ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গ
ভারতের প্রথম অন্তর্জলি মেট্রো সুড়ঙ্গ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গ[২][৩] ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা মেট্রোর এক অন্তর্জলি সুড়ঙ্গ (যে সুড়ঙ্গ কোনো জলরাশির নিচ দিয়ে যায়)। এটি হুগলি নদীর নিচ দিয়ে এই সুড়ঙ্গ নির্মিত হয়েছে। এটি ভারতের বৃহত্তম অন্তর্জলি সুড়ঙ্গ এবং দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে।[১] ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত সিইএসসি সুড়ঙ্গের পর এটি হচ্ছে হুগলি নদীর নিচ দিয়ে যাওয়া দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ।[৪] এর দৈর্ঘ্য ১০.৮ কিলোমিটার (৬.৭ মাইল) ও প্রস্থ ৫.৫ মিটার (১৮ ফুট ১ ইঞ্চি) এবং এর ৫২০ মিটার (১,৭০৬ ফুট ০ ইঞ্চি) অংশ হুগলি নদীর নিচ দিয়ে গমন করে। এই সুড়ঙ্গের ছাদ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০ মিটার (৯৮ ফুট ৫ ইঞ্চি) নিচে অবস্থিত। ২০২১ সালে সম্পন্ন হওয়া এই মেট্রো সুড়ঙ্গ[৫] ৬ মার্চ ২০২৪-এ উদ্বোধন করা হয়েছিল।[১] এই সুড়ঙ্গটি কলকাতা মেট্রো লাইন ২-এর অংশ, যার মালিক কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন।[৬]
সংক্ষিপ্ত বিবরণ | |
---|---|
অন্যান্য নাম | হুগলি নদী সুড়ঙ্গ |
রেলপথ | কলকাতা মেট্রো লাইন ২ |
অবস্থান | কলকাতা মহানগর অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
ব্যবস্থা | কলকাতা মেট্রো |
অতিক্রম করে | হুগলি নদী |
শুরু | ফুলবাগান মেট্রো স্টেশন, কলকাতা |
শেষ | হাওড়া ময়দান মেট্রো স্টেশন, হাওড়া |
স্টেশন সংখ্যা | ৬টি |
ক্রিয়াকলাপ | |
চালু হয় |
|
মালিক | কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন |
পরিচালক | মেট্রো রেলওয়ে, কলকাতা |
যানবাহন | কলকাতা মেট্রো রোলিং স্টক |
কারিগরি বৈশিষ্ট্য | |
রেলপথের দৈর্ঘ্য | ১১ কিলোমিটার (৬.৮ মাইল) ০.৫২০ কিলোমিটার (০.৩২৩ মাইল) (অন্তর্জলি) |
ট্র্যাক গেজ | আদর্শ গেজ |
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ


ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের অংশ হিসাবে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে মেট্রো প্রকল্পের শিলান্যাস ও ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ শুরু হলেও নানা বাধার ফলে সুড়ঙ্গ নির্মাণ শুরু হয় ২০১২ খ্রিস্টাব্দে সুভাষ সরোবরের কাছে।[৭] এটি ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো টানেল বা সুড়ঙ্গের পূর্ব প্রান্ত। কিন্তু পশ্চিম প্রান্ত অর্থাৎ হাওড়ায় সুড়ঙ্গ নির্মাণ পুরোদমে শুরু হয় আরো চার বছর পর ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। অংশে লাইন পাতা ও সংকেত ব্যবস্থা নির্মাণের কাজ চলছে। হাওড়ার অংশে হাওড়া ময়দান থেকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের শেষে এই সুড়ঙ্গের মুখ হুগলির নিচে যায়।[৮][৯] অবশেষে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে নদীর নীচে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়।
