অঙ্কুর (চলচ্চিত্র)

হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

অঙ্কুর (চলচ্চিত্র)

অঙ্কুর ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ভারতীয় রঙিন চলচ্চিত্র। এটি শ্যাম বেনেগল পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং এই চলচ্চিত্র দিয়ে অনন্ত নাগ ও শাবানা আজমির অভিষেক ঘটে। বেনেগল মুম্বইয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করা অনন্ত নাগকে এই চলচ্চিত্র দিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে পরিচয় করিয়ে দেন। শাবানা আজমি অন্য কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করলেও এটি তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র।[]

দ্রুত তথ্য অঙ্কুর, পরিচালক ...
অঙ্কুর
Thumb
চলচ্চিত্রের পোস্টার
পরিচালকশ্যাম বেনেগল
প্রযোজক
  • ললিত এম. বিজলানি
  • ফ্রেনি বারিয়ব
  • ব্লেজ ফিল্ম এন্টারপ্রাইজেস
রচয়িতাসত্যদেব দুবে (সংলাপ)
চিত্রনাট্যকারশ্যাম বেনেগল
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারবনরাজ ভাটিয়া
চিত্রগ্রাহকগোবিন্দ নিহলানি[]
সম্পাদকভানুদাস
মুক্তি১৯৭৪
স্থিতিকাল১২৫ মিনিট
দেশভারত
ভাষাদক্ষিণী
বন্ধ

বেনেগলের অন্যান্য চলচ্চিত্রের মত অঙ্কুর ভারতীয় শৈল্পিক চলচ্চিত্র ধারার একটি, আরও স্পষ্টকরে ভারতীয় সমান্তরাল চলচ্চিত্রের একটি।[][] গল্পটি ১৯৫০-এর দশকে হায়দ্রাবাদে ঘটা একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত।[] এই চলচ্চিত্রের প্রায় সম্পূর্ণ দৃশ্যই স্টুডিওর বাইরে হায়দ্রাবাদের বিভিন্ন স্থানে ধারণ করা।[]

অঙ্কুর চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ দ্বিতীয় চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ অভিনেতাশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ভারতে ও ভারতের বাইরে আরও ৪৩টি পুরস্কার অর্জন করে। চলচ্চিত্রটি ২৪তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণ ভল্লুকের মনোনয়ন লাভ করে।

কাহিনি সংক্ষেপ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

গল্পটি লক্ষ্মী ও সূর্য নামক দুটি চরিত্রের মধ্যে আবর্তিত হয়েছে।

লক্ষ্মী (শাবানা আজমি) তার স্বামী কিস্তিয়াকে (সাধু মেহের) নিয়ে একটি গ্রামে বাস করে। কিস্তিয়া বোবা-কালা ও মদ্যপ কুমার যে অপরের সাথে ইশারায় যোগাযোগ করে। তারা নিম্ন দলিত শ্রেণিভুক্ত। লক্ষ্মী একটি গ্রাম্য উৎসবে অংশগ্রহণ করে এবং দেবীর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করে যে তার জীবনের একমাত্র ইচ্ছা একটি সন্তান জন্ম দেওয়া।

গ্রামের জমিদারের পুত্র সূর্য (অনন্ত নাগ) সম্প্রতি নিকটবর্তী হায়দ্রাবাদ শহর থেকে তার পড়াশোনা শেষ করে বাড়ি ফিরেছে। সূর্যের বাবার কৌশল্যা নামে এক স্ত্রী রয়েছে, যার সাথে তার প্রতাপ নামে এক অবৈধ সন্তান রয়েছে। সূর্যের বাবা তাদের দুজনকে স্নেহের স্বীকৃতি হিসেবে এবং তাদের চুপ ও সন্তুষ্ট রাখতে গ্রামের সবচেয়ে ভালো জমিটি দিয়েছেন। তিনি সূর্যকে সরু (প্রিয়া তেন্ডুলকর) নামে এক কিশোরীর সাথে বাল্যবিবাহের জন্য বাধ্য করেন। কিন্তু সরু বালেগ না হওয়া পর্যন্ত তারা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারবে না এই কারণে সূর্য যৌন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

