কিউবা
ক্যারিবীয় অঞ্চলের রাষ্ট্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ক্যারিবীয় অঞ্চলের রাষ্ট্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কিউবা (স্পেনীয়: Cuba কুবা) ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম ও সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত দ্বীপ। দ্বীপটি আশেপাশের অনেকগুলি ছোট দ্বীপের সাথে মিলে কিউবা প্রজাতন্ত্র (República de Cuba রেপুব্লিকা দ়ে কুভ়া) গঠন করেছে। কিউবা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। ক্যারিবীয় সাগর ও মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে সমস্ত সমুদ্রপথের উপর দেশটি অবস্থিত। কিউবার উত্তরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, পূর্বে টার্ক্স ও কেইকোস দ্বীপ এবং হাইতি, পশ্চিমে মেক্সিকো, আর দক্ষিণে জ্যামাইকা ও কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ। উর্বর ভূমি এবং আখ ও তামাকের ফলনের প্রাচুর্যের ফলে কিউবা ইতিহাসের অধিকাংশ সময় ধরেই ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র।
কিউবা প্রজাতন্ত্র República de Cuba রেপুব্লিকা দে কুবা | |
---|---|
পতাকা | |
নীতিবাক্য: Patria O Muerte (স্পেনীয়) "Homeland or death" a | |
জাতীয় সঙ্গীত: La Bayamesa ("The Bayamo Song") | |
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | হাভানা |
সরকারি ভাষা | স্পেনীয় |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | কিউবান |
সরকার | কমিউনিস্ট রাষ্ট্র |
মিগুয়েল দিয়াজ কানেল | |
রাউল কাস্ত্রো | |
স্বাধীনতা স্পেন থেকে | |
• ঘোষিত | অক্টোবর ১০ ১৮৬৮ |
• প্রজাতন্ত্র ঘোষণা | মে ২০ ১৯০২ |
জানুয়ারি ১ ১৯৫৯ | |
• পানি (%) | নগণ্য |
জনসংখ্যা | |
• ২০১৪ আদমশুমারি | ১১,১৭৭,৭৪৩ |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০০৬ আনুমানিক |
• মোট | ৪৪.৫৪ বিলিয়ন ডলার (২০০৬-এ অনুমিত) (রাংক নেই) |
• মাথাপিছু | ৩,৯০০ ডলার (রাংক নেই) |
মানব উন্নয়ন সূচক (2014) | 0.769[1] উচ্চ · 67th |
মুদ্রা | পেসো(CUP )রূপান্তরযোগ্য পেসো d (সিইউসি) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি-৫ (ইএসটি) |
ইউটিসি-৪ ((মার্চ ১১ থেকে শুরু; নভেম্বর ৪-এ শেষ)) | |
কলিং কোড | ৫৩ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .সিইউ |
হাভানা কিউবার রাজধানী।
কিউবা হাইতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপ এবং জ্যামাইকার খুব কাছে অবস্থিত বলে ঐ সব দেশ থেকে কিউবায় প্রচুর লোক যাওয়া-আসা করেন। এই যাতায়াতের ফলে কিউবাতে বহু ধরনের গোষ্ঠী ও সংস্কৃতির সহাবস্থান ঘটেছে। কৃষিতে সমৃদ্ধ হলেও কিউবা খুব কম কৃষিদ্রব্যই রপ্তানি করে, এর মধ্যে আছে চিনি, তামাক, লেবুজাতীয় ফল এবং বিভিন্ন ধরনের উৎপাদিত দ্রব্য।
উর্বর ভূমি, অসংখ্য পোতাশ্রয় এবং খনিজের ভাণ্ডারের জন্য দেশটিকে স্পেন, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে কিউবার প্রতি বন্ধু হিসাবে হাত বাড়িয়ে দেয়। কিউবা ৪০০ বছর ধরে স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। স্পেনের কনকিস্তাদোরেরা এই দ্বীপকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকাতে আক্রমণ চালাত। ১৯শ শতকের মধ্যভাগে, স্পেনের অধিকাংশ উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভ করার বহু দশক পর, কিউবার লোকেরা একটি স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৮৬৮ সাল নাগাদ কিউবার লোকেরা তাদের তিনটি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথমটিতে লড়া শুরু করে। ১৮৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে প্রবেশ করে কিউবার পক্ষ নিয়ে স্পেনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তারা কিউবাকে মার্কিন প্রতিরক্ষার অধীনে স্বাধীন ঘোষণা করে।
১৯০২ সালে কিউবানরা স্বায়ত্তশাসন শুরু করে, যদিও দেশটিতে মার্কিন প্রভাব তখনও প্রবল ছিল। ১৯০৩ সালের এক চুক্তি অনুযায়ী কিউবার গুয়ান্তানামো উপসাগর এলাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও একটি নৌঘাঁটি চালু রেখেছে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগের অধিকাংশ সময় জুড়ে কিউবার সরকার ধারাবাহিকভাবে কিছু দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্রপতি ও স্বৈরিশাসকের অধীনে শাসিত হয়। ১৯৩৪ সাল থেকে সামরিক অফিসার ফুলগেনসিও বাতিস্তাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কখনো সামরিক স্বৈরশাসক, কখনো বেসামরিক রাষ্ট্রপতি, কখনও পর্দার আড়ালের সামরিক নেতা হিসেবে দেশটি শাসন করা শুরু করেন। ১৯৫০-এর দশকের মধ্যভাগে বহু কিউবান বাতিস্তার স্বৈরশাসন, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। বাতিস্তার বিরুদ্ধ প্রতিবাদ পরবর্তীতে কিউবান বিপ্লবে রূপ নেয়।
