আরতুগ্রুল বা আরতুগ্রুল গাজী (উসমানীয় তুর্কি: ارطغرل; তুর্কমেনীয়: Ärtogrul Gazy) ছিলেন ১৩শ শতাব্দীর একজন কায়ি গোত্রের বে, যিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের পিতা ছিলেন।[9] উসমানীয় ঐতিহ্য অনুসারে, তিনি ওঘুজ তুর্কিদের (তৎকালীন সময়ে তুর্কমান নামে পরিচিত)[10] কায়ি গোত্রের নেতা সুলেইমান শাহের পুত্র ছিলেন (এই দাবি অনেক ঐতিহাসিকদের সমালোচনার মুখে পড়েছে)।[lower-alpha 1] এই তুর্কমানরা মঙ্গোল বিজয় থেকে বাঁচতে পশ্চিম মধ্য এশিয়া থেকে আনাতোলিয়ায় এসেছিল।[7][12]
আরতুগ্রুল Ertuğrul ارطغرل | |||||
---|---|---|---|---|---|
বে গাজী | |||||
কায়ি গোত্রের বে | |||||
রাজত্ব | ১২৩২ - ১২৮০ | ||||
পূর্বসূরি | সুলেইমান শাহ | ||||
উত্তরসূরি | প্রথম উসমান | ||||
আনাতোলিয়ান সেলজুক রাজ্যের সুগুতের বে | |||||
রাজত্ব | ? - ১২৮০ | ||||
উত্তরসূরি | প্রথম উসমান | ||||
জন্ম | আনু. ১১৯১–১১৯৮ এর মধ্যে[1] আহালাত, বিঙ্গল[1] | ||||
মৃত্যু | ১২৮৭[1] সুগুত, রুম সালতানাত | ||||
সমাধি | আরতুগ্রুল গাজীর সমাধি | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | হালিমা হাতুন | ||||
বংশধর | গুন্দুজ বে[2][3][4] সরু বাতু সাভেসি বে[2][3][5] প্রথম উসমান | ||||
| |||||
পিতা | সুলেইমান শাহ[7][8] | ||||
মাতা | হায়মা হাতুন[7] | ||||
ধর্ম | ইসলাম |
জীবনী
আরতুগ্রুলের জীবন সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায় নি, শুধু এটুকু জানা যায় যে তিনি উসমানের পিতা ছিলেন। ইতিহাসবিদরা এভাবে এক শতাব্দীরও বেশি সময় পরে উসমানীয়দের দ্বারা তাঁর সম্পর্কে লিখিত গল্পগুলির উপর নির্ভর করতে বাধ্য হন, যেগুলি সন্দেহজনক যথার্থতা।[13][14]
উসমানীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আনু. ১০০-১৫০ বছর পর লিখিত সূত্র অনুসারে, ওঘুজ খানের মাধ্যমে আরতুগ্রুলের বংশ নূহের সাথে পরিচিত হয়। উসমানীয় ঐতিহাসিক এবং কারা কায়ুনলুর রাষ্ট্রদূত শুকরুল্লাহ বলেছেন যে, আরতুগ্রুলের বংশ ওঘুজ খানের পুত্র গোকাল্পের কাছে যায়। লেখক বলেছেন যে, মঙ্গোলীয় লিপিতে লেখা একটি বই থেকে জাহান শাহের দরবারে এই তথ্য দেখানো হয়েছিল।[15]
উসমানের সময়কার একটি তারিখবিহীন মুদ্রায় "আরতুগ্রুলের পুত্র উসমান কর্তৃক প্রণীত" লেখা থেকে জানা যায় যে, আরতুগ্রুল ছিলেন একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব।[9]:৩১ অন্য একটি মুদ্রায় "উসমান বিন আরতুগ্রুল বিন গুন্দুজ আল্প" লেখা আছে,[7][8] যদিও আরতুগরুলকে ঐতিহ্যগতভাবে সুলেইমান শাহের পুত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[12]
অনেক তুর্কি সূত্র অনুসারে, আরতুগ্রুলের তিন ভাই ছিল। যারা হলেন সঙ্গুরতেকিন, গুন্দুগ্দু এবং দুন্দার।[3] পিতার মৃত্যুর পর, আরতুগ্রুল তার মা হাতুনের সাথে দুন্দার এবং কায়ি গোত্রে তার অনুসারীরা পশ্চিমে আনাতোলিয়ায় চলে আসেন এবং রুমের সেলজুক সালতানাতে প্রবেশ করেন, এবং তার অন্য দুই ভাই তাদের গোষ্ঠীকে পূর্ব দিকে নিয়ে যান।[17][18][19] এভাবে কায়ি গোত্র দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই পরবর্তী ঐতিহ্য অনুসারে, আরতুগ্রুল তার কায়ি গোত্রের প্রধান ছিলেন।
১২৩০ সালে তিনি ওঘুজ তুর্কিদের কায়ি গোত্রের নেতৃত্ব লাভ করেন। বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে সেলজুকদের সহকারী হওয়ার ফলশ্রুতিতে তিনি নেতৃত্ব পান। রোমের সেলজুক তুর্কি প্রথম কায়কোবাদ কর্তৃক তিনি আঙ্গোরার (বর্তমান আঙ্কারা) নিকট কারাকা ডাগের ভূমি লাভ করেন। একটি সূত্রমতে আরতুরুল সেলজুকদের নেতার ভূমি প্রদানের কারণ ছিল যাতে আরতুগ্রুল বাইজেন্টাইন বা অন্যান্য প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আসা হামলা প্রতিহত করতে পারেন।[20] পরবর্তীতে তিনি সুগুত গ্রাম ও একে ঘিরে থাকা জায়গা লাভ করেন যা ১২৩১ সালে তিনি জয় করেছিলেন। এই গ্রামটি ১২৯৯ সালে তার পুত্র সুলতান উসমান গাজী খান কর্তৃক উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়।[8] উসমানের মাকে পরবর্তী পৌরাণিক কাহিনীতে হালিমা হাতুন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এবং আরতুগ্রুল গাজী সমাধির বাইরে একটি কবর রয়েছে যা এ নাম বহন করে, তবে এটি বিতর্কিত।[21][22]