সূর্য তার গ্রামের তার ভাগের জমির প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করে। সে একা একটি পুরনো বাড়িতে চলে যায়। সেখানে লক্ষ্মী ও কিস্তিয়াকে তার গৃহপরিচারিক হিসেবে পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছানো মাত্রই সেই বাড়িতে সে নতুন নিয়ম চালু করে, তন্মধ্যে কয়েকটি গ্রামের লোকজনের কাছে বিতর্কিত। অচিরেই সে লক্ষ্মীর প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করে এবং তাকে খাবার রান্না ও চা বানানোর দায়িত্ব দেয়। গ্রাম্য পুরোহিত এটি ভালোভাবে নেয়নি, কারণ তিনি জমিদারদের খাবার রান্না করে দেন, তবে তা লক্ষ্মীর চেয়ে অধিক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে।

সূর্য কিস্তিয়াকে তার গরুর গাড়ি চালানোর কাজ দেয়। পরের দিন সে কিস্তিয়াকে জমিদারের বাড়ি থেকে সার আনতে পাঠায়। কিস্তিয়ার অনুপস্থিতিতে সূর্য লক্ষ্মীকে প্রেমের আহবান জানায়, কিন্তু লক্ষ্মী তা বুঝতে পারেনি। ইতোমধ্যে, গ্রামের লোকজন কানাঘুষা শুরু করে, এবং পুলিশ কর্মকর্তা প্যাটেল শেখ চাঁদসহ অনেকে মনে করেন সূর্য লক্ষ্মীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে এবং তার বাবার মত এই কলঙ্ক লুকাতে তাকেও অনেক জমি দিয়ে দিবে।

কিস্তিয়া চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে এবং জনসম্মুখে অপদস্ত হওয়ার পর লজ্জায় গ্রাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তার অনুপস্থিতিতে সূর্য ও লক্ষ্মী শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। কিছুদিন পর সরু তার স্বামীর সাথে থাকতে গ্রামে আসে। সরু লক্ষ্মীকে অপছন্দ করে, তার একটি কারণ লক্ষ্মী দলিত শ্রেণির এবং অপর একটি হল সূর্য ও লক্ষ্মী শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে গ্রামবাসীর কানাঘুষা। পরের দিন সকালে লক্ষ্মী অসুস্থ বোধ করলে সরু সে খুব বেশি অসুস্থ ও কাজ করতে পারবে না বলে তাকে কাজ থেকে ছাটাই করে দেয়।

অনেক দিন পার হয়ে যাওয়ার পর কিস্তিয়া ফিরে আসে। সে মদপান ত্যাগ করেছে এবং কিছু অর্থ উপার্জন করেছে। লক্ষ্মী স্বামীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এই ভেবে তার মাঝে পাপবোধ জাগে। লক্ষ্মীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা জেনে কিস্তিয়া গ্রামের মন্দিরে দেবীকে প্রণাম করে। সে পুনরায় সূর্যের গরুর গাড়ি চালানোর আশা নিয়ে কাজে ফিতে যেতে চায়। সূর্য কিস্তিয়াকে দেখে মনে করে সে লক্ষ্মীর সাথে তার ব্যভিচারের প্রতিশোধ নিতে এসেছে।

সূর্য তিন জন লোককে কিস্তিয়াকে ধরার হুকুম দেয় এবং তাকে চাবুক পেটা শুরু করে। শেখ চাঁদ ও প্রতাপ তা দেখে এগিয়ে আসে এবং লক্ষ্মী তার স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। লক্ষ্মী সূর্যকে অভিসম্পাত করে এবং কিস্তিয়াকে নিয়ে ঘরে ফিরে যায়। শেষ দৃশ্যে সকলেই চলে গেছে একটি বাচ্চা ছেলে সূর্যের কাচের জানালায় ঢিল ছুড়ে পালিয়ে যায়।

