উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইন্টারনেট প্রটোকল ঠিকানা (আইপি ঠিকানা) হলো একটি সংখ্যাগত লেবেল যা কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্কে যুক্ত প্রতিটি কৌশল বা যন্ত্রের জন্য নির্ধারিত যেখানে নেটওয়ার্কের নোড গুলো যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেট প্রটোকল ব্যবহার করে।[১] ইন্টারনেট প্রটোকল অ্যাড্রেসের প্রধান কাজ মূলত দুটি হোস্ট অথবা নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস শনাক্ত করা এবং অবস্থান খুঁজে বের করা।
টিসিপি/আইপি পরিকল্পনাকারীরা ইন্টারনেট প্রটোকল ঠিকানাকে ৩২ বিটের[১] নম্বর দিয়ে প্রকাশ করেছিলেন এবং এই পদ্ধতিটি আইপিভি৪ নামে পরিচিত যা এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ইন্টারনেটের ব্যবহার অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় এবং অব্যবহৃত অ্যাড্রেস দিন দিন কমতে থাকায় ১৯৯৫ সালে[২] নতুন একটি অ্যাড্রেসিং পদ্ধতি আইপিভি৬ চালু করা হয় যেখানে প্রতিটি অ্যাড্রেসকে প্রকাশ করার জন্য ১২৮ বিট নম্বর ব্যবহৃত হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে আরফসি ২৪৬০ এ তা মানোপযোগী করা হয়।[৩] ইন্টারনেট প্রটোকল অ্যাড্রেস গুলোকে স্টোর করার জন্য বাইনারী সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও এটি প্রকাশ করার জন্য সাধারণত মানুষের পঠনযোগ্য সঙ্কেতে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, 180.210.130.13 (আইপিভি৪) এবং 2001:db8:0:1234:0:567:1:1 (আইপিভি৬)।
বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট প্রটোকল অ্যাড্রেস স্পেস বরাদ্দের কাজটি পরিচালনা করে থাকে আইক্যান এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালনা করার জন্য তারা ৫টি আঞ্চলিক ইন্টারনেট রেজিষ্টি (RIRs) নিয়োগ করেছে যারা স্থানীয় ইন্টারনেট রেজিষ্ট্রি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে আইপি অ্যাড্রেস ব্লক বরাদ্দ করে থাকে।
ইন্টারনেট প্রটোকলের দুটি সংস্করণ ব্যবহৃত হয়। সেগুলো হলো আইপি সংস্করণ ৪ এবং আইপি সংস্করণ ৬। সংস্করণ দুটি পৃথক পৃথক ভাবে আইপি অ্যাড্রেস প্রকাশ করে। তবে আইপি সংস্করণ ৪ ব্যাপক প্রচলনের কারণে সাধারণত আইপি অ্যাড্রেস বলতে সংস্করণ ৪ এর প্রকাশকে ধরে নেয়া হয়।
আইপি সংস্করণ ৪ এ যে কোন একটি অ্যাড্রেসকে ৩২বিট দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কাজেই আইপিভি৪ এ অনন্য অ্যাড্রেস সংখ্যা হতে পারে ৪২৯৪৪৯৬২৯৬ (২৩২)। আইপিভি৪ এ কিছু অ্যাড্রেসকে বিশেষ প্রয়োজনে আলাদা করে রাখা হয়েছে। যেমন: প্রাইভেট নেটওয়ার্ক(~ ১৮ মিলিয়ন অ্যাড্রেস) অথবা মাল্টিকাস্ট অ্যাড্রেস (~২৭০ মিলিয়ন)।
