Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অমিতা সেন (১৯ মে ১৯১৪ - ২৪ মে ১৯৪০)[1]১৯৩০-এর দশকে শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর দেওয়া খুকু ডাকনামে সুপরিচিত রবীন্দ্র সংগীতের অনন্য শিল্পী ছিলেন। কন্যাসম সম্পর্কে 'খুকু' অত্যন্ত স্নেহধন্যা ছিলেন কবিগুরুর। অমিতা'র সুললিত ও ওজস্বিনী কণ্ঠের কুশলতায় মুগ্ধ ছিলেন কবি। অবিশ্বাস্য সঙ্গীত জীবনের অধিকারিণী 'খুকু' অমিতা'কে ঘিরেই কবি লেখেন— 'আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ, সুরের বাঁধনে' গানটি' [2][3]
অমিতা সেন (খুকু) | |
---|---|
জন্ম | ঢাকা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত( বৰ্তমানে বাংলাদেশ) | ১৯ মে ১৯১৪
মৃত্যু | ২৪ মে ১৯৪০ ২৬) ঢাকা ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) | (বয়স
ধরন | রবীন্দ্র সংগীত |
পেশা | কণ্ঠশিল্পী |
কার্যকাল | ১৯২৫ – ১৯৪০ |
লেবেল | হিন্দুস্থান রেকর্ডস্ |
অমিতা সেনের জন্ম ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা-বিক্রমপুরের আউটসাহী গ্রামে।[4] তার পিতা ক্ষিতীশচন্দ্র সেন ছিলেন ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক এবং মাতা সুহাসিনী দেবী ছিলেন সুশিক্ষিতা ও সুগায়িকা।[5]অমিতার গায়ের রঙ কালো হলেও মুখশ্রী ছিল সুন্দর। সুললিত কণ্ঠের অধিকারিণী পডাশোনাতেও ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। চার বৎসর বয়সেই অন্যের পড়াশুনা দেখে ও শুনে তিনি নিজের চেষ্টায় শিখে ফেলেন।অন্যদিকে মহাত্মা গান্ধী যখন প্রথম কারারুদ্ধ হন, ছয়-সাত বৎসর বয়ক্রমের অমিতা মহাত্মা গান্ধীর ত্যাগ, দেশভক্তি নিয়ে প্রশংসাসূচক গান রচনা করে নিজের সুরে গেয়েছেন— "ধীর, স্থির, দেশহিতব্রতী স্বাধীনচেতা ওহে গান্ধী বীর" পাটনার বাঁকিপুরের 'রামমোহন রায় সেমিনারি'র ময়দানে।[6] অমিতা'র পিসিমা হেমবালা সেন ছিলেন শান্তিনিকেতনে মেয়েদের হস্টেলের অধ্যক্ষা। তিনি ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তার দুই নাবালিকা ভাইঝি অমিতা আর ললিতা'কে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন। তখন অমিতা'র বয়স ছিল নয় বৎসর। রবীন্দ্রনাথ ও দিনেন্দ্রনাথের অত্যন্ত কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন বালিকা অমিতা। তার সুমিষ্ট দরদী কণ্ঠস্বর, সুরের দখল আর অনুভূতিপূর্ণ গায়কী তাকে বিশিষ্টতা দিয়েছিল। দিনেন্দ্রনাথ অমিতাকে এতটা স্নেহ করতেন যে, সঙ্গীতের ক্লাশে একদিন না এলে তিনি অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। কন্যাসম গভীর স্নেহ-স্পর্শ তো ছিলই রবীন্দ্রনাথের।
অমিতা শান্তিনিকেতন থেকে ব্যক্তিগত পরীক্ষার্থী হিসাবে বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের আই এ পরীক্ষায় সংস্কৃতে আশি শতাংশ নম্বর ও বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পান এবং নগেন্দ্র স্বর্ণপদক লাভ করেন। পরে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে প্রথম বিভাগের স্নাতক হন এবং 'বেস্ট লেডি গ্র্যাজুয়েট' হয়ে 'পদ্মাবতী স্বর্ণপদক' পান। স্নাতক হওয়ার পর আর্থিক কারণে বীণাপাণি পর্দা হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতে থাকেন এবং পাশাপাশি সংস্কৃতে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করেন। কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। জ্ঞানার্জন আর ডিগ্রি লাভের সঙ্গে অমিতার মনে সঙ্গীতের জন্য শান্তিনিকেতনের প্রতি আকর্ষণ ছিল। [5]শান্তিনিকেতনের মাঠে ঘাটে সে উদ্দীপ্ত কণ্ঠে খালি গলায় আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি....সহ বহু গান গেয়ে বেড়াত। রবীন্দ্রনাথের অনেক গানই প্রথম গলায় তুলে নেওয়ার জন্য ডাক পড়ত অমিতার। তার গায়কীতে অবিভূত কবি লেখেন বসন্ত ঋতুর এক গভীর অর্থপূর্ণ গান— 'আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ, সুরের বাঁধনে' [3] রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন 'খুকু' শান্তিনিকেতনে সারা জীবন থেকে যাক। কেননা তার রচিত যত গান অমিতা কবির ও দিনেন্দ্রনাথের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পেরেছে, তার দ্বিতীয় আর কেউই ছিল না। স্বভাবতই ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে দিনেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর কবি অমিতাকে তার গানের 'দ্বিতীয় ভাণ্ডারী' করতে চেয়েছিলেন। অমিতার প্রতিভাকে রবীন্দ্রনাথ মর্যাদা দিতেন। অমিতার গান ভাল লাগলেও, নাচ ও অভিনয় পছন্দের ছিল না। অন্যদিকে অমিতা পড়াশোনার জন্য কলকাতায় অবস্থানকালে শম্ভুনাথ গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক বন্ধুকে ভালবেসে ছিলেন। তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পরিশ্রম করতেন। শম্ভুনাথের যক্ষা হলে অমিতা'র বেতনে না কুলালে তিনি তার স্বর্ণপদক ইত্যাদি বিক্রি করে দেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি কবি খুকুকে আহ্বান জানিয়ে লেখেন-
"তুই যদি আশ্রমে এসে আমাদের কাজে যোগ দিতে পারিস তো খুশী হব। .... তোর শক্তি আছে, অনুরাগ আছে, কণ্ঠ আছে। সেই জন্য আমার এই কাজে তোকে পেতে অনেক দিন থেকে ইচ্ছা করছি।"
কবির আহ্বানে অমিতা শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন একটি শর্তে যে, শম্ভুনাথের একটি কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। রবীন্দ্রনাথ বিষয়টি সঙ্গত কারণে কর্তৃপক্ষের উপরেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে অল্প কিছুদিন শান্তিনিকেতনের সঙ্গীত ভবনে অধ্যাপিকার কাজ করে ফিরে আসেন কলকাতায়। আর ফেরেন নি শান্তিনিকেতনে। কেবল ক্ষোভ জানিয়েছিলেন কবিকে।[2] এর ফলে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে খুকু'র সম্পর্কের অবনতি হয়, কবি ভীষণ আঘাত পান। ফলে তার জীবনের শেষ বছরে ছ'টির মতো রবীন্দ্র সংগীতর রেকর্ড তৈরি হলেও ঠিক সময়ে প্রকাশিত হয়নি।
খুকু'র সুললিত কণ্ঠের কয়েকটি রবীন্দ্র সংগীত হল—
কলকাতায় ফিরে আসার পর অমিতা জানতে পারেন শম্ভুনাথ স্বজাতির কোন এক কন্যাকে বিবাহ করে অন্যত্র চলে গেছেন। স্বভাবতই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত 'খুকু'-অমিতা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার ছোটভাই দেবপ্রসাদ সেনের চেষ্টায় তার চিকিৎসা চলছিল কলকাতার তৎকালীন কারমাইকেল হাসপাতাল, এখনকার আর জি কর হাসপাতালে। পরে পাটনার বুলা মহলানবীশের ভগ্নিপতি ডাঃ শরদিন্দু ঘোষাল তার চিকিৎসা করেন। [4] যক্ষা ভেবে খুকুর ভুল চিকিৎসা চলছিল, নেফ্রাইটিস ধরা পড়ল দেরিতে। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী জেনে খুকু নিজের জন্মস্থান ঢাকায় ফিরে যান। সেখানে কিছুদিন কবিরাজি চিকিৎসা চলে। শেষ জন্মদিন পালিত হয় ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে। কিন্তু পরদিনই কোমায় চলে যান। ২৪ মে তারিখে মাত্র ছাব্বিশ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন। [2]
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি খুকু মৃত্যুশয্যায় জেনে অত্যন্ত ব্যথিত হন, তার কাছ থেকে ভীষণ আঘাত পাওয়া সত্বেও কবি দয়াপরশ হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন, তার ছটি রেকর্ডও মুক্ত করে দেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.