ইস্কো ইস্পাত কারখানা হল পশ্চিম বর্ধমান জেলায় অবস্থিত একটি বৃহৎ ইস্পাত কারখানা। এই কারখানাটি সেল এর অধীনস্থ।কারখানাটি আসানসোল-এর উপকন্ঠে বার্ণপুর শহরে গড়ে উঠেছে।এর আর একটি কেন্দ্র কুলটিতে অবস্থিত।যা কুলটি ইস্পাত কারখানা নামে পরিচিত।
ধরন | পাবলিক সেক্টর উদ্যোগ, স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া |
---|---|
শিল্প | লোহা এবং ইস্পাত |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯১৮ |
সদরদপ্তর | বার্ণপুর, আসানসোল |
প্রধান ব্যক্তি | অনির্বাণ দাস গুপ্ত(সিএও) |
পণ্যসমূহ | ওয়্যার ও কয়েল, টিএমটি রডস, জেড সেকশন, আই সেকশন, এঙ্গেলস, চ্যানেল, পিগ আয়রন ইত্যাদি। |
কর্মীসংখ্যা | ৬,৬২২ জন (০১-০৯-২০১৮) |
বিবরণ
বার্নপুরে স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার ইস্কো ইস্পাত কারখানায় বছরে ২৫ লক্ষ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে।[1]
১৯১৮ সালে কারখানাটি নির্মাণ করে মার্টিন বার্ন গ্রুপ ইন্ডিয়ান আয়রন এবং ইস্পাত কোম্পানি নামে। এরপর ২০০৬ সালে সেল এই কারখানাটি অধিগ্রহণ করে।[1]
ইতিহাস
১৮ ও ১৯ শতকে ভারতে লোহা ও ইস্পাত উৎপাদনের জন্য প্রচেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। ১৮৭০ সালে প্রায় ৮৭২ একর জমির উপরে এক ব্রিটিশ শিল্পপতি কুলটিতে এই ইস্পাত কারখানার গোড়াপত্তন করেন। তখন সেটির নাম ছিল বেঙ্গল আয়রন কোম্পানি। স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (সেল) বিকাশ বিভাগ প্রকাশিত এই কারখানার ইতিহাস থেকে জানা যায়, দেশে এই কারখানাতেই প্রথম লোহা গলানোর চুল্লি বা ব্লাস্ট ফার্নেস তৈরি করা হয়। ১৮৭৫ সালে সেই চুল্লি কাজ শুরু করে। তার পরের বছর এই কারখানার মালিকানা যায় মার্টিন বার্নের হাতে। তখন নামকরণ হয় বরাকর আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেড। এর পরে সংস্থাটির চেয়ারম্যান হন বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে তিনি এই কারখানার মালিকানা পান।[2]
১৯১৮ সালে বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও মার্টিন বার্নের যৌথ উদ্যোগে বার্নপুরে আরও একটি ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে। সেটির নাম রাখা হয় ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেড (ইস্কো)। ১৯৫২ সালে কুলটি থেকে লোহা গলানোর চুল্লি বা ব্লাস্ট ফার্নেসটি বার্নপুরের ইস্কো কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এবং সেই বছরই কুলটির কারখানা বার্নপুর ইস্কোর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, ভারতবর্ষে প্রথম কুলটির ইস্কোতেই তৈরি হয়েছিল লোহার স্প্যান পাইপ। ১৯৪৫ সাল থেকে এখানে লোহার পাইপের উৎপাদন শুরু হয়। টানা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পাইপ তৈরি হয়েছে এখানে।[2]
১৯৭২ সালে সরকারের হাতে যায় ইস্কো কারখানা। বর্তমানে সেটি কেন্দ্রীয় ইস্পাত সংস্থা সেলের বিকাশ দফতরের অধীনে রয়েছে। কারখানাটি পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে রুগ্ণ হতে শুরু করে। তাই সেটি বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নেয় ইস্পাত মন্ত্রক। জাতীয়করণের পরে আরও অন্তত ২০ বছর এই কারখানার রমরমা দেখেছেন শিল্পাঞ্চলবাসী। অনেক ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলা সেই কারখানাও কালের নিয়মে পুরনো হয়ে গিয়েছে। আধুনিকতার অভাবে যন্ত্রপাতিগুলি কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে, এক সময়ে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে সংস্থাটি। কর্তৃপক্ষের তরফে শ্রমিক-কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। ২০০৩ সালে কারখানার প্রায় তিন হাজার শ্রমিক-কর্মী স্বেচ্ছাবসর নেন। অবশেষে সেই বছরের ৩১ মার্চ কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৭ সালে ইস্পাত মন্ত্রক ফের কারখানাটি খোলার ব্যবস্থা করে। কিন্তু, লোক নিয়োগ করা হয়নি। ঠিকা প্রথায় সামান্য উৎপাদন শুরু হয়েছে।[2]
