বামাকো
মালির রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মালির রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বামাকো (Bambara: ߓߡߊ߬ߞߐ߬ Bàmakɔ̌, টেমপ্লেট:Lang-ff Bamako) মালির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। শহরটির জনসংখ্যা ২০০৯ সালে ১,৮১০,৩৬৬, এবং ২০২০ সালে ২.৮১ মিলিয়ন ছিল বলে ধারণা করা হয়। শহরটি নাইজার নদীর তীরে, দেশটির উত্তরপশ্চিম অঞ্চলে উচ্চ এবং মধ্য নাইজার উপত্তকায় বিভক্তকারী জলপ্রপাতের নিকটে অবস্থিত।
বামাকো
| |
---|---|
রাজধানী শহর | |
বামাকোর অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ১২°৩৮′২১″ উত্তর ৮°০′১০″ পশ্চিম | |
দেশ | মালি |
অঞ্চল | বামাকো রাজধানী জেলা |
Cercle | বামাকো |
উপজেলা | |
সরকার | |
• ধরন | ক্যাপিটাল জেলা |
• Maire du District | Adama Sangaré[4] |
আয়তন | |
• রাজধানী শহর | ২৪৫.০ বর্গকিমি (৯৪.৬ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ১৭,১৪১.৬১ বর্গকিমি (৬,৬১৮.৪১ বর্গমাইল) |
উচ্চতা[5] | ৩৫০ মিটার (১,১৫০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০০৯)(আদমশুমারি) | |
• রাজধানী শহর | ২০,০৯,১০৯ |
• জনঘনত্ব | ৭,৩৮৪.১১/বর্গকিমি (১৯,১২৪.৮/বর্গমাইল) |
• মহানগর | ২৭,৫৭,২৩৪ |
• মহানগর জনঘনত্ব | ১৬০.৮৫/বর্গকিমি (৪১৬.৬/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | সার্বজনীন সমন্বিত সময় (ইউটিসি) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | ML-BKO |
এইচডিআই (২০১৭) | ০.৬২৩[6] medium · 1st |
বামাকো দেশটির পরিচালনা কেন্দ্র। শহরাঞ্চলটি একটি সার্কল (মালির দেশ পরিচালনার দ্বিতীয় পর্যায়ের সত্ত্বা)। শহরটির নদী বন্দর কুউলিকোরোতে অবস্থিত, যেখানে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সম্মেলন কেন্দ্র অবস্থিত। লেগোস, আবিজান, কানো, ইবাডান, ডাকার, আক্রা এর পর পশ্চিম আফ্রিকার সপ্তম বৃহত্তম শহর। শহরটিতে উৎপাদিত পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে: টেক্সটাইল, প্রক্রিয়াজাত মাংস, ধাতব এবং খনিজ পণ্য। নাইজার নদীতে বাণিজ্যিকভাবে মৎস শিকার করা হয়।
“বামাকো” নামটি বামবারা ভাষা থেকে আসছে, যার অর্থ “কুমির নদী”।[7]
পুরা প্রস্তর যুগ থেকে শহরটিতে মানব বসতি থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নাইজার নদী উপত্যকার জমি উর্বর হওয়ায় বাসিন্দারা প্রচুর পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারে এবং এ অঞ্চলের প্রথম দিকের রাজ্যগুলো সাহারা মরুভূমি, পশ্চিম আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা এবং ইউরোপ জুড়ে বাণিজ্য পথ নির্মাণ করার মাধ্যমে সমৃদ্ধি লাভ করে। শহরটির প্রথমদিকের বাসিন্দারা সোনা, লবণ, কোলা নাট এবং হাতির দাঁতের বাণিজ্যের সাথে যুক্ত ছিল।[8] একাদশ শতকের মধ্যে ঘানা সাম্রাজ্য অঞ্চলটির প্রথম প্রভাবশালী রাজ্যে পরিণত হয়।[8]
মধ্যযুগের প্রথমদিকে মালি সাম্রাজ্য ঘানাকে ছাড়িয়ে পশ্চিম আফ্রিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয় এবং গিনি, গাম্বিয়া, সেনেগাল এবং মৌরিতানিয়া শাসন করে।[8] ১৪ শতকে সাম্রাজ্যটি তুলা, সোনা এবং লবণ বাণিজ্যের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধি লাভ করে।[8] বামাকো বাণিজ্য এবং ইসলাম শিক্ষার কেন্দ্রে পরিণত হয়, তবে সংহাইদের দখলের পর সাম্রাজ্যটির পতন ঘটে।[8] [9]
স্কটীয় অনুসন্ধানকারী, মাঙ্গো পার্ক তার নাইজার নদী অভিযানে ১৭৯৭ এবং ১৮০৫ সালে শহরটিতে ভ্রমণ করেন। সে সময়ে শহরটির বাসিন্দা সংখ্যা ৬০০০ ছিল বলে তিনি ধারণা করেন। পরবর্তীতে ১৮৮৩ সালে, ফরাশিদের দখল এবং ১৯০৮ সালে ফরাশি সুদানের রাজধানীতে পরিণত হওয়ার সময় পর্যন্ত শহরটির গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে। ১৯৩২ সালে বামাকো এবং ডাকার এর মধ্যে একটি রেলপথ নির্মাণ করা হয়।[10]
