সরদার মোহাম্মদ আবদুল হামিদ বাংলাদেশের চলনবিল অঞ্চলের একজন শিক্ষাবিদ, লেখক এবং সমাজ সংস্কারক।

জন্ম

সরদার মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ১৯৩০ সালের ১লা মার্চ নাটোর জেলার অন্তর্গত গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব মোঃ দবির উদ্দিন সরদার।

শিক্ষাজীবন

আবদুল হামিদ যোগেন্দ্রনগর ১নং উচ্চ প্রাইমারি বিদ্যালয় থেকে ১৯৩৮ সালে প্রথম বিভাগে পাস করে ১৯৩৯ সালে গুরুদাসপুর-চাঁঁচকৈড় এম.ই. স্কুলে ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে চাঁচকৈড় নাজিমুদ্দিন হাইস্কুল থেকে মেট্রিক, ১৯৪৭ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি, ১৯৫০ সালে একই কলেজ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে ডিস্টিংশনসহ বিএসসি এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে ২য় শ্রেণিতে ৫ম স্থান অধিকার করে এমএসসি পাস করেন।

কর্মজীবন

১৯৫৩ সাল থেকে তিনি রসায়নবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে[1] সাতক্ষীরা কলেজ, গাইবান্ধা কলেজ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজযশোর এম.এম. কলেজে অধ্যাপনা করেন। তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি মহীপুর হাজী মহসীন কলেজ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ ও বগুড়া এম আর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।

তিনি মাসিক 'আমাদের দেশ', বার্ষিক 'অভিযান' ও 'সোপান' পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটা থেকে প্রকাশিত 'বোলানের ডাক', বড়াইগ্রাম থানা সমাজসেবা সংঘের মুখপত্র 'নয়াজিন্দেগী', মাসিক 'নবারুণ', পাকিস্থানের লয়ালপুর থেকে প্রকাশিত উর্দু মাসিক 'হামারা ওয়াতান', লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইংরেজি মাসিক 'আওয়ার হোম' এবং দৈনিক 'পয়গাম' পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সাহিত্যকর্ম

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'চলনবিলের ইতিকথা' তার শ্রেষ্ঠ গবেষণামূলক গ্রন্থ। তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে 'বঙ্গাব্দ সমাচার', 'দেখে এলাম অস্ট্রেলিয়া', 'পশ্চিম পাকিস্তানের ডাইরি', 'পাশ্চাত্যের বৈশিষ্ট্য', 'জ্ঞানের মশাল', 'চলনবিলের লোকসাহিত্য', 'কর্মবীর সেরাজুল হক', 'আমাদের গ্রাম', 'শিক্ষার মশালবাহী রবিউল করিম', 'পল্লী কবি কারামত আলী', 'ইসলামের ছায়াতলে', 'স্বপ্নীল জীবনের কিছু কথা', 'হজ্বের সফর', 'রসায়নের তেলেসমতি', 'আমাদের গ্রাম', 'ধাঁধাঁর জগত ও অংকের খেলা', 'ইসলামের ছায়াতলে', 'স্বপ্নীল জীবনের কিছু কথা', 'অমর জীবন কাহিনী', 'অবিস্বরনীয় প্রাণ', 'আদর্শ শিক্ষক', 'অমর স্মৃতি' ও 'মনোহর চয়নিকা' উল্লেখযোগ্য। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৬ টি।

উল্লেখযোগ্য কর্ম

বাংলা সনের সংস্কারে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বাংলা সনের বিভিন্ন মাসের দিন সংখ্যা নির্ধারণের লক্ষ্যে ১৯৫৯ সালে তাঁরই উত্থাপিত প্রস্তাবটি ১৯৬৬ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নিরীক্ষা কমিটির সভার সুপারিশ সাপেক্ষে বাংলা একাডেমি কর্তৃক অনুমোদনক্রমে স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার ওই প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। তারই প্রেক্ষিতে বৈশাখ হতে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাস ৩১ দিনে এবং আশ্বিন মাস হতে চৈত্র মাস ৩০ দিনে গণনা করা হয়ে থাকে।[2]

গবেষণা ও সমাজসেবামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এম. এ. হামিদকে 'তমঘায়ে খেদমত (টি.কে.)' খেতাব ও স্বর্ণপদক দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের রিডার ড. শামসুজ্জোহার হত্যার প্রতিবাদে তিনি টি.কে. খেতাব বর্জন করেন। ১৯৬৯ সালেই শহীদ শামসুজ্জোহার স্মৃতির স্বরণে তার উদ্যোগে গুরুদাসপুর পৌর সদরে 'বিলচলন শহীদ শামসুজ্জোহা কলেজ' প্রতিষ্ঠিত হয়।[3]

চলনবিল অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি একটি জাদুঘর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বেসরকারি উদ্যোগে অস্থায়ীভাবে যাত্রা শুরু হয় চলনবিল জাদুঘরের[4] ১৯৮৯ সালের ২ জুলাই জাদুঘরটি প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের আওতায় আসে।[5]

এছাড়াও তিনি চলনবিল অঞ্চলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাঠাগার, ক্লাব স্থাপন করে চলনবিল অঞ্চলের মানুষের মাঝে শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখেন।

মৃত্যু

অধ্যক্ষ এম. এ. হামিদ ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।[6]

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.