উসমান ছাড়াও তাঁর আরও দুটি পুত্র ছিল: সাভেসি বে[8][23] এবং গুন্দুজ।[2][24][25] তাঁর পুত্র উসমান এবং তাদের বংশধরদের মতো, আরতুগ্রুলকে প্রায়শই গাজী হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[26]
উত্তরাধিকার
আরতুগ্রুলকে উৎসর্গীকৃত একটি সমাধি এবং মসজিদ সুগুতে প্রথম উসমান দ্বারা নির্মিত হয়েছিল বলে জানা যায়, তবে বেশ কয়েকটি পুনর্নির্মাণের কারণে এই কাঠামোগুলির উৎস সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু বলা যায় না। বর্তমান সমাধিসৌধটি ১৯ শতকের শেষের দিকে সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ (শাসনকাল ১৮৭৬–১৯০৯) দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। সুগুত শহরটি প্রাথমিক উসমানদের স্মৃতিতে একটি বার্ষিক উৎসব উদযাপন করে।[9]:৩৭[27]
১৮২৬ সালে উসমানীয় সেনাবাহিনীর আসাকির-ই মনসুর-ই মুহাম্মেদিয়েকে তার সম্মানে নামকরণ করা হয়।[28] ১৮৬৩ সালে উৎক্ষেপণ করা উসমানীয় ফ্রিগেট আরতুগ্রুলের নামকরণ করা হয় তার নামে। দ্বিতীয় আবদুল হামিদেরও একই নামের একটি ইয়ট ছিল।[29] তুরস্কের ইস্তাম্বুলের আরতুগ্রুল টেক্কে মসজিদ (১৯ শতকের শেষের দিকে) এবং তুর্কমেনিস্তানের আশাখাবাদের আরতুগ্রুল গাজী মসজিদ (১৯৯৮ সালে সম্পন্ন) নামকরণ করা হয়েছে। তুর্কমেনিস্তানের মসজিদটি তুর্কি সরকার তুরস্ক ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যে সংযোগের প্রতীক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল।[30][31]
তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাতে স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভকে ঘিরে থাকা বেশ কয়েকটি মূর্তির মধ্যে আরতুগ্রুল অন্যতম। তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট সাপারমুরাত নিয়াজভের লেখা আধ্যাত্মিক নির্দেশিকা রুহনামায় মূর্তিগুলো প্রশংসিত হয়েছে।[32] আরতুগ্রুল মূর্তিটি ২০০১ সালের একটি স্মারক মুদ্রাতেও চিত্রিত করা হয়েছে।[33]
২০২০ সালে পাকিস্তানের লাহোরে একটি বেসরকারী সমবায় হাউজিং সোসাইটি ঘোড়ার পিঠে এরতুগ্রুলের দুটি মূর্তি স্থাপন করেছিল। তারা ২০১৪ সালের টিভি সিরিজ দিরিলিস:আরতুগ্রুল দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।[34][35] ২০২০ সালে তুরস্কের ওড়ুতে এরতুগ্রুলের একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়। তবে আবক্ষ মূর্তিটি ঐতিহাসিক চরিত্রের পরিবর্তে টিভি সিরিজের অভিনেতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করার পরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এটি সরিয়ে ফেলে।[36][37]
- ১৯০১ সালে ফাউস্টো জোনারো দ্বারা অর্ডু আরতুগ্রুল অশ্বারোহী রেজিমেন্টের চিত্রকর্ম
কাল্পনিক চরিত্র
আরতুগ্রুলকে তুর্কি টেলিভিশন সিরিজ কুরুলুস (১৯৮৮)-এ চিত্রিত করা হয়েছে, একই নামের একটি উপন্যাস থেকে অভিযোজিত,[38] দিরিলিস: আরতুগ্রুল (২০১৪-২০১৯)[39] এবং সিক্যুয়াল কুরুলুস: উসমান (২০১৯)।[40]
আরও দেখুন
টীকা
- These historians argue either that the Kayı genealogy was fabricated in the fifteenth century, or that there is otherwise insufficient evidence to believe in it.[11]
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.