১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসে, মালি ফ্রান্সে এর কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এ সময়ে বামাকোর জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৬০,০০০। ১৯৬০ এর দশকে দেশটি একটি সমাজতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন শহরটিতে বিনিয়োগ এবং প্রভাব বিস্তার করে।[8] বিভিন্ন কোম্পানির পতনের কারণে দেশটির অর্থনৈতিক অবনতি ঘটে এবং এ সময়ে সহিংসতা ব্যাপকভাবে বিরাজ করে।[8] পরবর্তীতে মৌসা ত্রাওরে একটি বিদ্রোহে সফলভাবে নেতৃত্ব দেন এবং ২৩ বছর যাবৎ মালি শাসন করেন। তার শাসনামলে তীব্র খরা, খাদ্য সংকট এবং ত্রুটিপূর্ণ সরকার ব্যবস্থা বিরাজমান ছিল।[8]
১৯৮০ এর দশকে মালি এবং বামাকোর জনগণ একটি মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং একাধিক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে। আইনজীবী, মাউন্টাগা টোল ন্যাশনাল কংগ্রেস ফর ডেমোক্রেটিক ইনিসিয়েটিভ (কংগ্রে নাসিওনাল ডিনিসিয়াটিভ ডেমোক্রাটিক, সিএনআইডি) এবং আব্রামানে বাবা ও ইতিহাসবিদ, আলফা ওমন কোনারে এলাইয়েন্স ফর ডেমোক্রেসি ইন মালি (আলিনয়স পর লা ডিমোকাসি ও মালি, এডিইএমএ) প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থাগুলোর লক্ষ্য ছিল আসোসিয়াসিয়ন দেজ এলেভে এত চুডিয়ন জু মালি (এইইম) এবং আসোসিয়াসিয়ন মালিয়ান দে ধোয়া দু’লম (এএমডিএইচ) এর সাথে যৌথভাবে মুসার পতন ঘটানো। পুরানো সংবিধান অনুসারে, সকল শ্রমিক সংঘকে ন্যাসনাল ইউনিয়ন অব মালিয়ান ওয়ার্কার্স (ইউএনটিএম) নামক একটি জোটে থাকতে হতো। ১৯৯০ সালে, ইউএনটিএম সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এর একটি প্রতিপক্ষ তৈরি হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন হ্রাস ও চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক দাতাদের চাপে ১৯৬৮ সালে সমাজতান্ত্রিক সরকারের পতনের পরও জনগণের হাতে থাকা অর্থনীতির বড় একটি অংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন করার জন্য সরকারের সম্মতি প্রদানকে কেন্দ্র করে এ প্রতিপক্ষ দলগুলোর সৃষ্টি হয়। শিশু সহ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করে এবং জনগণ সরকারের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বাড়ি এবং কার্যালয় ভাঙচুর করে।
১৯৯১ সালের মার্চ মাসের ২২ তারিখে মধ্য বামাকোয় আয়োজিত একটি মিছিল সহিংসতার সাথে আটকানো হয়, যাতে মৃতের সংখা ছিল সর্বনিম্ন ৩০০ জন বলে ধারণে করা হয়। চার দিন পরে, সামরিক বাহিনীর একটি বিদ্রোহে ত্রাওরে পদচ্যুত হয়।[11] আমাদু টুমানি তুহে এর নেতৃত্বে কমিটে দু থাজিসিওন পর লে সালুত দু পাপলা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসের ২৬ তারিখে আলফা ওমর কোনারি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির রাষ্ট্রপতি হন।[8]
২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে, রেডিসেন ব্লু হটেলে দুই জন বন্দুকধারী ১৭০ জনকে জিন্মি করে। ৭ ঘন্টার অভিযানে, এ দুই বন্দুকধারী এবং তিন জন চীনা ব্যবসায়ী নিহন হয়।[12]
বামাকো নাইজার নদীর প্লাবনভূমির উপর অবস্থিত, যা নদীর তীর এবং নাইজার নদীর শাখা নদীগুলোকে ঘিরে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। সম্পূর্ণ উত্তরাঞ্চলে একটি খাড়া উঁচু পাহাড় ব্যতিত বামাকো মূলত সমভূমির উপর অবস্থিত। এ পাহাড়টি হলো একটি বিলুপ্ত আগেয়গিরির অবশিষ্ট অংশ। রাষ্ট্রপতির ভবন এবং দেশটির প্রধান হাসপাতাল বামাকোয় অবস্থিত।
প্রথমে শহরটি নাইজার নদীর উত্তর দিকে গড়ে ওঠে, তবে সময়ের সাথে উত্তরাংশের সাথে দক্ষিণাংশের সংযোগ স্থাপন করতে সেতু তৈরি করা হয়। এর মধ্যে প্রথম দিকের ব্রিজগুলো- পুন দে মার্টি (২ লেন এবং দুটি পথচারী চলাচলের পথ সম্মৃদ্ধ) এবং রাজা ফাহাদ সেতু (৪ লেন এবং দুটি মটরসাইকেল ও পথচারী চলাচলের পথ সম্মৃদ্ধ)। এছাড়াও শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত এলাকা, সোতুবা এবং মিসাবুগু এর মধ্যে ঔপনিবেশিক সময়ের একটি পথ (পথটিতে ৫টি ক্রসিং সেকশন আছে যেখান থেকে যানবাহন একটি লেনে প্রবেশ করে) আছে যা শুধু বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহৃত হয়। সোতুবা কজওয়ে নামক এই পথটি জুলাই থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে থাকে। শহরে যান চলাচল, বিশেষ করে ট্রাক চলাচল হ্রাস করতে একই স্থানে তৃতীয় একটি সেতু (১.৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ২৪ মিটার প্রসস্থতা ৪ লেন এবং দুটি মটরসাইকেল এবং দুটি পথচারী চলাচলের পথ বিশিষ্ট) নির্মাণ করা হচ্ছে।[13]
