শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
সোমালিয়ায় জলদস্যুতা
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
Remove ads
সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুতা একবিংশ শতকের প্রথম দিকে সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক জাহাজগুলোর জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।[১] ২০০৫ সাল থেকে, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, জলদস্যুতা ঘটনা বৃদ্ধির উপর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।[২][৩] ওসানস বিয়ন্ড পাইরেসির এক জড়িপ অনুসারে, জলদস্যুতার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত খরচসহ বছরে প্রায় $৬.৬ থেকে ৬.৯ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে যা বিশ্ব বাণিজ্যে প্রভাব ফেলছে।[৪] জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইকনমিক রিসার্চ এর এক জড়িপে বলা হয়, জলদস্যুতার বৃদ্ধির ফলে জলদস্যুতার সাথে সম্পর্কিত লাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রকোপও বৃদ্ধি পেয়েছে। বীমা কোম্পানিগুলো জলদস্যু আক্রমণ থেকে মুনাফা অর্জন করছে, জলদস্যুতার প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য বীমার প্রিমিয়ামের পরিমাণও বেড়ে গিয়েছে।[৫]

জাতসিংঘের ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের উৎস থেকে জানা যায় সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতা মূলত এই উপকূলে অবৈধভাবে মাছ ধরার ফলে সৃষ্টি হয়েছিল।[৬][৭] ডিআইডব্লিউ এবং মার্কিন হাউজ আর্মড সার্ভিসেস কমিটির মতে, বিদেশী জাহাজ দ্বারা সোমালি জলের মধ্যে বিষাক্ত বর্জ্য ডাম্পিং করার ফলে স্থানীয়দের পরিবেশ বসবাসের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিল। এর প্রতিবাদে স্থানীয় জেলেরা সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে বিদেশী জাহাজ এ অঞ্চলে প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে বিকল্প আয় হিসেবে তারা বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ মুক্তিপণের জন্য ছিনতাই শুরু করে।[৫][৮] ২০০৯ সালের ওয়ার্ডিরনিউজ কর্তৃক পরিচালিত এক জড়িপে দেখা যায় প্রায় ৭০ শতাংশের মত উপকূলবর্তী সম্প্রদায় দেশের জলসীমার মধ্যে বিদেশী জাহাজের প্রবেশ বন্ধে জলদস্যুতাকে শক্তভাবে সমর্থন করে। জলদস্যুরা এটাও বিশ্বাস করে যে তারা তাদের মাছ ধরার অঞ্চল রক্ষা করছে, ন্যায় বিচারের মাধ্যমে দেশের সামুদ্রিক সম্পদ বহি:দেশের কাছ থেকে রক্ষা কর চলেছে।[৯][১০][১১] কিছু কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমালিয়ায় উপযোগী কোস্টগার্ড বাহিনী না থাকায় এবং দেশে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ায় সামরিক বাহিনীর সদস্য, স্থানীয় জেলেরা একত্রিত হয়ে দেশের জলসীমা রক্ষায় বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পাহারায় নিউজিত রয়েছে। এ ধরনের সংবাদ মূলত জলদস্যুতা সমর্থিত নেটওয়ার্ক থেকেই বেশি শুনতে পাওয়া যায় যেমন, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক কোস্ট গার্ড যা জলদস্যুদের প্রাথমিক প্রেরণা হিসেবে তাদের উৎসা দিয়ে থাকে।[১২] যাইহোক, জলদস্যুতা যেহেতু অত্যধিক লাভজনক হয়ে উঠেছে সুতরাং অন্যান্য প্রতিবেদন অনুসারে, মূলত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার ইচ্ছাই জলদস্যুদের জলদস্যুতা পেশা বেছে নেওয়ার প্রধান করাণ।[১৩][১৪][১৫]
সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স ১৫০ হল একটি বহুজাতিক টাস্ক ফোর্স জোট যা সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতা বন্ধের জন্য বা প্রতিরোধের জন্য মেরিটাইম সিকিউরিটি প্রোটোকল এরিয়া দ্বারা এডেন উপসাগরে গঠিত হয়।[১৬] এ অঞ্চলে জলদস্যুতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতও এর প্রতিরোধে নজর দেয় কারণ তাদের অধিকাংশ জাহাজ এডেন উপসাগর এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। ভারতীয় নৌবাহিনী এ অঞ্চলে জলদস্যুতা প্রতিরোধে ২৩শে অক্টোবর ২০০৮ সালে একটি যুদ্ধজাহাজ নিয়োজিত করে। সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে রাশিয়াও ঘোষণা দেয় তারাও জলদস্যুতা প্রতিরোধে জোটের সাথে একীভূত হবে।[১৭] কিছু কিছু প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সোমালিয়ার কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তা জলদস্যুদের এ কুকর্মের সাথে জড়িত।[১৮] উত্তর-কেন্দ্রিক সোমালিয়ার গ্যালমাদাগ প্রশাসন এ সকল জলদস্যু গ্যাংদের দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ইসলামিক জঙ্গি বা বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সাথে লড়াইয়ের জন্য ব্যবহার করে থাকে।[১৯] যাইহোক, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের ভাষ্যমতে, দেশটির সাবেক ও বর্তমান উত্তর-পূর্ব সোমালিয়ার স্বায়ত্বশাসিত পান্টল্যান্ড অঞ্চলের উভয় প্রশাসনই জলদস্যুতার সাথে জড়িত।[১৮] আন্তর্জাতিক জোট জলদস্যুদের সমুদ্রে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি তাদের লোকানো বিভিন্ন স্থানেও আক্রমণ করে থাকে।[২০][২১] ফলে ২০১০ এর প্রথম ছয় মাসেই জলদস্যুদের দ্বারা আটক জাহাজের সংখ্যা ৮৬ থেকে কমে ৩৩-এ নেমে আসে। এছাড়াও এর ফলে জলদস্যুরা এ অঞ্চল ত্যাগ করে সোমালি বেসিন ও ভারত মহাসাগরের প্রতি ঝুঁকে পরে।[২০][২২][২৩] ২০১১-এর শেষ দিকে জলদস্যুরা এডেন অঞ্চল থেকে মাত্র চারটি জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলে নিতে সমর্থ হয়। অবশ্য তারা ৫২টি ভেসেলে হামলা পরিচালনা করে যদিও সফল হতে পারেনি।[২৪] ১৮ই অক্টোবর ২০১৩ সালে জলদস্যুরা একটি বড় জাহাজ ছিনতাই করে এবং ৫২ জনকে বন্দি হিসেবে আটক রাখে।[২৫]
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ

১৯৮০ এর দশকের প্রথম দিকে, সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে, সোমালি মৎস্য মন্ত্রণালয় এবং উপকূলীয় উন্নয়ন সংস্থা (CDA) ক্ষুদ্র মাছুয়ারা চাষ ও মৎস্য চাষের জন্য কৃষি ও মৎস্য সমবায় প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে একটি উন্নয়ন কর্মসূচী চালু করে। সোমালিয়ার মৎস্য শিল্পের অব্যবহৃত সামুদ্রিক মজুদের কারণে এর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে বিবেচনা করে বিভিন্ন মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এটি বিদেশী বিনিয়োগের তহবিলও গ্রহণ করে। এই সময়ে সরকার আনুষ্ঠানিক লাইসেন্স বা যৌথ উদ্যোগ চুক্তির মাধ্যমে বিদেশী মাছ ধরা অনুমোদন করে, ইরাকি-সোমালি সিয়াদকো এবং ইতালীয়-সোমালি সোমিটাল উদ্যোগের মতো দুটি জাতীয় অংশীদারত্ব গঠন করে।[২৬]
কেন্দ্রীয় সরকারের পতনের পর ১৯৯০-১৯৯১ সালে চলমান গৃহযুদ্ধে সোমালি নৌবাহিনী বিলুপ্ত হয়ে যায়। সোমালিয়ার আঞ্চলিক জলসীমা রক্ষাহীন হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, বিদেশী মাছ ধরার ট্রলারগুলি অবৈধভাবে সোমালিয়ার উপকূলে মাছ ধরা শুরু করে এবং জাহাজগুলি সোমালি উপকূলে শিল্প ও অন্যান্য বর্জ্য ফেলতে শুরু করে। এটি মাছের মজুদ হ্রাসের দিকে নিয়ে যায় এবং স্থানীয় জেলেদের জীবিকা রক্ষার জন্য একত্রিত হতে শুরু করে। এর ফলে অস্ত্র ব্যবহার এবং বিদেশী জাহাজ দখল করে মালিকদের মুক্তিপণ দাবি করা সহ বিভিন্ন কৌশল নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।[২৭][২৮][২৯]
২০০০ সালের দিকে উপকূলীয় অঞ্চলে জলদস্যু কার্যক্রম শুরু হয়, তবে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত [৩০] সোমালিয়ার যুদ্ধের সময় এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ইসলামি আদালত ইউনিয়নের কয়েক মাস আগে দক্ষিণ সোমালিয়ার ৬ মাসের শাসনামলে জলদস্যু কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় কারণ আদালতগুলি আগ্রাসী জলদস্যু বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। [৩১] ২০০৭ সালের শুরুর দিকে সংগঠনটির পতনের পর, জলদস্যু কার্যক্রম তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায় বৃদ্ধি পায়। খবরে পাওয়া যায়,[৩২] এই প্রাথমিক পর্যায়ে ট্রানজিশনাল ফেডারেল গভর্নমেন্টের (টিএফজি) কিছু উপাদান লাভজনক জলদস্যু ব্যবসায় জড়িত ছিল। মুক্তিপণের অর্থের লাভাদায়ের দিকটি লক্ষ্য করে কিছু পুঁজিপতি [৩৩] এবং সাবেক প্রাক্তন মিলিশিয়ান জলদস্যুদের সাথে সমানভাবে লাভ ভাগ করে জলদস্যু কার্যকলাপে অর্থায়ন শুরু করে। বেশিরভাগ ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে জলদস্যুরা তাদের বন্দীদের ক্ষতি করেনি।[৩৪]
বাংলাদেশি জাহাজ জিম্মি
- সোমালিয়ার জলদস্যুরা ১২ মার্চ ২০২৪ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করে। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের এই জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড। জাহাজে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন। জিম্মি ২৩ নাবিককে মুক্তি দিতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করে জলদস্যুরা। শিগগিরই না দিলে তাদের একে একে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় তারা।[৩৫] দর কষাকষির ৩১ দিন পর হেলিকপ্টার থেকে ডলার ফেলার পরই তাদের মুক্তি দেয়া হয়। [৩৬] মুক্তিপণ পাঁচ মিলিয়ন ডলার।[৩৭]
- এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই গ্রুপের জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’ ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা। তিন মাসের মাথায় মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ছাড়িয়ে এনেছিল কবির গ্রুপ।[৩৮]
Remove ads
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads