Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় (বা ব্যানার্জি) ( ১৯৩৬ - ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০), ছিলেন একজন নট-নাট্যকার, চিত্রনাট্যকার, নির্দেশক এবং অভিনেতা। তিনি কলকাতার নাট্যকর্মী হিসাবে নান্দীকারের সর্বক্ষণের নাট্যকর্মী হন।
তিনি ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্নাতক কলেজের মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজে ছাত্র হিসাবে নাটকের প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলেন । ১৯৫৯ সালে তিনি প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে বহুরূপী নাট্যদলে যোগদান করেন এবং শ্রীশম্ভু মিত্র-র অধীনে এক বছরের কোর্স সম্পন্ন করেন। । বি কে পাল অ্যাভিনিউতে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামার বাড়িতে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কিছু বন্ধু দীপেন সেন গুপ্ত, সত্যেন মিত্র, মহেশ সিংহের উপস্থিতিতে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ২৯ শে জুন ‘নান্দীকার সহ-প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দলের প্রথম নির্বাহী সদস্যরা কমিটি নির্বাচিত হয়েছিল: সভাপতি অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেক্রেটারি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৬০-১৯৭২ অবধি নান্দীকার এর প্রথমদিকে র সবকটা প্রযোজনার সাথে যুক্ত ছিলেন, নাট্যকারের সন্ধানে ছটি চরিত্র , শের আফগান , মঞ্জরী আমের মঞ্জরী , যখন একা , বিতংস এবং তিন পয়সার পালা । তিনি পরিণীতা ও পূর্ববাগ নাটক পরিচালনা করেছিলেন নান্দীকার জন্য। ঐতিহাসিক তিন পয়সার পালা প্রযােজনায় কেবল পিতার ভূমিকায় অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনয়েই ছিল ব্রেষ্টিয় অভিনয়ের যাতে অভিনয়ে একটা বাস্তবচিহ্নিত চারিত্র্য আর তার সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থান এক দ্বান্দ্বিক সহাবস্থানে ইতিহাসের তথা সমাজবিবর্তনের একটা সত্যকেই উন্মােচিত করেছিল । এই প্রযােজনায় অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ধনী ভিক্ষুক-ব্যবসায়ী শ্রীযুক্ত যতীন্দ্রনাথ পাল চরিত্রে , অসিতের নাচগান সহ অভিনয় আজও সে নাটক দর্শকদের মনে অক্ষয় হয়ে আছে। ভিক্ষুক আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা – ভিক্ষাজীবীদের প্রশিক্ষক তার ক্র-নিষ্ঠুরতার সাত কৌতুকাবহ অভিনয়, নেপথ্য-সংগঠক হিসেবে তার দক্ষতার পরিচয় ছাড়িয়ে সর্বকালের একজন কীর্তিমান অভিনেতার স্থায়ী খ্যাতি এনে দিয়েছিল।
এই সময়টি ছিল নান্দীকার স্বর্ণযুগ যা প্রত্যক্ষদর্শী অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্র প্রসাদ সেনগুপ্ত এবং কেয়া চক্রবর্তী একসাথে বহু নাটকে অভিনয় করেছিলেন।
এই অভিনেতা, পরিচালক, নাট্যকারের সাথে কোচবিহারের একটা যোগসূত্র ছিল । সত্তর দশকের গোড়ার দিকে তিনি কর্মসূত্রে এখানে ছিলেন এবং এখানকার নাট্যচর্চার সাথে যুক্তও হয়েছিলেন । কোচবিহারের জেঙ্কিন্স স্কুলের মাঠে সে সময় বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন আয়োজিত হয়েছিল । সেখানে কবি কাহিনী নাটকের মুখ্য ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেছিলেন, সাথে ছিলেন কোচবিহারের বিশিষ্ট অভিনেতা অভিনেত্রীরা। কোচবিহার থেকে বদলি হয়ে তিনি চলে যান শিলিগুড়িতে এবং সেখানে মিত্র সম্মিলনীর নাট্যচর্চার সাথেও যোগদান করেন । মিত্র সম্মিলনী নাটকের এক স্বর্ণযুগে প্রবেশ করলাে , তিনি স্থানীয় নাট্যদল মিত্র সম্মিলনীকে অভিনেতা ও পরিচালক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন যা উত্তরবঙ্গের নাট্য দৃশ্যে বিপ্লব ঘটিয়েছিল এবং মিত্র সম্মিলনের ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। এই গ্রুপ মঞ্চস্থ বিতংস, কাবিকাহিনী, এক যে ছিল ঘোড়া , সূর্যবদল (যা নিজে দ্বারা লিখিত হয়)। শিলিগুড়ি দল নিয়ে তিনি কলকাতায়ও গিয়েছিলেন। অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশিত ‘বীতংস’ (১৯৭২) ও কবি কাহিনী (১৯৭৩) শিলিগুড়ির নাট্যচর্চাকে এক পেশাদারী মাত্রায় পৌঁছে দিল। এক যে ছিল ঘােড়া (১৯৭৪) -মূল চেক নাটক : ‘জুলিয়াস হে’ (বঙ্গীকরণ ডঃ অশ্রুকুমার শিকদার) ছিল অসিতবাবুর প্রথম মৌলিক ( প্রযােজনা। অনেক পরে সূর্যবদল’ এবং আরও কয়েকটি নাটক তিনি নিজে লেখেন ও মঞ্চায়িত করেন। এইপর্বে ১৯৭৩ এর অক্টোবরে এবং ১৯৭৪-৭৫’এ মিত্র সম্মিলনী কলকাতার ‘রঙ্গণা’ ও এ্যাকাডেমীতে নাটক মঞ্চস্থ করে। মিত্র সম্মিলনী অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় অধীনে শিলিগুড়ির বাইরে অবস্থিত স্থানীয় থিয়েটার গ্রুপ থেকে বিশিষ্ট থিয়েটার গ্রুপের মর্যাদায় উত্তরণ ঘটে।