২০১৫ সালে, দেশটির সরকার শহরটির আবর্জনা ব্যবস্থাপনার কাজ বেসরকারিকরণ করে। এ কার্যক্রম শুরুর আগে দীর্ঘ সময় যাবৎ আবর্জনা সংগ্রহের কাজটি করত বিভিন্ন “অর্থনীতি কল্যাণ দল”।[14] বেসরকারিকরণের পূর্বে এ দলগুলো শহর জুড়ে আবর্জনা সংগ্রহ করত। বেসরকারিকরণের ফলে, শুধু এ কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা চাকরিই হারানটি, বরং সরকারে নিযুক্ত করা সংস্থা শুধুমাত্র শহরের ৩০ শতাংশ আবর্জনা সংগ্রহ করে। আবর্জনা জমে থাকায়, শহরটিতে বিষাক্ত অবস্থান সৃষ্টি হয় এবং বৃষ্টি হলে এর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। বিদ্যালয়ের নিকটে সহ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় আবর্জনা ফেলার স্থান করা হলে, জনগণ প্রতিবাদ এবং মিছিলে অংশ নেয়, যা ভাংচুরের পর্যায়ে চলে যায়।[15]
কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে, বামাকোর জলবায়ু হলো ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু। সুদানো-সাহিলীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় বামাকোর আবহাওয়া খুবই গরম। শহরটির সবচেয়ে গরম মাস মার্চ, এপ্রিল অথবা মে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে শহরটিতে সবচেয় বেশি ঠান্ডা অনুভূত হয়। শুষ্ক মৌসূমে বৃষ্টিপাত বিরল, প্রকৃতপক্ষে এন্টিসাইক্লন এবং শুষ্ক অয়ন বায়ুর কারণে নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় না। গ্রীস্মকাল চলাকালীনই মে মাসে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে বর্যাকাল শুরু হয় এবং এ সময়ে (মে মাসে) বছরের সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল বিদ্যমান থাকে।
Bamako (১৯৫০-২০০০, এক্সট্রিম ১৯৪৯-২০১৫)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩৮.৯ (১০২.০) |
৪২.৮ (১০৯.০) |
৪৩.৯ (১১১.০) |
৪৩.৫ (১১০.৩) |
৪৫.০ (১১৩.০) |
৪২.০ (১০৭.৬) |
৪২.৪ (১০৮.৩) |
৩৭.৮ (১০০.০) |
৩৮.৪ (১০১.১) |
৩৮.৯ (১০২.০) |
৪২.০ (১০৭.৬) |
৪০.০ (১০৪.০) |
৪৫.০ (১১৩.০) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৩৩.৪ (৯২.১) |
৩৬.৪ (৯৭.৫) |
৩৮.৫ (১০১.৩) |
৩৯.৬ (১০৩.৩) |
৩৮.৫ (১০১.৩) |
৩৫.৩ (৯৫.৫) |
৩২.১ (৮৯.৮) |
৩১.১ (৮৮.০) |
৩২.২ (৯০.০) |
৩৪.৬ (৯৪.৩) |
৩৫.৩ (৯৫.৫) |
৩৩.৪ (৯২.১) |
৩৫.০ (৯৫.০) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১৭.০ (৬২.৬) |
১৯.৯ (৬৭.৮) |
২২.৯ (৭৩.২) |
২৫.২ (৭৭.৪) |
২৫.৪ (৭৭.৭) |
২৩.৬ (৭৪.৫) |
২২.২ (৭২.০) |
২১.৮ (৭১.২) |
২১.৬ (৭০.৯) |
২১.৩ (৭০.৩) |
১৮.৪ (৬৫.১) |
১৬.৮ (৬২.২) |
২১.৩ (৭০.৩) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ৮.৭ (৪৭.৭) |
৯.০ (৪৮.২) |
১২.০ (৫৩.৬) |
১৫.৮ (৬০.৪) |
১৭.৮ (৬৪.০) |
১৬.১ (৬১.০) |
১৭.৫ (৬৩.৫) |
১৭.২ (৬৩.০) |
১৮.০ (৬৪.৪) |
১৪.৭ (৫৮.৫) |
১০.৮ (৫১.৪) |
৬.০ (৪২.৮) |
৬.০ (৪২.৮) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ০.৬ (০.০২) |
০.৭ (০.০৩) |
২.১ (০.০৮) |
১৯.৭ (০.৭৮) |
৫৪.১ (২.১৩) |
১৩২.১ (৫.২০) |
২২৪.১ (৮.৮২) |
২৯০.২ (১১.৪৩) |
১৯৫.৯ (৭.৭১) |
৬৬.১ (২.৬০) |
৫.২ (০.২০) |
০.৫ (০.০২) |
৯৯১.৩ (৩৯.০৩) |
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় (≥ ০.১ mm) | ০.২ | ০.২ | ০.৬ | ৩.৩ | ৬.৩ | ৭.৭ | ১৬.৭ | ১৭.৯ | ১৪.৭ | ৫.৭ | ০.৩ | ০.১ | ৭৩.৭ |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) | ২৪ | ২০ | ২২ | ৩৩ | ৫০ | ৬৭ | ৭৭ | ৮১ | ৭৮ | ৬৫ | ৩৮ | ২৭ | ৪৯ |
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় | ২৭৭.৪ | ২৫৩.০ | ২৬৮.১ | ২৩০.৪ | ২৪২.৬ | ২৩৩.৬ | ২১৬.৬ | ২১৮.৩ | ২২১.৭ | ২৫৩.৭ | ২৭০.৭ | ২৬৮.৬ | ২,৯৫৪.৭ |
উৎস ১: বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা[16] | |||||||||||||
উৎস ২: এওওএ (১৯৬১-১৯৯০),[17] Deutscher Wetterdienst (extremes and humidity)[18] |
১৯৭৮ সালের আগস্ট মাসের ১৯ তারিখে ৭৮-৩৪ নম্বর অধ্যাদেশের ভিত্তিতে বামাকো জেলাটি ৬টি কমিউনে বিভক্ত হয় এবং ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি আইন দ্বারা সংশোধনের মাধ্যমে কমিউন ৩ এবং ৪ এর নতুন সীমান্ত নির্ধারণ করা হয়।[19] প্রতিটি কমিউন একটি পৌরসভা পরিষদ এবং কমিউন সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত একজন নগরপ্রধান দ্বারা পরিচালিত হয়। শেষ নির্বাচন ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসের ২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় এবং এলাইয়েন্স ফর ডেমোক্রেসি ইন মালি দলটি কমিউনগুলোর প্রতিনিধির আসনে সংখ্যারিষ্ঠ্যতা বজায় রাখে।
কমিউন ১ এর জনসংখ্যা ৩৩৫,৪০৭ (২০০৯) এবং আয়তন ৩৫ বর্গ কিলোমিটার (১৪ বর্গ মাইল)। এর উত্তরে রয়েছে, প্রত্যন্ত কমিউন, জালাকোহোজি (কেতি সার্ক্লো), পশ্চিমে কমিউন- ২, উত্তর-পূর্বে সাংগাহেবুগু (কেতি সার্ক্লো), পূর্বে ইয়াবাকুহু এবং দক্ষিণে নাইজার নদী। এ কমিউনটি ৯টি এলাকা নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে: বনকনি, জিলিবুগু, বুলকাসুমবুগু, দুমানসানা, ফাজিগিলা, উত্তর সোতুবা কোরোফিনা এবং দক্ষিণ সোতুবা কোরোফিনা।[20]
কমিউন-২ এর জনসংখ্য ১৫৯,৮০৫ (২০০৯) এবং আয়তন ১৮.৩ বর্গকিলোমিটার (৭.১ বর্গ মাইল)। উত্তরে কমিউনটি ঘিরে রয়েছে পয়েন্ট জি পর্বতের নিশ্চল পানি এবং দক্ষিণে নাইজার নদী। এ পৌরসভার মধ্যে ১১টি এলাকা অন্তর্ভূক্ত: নিয়াহেলা (সবচেয়ে পুরানো), বেগাদাজি, মেডিনা-কুহা, বুসোলা, ইপোডোহম, মিসিহা, কেজামবুগু, টিএসএফ, বেকাহিবুগু, শিল্প এলাকা এবং বুগুবা। নতুন দ্বীপ, সিতে জু নাইজার কমিউন-২ এর অন্তর্ভূক্ত।[21] শিল্পের দিক থেকে কমিউন-২ বামাকোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।
কমিউন-৩ এর জনসংখ্যা ১২৮,৮৭২ (২০০৯) এবং আয়তন। এর উত্তরে রয়েছে কেতি, পূর্বে বুলভার্ড দু পাপলা (পুন দে মার্টি এবং মোতেল দে বামাকোর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত), যা একে কমিউন-২ এর থেকে আলাদা করে, দক্ষিণে নাইজার নদীর একটি অংশ এবং পশ্চিমে রয়েছে ফারাকো নদী ও এসিআই-২০০০ এলাকার অন্তর্ভূক্ত চেক জায়েদ এল মাহিয়ান বেন সুলতান এভিনিউ। এই কমিউনটি বামাকোর পরিচালনা এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র। বামাকোর বৃহত্তম দুটি মার্কেট এ কমিউনেই অবস্থিত: গ্রান্ড মার্কেট এবং দিবালা। ২০ টি এলাকা এবং কুলুনিনকো ও সিহাকোহোদুয়াফা নামক দুটি গ্রাম নিয়ে এ কমিউনটি গঠিত।[22]
কমিউন-৪ এর জনসংখ্য ৩০০,০৮৫ (২০০৯) এবং আয়তন ৪২ বর্গকিলোমিটার (১৬ বর্গ মাইল)। পূর্বে এটিকে ঘিরে রয়েছে কমিউন-৩, উত্তর ও পশ্চিমে রয়েছে কেতি সার্ক্লো এবং এর দক্ষিণে রয়েছে নাইজার নদীর বাম তীর। কমিউন-৪ আটটি এলাকা নিয়ে গঠিত: টালিকো, লাসা, সিবিহিবুগু, জিকোহোনি পাহা, আমদালাই, লাফিয়াবুগু এবং কালাবমবুগু।[23]
কমিউন-৫ এর জনসংখ্য ৪১৪,৬৬৮ (২০০৯) এবং আয়তন ৪২ বর্গকিলোমিটার (১৬ বর্গ মাইল)।[24] একে ঘিরে উত্তরে রয়েছে নাইজার নদী, দক্ষিণে কালাবনকোরো কমিউন এবং পূর্বে রয়েছে কমিউন-৬ এবং নাইজার। এটি আটটি এলাকা নিয়ে গঠিত: বাদালাবুগু, সুমা ১, কার্তিয়ার মালি, তোরোকোরোবুগু, বাকো-জিকোহোনি, সাবালিবুগু, কালাবনকুহা এবং দাউদাবুগু।
কমিউন-৬ এর জনসংখ্য ৪৭০,২৬৯ (২০০৯) এবং আয়তন ৮৭ বর্গকিলোমিটার (৩৪ বর্গ মাইল)। এটি বামাকোর বৃহত্তম কমিউন। কমিউনটি ১০টি এলাকা নিয়ে গঠিত: বানানকাবুগু, জানিকেলা, ফেলাডিয়ে, মানিয়োবুগু, মিসাবুগু, নিয়ামাকোহো, সিনু, সোগোনিকো, সোকোহোজি এবং ইহিমাজিও।
বামাকোর মধ্যে যে এলাকাগুলো (কার্তিয়ার) অন্তর্ভূক্ত: এসিআই-২০০০, বাদালাবুগু, বাহালন ১, বাহালন ২, বাকো জিকোহোনি, বনকনি, বলিবানা, বুসোলা, বুগুদানি,বুলকাজুমবুগু, দাহ সালাম, এন’তোমিকোহোবুগু, দাউদাবুগু, ডাহাভেলা, ফাজিজিলা, গেহোতিজিবুগু, জালাকোহোজি, জানেকেলা, জিলিবুগু, জিকোহোনি পাহা, জজিজিলা, জুমানসানা, আমদালাই, ইপোডোহম, কালাবন কোহো, কালাবন কুহা, কোহোফিনা, কুহুবা, কুহুবোনি, লাফিয়াবুগু, মেডিনা কুহা, মেনিয়োবুগু (মেনিয়োবুগু ফাসো কানু), মিসাবুগু, মিজিহা, নিয়াহেলা, এনতোমিকোহোবুগু, পয়েন্ট জি, কার্তিয়ার দু ফ্লোভ, কার্তিয়ার মালি, সাবালিবুগু ১, সাবালিবুগু ২, কেজামবুগু, সাফো, সেনু, সেইম, সিবিনেকোহো, সাংগাহেবুগু, সিকোহোনি, সিবিরিবুগু, সিরাকোহো, সোকোহোজি, সাহনবুগু, সোতুবা, তিতিবুগু, তোহোকোহোবুগু, টিএসএফ-সানস ফিল, ওলোফোবুগু, ইরিমোঞ্জো এবং জোনা আন্দুস্থিয়েল।
