ক্যানবেরা (ইংরেজি: Canberra) অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি অস্ট্রেলীয় রাজধানী অঞ্চলের উত্তর অংশটি গঠন করেছে। ক্যানবেরা একটি আধুনিক ও দ্রুত প্রসারমান শহর। আর্থ-ভৌগোলিকভাবে শহরটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বভাগে, অস্ট্রেলীয় আল্পস পর্বতমালার পাদদেশে, একটি সমতল কৃষিপ্রধান অঞ্চলে, মোলোংলো নদীর (মারামবিজি নদীর একটি উপনদী) তীরে অবস্থিত। সিডনি শহর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও মেলবোর্ন থেকে ৬৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শহরটি অস্ট্রেলিয়ার এই দুই প্রধানতম নগরীর মধ্যবর্তী একটি জায়গায় অবস্থিত। জনসংখ্যার বিচারে এটি অস্ট্রেলিয়ার ৮ম বৃহত্তম শহর ও অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরভাগের বৃহত্তম শহর; এখানে প্রায় ৪ লক্ষ লোক বাস করে।

দ্রুত তথ্য ক্যানবেরা, ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ...
ক্যানবেরা
Thumb
ক্যানবেরা থেকে দেখা মাউন্ট এইনসলি
Thumb
জাতীয় ক্যারিলন
Thumb
অস্ট্রেলীয় যুদ্ধ স্মরণিকা
Thumb
টেলস্ট্রা টাওয়ার
Thumb
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় গ্রন্থাগার
Thumb
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় চিত্রশালা
Thumb
সংসদ ভবন এবং পুরাতন সংসদ ভবন
Thumb
City map plan of Canberra
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক৩৫°১৭′৩৫″ দক্ষিণ ১৪৯°০৭′৩৭″ পূর্ব
জনসংখ্যা৪১০,৩০১ (২০১৭)[1] (৮ম)
 • জনঘনত্ব৫০৩.৯৩২/বর্গ কি.মি. (১,৩০৫.১৮/ব.মা.)
প্রতিষ্ঠার তারিখ১২ই মার্চ ১৯১৩
উচ্চতা৫৭৮ মি (১,৮৯৬ ফু)[2]
আয়তন৮১৪.২[3]
সময় অঞ্চলAEST (ইউটিসি+১০:০০)
 দিবালোক সংরক্ষণ সময়AEDT (ইউটিসি+১১:০০)
অবস্থান
  • সিডনি[4] থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ২৪৮ কি.মি. (বিন্যাসন ত্রুটি: invalid input when rounding মা.) দূরে
  • মেলবোর্ন[5] থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ৬৫৪ কি.মি. (বিন্যাসন ত্রুটি: invalid input when rounding মা.) দূরে
  • অ্যাডিলেড[6] থেকে পূর্ব দিকে ৯৫৮ কি.মি. (বিন্যাসন ত্রুটি: invalid input when rounding মা.) দূরে
  • ব্রিসবেন[7] থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ৯৪৫ কি.মি. (বিন্যাসন ত্রুটি: invalid input when rounding মা.) দূরে
  • পার্থ[8] থেকে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকে ৩০৮৭ কি.মি. (বিন্যাসন ত্রুটি: invalid input when rounding মা.) দূরে
রাজ্য নির্বাচনী এলাকা
  • ব্রিন্ডাবেলা
  • জিনিডেরা
  • কারাজং
  • মারামবিজি
  • ইয়েররাবি
কেন্দ্রীয় বিভাগ
  • ক্যানবেরা
  • ফেনার
  • বিন (জুলাই ২০১৮ থেকে)[9]
গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বার্ষিক বৃষ্টিপাত
১৯.৭ °সে
এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অপরিচিত বিরামচিহ্ন অক্ষর "" °ফা
৬.৫ °সে
এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অপরিচিত বিরামচিহ্ন অক্ষর "" °ফা
৬১৬.৪ মি.মি.
এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অপরিচিত বিরামচিহ্ন অক্ষর "" ইঞ্চি
বন্ধ
Thumb
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় গ্রন্থাগার, ক্যানবেরা

