Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ধর্ষণের সমাজ-জীববিজ্ঞানগত তত্ত্বসমূহ (Sociobiological theories of rape) অনুসন্ধান করে যে কীভাবে বিবর্তনগত অভিযোজন ধর্ষকের মনস্তত্ত্বে প্রভাব ফেলে। এরকম তত্ত্বগুলো উচ্চমাত্রায় বিতর্কিত, কারণ গতানুগতিক তত্ত্বসমূহ ধর্ষণকে আচরণগত অভিযোজন হিসেবে বিবেচনা করে নি। এরকম তত্ত্বের কিছু বিরোধিতা আসে নৈতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র থেকে। অন্যেরা আবার বলেন, যথার্থ প্রতিরোধমূলক উপায় তৈরি করার জন্য ধর্ষণের কারণের সঠিক জ্ঞান প্রয়োজন।
ধর্ষণ কোন পরিস্থিতিতে জিনগত সুবিধাদানকারী আচরণগত অভিযোজন হিসেবে বিবর্তিত হয়েছে এই ধারণাটি বিখ্যাত হয়েছিল জীববিজ্ঞানী র্যানডি থর্নহিল এবং নৃতাত্ত্বিক ক্রেইগ টি. পালমার এর দ্বারা। তারা ২০০০ সালের একটি বই এ ন্যাচারাল হিস্টোরি অব রেপ: বায়োলজিকাল বেজেস অব সেক্সুয়াল কোয়েরশন (ধর্ষণের একটি প্রাকৃতিক ইতিহাস: যৌনতায় বল প্রয়োগে জীববিজ্ঞানগত ভিত্তি ) -এ এই বিষয়ে প্রকাশ করা হয়।
প্রাণীজগতে মানুষের ধর্ষণের অনুরূপ আচরণ লক্ষ্য করা যায়। হাঁস[1], বটলনোজ ডলফিন, শিম্পাঞ্জিদের[2] ক্ষেত্রে এরকমটা দেখা যায়। ওরাংওটান, মানুষের নিকট আত্মীয় প্রজাতিগুলোতে এরকম যৌন সম্পর্ক তাদের সকল যৌন সম্পর্কের অর্ধেক।[3] এরকম আচরণকে "বলপ্রযুক্ত যৌন সম্পর্ক" (forced copulations) বলা হয়। এখানে দেখা যায় একটি প্রাণী যখন আরেকটির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে বা পালাতে চাচ্ছে, তখন এদের সাথে জোড়পূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হচ্ছে। প্রাণীজগতে এই জোড়পূর্বক যৌন সম্পর্কের পর্যবেক্ষণটি বিতর্কিত নয়। যেটা বিতর্কিত সেটা হল, এই পর্যবেক্ষণগুলোর ব্যাখ্যা এবং এই সব প্রাণীদের উপর ভিত্তি করে এই তত্ত্বগুলোর সম্প্রসারণ করে মানুষের উপর প্রয়োগ করায়। থর্নহিল এই তত্ত্বটিকে স্করপিয়ন মাছির যৌন আচরণ এর বর্ণনা দেবার মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দেন। এই স্করপিয়ন মাছিদের ক্ষেত্রে পুরুষেরা নারীদের সাথে হয় কোর্টশিপের সময় কোন খাদ্য উপহার দিয়ে যৌন সম্পর্ক তৈরি করে, অথবা কোন কিছু না দিয়েই যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলে। শেষোক্তটিতে নারীকে দমনের জন্য বল প্রয়োগের প্রয়োজন হয়।[4]
একটি প্রকল্প হিসেবে গৃহীত হয় যে, মানুষের ক্ষেত্রে ধর্ষণ হচ্ছে অন্যান্য প্রাণীর বলপূর্বক যৌন সম্পর্কের অনুরূপ। "মানব ধর্ষণ একটি বিপথগামিতা বা মতিভ্রম (aberration) হিসেবে দৃষ্টিগোচর হয় না, বরং একটি বিকল্প জিন উন্নয়ন কৌশল (gene-promotion strategy) হিসেবে দৃষ্টিগোচর হয় যা প্রতিযোগিতাপূর্ণ হারেম গঠনের সংগ্রামে "পরাজিতরাই" বেশির ভাগ সময়ে অবলম্বন করে থাকে। যদি বৈধ, সম্মতিসূচক যৌনতার সুযোগ না থাকে, তাহলে একজন পুরুষ বলপূর্বক যৌনতা অথবা জিনগত বিলুপ্তির (genetic extinction) একটিকে বেছে নেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্মুখীন হয়।"[4]
থর্নহিল এবং পালমার লিখেছেন, "সংক্ষেপে বলতে গেলে, একজন পুরুষের অনেক সন্তান থাকতে পারে, এতে তার খুব একটা অসুবিধা থাকে না; কিন্তু একজন নারীর ক্ষেত্রে অনেক কষ্টের পরেও মাত্র কয়েকজন সন্তান থাকে।" নারীরা তাই সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশি খুঁতখুঁতে হয়। ধর্ষণকে প্রজননগত সাফল্য অর্জনের জন্য পুরুষের একটি সম্ভাবনাময় কৌশল হিসেবে দেখা হয়। তারা আরও বেশ কিছু বিষয়কে ইঙ্গিত করেছে যেখানে ধর্ষণকে একটি প্রজননগত কৌশল (reproductive strategy) হিসেবে নির্দেশ করা হয়। সম্ভাবনাময় সন্তানধারণের বছরগুলোতেই নারীদের সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হতে দেখা যায়। ধর্ষকেরা সাধারণত ভুক্তভোগীদেরকে বশে আনার জন্য প্রয়োজনের অধিক বল প্রয়োগ করে না, কারণ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীর দ্বারা প্রজননের সম্ভাবনা কমে যায়। অধিকন্তু, "অনেক সংস্কৃতিতে ধর্ষণকে ভুক্তভোগীর স্বামীর বিরুদ্ধে করা অপরাধ হিসেবে দেখা হয়।"[5]
নৃতত্ত্ববিদ এডওয়ার্ড এইচ. হাগেন তার ইভোল্যুশনারি সাইকোলজি এফএকিউ-তে বলেন, ২০০২ সাল থেকে তিনি বিশ্বাস করেন, ধর্ষণের একটি অভিযোজনগত আচরণ হবার প্রকল্পটির কোন পরিষ্কার সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। তিনি মনে করেন, ধর্ষণের অভিযোজ্যতা (adaptivity) থাকা সম্ভব, কিন্তু তার দাবী হচ্ছে, এরকমটাই যে হচ্ছে তার কোন নির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। যাই হোক, তিনি এরকম সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাবার ব্যাপার উৎসাহিত করেন: "মানব পুরুষেরা ধর্ষণের জন্য মানসিক অভিযোজন ধারণ করে কিনা তার উত্তর কেবল এরকম চেতনাগত বিশেষত্বের জন্য সাক্ষ্যপ্রমাণ খোঁজার উদ্দেশে হওয়া যত্ন সহকারে করা গবেষণা থেকেই পাওয়া সম্ভব। এরকম সাক্ষ্যপ্রমাণ না খোঁজার অর্থ হচ্ছে একটি লুকানো অস্ত্রের জন্য সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে খুঁজে বার করতে ব্যর্থ হওয়া।" এছাড়াও তিনি পূর্বপুরুষ পরিবেশের (ancestral environment) কিছু অবস্থার বর্ণনা করেছেন যখন ধর্ষণের প্রজননগত অর্জন এর ব্যয় এর চেয়ে বেশি ছিল:
ম্যাককিবিন এট আল. (২০০৮) বলেন, বিভিন্ন ধরনের ধর্ষক ও ধর্ষণ কৌশল থাকতে পারে। একটি হচ্ছে অসুবিধায় পড়া পুরুষের দ্বারা ধর্ষণ যে এটা ছাড়া আর যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন না। অন্যটি হচ্ছে "বিশেষায়িত ধর্ষক" (specialized rapists) যিনি সম্মতিসূচক যৌনতার চেয়ে ধর্ষণের ক্ষেত্রেই অধিক যৌনতৃপ্তি লাভ করে থাকেন। তৃতীয় একটি হচ্ছে সুবিধাবাদী ধর্ষক (opportunistic rapist) যিনি পরিস্থিতিভেদে বলপূর্বক যৌনতায় অংশগ্রহণ করেন, আবার সম্মতিসূচক যৌনতাতেও অংশগ্রহণ করেন। চতুর্থ ধরনটি হল সাইকোপ্যাথিক ধর্ষক। পঞ্চমটি হল সঙ্গীর দ্বারা শুক্রাণু প্রতিযোগিতার (sperm competition) কারণে ধর্ষণ, যখন পুরুষ জানে বা সন্দেহ করে যে তার সঙ্গী