বামাকোয় দেশটির ৭০ শতাংশ উৎপাদনমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।[25][26] চাকরিতে শহরটি সবচেয়ে বেশি উন্নত এবং শিল্প ও বাণিজ্যের মাধ্যমে শহরটি উন্নতি লাভ করছে।
বামাকোর ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য কেন্দ্র নাইজার নদীর উত্তর দিকে একটি ত্রিভূজাকৃত্রিক এলাকায় ছিল, যাকে ঘিরে ছিল এভেনিউ দু ফ্লোভ, রুই বাবা ডিয়াহা এবং বুলভার্ড দু পাপলা। এই এলাকায় রয়েছে মার্সে হো এবং স্ট্রিট মার্কেট।
শহরটির কেন্দ্রস্থল খুবই জনবহুল, দূষিত এবং ব্যয়বহুল। এই ৩০ কিলোমিটারের (১৯ মাইল) এলাকায় দ্রুত নগরায়ন ঘটছে। শহরটির সবচেয়ে উন্নত এলাকা নাইজার নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থলের পশ্চিম দিকে এসিআই-২০০০ এ একটি আধুনিক কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে উঠছে। এলাকাটিতে পুরানো বিমানবন্দরের রানওয়ে এবং টেক্সিওয়ে থাকায়, এলাকাটির জ্যামিতিক আকৃতি অনেক সুবিধাজনক। এসিআই-২০০০ এবং কিং ফাহাদ সেতুর মিলনাস্থলে একটি বড় সরকারি এলাকা গড়ে উঠছে। এলাকাটি অধিকাংশ রাষ্ট্রীয় বিভাগ (মন্ত্রণালয়) অবস্থিত এবং এটি সরকারি সেবার পাওয়ার প্রধান স্থান। বামাকোয় অনেক বড় বড় কোম্পানি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর অবস্থিত। এয়ার মালির (পূর্ব নাম: কোম্পানি আয়াহিয়েন জু মালি) সদর দপ্তর বামাকোয় অবস্থিত।[27] কয়েক দশক যাবৎ বামাকোয় সৌদি আরবের ব্যাপক বিনিয়োগের ফলে দেশটিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। সম্প্রতি সময়ে বামাকোয় চীনের গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগে বিভিন্ন অবকাঠামো এবং ফেসিলিটি গড়ে উঠেছে।
বামাকোয় কৃষিকাজ পরিচালিত হয়। বোজো সম্প্রদায়ের জেলেরা মৎস শিকার করে। শহরটিতে গৃহপালিত পশুর রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়।
বিদ্যুৎ শক্তির একটি বড় অংশ সেলিঙ্গে জলবিদ্যুৎ বাঁধে উৎপন্ন হয়। বামাকো এবং কেতির পানীয় জল নাইজার নদীর উপর নির্মিত একটি পাম্পিং স্টেশন থেকে সরবরাহ করা হয়। গরমের সময়ে (এপ্রিল এবং জুন মাস) ১৫২,০০০ কিউবিক মিটার পানীয় জলের প্রয়োজন বলে ধারণা করা হয় এবং সেখানে ১৩৫,০০০ কিউবিক মিটার পানীয় জলের সরবরাহ পর্যাপ্ত হয় না। আর এ কারণে, এ সময়ে প্রায়ই পানির অভাব দেখা দেয়। ২০০৯ সালে কেবালায় একটি নতুন পাম্পিং স্টেশন স্থাপনের কথা ছিল।
২০ তলা বিশিষ্ট বিসিইএও টাউয়ার মালির উঁচু ভবন। এটি শহরের কেন্দ্রে নাইজার নদীর দক্ষিণ (“বাম”) তীরে অবস্থিত।[28] টাউয়ারটি সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস এর মালীয় সদর দপ্তর। ব্যাংকটি কিছু ফ্রাঙ্কোফোন পশ্চিন আফ্রিকার দেশকে উন্নয়ন ব্যাংকিং, সরকারি অর্থনীতি এবং মুদ্রা সেবা প্রদান করে। ভবনটির স্থাপত্যশৈলী আধুনিক-সুদানীয় বলে পরিচিত, যা জিনে এবং টিমবুকতু নামক বিখ্যাত দুটি মসজিদের সুদানো-সাহেলীয় স্থাপনাকৌশলের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটি কমিউন-৩ এ তিন ব্লক পূর্বে বামাকোর দুটি প্রধান সেতুর (কিং ফাহাদ এবং মার্টার সেতু) মাঝে এভিনিউ মুসা ত্রাভেলে এবং ওয়াটারসাইট বুলেভার্ডের মিলনাস্থলে অবস্থিত। বিসিইএও ভবনের পূর্বে আড়াআড়িভাবে “বুলভার্ড দু পাপলা” অবস্থান করে এবং তা যেখানে নদীর সাথে মিশে যায় সেখানে একটি উদ্যান এবং বাগান রয়েছে। এছাড়াও নদীর পাড়ে একটি ছোট মার্কেট গার্ডেন ও লঞ্চিং পয়েন্ট বা কেনো নৌকা থাকে।[28]
কিং ফাহাদ সেতুর উত্তর পাড়ের পশ্চিম দিকে কয়েকটি ভবন নিয়ে গঠিত সিতে আডমিনেস্থাটিভ (এডমিনিস্ট্রেটিভ সিটি) নামক একটি কমপ্লেক্স অবস্থিত। ২০০৩ সালে তৎকালীর রাষ্ট্রপতি, কোনারে লিবিয়া সরকারের অনুদানে এটির কাজ শুরু করেন। ১০ হেক্টরের (২৫ একর) এই কমপ্লেক্সটির নির্মাণ কাজ ২০১০ সালে সম্পন্ন হয়। কমপ্লেক্সটিতে অনেকগুলো সরকারি কার্যালয় অবস্থিত।[29][30]