আধুনিকীকরণ এবং সম্প্রসারণ
ইস্কো ইস্পাত কারখানার আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ কর্মসূচিতে ১৬ হাজার ৮০ কোটি টাকায় ব্যয়ে সম্পন্ন হয়েছিল।[3] ২০১৫ সালের মধ্যে এটি পশ্চিমবঙ্গে একক বৃহত্তম বিনিয়োগ ছিল।[4]
২৪ ডিসেম্বর, ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বার্নপুরে ইস্কো ইস্পাত কারখানার সবুজ মাঠ আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের ভিত্তি স্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কেন্দ্রের রাসায়নিক ও সার এবং ইস্পাত মন্ত্রী রাম ভিলাস পাসওয়ান এবং তথ্য ও সম্প্রচারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি।[5]
সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের পর ১০ মে ২০১৫ সালে ইস্কোর বার্নপুরে ইস্পাত কারখানাটি প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, খনি ও ইস্পাতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর, নগর উন্নয়ন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী বিষ্ণুয়েদ সাঈ এবং আসানসোলের সংসদ সদস্য বাবুল সুপ্রিয়।[3][6][7]
সুযোগ-সুবিধা
ইস্কো ইস্পাত কারখানার বনপুরের কেন্দ্রে অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে। প্রধান ইউনিটের বর্ণনা নিচের করা হল:
কোক ওভেন: কোক ওভেন ব্যাটারি নং ১০- এর ৪.৫ মিটার উচ্চতার ৭৮ টি ওভেন এবং সিওবি নং ১১-এর ৭৪ টি ওভেন রয়েছে, যা ৭ মিটার উচ্চতা যুক্ত। এতে নিষ্ক্রিয় গ্যাস ব্যবহার করে শুষ্ক শীতলকরণের কেন্দ্র রয়েছে।[8]
কাঁচামাল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বছরে ৭.৫৬ মিলিয়ন টন কাঁচামাল নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিকল্পিত।[9]
সিন্টার প্ল্যান্ট: ২০৪ বর্গ মিটারের[8] গ্রিট এলাকা সহ দুটি সিন্টার মেশিন রয়েছে।
ব্লাস্ট ফার্নেস: ৪,১৬০ ঘন মিটারের ব্লাস্ট ফার্নেস কল্যাণী দেশের মধ্যে বৃহত্তম। এটি উচ্চ বিস্ফোরণ তাপমাত্রা, অক্সিজেন সমৃদ্ধি, উচ্চ শীর্ষ চাপ এবং বিচূর্ণ কয়লা ইনজেকশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে।[8] এটি ৩০ নভেম্বর ২০১৪ সালে চালু হলে দেশের সর্ববৃহৎ পরিচালনাগত বিস্ফোরণ চুল্লীতে পরিণত হয়। এর আগে সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ চুল্লি সেল-এর রৌরকেলা ইস্পাত কারখানায় ছিল, যার বিস্ফোরণ চুল্লীটি ছিল ৪,০৬০ ঘন মিটার।[10]
সাধারণ অক্সিজেন ফার্নেস: বছরে প্রায় ২.৫৫ মিলিয়ন টন তরল ইস্পাত উৎপাদনের জন্য তিনটি ১৫০ টন ক্ষমতা বিওফ রয়েছে। এটি মিলিত বাতাস সঞ্চালন এবং কম্পিউটারাইজড পরিচালনার বৈশিষ্ট্য সঙ্গে সজ্জিত।[8]
অক্সিজেন কেন্দ্র - প্রতিদিন ২x৫০ টন।[9]
ক্রমাগত কাস্টারস: দুটি ৬-স্ট্র্যান্ড বিললেট কাস্টার এবং একটি ৪-স্ট্রন্ড ব্লুম-সহ-বিম ব্লক কাস্টার।[8]
রোলিং মিলস: একটি বার মিল এবং একটি তারের রড মিল ০.৭৫ মিলিয়ন টন উচ্চ মানের বার এবং ০.৫ মিলিয়ন টন তারের রড উৎপাদন করে। বছরে ০.৬ মিলিয়ন টন সার্বজনীন বিভাগের পণ্য উৎপাদন করতে এখানে একটি সার্বজনীন বিভাগ মিল রয়েছে।[8]
উৎপাদন
২০১৭-১৮ সালে আইএসপি-তে অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদিত হয়েছিল ১.৮০ মিলিয়ন টন এবং বিক্রয়যোগ্য ইস্পাতের উৎপাদন ছিল ১.৬৯ মিলিয়ন টন।[11]
২০১৬-১৭ সালে আইএসপি-তে কাঁচা ইস্পাতের উৎপাদন ছিল ১.৪ মিলিয়ন টন এবং বিক্রিযোগ্য ইস্পাতের উৎপাদন ছিল ১.৩ মিলিয়ন টন।[12]
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.