টাইটান
শনি গ্রহের ৬ষ্ঠ উপগ্রহ / From Wikipedia, the free encyclopedia
টাইটান (ইংরেজি ভাষায়: Titan, অন্য নাম: স্যাটার্ন ৬) হচ্ছে শনি গ্রহের বৃহত্তম উপগ্রহ। এটি সৌর জগতের একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ যাতে ঘন বায়ুমণ্ডলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আবার পৃথিবী ছাড়া সৌরজগতের একমাত্র এই বস্তুর পৃষ্ঠেই তরল পদার্থের সন্ধান মিলেছে।
আবিষ্কার | |
---|---|
আবিষ্কারক | ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস |
আবিষ্কারের তারিখ | March 25, 1655 |
বিবরণ | |
উচ্চারণ | /ˈtaɪtən/ (শুনুনⓘ) |
বিকল্প নামসমূহ | Saturn VI |
বিশেষণ | Titanean, Titanian[1] |
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য[2] | |
অনুসূর | ১১৮৬৬৮০ কিমি |
অপসূর | ১২৫৭০৬০ কিমি |
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ | ১২২১৮৭০ কিমি |
উৎকেন্দ্রিকতা | ০.০২৮৮ |
কক্ষীয় পর্যায়কাল | ১৫.৯৪৫ d |
গড় কক্ষীয় দ্রুতি | 5.57 km/s (calculated) |
নতি | ০.৩৪৮৫৪° (to Saturn's equator) |
যার উপগ্রহ | Saturn |
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
গড় ব্যাসার্ধ | ২৫৭৫.৫±২.০ কিমি (0.404 Earths,[3] 1.480 Moons) |
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল | ৮.৩×১০৭ km2 |
আয়তন | ৭.১৬×১০১০ km3 (0.066 Earths) (3.3 Moons) |
ভর | (১.৩৪৫২±০.০০০২)×১০২৩ কিg (0.0225 Earths)[3] (1.829 Moons) |
গড় ঘনত্ব | ১.৮৭৯৮±০.০০৪৪ g/cm3[3] |
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ | ১.৩৫২ m/s2 (০.১৪ g) (0.85 Moons) |
মুক্তি বেগ | ২.৬৩৯ km/s (1.11 Moons) |
ঘূর্ণনকাল | Synchronous |
অক্ষীয় ঢাল | Zero |
প্রতিফলন অনুপাত | 0.22[4] |
তাপমাত্রা | ৯৩.৭ K (−১৭৯.৫ °সে)[5] |
আপাত মান | 8.2[6] to 9.0 |
বায়ুমণ্ডল | |
পৃষ্ঠের চাপ | ১৪৬.৭ কিPa (১.৪১ atm) |
গঠন | Variable[7][8] Stratosphere: 98.4% nitrogen (N2), 1.4% methane (CH4), 0.2% hydrogen (H2); Lower troposphere: 95.0% N2, 4.9% CH4 |
টাইটানের আকৃতি এলিপসয়ডাল, অর্থাৎ অনেকটা উপবৃত্তীয় গোলক। গ্রহের সাথে অনেক সামঞ্জস্য থাকার কারণে অনেক সময়ই একে গ্রহ-সদৃশ উপগ্রহ বলা হয়। টাইটানের ব্যাস চাঁদের দেড় গুণ এবং ভর চাঁদের ১.৮ গুণ। এটি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ, বৃহস্পতির গ্যানিমেড এর পরেই। আয়তনের দিক দিয়ে এটি ক্ষুদ্রতম সৌর গ্রহ বুধের চেয়ে বড় হলেও এর ভর বুধ গ্রহের প্রায় অর্ধেক। টাইটানই শনি গ্রহের চারদিকে আবিষ্কৃত প্রথম উপগ্রহ, ১৬৫৫ সালে নেদারল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস এটি আবিষ্কার করেছিলেন।
উপগ্রহটি মূলত বরফ এবং পাথুরে বস্তু দিয়ে গঠিত। ঘন বায়ুমণ্ডলের কারণে যেমন প্রথম প্রথম শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠতলের খবর জানা কঠিন ছিল ঠিক তেমনই টাইটানের পুরু বায়ুমণ্ডলের ওপাসিটি ভেদ করে অনুসন্ধান চালানো ছিল কঠিন। তবে ২০০৪ সালে শনি গ্রহে প্রেরিত নভোযান ক্যাসিনি-হাইগেন্স পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এ বছর টাইটান পৃষ্ঠের মেরু অঞ্চলে এমনকি হাইড্রোকার্বনের হ্রদও পাওয়া যায়। এই হ্রদগুলোই পৃথিবীর বাইরে অস্তিত্বমান একমাত্র তরল পদার্থের স্থায়ী ভাণ্ডার। ভৌগোলিক দিক দিয়ে টাইটানের পৃষ্ঠ বেশ নবীন। কিছু পাহাড় এবং ক্রায়ো-আগ্নেয়গিরি আবিষ্কৃত হলেও পৃষ্ঠটি মূলত মসৃণ, সংঘর্ষ খাদ এর সংখ্যাও বেশ কম।
টাইটানের বায়ুমণ্ডল মূলত নাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত, ছোট ছোট যৌগ পদার্থ মিলে এতে মিথেন এবং ইথেন এর মেঘ ও নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ কুয়াশা তৈরি করেছে। টাইটানের জলবায়ু এর পৃষ্ঠে অনেকটা পৃথিবীর মত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, সেখানে বায়ুপ্রবাহ এবং বৃষ্টি দুটোই রয়েছে। পৃথিবী-সদৃশ পৃষ্ঠরূপগুলোর মধ্যে আছে বালিয়াড়ি, নদী, হ্রদ এবং সমুদ্র। তবে সেখানকার সমুদ্র পৃথিবীর মত পানির নয়, বরং মিথেন এবং ইথেনের। বৃষ্টিও হাইড্রোকার্বনের। টাইটানে দেখা যায় উপকূল রেখা, পৃথিবীর মতোই বিভিন্ন ঋতু, মৌসুমি জলবায়ু। এসব কারণে টাইটানকে আদিম পৃথিবীর সাথে তুলনা করা হয়, যদিও পৃথিবীর তুলনায় তার তাপমাত্রা অনেক কম। একইসাথে টাইটানে বহির্জাগতিক প্রাণ রয়েছে বলেও অনুমান করেন অনেকে, মূলত আণুবীক্ষণিক প্রাণ। প্রাণ সৃষ্টি হতে না পারলেও হয়ত সেখানে প্রচুর জৈব পদার্থ রয়েছে। অনেক গবেষক বলছেন টাইটানের পৃষ্ঠতলের নিচে তরল পদার্থের সমুদ্র থাকতে পারে এবং সেটা জীবন ধারণের জন্য উপযোগীও হতে পারে। আরেকটি অনুকল্প হচ্ছে, টাইটানের পৃষ্ঠেই অণুজীব রয়েছে, পৃথিবীর জীবকূলের জন্য পানি যেমন, তাদের কাছে মিথেন ঠিক তেমনই। বায়ুমণ্ডলের গঠন দেখে মনে হয়, এমন প্রাণ থাকার কথা। কিন্তু সম্পূর্ণ জীব না হয়ে, সেটা এমন কোন রাসায়নিক পদার্থও হতে পারে যা আমাদের কাছে অজানা।