নারীটি অন্য কোন পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এই প্রত্যেকটা ধরনের অস্তিত্বের জন্য বিভিন্ন মাত্রার গবেষণালব্ধ (empirical) ভিত্তি রয়েছে। তারা উল্লেখ করেছেন যে, গবেষণায় পাওয়া গেছে এক তৃতীয়াংশ পুরুষ স্বীকার করেছেন যে, তারা নির্দিষ্ট শর্তে ধর্ষণ করবেন, এবং অন্যান্য জরিপে পাওয়া গেছে অনেক পুরুষ নিজেদের মাঝে বলপূর্বক যৌনতার খেয়ালের (fantasy) কথা বলেছেন। তারা এবং অন্যেরা প্রস্তাব করেছেন, ধর্ষণ হচ্ছে একটি শর্তসাপেক্ষ কৌশল যা যেকোন পুরুষের দ্বারা প্রযুক্ত হতে পারে।"[6]
নারীরা ধর্ষণ এড়ানোর জন্য এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও কৌশল বিবর্তনগতভাবে অর্জন করে থাকতে পারে। একটি হল পুরুষদের মধ্য থেকে এমন সঙ্গী নির্বাচন করা যে অন্যান্য পুরুষদের বিরুদ্ধে কার্যকর দেহরক্ষক হবে যেমন শারীরিকভাবে এবং সামাজিকভাবে প্রভাবশালী পুরুষ (যদিও এরকম নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিবর্তনগত কারণও জড়িত থাকতে পারে)। আরেকটি হচ্ছে প্রচণ্ড মানষিক যন্ত্রণা (psychological pain) যা কোন কোন গবেষকদের মতে সন্তানধারণের সময় সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, আবেগজনিত বেদনার (emotional pain) কারণে নারী ভবিষ্যৎ ধর্ষণের প্রতিরোধ করার জন্য ধর্ষণোপযোগী পরিস্থিতিসমূহের প্রতি মনোযোগ দান করে।
আরেকটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, মাসিকচক্রের উর্বর সময়ে নারী কিছু আচরণ দেখিয়ে থাকে যা আক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় এও পাওয়া গেছে, পুরুষের মাঝে সাম্ভাব্য বলপূরবক আচরণ এবং ধরার শক্তি (handgrip strength) (কেবলই সিমুলেটেড বলপূর্বক অবস্থায়) এর জন্য সংবেদনশীলতা মাসিকচক্রের উর্বর পর্যায়ে বৃদ্ধি পায়।[6] অন্যদিকে, ২০০৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্ষণের কারণে গর্ভধারণের হার অ-বলপূর্বক যৌনতায় গর্ভধারণের হারের থেকে যথেষ্ট বেশি, এবং এর দ্বারা এই প্রকল্পটি আরও অগ্রসর হয় যা অনুসারে, পুরুষ ধর্ষকগণ উর্বরতার জীববিজ্ঞানগত নির্দেশক প্রদর্শন করা নারীকেই লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেশি স্থির করে থাকে।[7]
থর্নহিল এবং পালমার লেখেন, "ধর্ষণকে প্রাকৃতিক, জীববিজ্ঞানগত ঘটনা হিসেবে দেখা হয় যা মানুষ বিবর্তনের ফল হিসেবে লাভ করেছে।" তারা আরও বলেন, কোন আচরণকে "প্রাকৃতিক" এবং "জীববিজ্ঞানগত" হিসেবে আখ্যায়িত করলেই তা কোনভাবেই এই অর্থ প্রদান করে না যে তা নৈতিক হবে, তা যদি অবশ্যাম্ভাবীও হয়ে থাকে তবুও তা নৈতিক হয়ে যায় না। "জীববিজ্ঞানগত" অর্থ হচ্ছে "জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট", সুতরাং এই শব্দটি প্রত্যেক মানব বৈশিষ্ট্য ও আচরণের ক্ষেত্রেই প্রযুক্ত হয়। কিন্তু থর্নহিল ও পালমার সহ অনেকেই বলেন, এর ফলে সকল জীববিজ্ঞানগত বৈশিষ্ট্য বা আচরণকেই সঠিক বা ভাল বলা হলে তা প্রকৃতিবাদী অনুপপত্তি (naturalistic fallacy) হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তারা মহামারী, বন্যা ও টর্নেডোর মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রসঙ্গ আনেন। এগুলো আমাদের দেখায়, প্রকৃতিতে যা পাওয়া যায় তা সব সময় ভাল হয় না। তারা আরও বলেন, বিবর্তনগত বিষয় সহ ধর্ষণের কারণ সম্পর্কে ভাল জ্ঞান ধর্ষণের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়।[5]
