাসিন্দা বসবাস করে এবং এখানে কয়েকটি ইয়েশিভা ও সিনাগগ অবস্থিত। এর মধ্যে হুরভা সিনাগগ সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য।

Remove ads

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

রোমান যুগের শেষভাগ

Thumb
রোমান কার্ডোর মুরাল, ইহুদি মহল্লা
Thumb
২০শ শতাব্দীর প্রথম দিকে ইহুদি মহল্লা: সম্মুখে হুরভা সিনাগগতিফেরেস ইসরায়েল সিনাগগের বৃহৎ গম্বুজ। ১৯৪৮ সালে এগুলি ধ্বংস হয়ে যায়।

১৩৫ সালে রোমান সম্রাট হাড্রিয়ান প্রাচীন জেরুসালেমের ধ্বংসাবশেষের উপর আয়লিয়া কেপিটোলিনা শহর গড়ে তোলেন। বর্তমান ইহুদি মহল্লার স্থানে সেই সময়ে দশম লিজিওন শিবির স্থাপন করেছিল।[] রোমান গোসলখানা এবং অন্যান্য অবকাঠামো এসময় এখানে গড়ে তোলা হয়।[]

উসমানীয় যুগ

ইহুদি মহল্লা প্রথমে পুরনো শহরের দক্ষিণ পশ্চিম অংশে মাগরেবি ফটক ও কোপোনিয়াস ফটকের কাছে অবস্থিত ছিল।[] অধিকাংশ বাড়িঘর ছিল মুসলিম ওয়াকফের মালিকানাধীন এবং তা ইহুদিদেরকে ভাড়া দেয়া হত।[]

এই মহল্লা শুধু ইহুদিরা ছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায় বসবাস করত। উসমানীয় যুগে এখানকার অধিকাংশ বাড়ি মুসলিম সম্পত্তি মালিকদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হত। এর ফলে উসমানীয় সাম্রাজ্যের শেষদিকে শহর পশ্চিম দিকে বৃদ্ধি পায় কারণ শহরের দেয়ালের বাইরের জমি ছিল নিষ্কর এবং তা অধিগ্রহণ করা সহজ ছিল।[]

এসময় মুসলিম মহল্লায় ইহুদি বসতি এবং ইহুদি মহল্লায় মুসলিম বসতি দেখা যেত। ১৯শ শতাব্দীর শেষ দিকে ইহুদি মহল্লায় জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে অনেক ইহুদি মুসলিম মহল্লায় চলে আসে।[]

১৮৫৭ সালে ডাচ ও জার্মান ইহুদিদের সংগঠন কোলেল হোড এক খন্ড জমি কেনে। ১৮৬০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে এখানে বাতেই মাহসে নামক আবাসন কমপ্লেক্স গড়ে উঠে।[][১০] নির্মিত স্থাপনাসমূহের মধ্যে ১৮৭১ সালে নির্মিত দুইতলা বিশিষ্ট রথচাইল্ড হাউস সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ব্যারন উইলহেম কার্ল ফন রথচাইল্ডের অনুদানে বাতেই মাহসে চত্বরের পশ্চিম পাশে এটি নির্মিত হয়।[১১][১২]

জর্ডানি যুগ

Thumb
রথচাইল্ড হাউস (১৮৭১), বাতেই মাহসে কমপ্লেক্সের অংশ (১৮৬০-৯০)

১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় এখানকার ইহুদিরা অবরুদ্ধ হয় এবং এলাকা ত্যাগ করে। ১৯৪৮ সালের ২৮ মে লড়াইরত ইহুদিরা আত্মসমর্পণ করে। আরব লিজিওনের স্থানীয় কমান্ডার কর্নেল আবদুল্লাহ এল তেলের সাথে মোরডেচাই ওইনগার্টেন আত্মসমর্পণের শর্ত আলোচনা করেছিলেন।

