হংকং
দক্ষিণ-পূর্ব চীনের একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ও অতিমহানগরী / From Wikipedia, the free encyclopedia
হংকং বা হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল গণচীনের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ও মহানগরী। ম্যান্ডারিন চীনা ভাষায় হংকংকে শিয়াংকাং (চীনা: 香港) বলে। হংকং অঞ্চলটি মূল চীনা ভূখণ্ড থেকে দক্ষিণ চীন সাগরে ভেতরে প্রসারিত হয়েছে। এর উত্তরে চীনের কুয়াংতুং প্রদেশ এবং পূর্ব, পশ্চিম আর দক্ষিণে দক্ষিণ চীন সাগর অবস্থিত। পার্ল নদীর বদ্বীপের পূর্বভাগে অবস্থিত এই অঞ্চলটি ২৬০টিরও বেশি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যাদের মধ্যে প্রধানতম দ্বীপটি হল হংকং দ্বীপ। লানথাউ দ্বীপটিও উল্লেখযোগ্য। দ্বীপগুলির বাইরে হংকংয়ের অধীনে কাওলুন উপদ্বীপ ও কাওলুন উপদ্বীপের উত্তরে নতুন অঞ্চল বা নিউ টেরিটরিজ নামের একটি অঞ্চল আছে, যা কুয়াংতুং প্রদেশে অবস্থিত একটি ছিটমহল। হংকং দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম তীরে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া এলাকাটি হংকংয়ের বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র। প্রায় ১১০২ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট হংকংয়ে ২০১৬ সালের জনগণনা অনুযায়ী ৭৫ লক্ষেরও বেশি লোকের বাস, ফলে এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলির একটি। হংকংয়ে একটি মিশ্র সংস্কৃতি বিদ্যমান। এখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় ধরনের সংস্কৃতির ছুটি ও উৎসবগুলি পালন করা হয়, যেমন চীনা চান্দ্র নববর্ষ এবং বড়দিন। হংকংয়ের বহু লোক ইংরেজি ও চীনা উভয় ভাষাতেই কথা বলে।
হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল 香港特別行政區 | |
---|---|
রাজধানী | নেই[2] |
বৃহত্তম জেলা (জনসংখ্যা) | শা তিন জেলা |
সরকারি ভাষা | চীনা,[3] ইংরেজি |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | হং কঙীয় |
সরকার | সংকর শাসনতন্ত্র |
• চিফ এক্সিকিউটিভ | জন লী কা-চিউ |
প্রতিষ্ঠা | |
জানুয়ারি ২৫ ১৮৪১ | |
• নানকিংয়ের চুক্তি | আগস্ট ২৯ ১৮৪২ |
• জাপানী আগ্রাসন | ডিসেম্বর ২৫ ১৯৪১ – আগস্ট ১৫ ১৯৪৫ |
• সার্বভৌমত্ব স্থানান্তর | জুলাই ১ ১৯৯৭ |
আয়তন | |
• মোট | ২,৭৫৫ কিমি২ (১,০৬৪ মা২) (১৬৮তম) |
• পানি (%) | ৫৯.৮ [4] |
জনসংখ্যা | |
• ২০০৬ আনুমানিক | ৬,৮৬৪,৩৪৬ (১০০তম) |
• ২০০১ আদমশুমারি | ৬,৭০৮,৩৮৯ |
• ঘনত্ব | ৬,৩৫২/কিমি২ (১৬,৪৫১.৬/বর্গমাইল) (৩য়) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০০৬ আনুমানিক |
• মোট | $২৫৪.২ বিলিয়ন (৪০তম) |
• মাথাপিছু | $৩৮,১২৭ (৬ষ্ঠ) |
জিনি (২০০১) | ৫২.৩ উচ্চ |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৪) | ০.৮৯১ অতি উচ্চ · ১৫তম |
মুদ্রা | হংকং ডলার (HKD) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+৮ (এইচকেটি) |
কলিং কোড | +৮৫২ (মাকাও থেকে ০১) |
ইন্টারনেট টিএলডি | .hk |
ওয়েবসাইট www |
আদিতে হংকং কৃষিজীবী ও মৎস্যশিকারীদের কতগুলি গ্রাম নিয়ে গঠিত জনবিরল একটি এলাকা ছিল।[5] কিন্তু বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও সমুদ্র বন্দরে পরিণত হয়েছে।[6] একটি উৎকৃষ্ট প্রাকৃতিক গভীর পোতাশ্রয়ের কারণে হংকং জাহাজ পরিবহনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকিং, বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হংকংয়ের অর্থনীতির ভিত্তি। এছাড়া পর্যটন ও মৎস্য আহরণও দুইটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত। অধিকন্তু, হংকং বিশ্বের অন্যতম প্রধান চলচ্চিত্র নির্মাণ কেন্দ্র। ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হংকং বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। ২০২০ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রসমূহের সূচক তালিকাতে হংকং ৬ষ্ঠ অবস্থানে এবং এশিয়ার মধ্যে ৪র্থ অবস্থানে ছিল (টোকিও, সাংহাই ও সিঙ্গাপুরের পরে)।[7] হংকং বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রপ্তানিকারক ও ৯ম বৃহত্তম আমদানিকারক অঞ্চল।[8][9]
হংকংয়ে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের বাস। ১৮২১ সালে ব্রিটিশ বণিকেরা হংকংয়ের পোতাশ্রয় ব্যবহার করা শুরু করে। ১৯শ শতকের মধ্যভাগে যুক্তরাজ্য ও চীন একাধিক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ১৮৪২ সালে প্রথম আফিমের যুদ্ধশেষে চীনের ছিং সাম্রাজ্য ব্রিটিশদের কাছে হংকং দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেয়।[5] এরপর ১৮৬০ সালে দ্বিতীয় আফিমের যুদ্ধের পরে উপনিবেশটির সাথে কাওলুন উপদ্বীপটি যোগ করা হয়। তারও পরে ১৮৯৮ সালে যুক্তরাজ্যে নতুন অঞ্চল বা নিউ টেরিটোরিজ নামক অঞ্চলটিকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিলে হংকংয়ের কলেবর আবারও বৃদ্ধি পায়।[10][11] ১৯৮৪ সালে যুক্তরাজ্যে সমগ্র হংকং অঞ্চলকে চীনের কাছে ফেরত দেবার ব্যাপারে সম্মত হয় এবং ১৯৯৭ সালে এটিকে চীনের কাছে ফেরত দেওয়া হয়।[12] তবে চীনারা হংকংকে একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের মর্যাদা দেবার ব্যাপারে সম্মত হয়, যেখানে চীনের বাকী অংশে প্রচলিত সব নীতি বা নিয়ম হংকংয়ের অনুসরণ করতে হয় না। একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে হংকংয়ের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি চীনা মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক, যে ব্যাপারটি "এক দেশ, দুই ব্যবস্থা" নামক মূলনীতি দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে।[13]
হংকং একটি অতি উন্নত অঞ্চল। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে এর অবস্থান ৪র্থ ছিল।[14] হংকংয়ের অধিবাসীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ২০১৯ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ ছিল।[14] ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই যাতায়াতের জন্য গণপরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করে থাকে।[15] যদিও হংকং মহানগরীর মাথাপিছু স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুযায়ী) বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ, তা সত্ত্বেও এখানে গুরুতর অর্থনৈতিক বৈষম্য বিদ্যমান।[16]