ক্যানবেরার গ্রীষ্মকালগুলি উষ্ম ও শীতকালগুলি শীতল প্রকৃতির এবং চারপাশ ঘিরে থাকা উচ্চভূমির তুলনায় এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশ কম। শহরটিকে বার্লি গ্রিফিন নামের একটি কৃত্রিম হ্রদের চারপাশ ঘিরে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। মোলোংলো নদীর উপরে বাঁধ ফেলে ১৯৬৩ সালে এই হ্রদটি সৃষ্টি করা হয়। শহরটির আয়তন ও জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র শহরকেন্দ্র ও সংলগ্ন শহরতলীগুলিই মূল পরিকল্পনাকে মেনে চলছে। শহরের চারপাশের উপগ্রহ শহরগুলিতেই মূলত আবাসিক উন্নয়ন হয়েছে; এগুলির মধ্যে আছে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়েস্টন ক্রিক, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বেলকনেন এবং ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত টাগারানংন্যাশনাল ক্যাপিটাল প্ল্যানিং নামক একটি সংস্থা শহরের প্রবৃদ্ধি দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত।

ক্যানবেরাতে অবস্থিত প্রধান কিছু দর্শনীয় স্থান হল ক্যাপিটাল হিল নামক এলাকায় অবস্থিত নতুন সংসদ ভবন (Parliament House পার্লামেন্ট হাউস, ১৯৮৮ সালে উন্মোচিত)। পুরাতন সংসদ ভবনটিতে ১৯২৭ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত অধিবেশন বসত, এবং সেটিকে বর্তমানে অস্ট্রেলীয় গণতন্ত্র জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। নতুন সংসদ ভবনের কাছেই অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ আদালত ভবন (High Court of Australia হাই কোর্ট অফ অস্ট্রেলিয়া) ও অস্ট্রেলীয় জাতীয় চিত্রশালা (Australian National Gallery অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল গ্যালারি, ১৯৮২) অবস্থিত। চিত্রশালাটিতে অস্ট্রেলীয় ও অন্যান্য দেশের শিল্পীদের প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি শিল্পকর্ম সুরক্ষিত আছে। শহরের কেন্দ্রে বার্লি গ্রিফিন হ্রদের ভেতরে ক্যাপটেন কুক মেমোরিয়াল ওয়াটার জেট (Captain Cook Memorial Water Jet, ক্যাপ্টেন কুকের স্মরণিকা ফোয়ারা) অবস্থিত। হ্রদের তীরে ১৯৬০ (১৯৬৮?) সালে প্রতিষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় গ্রন্থাগার (National Library of Australia ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ অস্ট্রেলিয়া) এবং জাতীয় রাজধানী প্রদর্শনীকেন্দ্র (National Capital Exhibition) অবস্থিত। ধর্মীয় স্থাপনার মধ্যে ১৮৪০-এর দশকে নির্মিত সন্তু জন দ্য ব্যাপ্টিস্টের গির্জা (Church of Saint John the Baptist চার্চ অফ সেইন্ট জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট) দর্শনীয়। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্যে আছে অস্ট্রেলীয় জাতীয় যুদ্ধ স্মরণিকা কেন্দ্র (Australian National War Memorial অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল), যেখানে একটি জাদুঘর ও শিল্পকলা প্রদর্শনী কেন্দ্র আছে; রাজকীয় অস্ট্রেলীয় টাকশাল ও অস্ট্রেলিয়া ক্রীড়া ইন্সটিটিউট।

ক্যানবেরার প্রধান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হল ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত অস্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (Australian National University অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি), ক্যানবেরা সঙ্গীত বিদ্যালয় (Canberra School of Music ক্যানবেরা স্কুল অফ মিউজিক, ১৯৬৫), ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Canberra ইউনিভার্সিটি অফ ক্যানবেরা, প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯০; প্রাক্তন নাম Canberra College of Advanced Education ক্যানবেরা কলেজ অফ অ্যাডভান্সড এডুকেশন, "ক্যানবেরা উচ্চ শিক্ষা মহাবিদ্যালয়"), অস্ট্রেলীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Australian Defence Force Academ অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্স অ্যাকাডেমি, ১৯৮১), অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি (Australian Academy of Science, অস্ট্রেলিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সাইয়েন্স, ১৯৫৪) এবং ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত অস্ট্রেলীয় মানববিদ্যা অ্যাকাডেমি (Australian Academy of the Humanities অস্ট্রেলিয়ান অ্যাকাডেমি অফ দ্য হিউম্যানিটিস)। এখানে আরও আছে ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মাউন্ট স্ট্রমলো মানমন্দির (Mount Stromlo Observatory মাউন্ট স্ট্রমলো অবজারভেটরি)। অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কমনওয়েলথ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা সংস্থার (Commonwealth Scientific and Industrial Research Organization, কমনওয়েলথ সাইয়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাসট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন) প্রধান কার্যালয় ক্যানবেরাতে অবস্থিত।