আইপিভি৪ অ্যাড্রেসগুলোকে সাধারণত ডট-ডেসিমেল এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় যা ৪টি ডেসিমেল নম্বর দিয়ে গঠিত যেখানে প্রতিটি নম্বরের সীমা হলো ০-২৫৫ এবং নম্বরগুলিকে ডট দিয়ে পৃথক করা হয়, যেমন: ১৭২.১৬.১০.৪০। অ্যাড্রেসের প্রতিটি নম্বর/অংশ ৮বিটের একটি গ্রুপকে প্রকাশ করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে আইপিভি৪ অ্যাড্রেসগুলোকে ডট-ডেসিমেল এর পরিবর্তে হেক্সাডেসিমেল, অক্টাল অথবা বাইনারী নম্বর দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
ইন্টারনেট প্রটোকল চালুর প্রথম দিকে নেটওয়ার্ক প্রশাসকরা আইপি ঠিকানাকে দুটি অংশে ভাগ করেন। একটি হলো নেটওয়ার্ক নম্বর এবং অপরটি হলো হোস্ট নম্বর। নেটওয়ার্ক নম্বর হলো আইপি ঠিকানার প্রথম ৮ বিট বা প্রথম অক্টেট এবং বাকী ২৪টি বিট বা ৩টি অক্টেট নিয়ে হল হোস্ট নম্বর। নেটওয়ার্ক নম্বর ইন্টারনেট প্রটোকলে সুনির্দিষ্ট নেটওয়ার্কটি খুঁজে বের করে এবং হোস্ট নম্বর দিয়ে ওই নেটওয়ার্কের যন্ত্র বা কম্পিউটারটিকে চিহ্নিত করা হয়। এই ব্যাপারটিকে বাসা বা বাড়ির ঠিকানা সাথে তুলনা করা যেতে পারে। কোনো একটি ভবন অনুসন্ধান করার জন্য প্রথমে এলাকাটি খুঁজে বের করতে (নেটওয়ার্ক নম্বর) হয় এবং পরবর্তিতে বাড়ির নম্বর (হোস্ট নম্বর) দিয়ে ভবনটিকে শনাক্ত করা হয়। কিন্তু নেটওয়ার্কের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করার এই পদ্ধতি সমস্যার সম্মুখীন হয় কারণ এক অক্টেট দিয়ে বিপুল সংখ্যাক নেটওয়ার্ক এর জন্য স্বতন্ত্র নেটওয়ার্ক নম্বর প্রদান করা সম্ভবপর ছিল না। এ কারণে ১৯৮১ সালে ইন্টারনেট অ্যাড্রেসিং স্পেসিফিকেশন সংশোধন করে ক্লাশফুল নেটওয়ার্ক পদ্বতি প্রবর্তন করা হয়।[৪]
ক্লাশফুল নেটওয়ার্ক পদ্ধতি নেটওয়ার্ক নম্বরের অসুবিধাটি দুর করার পাশাপাশি সাব নেটওয়ার্ক ডিজাইন ও সহজ করে দেয়। এই পদ্ধতিতে আইপি ঠিকানার প্রথম ৮ বিট বা ১ অক্টেটের প্রথম তিন বিটকে আইপি ঠিকানার ক্লাশ (class) বলা হয়। সর্বজনীন ইউনিকাস্ট অ্যাড্রেসিং এর জন্য তিনটি ক্লাশ A,B এবং C তৈরি করা হয়। ক্লাশের উপর নির্ভর করত কতগুলো স্বতন্ত্র নেটওয়ার্ক নম্বর প্রদান করা যাবে। নেটওয়ার্ক নম্বরের সংখ্যা যত বেশি হোস্ট নম্বরের সংখ্যা তত কম। নিচের টেবিলে ক্লাশফুল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে একটু ধারণা দেয়া হলো।
ক্লাশ | ক্লাশ নির্ধারণী প্রথম বিট সমূহ | প্রথম অক্টেটের সীমা | নেটওয়ার্ক নম্বর ফরমেট | হোস্ট নম্বর ফরমেট | নেটওয়ার্কের সংখ্যা | প্রতি নেটওয়ার্কে হোস্টের সংখ্যা |
---|---|---|---|---|---|---|
A | ০ | ০ - ১২৭ | a | b.c.d | ২৭ = ১২৮ | ২২৪ = ১৬৭৭৭২১৬-২ {কারণ ০ আর ১২৭ অ্যাড্রেসিং করার জন্য ব্যবহার করা যায় না} ১৬৭৭৭২১৪ |