বিবর্তনগত মনোবিজ্ঞানী ম্যাককিবিন এট আল. বলেন, ঠিক যেমন কোন বিজ্ঞানী ক্যান্সারের কারণ নিয়ে গবেষণা করলে তিনি ক্যান্সারের ন্যয্যতা দান করছেন এই দাবীটি একটি অনুপপত্তি (fallacy), ঠিক তেমনই বিবর্তনের তত্ত্বসমূহ ধর্ষণের ন্যয্যতা দান করে এরকম দাবী করাও একটি অনুপপত্তি হয়ে যায়। বরং তারা বলেন, ধর্ষণের কারণকে বোঝাই ধর্ষণের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরির কারণ হবে।[6]
উইলসন এট আল. (২০০৩) বলেন, থর্নহিল এবং পালমারে মত বিবর্তনগত মনোবিজ্ঞানীগণ তাদের তত্ত্বের বৈধতাকে সামনে তুলে ধরার জন্য ভুলভাবে প্রকৃতিবাদী অনুপপত্তি ব্যবহার করেছেন। থর্নহিল এবং পালমারের মতে, একটি প্রকৃতিবাদী অনুপপত্তি হচ্ছে কোন প্রকৃত ঘটনা (fact) থেকে (যেমন ধর্ষণ প্রাকৃতিক) নৈতিক মন্তব্য (যেমন ধর্ষণ ভাল) টানা। উইলসন এট আল. বলেন, কোন বাস্তবিক বাক্য (factual statement) থেকে নৈতিক মন্তব্য টানাই হল নৈতিক যুক্তিবিচারের (ethical reasoning) আদর্শ, কারণ নৈতিক সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র বাস্তবিক ঘটনার বাইরে থেকেই নেয়া হয় না। তারা আরও বলেন, যদি কেউ থর্নহিল এবং পালমারের "ধর্ষণ নারীর সন্তানের যোগ্যতা (fitness) বৃদ্ধি করে" এই বাস্তবিক প্রতিজ্ঞাকে (factual premise) "সন্তানের যোগ্যতা বৃদ্ধি করা সঠিক" এই নৈতিক প্রতিজ্ঞার (ethical premise) সাথে সম্মিলিত করি তাহলে এই মিলনের ফলে একটি বৈধ মন্তব্য পাওয়া যাবে যা বলে, ধর্ষণের একটি ইতিবাচক প্রভাব আছে এবং এর নৈতিক মর্যাদা দ্ব্যর্থক। উইলসন এট আল. বলেন, থর্নহিল এবং পালমার প্রত্যেক নৈতিক বিরোধিতাকে "প্রকৃতিবাদী অনুপপত্তির" নামে বাতিল করে দিয়েছেন। এই থর্নহিল আর পালমারই এখানে প্রকৃতিবাদী অনুপপত্তিকে ব্যবহার করে অনুপপত্তিগত চিন্তা করছেন।"[8]
থর্নহিল এবং পালমার (২০০০) ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্য কয়েকটি সাম্ভাব্য কৌশল প্রস্তাব করেছেন। একটি উদাহরণ হচ্ছে পুরুষদেরকে ব্যাখ্যা করা যে তাদের মধ্যে নারীর আচরণকে ভুলভাবে যৌনতার আমন্ত্রণ হিসেবে ধরে নেয়ার প্রবণতা কাজ করে। তারা বিশ্বাস করেন, ধর্ষণকে যৌনাকাঙ্ক্ষার সাথে সম্পর্কিত মনে না করে কর্তৃত্বের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে ধরে নেয়া সাধারণভাবে ক্ষতিকর। একটি উদাহরণ হচ্ছে এরকম দাবী করা যে নারীর পোশাক তার ধর্ষণের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করবে না। তারা বলেন, কোনরকম রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ডেটিং এর ক্ষেত্রে আরও বেশি সামাজিক স্বাধীনতা দান এবং পুরুষ ও নারীর মধ্যে থাকা বাঁধাসমূহকে তুলে দেয়ার মাধ্যমে ধর্ষণের বিরুদ্ধে থাকা প্রাথমিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণগুলোঅ দূর হয়ে গেছে। তাই প্রস্তাবনা হচ্ছে, "নারী ও পুরুষ তাদের সম্পর্কের প্রাথমিক ধাপগুলোতে যেন কেবল পাবলিক প্লেসেই যোগাযোগ করা উচিৎ"।[5]