১৯৭৮ সালে কলকাতা তে ফিরে এসে তিনি যাত্রা নাটকের (লোক-নাটক) লেখক ও পরিচালক হন । তিনি প্রায় ৭০ টি নাটক রচনা করেছেন, পরিচালনা করেছেন এবং মঞ্চায়িত করেছেন, যা পুরো পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পরিবেশিত হয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে বণিক বাড়ির বৌ , ডাইনি,পাগলা রাজা, কালো মায়ার কান্না , হীরা ঝিলার কান্না কুমারী জানানী, বাঙালি বৌ, খোঁড়া বাদশা, কোহিনূর, মহাজনের মেয়ে, জংলী, কোচ দেবযানী, বিল্লমঙ্গল, চানক্য, কুরবানী, পাগলা ডাক্তার, ইত্যাদি প্রায় সত্তরটির ওপর পালা লেখেন ও নির্দেশনা করেন ।
তিনি মৃণাল সেনের কলকাতা ৭১, মৃগায়া , মহাপ্রথিবীতে অভিনয় করেছিলেন । তিনি নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় এর জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র পরশুরামের কুঠার, আত্মজা ও শিল্পী এবং চিদানন্দ দাশগুপ্তের র আমোদিনী অভিনয় করে বিশেষ প্রশংসা পেয়েছিলেন । তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন। তিনি উপস্থিত হয়ে দূরদর্শন কেন্দ্র কলকাতা এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওর জন্য রেডিও এবং টেলিভিশন সিরিয়ালগুলির স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন । দ্রৌপদী’ ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য , মোহিনী ও আরো কিছু সিরিয়ালের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। উল্লেখ্য, তরুণ মজুমদার যখন দূরদর্শনে ‘দুর্গেশনন্দিনী’ পরিচালনা করেন – তখন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় তার সঙ্গে চিত্রনাট্য রচনায় সহযােগী ছিলেন। নান্দীকার’ পর্বের শেষের দিকে যখন নাটমঞ্চ প্রতিষ্ঠা সমিতি মিত্রর পরিচালনায় গিরিশচন্দ্রের ‘প্রফুল্ল’ কলকাতা বেতারে ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এ সম্প্রচারিত হয় – তাতে তিনি রমেশের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৭৭-এ কলকাতায় ফিরে এসে ‘রং বদলায়’ নাটকে অভিনয় করে – প্রায় আঠারাে বছর আর কোনাে নাটকে অংশ নেননি। ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত দশ বছরে তিনি যেসব বেতার নাটকে অভিনয় করেছিলেন। কলকাতা দূরদর্শনেই হয়ে বেশ কয়েক প্রযোজনা সাথে যুক্ত ছিলেন, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য "চন্দ্রা হতা" (তিনি চিত্রনাট্যকার ও প্রধান চরিত্র র ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন) , মেঘনাদ ভট্টাচার্য পরিচালিত "শ্রী শ্রী সিদ্ধেশরী লিমিটেড" এ প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, সহ অভিনেতা দের মধ্যে ছিলেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক মুখোপাধ্যায়, প্রমুখ ।
তিনি বিভিন্ন লাইভ স্টেজ পারফর্মেন্সে কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, গুলজার এবং আরও অনেক নামীদামীর সাথে জুটি বেঁধেছেন।
১৯৮৮ ও ১৯৯৯ সালে তিনি দু'বার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেরা পরিচালক ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি দিশারী পুরস্কার, প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়া পুরস্কার, শান্তিগোপাল-তপন কুমার পুরস্কার, উত্তম কুমার পুরস্কার এবং অন্যান্য জিতেছিলেন। তিনি বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডস সেরা সহায়ক অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন মৃনাল সেন এর কোরাস ছবিতে অভিনয় করে ।
ভারতে কোভিড মহামারী চলাকালীন আগস্ট মাসে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন, পরবর্তীকালে কোভিড মুক্ত হলেও, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত হন কলকাতা তে, তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ ।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.