১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি বাতিস্তা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং কিউবায় একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রবর্তন করেন। তখন থেকেই কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কাস্ত্রো দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান এবং সব রকম নীতিবিষয়ক সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৯৬০-এর দশকে কাস্ত্রো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিশ্বের প্রধান সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৯৬১ সালে কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন কিউবা সরকারি ভাবে মার্কসবাদ গ্রহণ করে।
কাস্ত্রো সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন এ মার্ক্সবাদের যে রূপটি প্রচলিত ছিল, সেই মডেলটি গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি সুসংগঠিত ভাবে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল। তখন থেকে কিউবা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নীতি মেনে শাসিত হয়ে আসছে। কিউবা সম্পূর্ণভাবে কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণাধীন এবং দেশটির অর্থনীতিও রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত। সমাজতন্ত্রে কিউবার জনগণের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়টি বিসর্জন দেওয়া হয়। কমিউনিস্ট আদর্শ অনুসারে ধর্মপালন নিরুৎসাহিত করা হয়, তবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু কিউবার ইতিহাস ও সংস্কৃতি পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির মত না হওয়ায় কিউবার সমাজতন্ত্র সোভিয়েত মডেল পুরোপুরি অনুসরণ করতে পারেনি। যদিও কিউবার প্রশাসনিক দফতর ও সংস্থাগুলির কাঠামো সোভিয়েত ধাঁচের ছিল, তা সত্ত্বেও কাস্ত্রোই মূল প্রশাসনের মূল পরিচালক।
কিউবার প্রথম লিপিবদ্ধ ইতিহাস জানা যায় ১৪৯২ সালের অক্টোবর ২৮ তারিখ থেকে। এই দিন দিগ্বিজয়ী নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস তার প্রথম অভিযানে কিউবায় পৌঁছে এই অঞ্চলটিকে স্পেনের অধীন বলে দাবি করেন। কলম্বাস যুবরাজ জুয়ানার নামানুসারে এই দ্বীপটির নাম রেখেছিলেন আইলা জুয়ানা। তখন এই দ্বীপে আমেরিকার আদিবাসীরা বসবাস করতো যাদের নাম ছিল টাইনো এবং সিবোনেই। এরা মূলত উত্তর, দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক শতাব্দী পূর্বে জটিল প্রক্রিয়ায় এই দ্বীপে অভিবাসী হয়ে এসেছিল। টাইনোরা মূলত কৃষিকাজ করতো এবং আর সিবোনেইরা কৃষিকাজ এবং পশু শিকার উভয় কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতো। প্রাথমিক টাইনো সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য তামা ব্যবসা ছিল।
কিউবা একটি একদলীয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। এর শাসনযন্ত্র সম্পূর্ণভাবেই কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির অধীন। ১৯৭৬ সালে প্রণীত সংবিধান বাতিল করে কিউবায় ১৯৯২ সালে নতুন সংবিধান গৃহীত হয়, যা মার্ক্স, এঙ্গেল্স এবং লেনিনের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত। এই নবপ্রণীত সংবিধান অনুসারে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি "রাষ্ট্র এবং সমাজের নেতৃত্বপ্রদানকারী মূল চালিকাশক্তি" হিসেবে অভিহিত হয়েছে।
কিউবা প্রজাতন্ত্র অনেকগুলি দ্বীপের সমষ্টি। এদের মধ্যে প্রধান দ্বীপটি কিউবা দ্বীপ। ইসলা দে লা হুবেন্তুদ ২য় বৃহত্তম দ্বীপ। এছাড়াও আরও অনেক ছোট ছোট দ্বীপ কিউবার অন্তর্ভুক্ত।
যদিও কিউবা একটি একদলীয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। এটি মার্ক্স, এঙ্গেল্স এবং লেনিনের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত ও অর্থনীতিও রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তবুও এটি বর্তমানে বাজার অর্থনীতি এর ধারণা এর দিকে যাচ্ছে। এখন বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ এবং পশু পালন এর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষিকাজ কিউবাবাসীদের প্রধান উপজীবিকা। আবাদি জমির দুই তৃতীয়াংশে আখ চাষ। তামাক, কফি, ক্যাকাও, ফল, শাকসবজি, ভুট্টা, আলু, চাল প্রভৃতি প্রধান কৃষিপণ্য। কিউবা বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ। মেহগনি, সিডার, বিকলগ্রাম, মাজাগুয়া, টেকা প্রভৃতি কাঠের জন্য বিখ্যাত। খনিজ সম্পদে কিউবা সমৃদ্ধ। প্রধান প্রধান খনিজ সম্পদ হল - তামা, ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম, নিকেল, গন্ধক, ক্রোমাইট, কোবান্ট সিলিকা, রুপা, কয়লা ও তেল প্রভৃতি। কিউবা শিল্পে মোটামুটি সমৃদ্ধ। প্রধান প্রধান শিল্প হচ্ছে চিনি, সাবান, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ভোগ্যপণ্য, ইস্পাত শিল্প প্রভৃতি।
২০১৪ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী দেশটিতে জনসংখ্যা ১১,২৩৮,৩১৭ জন। অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১০২ জন জনসংখ্যা রয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.