ক্যানবেরা শহরটি নিকটবর্তী ওডেন-ওয়েস্টন ক্রিক, বেলকনেন এবং কুইনবেইয়ান লোকালয়গুলির জন্য অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। ক্যানবেরাতে সরকারী প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডই প্রধান। ক্যানবেরার সর্বপ্রধান কর্মসংস্থান প্রদানকারী সংস্থা হল অস্ট্রেলীয় সরকার। তবে পর্যটন ও হালকা শিল্পকারখানা খাত ধীরে ধীরে প্রবৃদ্ধিলাভ করছে। ২১শ শতকের শুরুতে এসে শহরটি উচ্চ-প্রযুক্তি যেমন তথ্য প্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তিজৈবপ্রযুক্তিনির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের নির্মাণকাজ শুরু করে।

ইউরোপীয়রা ১৮২৪ সালে বা তারও আগে প্রথম ক্যানবেরা অঞ্চলটিতে বসতি স্থাপন করে। এখানে তখন মেষপালকদের একটি ক্ষুদ্র বসতি ছিল, যার নাম ছিল "ক্যানবেরি"; নামটি সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী অধিবাসীদের মুখের এনগুন্নাওয়াল ভাষার একটি শব্দ "কামবেরা" থেকে এসেছে, যার সম্ভাব্য একটি অর্থ হল "সম্মেলন স্থল"। এই নামটিই পরে বিবর্তিত হয়ে ১৮৩৬ সালে "ক্যানবেরা" নামটির উৎপত্তি হয় বলে ধারণা করা হয়। ১৯০১ সালে অস্ট্রেলিয়া কমনওয়েলথ বা জোটরাষ্ট্রের উদ্বোধন হবার পর ১৯০৮ (মতান্তরে ১৯০৯) সালে তৎকালীন নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ইয়াস-ক্যানবেরা নামের জনবিরল অঞ্চলটিকে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানীর অবস্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয় এবং অস্ট্রেলীয় রাজধানী অঞ্চলটির সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ১৯১১ সালে নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্য সরকার অঞ্চলটিকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। নতুন শহরটির নকশা প্রণয়ন করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যাতে মার্কিন স্থপতি দম্পতি ওয়াল্টার বার্লি গ্রিফিনম্যারিয়ন ম্যাহোনি গ্রিফিন জয়লাভ করেন। তাদের নকশাতে বৃত্ত, ত্রিভুজ ও ষড়ভুজের প্রাধান্য ছিল এবং নকশাটিতে উদ্যান নগরী আন্দোলনের প্রভাবও উল্লেখযোগ্য, যার কারণে শহরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সবুজ ও প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ এলাকা আছে। ১৯১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে "ক্যানবেরা" নামের শহরটির নির্মাণকাজ শুরু হয়, কিন্তু ১ম বিশ্বযুদ্ধের কারণে (১৯১৪-১৯১৮) এই কাজ ব্যাহত হয়। কেবল ১৯২৭ সালের ৯ই মে তারিখে এসে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংসদকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলবোর্ন থেকে ক্যানবেরা শহরে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ১৯০১ সাল থেকে সংসদ ভবন অস্থায়ীভাবে মেলবোর্ন শহরে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ক্যানবেরার জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ২০০৩ সালের শুরুর দিকে দাবানলের কারণে ক্যানবেরা শহর ও এর শহরতলীগুলির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় ৫০০টি বাসভবন ভস্মীভূত হয় এবং বেশ কয়েকজন লোক মারা যায়। আগুনের কারণে মাউন্ট স্ট্রমলো মানমন্দিরটিরও গুরুতর ক্ষতি হয়।

যোগাযোগ

আকাশপথে

  • ক্যানবেরা বিমানবন্দর

শিক্ষা

ক্যানবেরাতে দুইটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় হল অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.