বছর | জন. | ব.প্র. ±% |
---|---|---|
১৯৭৬ | ৪,১৯,২৩৯ | — |
১৯৮৭ | ৬,৫৮,২৭৫ | +৪.১৯% |
১৯৯৮ | ১০,১৬,১৬৭ | +৪.০৩% |
২০০৯ | ১৮,১০,৩৬৬ | +৫.৩৯% |
source:[31] |
বামাকোর আশ্চর্যজনকভাবে জনসংখ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৮৪ সালে শহরটিতে মাত্র ২,৫০০ জন মানুষ বসবাস করত। শহরটির জনসংখ্যা ১৯০৮ সালে ৮,০০০ জন, ১৯৩৫ সালে ৩৭,০০০ জন এবং ১৯৬০ সালে জনসংখ্যা ছিল ১০০,০০০ জন। বামাকোর বর্তমান জনসংখ্যা ১৯৬০ এর ১৮ গুণ, ২০০৯ সালের আদমশুমারি অনুসারে শহরটির জনসংখ্যা ১,৮১০,৩৬৬। শহরটি প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো থেকে মানুষ কাজের সন্ধানে আসে।[32] অবৈধ বসবাসকারী এবং অস্থায়ী কর্মী সহ শহরটির জনসংখ্যা অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে ২ মিলিয়নের চেয়ে অনেক বেশি। এই অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি স্বাস্থ্যব্যবস্থা, যানজট এবং দূষণের দিক থেকে অনেক জটিলটা সৃষ্টি করছে। মালি এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে মানুষ শহরটিতে আসায় বামাকোয় জনবিচিত্র দেখা যায়।
১৯৪৪ সালে ফরাশি ঔপনিবেশিক সরকারের সাথে সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান, আন্সিতিটিউ ফোন্ডামোন্টাল দাফ্রিক নোয়ার মালির জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৬০ সালে মালির স্বাধীনতার পর গ্রন্থাগারটি একটি সরকারি গ্রন্থাগারে পরিণত করা হয়। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মালি রাখা হয়। ১৯৬৮ সালে, গ্রন্থাগারটি তার পুরানো স্থান, কুলুবা থেকে উলুফোবুগুতে (বামাকোর একটি অংশ) স্থানান্তর করা হয়। গ্রন্থাগারটিতে অডিও ডকুমেন্ট, বই, ভিডিও, সফটওয়্যার সহ ৬০,০০০ টি কীর্তি রয়েছে। এগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত হলেও ধার নেওয়ার সুবিধা পেতে একটি স্বল্প মূল্যের সাবস্ক্রিপশন ক্রয় করতে হয়। গ্রন্থাগারটিতে বামাকোর দ্বিবার্ষিক আলোকচিত্র উৎসব, আফ্রিকান ফটোগ্রাফি এনকাউন্টার্স এর কিছু প্রদর্শনী আয়োজিত হয়।
মালির জাতীয় জাদুঘর হলো একটি প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক জাদুঘর। জাদুঘরটিতে প্রাগৈতিহাসিক সময়ে মালি ও মালির বিভিন্ন উপজাতিদের বাদ্যযন্ত্র, পোষাক এবং বিভিন্ন উৎসবে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের উপর স্থায়ী এবং সমসাময়িক প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। জাদুঘরটি ফরাশি উপনিবেশের সময়ে থিওডোর মনোড এর অধীনে সুদানীয় জাদুঘর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে ইউক্রেনীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইউরি সমভস্কায়া এর পরিচালনায় উদ্ভোধন করা হয়। সমভস্কায়া জাদুঘরটিতে নয় বছর যাবৎ কাজে নিযুক্ত ছিলেন। জাদুঘরটিতে থাকা নিদর্শনের প্রায় (প্রায় ৩,০০০) অর্ধেক তিনি সংগ্রহ করেন।
১৯৬০ সালে মালির স্বাধীনতার পর জাদুঘরটির নাম পরিবর্তন করে মালি জাতীয় জাদুঘর রাখা হয়। মালির একত্রতা এবং মালীয় ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি তুলে ধরাই ছিল এই নাম পরিবর্তনের উদ্দেশ্য। অর্থনৈতিক সমস্যা এবং যোগ্য কর্মীর অভাবে জাদুঘরটির সংগ্রহশালার অবনতি হয়। ১৯৫৬ সালের মার্চ মাসের ৩০ তারিখে, জাদুঘরটিকে জিন-লুপ পিভিন এর সিমেন্টের তৈরি অবকাঠামোয় স্থানান্তর করা হয়। জাদুঘরটির আগে ঐতিহ্যবাহী মালীয় নকশায় নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে, সাবেক প্রত্নতত্ত্ববিদ, আলফা উমর কোনারে মালির রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর জাদুঘরটির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়, ফলে এটি পশ্চিম আফ্রিকার সেরা জাদুঘরগুলোর একটিতে পরিণত হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে বামাকোয় আয়োজিত দ্বিবার্ষিক আলোকচিত্র উৎসব, আফ্রিকান ফটোগ্রাফি এনকাউন্টার্স এর কিছু অংশ জাদুঘরটিতে প্রায়ই আয়োজিত হয়।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে: মিউজো কুন্ডা মিউজিয়াম, বামাকো আঞ্চলিক জাদুঘর, বামাকো চিড়িয়াখানা, বামাকো উদ্ভিদ উদ্যান, জাতীয় কনফারেন্স সেন্টার টাউয়ার (এনসিসি), সুভেনিয়ার পিরামিড, স্বাধীনতা ভাষ্কর্য, আল কুদস ভাষ্কর্য, ত্রিভূজাকৃতিক মনুমন্ত দো লা পে, আমদালাই স্মৃতিস্তম্ভ, মোদিবো কেতা সহ অন্যান্য স্মৃতিস্তম্ভ। পালে দু লা কুলচু আমাদুও আমপাতে এবং পয়েন্ট জি পর্বত,যার গুহাগুলোর ভিতর পাথরের উপর আঁকা চিত্র পাওয়া গেছে।