থর্নহিল ও পালমারের মতে ধর্ষণের ভুক্তভোগীদের কাউন্সেলিং (মানসিকভাবে সেড়ে ওঠা) এর প্রক্রিয়াকেও বিবর্তন এর বিবেচনার মাধ্যমে উন্নত করা যায়। তারা বলেন, ধর্ষক কর্তৃত্বের আকাঙ্ক্ষা থেকে ধর্ষণ করেছে, এটি ভুক্তভোগীকে এই ব্যাখ্যা দিতে পারে না যে কেন ধর্ষককে যৌনতাড়িত (sexually motivated) বলে মনে হয়েছিল। বিবর্তনের বিবেচনাসমূহ এক্ষেত্রে এর আবেগজনিত যন্ত্রণাকেও ব্যাখ্যা করতে পারে। এগুলোর দ্বারা এটাকেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে কেন ধর্ষকের সঙ্গীর কাছে একে একধরনের বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে হতে পারে। তারা এও বলেন, এই ব্যাখ্যাগুলো জানার পর ভুক্তভোগীর সঙ্গী সাহায্য পেতে পারেন, এবং এই ধর্ষণের ফলে তার প্রতিক্রিয়াকে তিনি আরও বেশি পরিবর্তিত করতে সক্ষম হতে পারেন।[5]
এ ন্যাচারাল হিস্টোরি অব রেপ এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ২০০৩ সালে ইভোল্যুশন, জেন্ডার এন্ড রেপ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করা হয়, যেখানে ধর্ষণের সমাজ-জীববিজ্ঞানগত তত্ত্বসমূহের বিরুদ্ধে ২৮ জন পণ্ডিতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়। এদের একজন অংশদাতা মাইকেল কিমেল থর্নহিল এবং পালমারের মতকে সমালোচিত করেন যেখানে থর্নহিল এবং পালমার দাবী করেছিলেন, ধর্ষক প্রতিরোধে অক্ষমতার ভিত্তিতে ভুক্তভোগী বাছাই করার দিকে যায়- এরকম না হয়ে বরং ধর্ষণের ভুক্তভোগীদের শিশু ও বয়স্ক নারীদের চেয়ে যৌন আকর্ষণীয় তরুণী নারী হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিমেল বলেন, তরুণী নারীদের বিবাহিত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম থাকে, এবং পুরুষের সাথে ডেটে যাবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে, আর তাই সামজিক উন্মুক্ততা (social exposure) ও বৈবাহিক মর্যাদার (marital status) কারণে তাদের ধর্ষিত হবার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি থাকে।[9] থর্নহিল এবং পালমার ইভোল্যুশনারি সাইকোলজি জার্নালে এই সমালোচনার জবাব দেন।[10]
স্মিথ এট আল. (২০০১) থর্নহিল ও পালমারের প্রকল্পের সমালোচনা করেন যা বলে, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ধর্ষণের প্রবণতা মনোবিজ্ঞানগত অভিযোজন দ্বারা বিবর্তিত হয়েছে। তারা একটি যোগ্যতার খরচ/সুবিধা গাণিতিক মডেল (cost/benefit mathematical model) তৈরি করেন এবং এখানে নির্দিষ্ট কিছু প্যারামিটার ব্যবহার করে (এগুলোর কিছু প্যারামিটার প্যারাগুয়ের আচে (Aché) জনগোষ্ঠীর উপর করা গবেষণার ভিত্তিতে হিসাব করা হয়) জনপূর্ণ করেন। তাদের এই মডেলটি প্রস্তাব করে, ২৫ বছরের সাধারণ পুরুষের মধ্যে ভবিষ্যৎ প্রজনন মান (future reproductive value) দশ ভাগের একভাগ বা তার চেয়েও কম হলেই সাধারণত তার মধ্যে ধর্ষণের জন্য একটি ইতিবাচক খরচ/সুবিধা অনুপাত ( cost/benefit fitness ratio) থাকবে। তাদের এই মডেল ও প্যারামিটারের হিসাবে, তারা প্রস্তাব করেন বেশিরভাগ পুরুষের ক্ষেত্রে ধর্ষণ যোগ্যতার সুবিধা (net fitness benefit) প্রদান করবে, এর সম্ভাবনা অনেক কম।[11][12]
ধর্ষণ সংক্রান্ত বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান তত্ত্বগুলোকে আরও বেশি শক্তিশালী সমালোচনা থেকে রক্ষা করার জন্য ভ্যানডারমাসেন (২০১০) এই দৃষ্টিভঙ্গির বেশ কিছু দিকের সমালোচনা করেন। তিনি থর্নহিল ও পালমারের দৃষ্টিভঙ্গিকে "চরম" (extreme) (পৃষ্ঠা ৭৫৬) বলে আখ্যা দেন, কারণ তারা ধর্ষণের ক্ষেত্রে অযৌন তাড়ণার প্রভাব ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হন। ভ্যান্ডারমাসেন থর্নহিল ও পালমারের ধর্ষণ সংশ্লিষ্ট সহিংসতার কারণে ঘটা মানসিক আঘাত (psychological trauma) সংক্রান্ত তথ্যের মধ্যে দুটো সমস্যার উল্লেখ করেন। প্রথমত তথ্যটি ভুলভাবে এবং বিভ্রান্তিকরভাবে বইতে উল্লেখ করা হয়ছে, এখানে থর্নহিল ও পালমারের "প্রতিসজ্ঞা প্রকল্প" (counterintuitive hypothesis) এর কথা (পৃষ্ঠা ৭৪৪) অস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যা অনুসারে, ধর্ষণের সময় যত বেশি শারীরিক সহিংসতার আশ্রয় নেয়া হবে মানসিক যন্ত্রণা তত কম হবে। দ্বিতীয়ত, আরও সাম্প্রতিক গবেষণা এই প্রকল্পকে সমর্থন করেনি। এক্ষেত্রে নারীবাদী বিবর্তনগত গবেষক বারবারা স্মাটস এর কাজের অংশের ভিত্তিতে ভ্যান্ডারমাসেন বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের সাথে নারীবাদী তত্ত্বসমূহ (feminist theories) সম্মিলিত করে একটি অধিক মধ্যমপন্থী অবস্থান উপস্থাপন করেছেন।[13]
হ্যামিলটন (২০০৮) থর্নহিল ও পালমারের দেয়া ধর্ষণের সংজ্ঞার সমালোচনা করেন, যেখানে প্রজননক্ষম বয়সে নারীর যোনিতে বলপূর্বক ভেদ করাকে ধর্ষণ বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। তিনি প্রস্তাব করেন, ধর্ষণের সংজ্ঞায় পুরুষ ধর্ষণ, প্রজননক্ষম বয়সের বাইরের নারীকে ধর্ষণ, হত্যা ধর্ষণ (murderous rape), ধর্ষণের অ-যোনিগত (non-vaginal ) ধরনকে বাদ দেয়ার ফলেই তাদের প্রকল্পটি যেন কাল্পনিকভাবে নিশ্চয়তা লাভ করেছে যে, ধর্ষণ একটি বিবর্তিত প্রজননগত কৌশল, অপরাধ বা সহিংসতা নয়। হ্যামিলটন বলেন বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান ধর্ষণকে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয় কারণ, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের মানদণ্ডতেই শিশু বা পুরুষ ধর্ষণ, বা অ-যোনি ধর্ষণ বাদ পড়ে যাবে কারণ এগুলো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে কোন ধরনের প্রজননগত সুবিধা দান করেনি।[14]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.