Thumb
আরব লিজিওনের কাছে আত্মসমর্পণের জন্য ওইনগার্টেনের আলোচনা

বলা হয় যে জর্ডানি কমান্ডার তার ঊর্ধ্বতনদের বলেছিলেন: "১,০০০ বছরের মধ্যে এই প্রথম ইহুদি মহল্লায় একজনও ইহুদি ছিল না। একটি ভবনও অক্ষত ছিল না। এর ফলে ইহুদিদের ফেরা অসম্ভব হয় পড়ে।"[১৩][১৪] হুরভা সিনাগগ আরব লিজিওনের হাতে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯ বছরের জর্ডানি শাসনে ইহুদি মহল্লার এক তৃতীয়াংশ ভবন ধ্বংস করা হয়।[১৫]

১৯৪৮ সালের যুদ্ধের সময় রেডক্রস ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদেরকে জনশূণ্য ইহুদি মহল্লায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে।[১৬] এ থেকে ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত মুয়াসকা উদ্বাস্তু শিবির গড়ে উঠে।[১৭] সময় পরিক্রমায় অনেক দরিদ্র কিন্তু উদ্বাস্তু নয় এমন লোকেরা শিবিরে বসবাস শুরু করে।[১৭] পরিচ্ছন্নতার অভাবের কারণে এই এলাকাটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।[১৭] মহল্লাটিকে পার্কে পরিণত করার জন্য জর্ডান পরিকল্পনা করেছিল।[১৮] কিন্তু পুরনো ইহুদি বাড়িঘরসমূহ ভেঙে দেয়ার ফলে সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে ইউএনআরডব্লিউএ এবং জর্ডান সরকারের কেউই ইচ্ছুক ছিল না।[১৭] ১৯৬৪ সালে শুয়াফাতের নিকটে নির্মিত নতুন উদ্বাস্তু শিবিরে উদ্বাস্তুদের সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।[১৭] তবে উদ্বাস্তুদের অধিকাংশ স্থান ত্যাগে অস্বীকৃতি জানালেও ১৯৬৫ ও ১৯৬৬ সালে অনেক উদ্বাস্তুকে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়।[১৬][১৭]

ইসরায়েলি যুগ

Thumb
পশ্চিম দেয়াল

১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের সময় ইসরায়েল এই মহল্লাটি দখল করে নেয়। শহর দখলের পর প্রথম সপ্তাহে পশ্চিম দেয়ালে জনসমাগমের স্থান প্রদানের জন্য মাগরেবি মহল্লার ২৫টি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়।[১৯]

ইহুদি মহল্লার পুনর্নির্মাণের উদ্দেশ্যে ১৯৬৯ নির্মাণ ও আবাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি নির্মাণ কোম্পানি গঠন করা হয়।[২০]

হাওলিয়াত আল-কুদস পত্রিকায় থমাস আবোড রচিত একটি নিবন্ধ অনুযায়ী মহল্লার আরব বাসিন্দার সংখ্যা ১,০০০ এ পৌছায় যার অধিকাংশ ছিল উদ্বাস্তু।[২১] তারা ১৯৪৯ সালে পরিত্যক্ত ইহুদি বাড়িগুলিতে আশ্রয় নেয়। এদের অধিকাংশ ১৯৬৭ সালে পালিয়ে গেলেও লিভাই এশকল আরব বাসিন্দাদেরকে বহিষ্কার না করার নির্দেশ দেয়ার পর তারা ফিরে আসে। মেনাখেম বেগিন ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি ২৫টি আরব পরিবারকে বসবাসের অনুমতি দেন। পাশাপাশি যেসব পরিবার ছয় দিনের যুদ্ধের সময় পালিয়ে যায়নি তাদেরকে বসতি ত্যাগের বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে।[] পুরনো শহরের ঘনবসতিপূর্ণ নগর কাঠামো ঠিক রেখে মহল্লা পুনর্নির্মাণ করা হয়। ইসরায়েলি ভূমি প্রশাসনের কাছ থেকে বাসিন্দারা দীর্ঘমেয়াদী লিজ প্রাপ্ত হয়েছিল।[২০] ২০০৪ সালে মহল্লার জনসংখ্যা ছিল ২,৩৪৮।[২২]