হুগলির তলা থেকে মাটি কেটে ট্রলিতে করে সেই মাটি অস্থায়ী লাইন দিয়ে একটাই মূল গর্তের মুখ হাওড়া ময়দান দিয়ে বের করা হয়েছে। আর এই পুরো কর্মকাণ্ডতেই ট্রান্সটেলেস্ট্রয়-অ্যাফকন জয়েন্ট ভেঞ্চারের বাহাদুর ইঞ্জিনিয়ারগণ এবং তাদের সুযোগ্য কর্মীগোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের মেশিনারি ব্যবহার করেছেন। হাওড়া ময়দানের মেট্রো ওয়ার্কশপে দিন-রাত এক করে, মানুষজন, গাড়িঘোড়া যাতায়াত যথারীতি বজায় রেখেই ভূতলের যাবতীয় তোলা মাটি পেলোডার দিয়ে লরি বোঝাই করে শহরের আশেপাশে পাচার করা হয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষে ব্র্যাবোর্ন রোডে যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল পর পর তিনদিন। কেননা, তখন ব্র্যাবোর্ন রোডের নিচে ভূগর্ভে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলছিল। এছাড়াও মাঝে মধ্যে হাওড়া ময়দানে রাস্তা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল নিবিড় কাজের প্রয়োজনে।
হুগলির তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ নির্মাণ শেষ হয় ২০২১ খ্রিস্টাব্দে। হুগলির নিচে যে দুটি সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে, তার একটির নাম "রচনা", অন্যটির নাম "প্রেরণা"। দুটি সুড়ঙ্গের মধ্যে রচনার কাজ আগে শেষ হয়েছে। এক-একটি সুড়ঙ্গ ৫২০ মিটার দীর্ঘ। হুগলির তলদেশের ৩০ মিটার নিচে সুড়ঙ্গ কাটার সময়ে বহু জিনিস উদ্ধার করেছেন কেএমআরসি-এর ইঞ্জিনিয়ার বা প্রকৌশলীগণ। সেগুলির মধ্যে রয়েছে কামানের গোলা, ডুবে যাওয়া জাহাজের খোলের অংশ প্রভৃতি।[১০]
বৈশিষ্ট্য
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ১১ কিলোমিটার (৬.৮ মাইল)
- পরিধি: বাইরের পরিধি ৬.১০ মিটার এবং ভিতরের পরিধি ৫.৫৫ মিটার।
- স্টেশন: ৬টি।
হুগলির নিচের সুড়ঙ্গ
- হুগলির নিচে ৫২০ মিটার (১,৭১০ ফুট) দীর্ঘ সুড়ঙ্গ।
- হুগলির গভীরতা ১৩ মিটার মতো। তারও ৩০ মিটার নিচে রয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ।
- হুগলির নিচে থাকা সুড়ঙ্গের বাইরের পরিধি ৬.১০ মিটার এবং ভিতরের পরিধি ৫.৫৫ মিটার।
- যখন কাজ শুরু হয়, স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যম এই মাইলফলকটিকে ভারতের প্রথম "জলের নীচে" এবং "নদীর নীচে" মেট্রো লাইন হিসাবে ঘোষণা করেছিল, কিন্তু এটি সত্য থেকে অনেক দূরে। যদিও হুগলির প্রস্থ চিত্তাকর্ষক এবং এর নীচে সুড়ঙ্গ তৈরি করা কোনও রসিকতা নয়, সত্যটি হল যে ভারতের চারপাশে অন্যান্য লাইন রয়েছে যা উপরের শিরোনামগুলি দাবি করতে পারে কলকাতার বিদ্যমান লাইন -1 প্যাকে নেতৃত্ব দিচ্ছে:
° কলকাতার লাইন-১: শ্যামবাজার এবং বেলগাছিয়া স্টেশনের মধ্যে সার্কুলার খালের নীচ দিয়ে যায় (৯০ এর দশকের আগে নির্মিত)।
° দিল্লির লাইন-২ (হলুদ): উত্তর দিল্লির নাজফগড় ড্রেন (২০০৭ সালে নির্মিত) এবং দক্ষিণ দিল্লিতে কুশাক ড্রেন (২০০৯ সালে নির্মিত)।
° চেন্নাইয়ের লাইন-1 (নীল): গভর্নমেন্ট এস্টেট এবং সেন্ট্রাল স্টেশনগুলির মধ্যে মধ্য চেন্নাইয়ের কুম নদীর নীচ দিয়ে যায় (2015 সালে নির্মিত)।[১]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.