B | ১০ | ১২৮ - ১৯১ | a.b | c.d | ২১৪ = ১৬৩৮৪ | ২১৬ = ৬৫৫৩৬ |
C | ১১০ | ১৯২ - ২২৩ | a.b.c | d | ২২১ = ২০৯৭১৫২ | ২৮ = ২৫৬ |
ক্লাশফুল নেটওয়ার্ক পদ্ধতি প্রাথমিক অবস্থায় ইন্টারনেটের নেটওয়ার্ক নম্বরের প্রয়োজন মেটাতে সফল হলেও ১৯৯০ সনে নেটওয়ার্কের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় এই পদ্বতি সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ কারণে ১৯৯৩ সনে ইন্টারনেট প্রটোকল অ্যাড্রেস স্পেস এর জন্য ক্লাশফুল নেটওয়ার্ক এর পরিবর্তে ক্লাশলেস ইন্টার ডোমেইন রাউটিং চালু করা হয়। এই পদ্ধতিতে অ্যাড্রেস স্পেস বরাদ্দের জন্য পরিবর্তশীল দৈর্ঘ্যের (variable-length) সাবনেট মাস্ক এবং রাউটিং এর জন্য বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের উপসর্গ (prefix) ব্যবহার করা হয়।
শুরুর দিকে নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা করার সময় সকল হোস্টকে (কম্পিউটার বা যন্ত্র) স্বতন্ত্র আইপি ঠিকানা দেওয়ার চিন্তা করা করা হয়েছিল যেন ইন্টারনেটের সকল কম্পিউটার একে অপরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। তবে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক তৈরি হওয়ার ফলে দেখা গেল যে স্বতন্ত্র আইপি অ্যাড্রেসের সর্বদা প্রয়োজন নেই এবং অন্যদিকে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পাবলিক অ্যাড্রেস সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
প্রাইভেট নেটওয়ার্কে কম্পিউটারগুলো সরাসরি ইন্টারনেটে যুক্ত থাকে না, যেমন ব্যাংক, বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারগুলো যেগুলো এক অপরের সাথে টিসিপি/আইপি এর মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে,এদের সর্বজনীন স্বতন্ত্র আইপি ঠিকানার প্রয়োজন নেই।প্রাইভেট নেটওয়ার্ক গুলোর জন্য RFC 1918 আইপি ঠিকানার ৩টি শ্রেনী সংরক্ষণ করা রয়েছে ।এই ঠিকানাগুলো ইন্টারনেটে রাউট করা হয় না এবং ফলে এগুলো ব্যবহার করার জন্য আইপি অ্যাড্রেস রেজিস্টির সাথে সমন্বয়ের প্রয়োজন নেই।প্রাইভেট নেটওয়ার্কের হোস্টগুলো NAT এর মাধ্যমে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়ে থাকে।
শুরু | শেষ | অ্যাড্রেসের সংখ্যা | |
---|---|---|---|
২৪-বিট ব্লক (/৮ উপসর্গ(prefix), ১ × A) | ১০.০.০.০ | ১০.২৫৫.২৫৫.২৫৫ | ১৬৭৭৭২১৬ |
২০-বিট ব্লক (/১২ উপসর্গ(prefix), ১৬ × B) | ১৭২.১৬.০.০ | ১৭২.৩১.০.০ | ১০৪৮৫৭৮ |
১৬-বিট ব্লক (/১৬ উপসর্গ(prefix), ২৫৬ × C) | ১৯২.১৬৮.০.০ | ১৯২.১৬৮.২৫৫.২৫৫ | ৬৫৫৩৬ |
অনলাইন জগতে নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আইপি ঠিকানা লুকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যেমন:
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.