কুশীলব

  • শাবানা আজমি - লক্ষ্মী
  • সাধু মেহের - কিস্তিয়া
  • অনন্ত নাগ - সূর্য
  • প্রিয়া তেন্ডুলকর - সরু
  • আঘা মোহাম্মদ হুসেন - শেখ চাঁদ
  • মির্জা কাদের আলি বেগ - সূর্যের বাবা
  • হেমন্ত যশবন্ত রাও
  • মাস্টার সত্যনারায়ণ
  • শেষম রাজু
  • হামিদ রশিদ
  • আসলাম আখতার
  • সৈয়দ ইয়াকুব
  • জগৎ জীবন
  • প্রফুল্লতা নাতু - সূর্যের মা
  • কলিম সিদ্দিকী
  • তুলসী বাঈ
  • সুভাষ সিংহ
  • অহমান আখতার
  • দলিপ তাহিল
  • জন ইসরাইল
  • স্বদেশ পাল
  • বিজয়লক্ষী
  • সুলতানা বানো
  • খলিল
  • মহেন্দ্র দত্ত
  • সুগুনা রেড্ডি
  • রাম অল্লম

নির্মাণ

অঙ্কুর চলচ্চিত্রের পাত্রপাত্রীরা প্রায়ই দক্ষিণী ভাষা ব্যবহার করে। এটি দক্ষিণ ভারতে, বিশেষত হায়দ্রাবাদ এলাকায়, প্রচলিত শুদ্ধ হিন্দি-উর্দুর কিছুটা ভিন্ন রূপ। উদাহরণস্বরূপ, যখন সূর্য লক্ষ্মীকে জিজ্ঞাসা করে কিস্তিয়া কোথায় তখন সে শুদ্ধ হিন্দি ভাষায় "মুঝে নহিঁ মালুম" এর পরিবর্তে দক্ষিণী ভাষায় উত্তর দেয় "মেরেকু নহিঁ মালুম"।

পুনের ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন অধিকরণের নব্য স্নাতক শাবানা আজমি লক্ষ্মী চরিত্রের জন্য শ্যাম বেনেগলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না। বেনেগল ওয়াহিদা রহমান, অঞ্জু মহেন্দ্রু ও শারদাকে প্রথমে এই চরিত্রের জন্য প্রস্তাব দেন, কিন্তু তারা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তারপর তিনি শাবানা আজমিকে নির্বাচন করেন। তিনি কম বয়সী লক্ষ্মী চরিত্রের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য গল্পে কিছুটা পরিবর্তন আনেন।[]

বেনেগল শুরুতে আজমিকে এই কাজের জন্য নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন আজমি মডেল এবং গ্রাম্য চরিত্রের জন্য মানানসই হবেন না।

মূল্যায়ন

বক্স অফিস

চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল হয়। চলচ্চিত্রটির প্রযোজক ললিত এম. বিজলানি মাত্র পাঁচ লাখ রুপি নির্মাণব্যয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন এবং মুক্তির পর ১ কোটি রুপি আয় করেন।[]

সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া

চলচ্চিত্রটি সমালোচনামূলকভাবে সফলতা লাভ করে। চ্যানেল ফোর-এর একটি পর্যালোচনায় চলচ্চিত্রটিকে "ভারতীয় আর্টহাউজ ঘরানার চলচ্চিত্রের শীর্ষ দশ ধ্রুপদী চলচ্চিত্র" তালিকায় স্থান দেয়।[] দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখে, "শাবানা আজমির গভীর মনমুগ্ধকর অভিনয় অঙ্কুরকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম পরিপক্ব চলচ্চিত্রে পরিণত করে।"[১০] টাইম আউট-এর পর্যালোচক চলচ্চিত্রটিকে "সত্যজিৎ রায়ের আদর্শ বাস্তববাদের স্মরণ" বলে অভিহিত করে।[১১] সাম্প্রতিক একজন পর্যালোচক বলেন, "শ্যাম বেনেগল অঙ্কুর চলচ্চিত্রে ভণ্ডামি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ও নারী সামাজিক অবস্থানের একটি উচ্চমানের ও উদ্দীপক পরীক্ষণ করেছেন।"[১২]

পুরস্কার

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.