১৯৮৮ সালে, বামাকোয় বামাকো ইনিসিয়েটিভ নামক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়, যা সাহারা-নিম্ন আফ্রিকার দেশগুলোর স্বাস্থ নীতি পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বার্ষিক বুদাপেস্ট-বামাকো সমাবেশটি বামাকোয় এসে সমাপ্ত হয় এবং ডাকার সমাবেশও অনেক সময়ে বামাকো হয়ে যায়।
১৯৯০ এর দশকে কন্ঠশিল্পী, সালিফ কেইতা এবং সংগীতশিল্পী ও গিটারিস্ট, আলি ফার্কা ত্রোরে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করলে বামাকোয় সংগীতের জনপ্রিয়তা অনেক বৃদ্ধি পায়।[33] তাদের পথ অনুসরণ করতে শহরটিতে অনেক পর্যটক, রেকর্ড প্রস্ততকারক এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংগীতশিল্পী বামাকোয় আসে। বামাকোর রাস্তায় প্রায়ই জ্যামবেজ নিয়ে সংগীতশিল্পীদের এবং পারকাশন ব্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী বামানো ছন্দ বাজাতে দেখা যায়।[33]
২০১১ সালে, শহরটিতে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়: ইউভার্সিটি অব সোসাল সার্ভিস এন্ড ম্যানেজমেন্ট অব বামাকো (ইউএসএসজিবি), ইউনিভার্সিটি অব হিউম্যানিটিজ এন্ড সোসাল সায়েন্স অব বামাকো, ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স (ইউএলএসএইচবি) এন্ড টেকনোলোজি অব বামাকো (ইউএসটিটিবি) এবং ইউনিভার্সিটি অব লিগ্যাল অ্যান্ড পলিটিকাল সায়েন্সেস অব বামাকো (ইউএসজেপিবি)।[34]
১৯৭২ সালে, অন্ধ এবং আংশিক দৃষ্টিশক্তি সম্পন্নদের বিদ্যালয়, ইউনিয়ন মালিয়েন দেজ আভগলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
উপসনালয়গুলোর মধ্যে মসজিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও শহরটিতে খ্রিস্টধর্মের চার্চ এবং মন্দির রয়েছে: রোমান ক্যাথলিক আর্চডায়াসিস অব বামাকো (ক্যাথলিক চার্চ), এগ্লিজ খ্যাতিয়ানে ইভোজোলিক দু মালি (অ্যালায়েন্স ওয়ার্ল্ড ফেলোসিপ) এবং অ্যাসেম্বলিজ অব গড।[35]
ডাকার-নাইজার রেলপথের মাধ্যমে বামাকো ডাকারের কাতি, নেগালা, কিতা এবং কায়েস এর সাথে যুক্ত হয়।
২০১৫ সালে, কোত দিভোয়ার এ বামাকোর সাথে সান পেদ্রো এর সংযোগকারী একটি রেলওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।[36]
বামাকোর সাথে একটি সড়ক পথে কুলিকোহো, সেগু, কোলোকানি, সিকাসো এবং কাতি সংক্ত রয়েছে।
বামাকো-সেনু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ১৯৭৪ সালে চালু করা হয়, যা শহরটি থেকে ১৫ কিলোমিটার (৯ মাইল) দূরে অবস্থিত। ২০০০ এর দশকে বিমানবন্দরটির যাত্রী সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৯৯ সালে যাত্রী সংখ্যা ছিল ৪০৩,৩৮০, ২০০৩ সালে ৪২৩,৫০৬ এবং ২০০৪ সালে ৪৮৬,৫২৬। পরিসংখ্যানটি অনুসারে ২০১৫ সালে যাত্রী সংখ্যা স্বল্প হারে (৪%) বৃদ্ধি পেয়ে ৯০০,০০০ এর উপর হওয়ার কথা ছিল বলে অনুমাণ করা হয়েছিল।[37] বর্তমানে যাত্রী সংখ্যা এই অনুমানটি অতিক্রম করেছে। ২০০৭ সালের মধ্যে বিমান যাতায়াত ১২.৪% এবং ২০০৮ এর মধ্যে ১৪% বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় যাত্রীবাহী পরিবহন। ২০০৭ সালে যাত্রী সংখ্যা ২০% এবং ২০০৮ সালে ১৭% বৃদ্ধি পায়। ২০০৭-২০০৮ সালে বামাকো-সেনু বিমানবন্দরে ২৭টি বিমান সাপ্তাহিকভাবে বা তার চেয়ে কম সময় ব্যবধানে চলাচল করে। যাত্রিবাহী বিমানের সংখ্যার এই বৃদ্ধি ২০০৭ সালে মালবাহী বিমানের সংখ্যার ১৬.৭% এবং ২০০৮ সালে ৩.৯৩% হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে স্পষ্ট হয়।[38] বামাকো-ডাকার আকাশপথটি সবচেয়ে ব্যস্ত। এ পথে সাপ্তাহিক ২৯ টি বিমান অনবরত আসা যাওয়া করে। মালির আঞ্চলিক রাজধানীগুলোর মধ্যে ঘরোয়া বিমান চলাচল করে: কায়ি, মতি, টিমবুকতু, সিকাসো, কিদাল এবং গাও। আহোপোহ দু মালি বামাকো-সেনু বিমানবন্দরটি পরিচালনা করে।[37] বিমানবন্দরটির কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে মালীয় যন্ত্রপাতি এবং পরিবহন মন্ত্রণালয়।[38]
নতুন পরিচালনা পদ্ধতি অনুসারে সেটি জারি হওয়ার পর থেকে মালির অঞ্চল সংখ্যা ৮টি এর পরিবর্তে ২০টি হবে এবং বামাকোর মধ্যে ৬টি এর পরিবর্তে ১০টি নগর কমিউন অন্তর্ভূক্ত থাকবে।[39]
শহরটিতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নাইজার নদী এবং বিভিন্ন প্রশস্ত রাস্তা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, যার মাধ্যমে বামাকোর সাথে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর এলাকার সংযোগ স্থাপিত হয়। কুলিকোরো থেকে মতি এবং গাও এ যাতায়াত করা যায়। শহরটির প্রধান যাতায়াতের মাধ্যমগুলোর একটি বুস ট্যাক্সি।
বামাকোয় নাইজার নদীর উভয় দিকেই অবস্থিত এবং নদীর তিন তীরে ৩টি সেতু রয়েছে: ১৯৬০ সালে নির্মিত ব্রিজ অব মার্টার, যার নাম ১৯৯১ সালের মার্চ মাসে মুসা ত্রাওরে সরকারের হাতে নিহত হওয়া আন্দোলনকারীদের স্মরণে পরিবর্তন করা হয়। রাজা ফাহাদ ব্রিজ, যা নামকরণ একজন সৌদি আরবীয় দাতার নামানুসারে করা হয় এবং পোন দ লামিয়িতে সিনো মালিয়েন, যা চীনের অনুদানে নির্মিত। সোতুবায় অবস্থিত এ সেতুগুলো যানজোট হ্রাস করার উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়।[40]
পয়েন্ট জি হাসপাতাল ১৯০৬-১৯১৩ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়, যা ২৫ হেক্টর (৬২ একর) এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এটি প্রথমে একটি সামরিক হাসপাতাল ছিল যা পরবর্তিতে একটি বেসামরিক হাসপাতালে পরিণত করা হয়। হাসপাতালটি একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত যেখান থেকে শহরটি দৃশ্যমান।[41]
বামাকোর দ্বিতীয় হাসপাতালটি হলো গাব্রিয়েল ত্রাওরে হাসপাতাল, যা ডাক্তার ও মানবতাবাদী, গাব্রিয়েল ত্রাওরে এর নামানুসারে নামকরণ করা হয়, যিনি ১৯১০ সালে ওয়াগাদুগু এ জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩৫ সালে একজন রোগীর মাধ্যমে নিউমোনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতাল ১৯৫৯ সালে নির্মাণ করা হয়।[42]
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৭ তারিখে হাসপাতালগুলোর উপর চাপ হ্রাস করতে বামাকোয় একটি নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইহিমাডিওতে অবস্থিত এই হাসপাতালটিতে থাকবে শিশুরোগ এবং প্রসুতি ও স্ত্রীরোগ ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ ঔষধ বিভাগ,ইমেজারি ব্যবস্থাপনা, জরুরি সেবা এবং নিবিড় যত্নের জন্য ১৫০ টি বিছানা। বামাকোর অন্যান্য অনেক প্রকল্পের মতো এই হাসপাতালটি চীনের বিনিয়োগ পায়।[43]
বামাকো বিভিন্ন বই এবং চলচ্চিত্রের বিষয়ে পরিণত হয়। এছাাড়াও অনেক বই ও চলচ্চিত্রের পটভূমি শহরটিকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়। এর ধরনের চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে: আব্দুর রহমান সিসাকো এর বামাকো। চলচ্চিত্রটিতে বামাকোয় অনুষ্ঠিত একটি বিচারসভা দেখানো হয়। এর সাথে শহরটিতে মানুষের দৈনিক জীবনযাপনও তুলে ধরা হয়। বিচারসভাটিতে দুই পক্ষ দারিদ্রাপূর্ণ আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং দুর্নীতির মধ্যে কোনটি দায়ী তা নিয়ে বিতর্ক করছিল। চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালের মে মাসের ২১ তারিখে ক্যানেস ফিল্ম ফ্রেস্টিবালে প্রথম মুক্তি পায় এবং ২০০৭ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে নিউ ইয়র্ক ফিল্মস কর্তৃক ম্যানহাটনে মুক্তি পায়।[44]
হোয়ার ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ কার্মেন সান্দিয়াগো নামক ১৯৮০ এর দশকের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক ভিডিও গেমে এ শহরটি উপস্থাপন করা হয়।[45]
বামাকোর সাথে টুইন টাউন (সিস্টার সিটি) হিসেবে যুক্ত রয়েছে:[46]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.