১৯৬৭ সালের পরের বছরগুলিতে প্রায় ৬,০০০ আরব এখান থেকে নির্বাসিত হয়। ইহুদি না হওয়ার কারণে তারা ফেরত আসতে পারেনি। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে এটি আইনি ভিত্তি পায়। এসময় ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট মুহাম্মদ বুরকানের মামলায় রায় দেয় যে বুরকান তার বাড়ির মালিক হলেও এই এলাকাটি ইহুদি জাতির জন্য বিশেষ ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ হওয়ার কারণে তিনি ফিরতে পারবেন না।[২৩]

Remove ads

প্রত্নতত্ত্ব

বর্তমান ইহুদি মহল্লাটি প্রত্যাবর্তনকারী ইহুদিরা পুনর্নির্মাণ করেছে।[২৪] পুনর্নির্মাণের পূর্বে হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক নাহমান আভিগাদের তত্ত্বাবধানে এখানে খননকার্য চালানো হয়। প্রাপ্ত অবশেষসমুহ বিভিন্ন জাদুঘরে রক্ষিত রয়েছে। খননকার্যের সময় হেরোডিয়ান যুগের সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর বিলাসবহুল বাড়িঘরের অবশেষ পাওয়া যায়। এছাড়া বাইজেন্টাইন নিয়া গির্জা, কার্ডো মেক্সিমাস, চার্চ অব দ্য হলি সেপালকার ও নিয়া গির্জা সংযোগকারী ৫ম শতাব্দীর ৭০-ফুট (২১-মিটার) প্রশস্ত রাস্তা ইত্যাদি খুজে পাওয়া যায়।[২৫]

২০১০ সালে ইসরায়েলি প্রত্নতাত্ত্বিকরা রোমান দশম লিজিওন কর্তৃক নির্মিত একটি জলাধারের সন্ধান পান। এই খননের সময় মোজাইকের মেঝে এবং ছাদের জন্য ব্যবহৃত পোড়ামাটির টাইলস পাওয়া যায়। এটি আরো বড় কোনো স্থাপনার অংশ এবং সৈনিকদের জন্য ব্যবহৃত গোসলখানা হতে পারে।[২৬] ২০১০ সালে এখানে ৯১০ সালের একটি আরবি শিলালিপি পাওয়া যায় যাতে আব্বাসীয় খলিফা কর্তৃক জেরুসালেমে জায়গীর প্রদানের তথ্য রয়েছে।[২৭]

Remove ads

গুরুত্বপূর্ণ স্থান

Thumb
ইহুদি মহল্লার মানচিত্র, ২০১০
Thumb
ইহুদি মহল্লায় হুরভা সিনাগগ।

প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান

  • বড় দেয়াল, খ্রিষ্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীর নগরপ্রাচীর
  • অগ্নিবিধ্বস্ত ঘর
  • কার্ডো - প্রাচীন রোমান পথ
  • হেরোডিয়ান মহল্লা
  • ইসরায়েলি টাওয়ার
  • নিয়া গির্জা
  • দক্ষিণ দেয়াল

বাজার

  • কার্ডো বাজার
  • হুরভা চত্ত্বর

মসজিদ

  • সিদনা উমর মসজিদ

সিনাগগ

  • আরি সিনাগগ
  • বাইত আল সিনাগগ
  • হুরভা সিনাগগ - ইহুদি মহল্লার সবচেয়ে বড় সিনাগগ
  • রামবান সিনাগগ - ইহুদি মহল্লার সবচেয়ে পুরনো রাব্বানিক সিনাগগ
  • পশ্চিম দেয়াল - হারাম আল শরিফ এলাকায় সবচেয়ে পবিত্র ইহুদি স্থান

ইয়েশিভা

  • আইশ হাতোরাহ
  • পোরাত ইউসেফ ইয়েশিভা
  • ইয়েশিভাত হাকোতেল
  • ইয়েশিভাগ নেতিভ আরইয়হ

অন্যান্য

  • দ্য টেম্পল ইনস্টিটিউট

তথ্যসূত্র

Loading content...
Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads