Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়া বেশ কিছু মিসাইল ও নিউক্লিয়ার পরীক্ষা চালায় যা অভ্যন্তরীণ অঞ্চলের বাইরে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার ক্ষমতা প্রদর্শন করে এবং ইঙ্গিত দেয় যে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়নের চেয়ে আরও দ্রুত গতিতে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র-শক্তি বিস্তৃত হচ্ছে।[৩] এর সাথে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে পরিচালিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি মিলিয়ে এ অঞ্চলে এবং এর বাইরে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।[৪]
২০১৭-১৮ উত্তর কোরিয়া সংকট | |||||
---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: দুই কোরিয়ার বিরোধ এবং কোরীয় যুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধবিরতি | |||||
| |||||
সংকটে জড়িত পক্ষগুলো | |||||
উত্তর কোরিয়া |
দক্ষিণ কোরিয়া জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া | ||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||
কিম জং উন |
মুন জে ইন শিনজো আবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ম্যালকম টার্নবুল[১][২] |
২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-ইউ তার নববর্ষের ভাষণে জানান, তার দেশ একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষামূলকভাবে নিক্ষেপের জন্য গৃহীত প্রস্তুতির "শেষ পর্যায়ে" ছিল।[৫]
৩ মে, উত্তর কোরিয়া অস্বাভাবিকভাবে তার প্রধান মিত্র চীনের কঠোর সমালোচনা জারি করে বলে, "সবাইকে অবশ্যই স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, দেশের অস্তিত্ব এবং উন্নয়নের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র অধিকার নীতির নড়চড় হবে না [ ...] এবং নিজেদের জীবনের মত মূল্যবান পারমাণবিক কর্মসূচিকে ঝুঁকির মুখে ফেলে গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া চীনের সাথে মূল্যবান বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য অনুনয় করবে না... চীনের উচিত হবে না-গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার ধৈর্যসীমা পরীক্ষা করা[ ...] চীনের বরং উচিত হবে, উত্তর কোরিয়া ও চীনের সম্পর্ক বিনাশী ও অপরিণামদর্শী কার্যকলাপের কঠোর পরিণতি সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করা।" এই কঠোর বক্তব্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাল মিলিয়ে নাচার জন্য চীনা গণমাধ্যমকেও অভিযুক্ত করা হয়।[৬]
২০১৭ সালের প্রথমভাগে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জুলাইয়ে প্রণীত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানায়, উত্তর কোরিয়া সফলভাবে আমেরিকার মূল ভূখন্ডে পৌঁছতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছে। [৭]
২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়ার প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষার পর থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কয়েকটি সংশোধনী পাস করার মাধ্যমে ডিপিআরের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সীমাবদ্ধতা। তা সত্ত্বেও, উত্তর কোরিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন ২০১৬ সালে আনুমানিক ৩.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা গত ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। উত্তর কোরিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ- চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্যের অব্যাহত অগ্রগতিই এর পেছনে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে।[৮][৯]
১২ ফেব্রুয়ারি উত্তর কোরিয়ার পুকুককোং -২ নামের মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর ফেব্রুয়ারি, ২০১৭-র শেষের দিকে চীন, যে দেশটি বরাবরই উত্তর কোরিয়ার সাথে বাণিজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতিকর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের হুমকিকে আলাদা বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে আসছিল- [১০] জানায় যে, দেশটি জাতিসংঘের ২৩২১ নং প্রস্তাব[১১] মেনে চলবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর কোরিয়া থেকে সব কয়লা (উত্তর কোরিয়ার প্রধান রপ্তানীপণ্য) আমদানি বন্ধ করে দেয়।[১২] এই বাণিজ্য-বিরতি চলমান থাকা সত্ত্বেও জুলাই, ২০১৭ তে চীন জানায়, উত্তর কোরিয়ার সাথে তাদের বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে।[১৩] যখন উত্তর কোরিয়ার কয়লার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে আমদানির গতি স্তিমিত আছে বলা হল, তখন ২০১৭ সালের জুলাই মাসে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চীন এর বাণিজ্য ২০১৬ সালের জুলাইয়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয় আর বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩.০১ বিলিয়ন ডলার। [১৪]
২০১৭ সালে সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্তর কোরিয়ার ওপর বেশ কয়েকবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ২২ ডিসেম্বর আরোপিত সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা-বিধান অনুসারে, উত্তর কোরিয়ায় তেল সরবরাহ নিষিদ্ধ করা হয় এবং উত্তর কোরীয় শ্রম অভিবাসীরা যেসব দেশে কাজ করে তাদেরকে সেসব অঞ্চল থেকে ২৪ মাসের মধ্যে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।[১৫]
চীন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা চীনা সংস্থাগুলি উপর আরোপিত হতে পারে এমন (দ্বিতীয়) নিষেধাজ্ঞাটির বিরোধিতা করে।[১৩][১৬]
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অটো ওয়ার্মবিয়ের ২০১৭ সালের জুন মাসে ১৮ মাসের বন্দীদশা শেষে কোমায় থাকাবস্থায় উত্তর কোরিয়া থেকে মুক্তি পায়।[১৭] যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার ছয় দিন পর ১৯ জুন ওয়ার্মবিয়ের অচেতন অবস্থাতেই মারা যায়।[১৮] কতিপয় মার্কিন কর্মকর্তা তার মৃত্যুর জন্য উত্তর কোরিয়াকে দায়ী করেন।[১৯] ২০১৭ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন একটি "ভৌগোলিক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞার" অনুমোদন দেন যা আমেরিকানদের উত্তর কোরিয়া ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। [২০]
উত্তর কোরিয়াযর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের হুমকি মোকাবেলার জন্য কোরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন বাহিনী (ইউএসএফকে) দক্ষিণ কোরিয়ার টার্মিনাল হাই অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) স্থাপনের পরিকল্পনা করে, যা মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নয়) শনাক্ত ও ধ্বংস করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।[২১] চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া এই থাড স্থাপনের তীব্র বিরোধিতা জানায়।[২২][২৩] এপ্রিলের শেষের দিকে জানা যায়, ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ চালু হওয়ার কথা থাকলেও থাড আরও দ্রুত কাজ শুরু করতে পারে।[২৪] মার্কিন বাহিনী কোরিয়ার ঘোষণা মতে, দক্ষিণ কোরিয়াতে স্থাপিত থাড ২০১৭ সালের ১ মে প্রাথমিক অপারেটিং ক্ষমতা (আইওসি)-তে পৌঁছায়।[২৫]
জাপান সাগরের দিকে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের এক মাসের মাথায় উত্তর কোরিয়া ৫ এপ্রিল সিনপো বন্দর থেকে জাপান সাগরে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়। উত্তেজনা আরও ঘনীভূত হয় যখন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়া থেকে পারমাণবিক হুমকি মোকাবেলা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে প্রস্তুত।[২৬][২৭] ৯ই এপ্রিল, মার্কিন নৌবাহিনী ঘোষণা দেয়, তারা ইউএসএস কার্ল ভিনসন সুপারক্যারিয়ারের নেতৃত্বে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি নৌ-হানাদার দল পাঠাচ্ছে (৮ এপ্রিল সিঙ্গাপুর থেকে যাত্রার পর উত্তর দিকে জাহাজ ভাসিয়ে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্টেশনে রিপোর্ট করার জন্য)। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ ভুল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য প্রতীয়মান হয়, এই নৌ-দল কোরিয়ান উপদ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে।[২৭][২৮][২৯][৩০] কয়েকদিন পরেই মার্কিন সরকার এই খবরটি প্রত্যাহার করে নেয়।[৩১][৩২]
মার্কিন নৌবাহিনীর সেই ৮ এপ্রিলের ঘোষণা ক্রমবর্ধমান আরও ঘটনার জন্ম দেয়।[৩৩] ১৭ এপ্রিল জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার সহকারী রাষ্ট্রদূত কোরীয় উপদ্বীপকে " বিশ্বের বৃহত্তম হটস্পট"-এ পরিণত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন এবং উত্তর কোরিয়ার সরকার ঘোষণা দেয়, " উত্তর কোরীয় বাহিনী আক্রমণের শিকার হলে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার জন্য প্রস্তুত।" [৩৪] প্রকৃতপক্ষে ১৮ এপ্রিল, কার্ল ভিনসন আর এর সহচরেরা কোরিয়া থেকে ৩৫০০ মাইল দূরে ভারতীয় মহাসাগরে অস্ট্রেলিয়ার রাজকীয় নৌবাহিনীর সাথে পূর্ব-নির্ধারিত যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছিল।[৩৩][৩৫][৩৬] ২৪ এপ্রিল জাপানের যুদ্ধজাহাজ "আশিগারা" ও "সামিদার" ফিলিপাইনের কাছে ইউএসএস "কার্ল ভিনসন"-এর সাথে কৌশলগত প্রশিক্ষণ মহড়ায় অংশ নিলে উত্তর কোরিয়া সিঙ্গল স্ট্রাইকের মাধ্যমে জাহাজটিকে ডুবিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।[৩৭] কার্ল ভিনসন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার দক্ষিণ চীন সাগরে ২০১৫ সালে একবার এবং ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবারো রুটিন টহল দেয়। [৩৮] এপ্রিল ২০১৭-র শেষভাগে ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, " মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর কোরিয়ার সাথে খুবই গুরুতর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"[৩৯]
২৪ এপ্রিল উত্তর কোরিয়া কোরিয়ান পিপলস আর্মি-র ৮৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ওনসানে অনুষ্ঠিত মহড়াকে "এযাবতকালের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া" বলে উল্লেখ করে।[৪০] পরের দিনের খবরে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার সংজু গ্রামে থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল উপাদানগুলো স্থাপনের কাজ শুরু করেছে।[৪১]
৪ জুলাই উত্তর কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সাথে দিন মিলিয়ে এর আইসিবিএম হোয়াসং -১৪- র প্রথম সর্বজনীনভাবে ঘোষিত পরীক্ষামূলক নিক্ষেপ পরিচালনা করে। দাবি করা হয়, ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপান সাগর (কোরিয়ার উত্তর সাগর)-এর পূর্ব দিকে ৯৩৩ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম এবং ৩৯ মিনিটের উড্ডয়নকালে এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৮০২ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছেছিল।[৪২][৪৩] যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিশেষজ্ঞরা এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম এমন নিউক্লিয়ার অস্ত্র অন্বেষণের পথে পিয়ংইয়ং-এর বড় পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন।[৪৪] উত্তর কোরিয়া ঘোষণা দেয়, তারা এখন "পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক শক্তিধর এবং এই পারমাণবিক শক্তির মধ্যে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে আঘাত হানতে সক্ষম- সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তঃমহাদেশীয় রকেট রয়েছে।" [৪৫][৪৬]
ইউএসএফকে ২০১৭ সালের ৪ জুলাই একটি বিবৃতিতে জানায়: " 8 জুলাই সংঘটিত উত্তর কোরিয়ার অস্থিতিশীল ও বেআইনি কার্যকলাপ মোকাবেলায় নিজেদের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য মার্কিন সেনাবাহিনী ও কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের (রোক) সামরিক বাহিনী যৌথভাবে একটি অভিযান পরিচালনা করেছে।"[৪৭] এই মহড়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার হিয়নমু-২বি এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর রণকৌশল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করা হয়।[৪৮][৪৯]
গণমাধ্যমে মার্কিন গোয়েন্দাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের ভেতরে বসানোর উপযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির পারমাণবিক বোমা সফলভাবে তৈরির খবর আসে যার প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট, রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবধান করে দেন যে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হামলার হুমকি "অদৃষ্টপূর্ব আগুন, উন্মত্ততা ও প্রকাশ্য ক্ষমতা প্রদর্শনের সম্মুখীন হবে।" ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন-কে নিয়েও বলেন, "তিনি অস্বাভাবিকভাবে বেশি হুমকি দিচ্ছেন"[৫০] ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই উত্তর কোরিয়া সাড়া দেয় এবং ঘোষণা করে, তারা গুয়ামে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে।[৫১]
১০ আগস্ট, উত্তর কোরিয়ার লেফটেন্যান্ট কিম রাক গিয়ম ট্রাম্পের "আগুন ও উন্মত্ততা" বিষয়ক ভাষণের জবাব দিয়ে বলেন, তিনি আবোলতাবোল বকেছেন। রাক সোজাসুজি আরও জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে "যুক্তিসংগত সংলাপ"চালানো সম্ভব নয়। উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানায়, কিম জং-উনের সেনাবাহিনী গুয়াম দ্বীপ থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে ফিলিপাইন সাগরে হোয়াসং -১২ টাইপের চারটি আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর উড্ডয়নকাল অনুমান করা হয় ঠিক ১৭ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড। কেসিএনের একটি প্রতিবেদন ইঙ্গিত দেয়, পরিকল্পনাটি মধ্য আগস্টে বাস্তবায়ন করা হবে।[৫২] মার্কিন কর্মকর্তারা বিবৃতি দেন, উত্তর কোরিয়া নীতির জন্য নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ রাষ্ট্রদূত জোসেফ ইয়ুন এবং জাতিসংঘের মিশনে উত্তর কোরিয়ার একজন ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক পার্ক সং ইল এই বিতর্কের সময় "নিউইয়র্ক চ্যানেল" এর মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন।[৫৩]
১১ আগস্ট ট্রাম্প টুইটারে লেখেন, "সামরিক সমাধান সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রাখা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার কি মূর্খের মত আচরণ করা উচিত? আশা করি, কিম জং উন অন্য কোন উপায় খুঁজে নেবেন!"[৫৪] জাতিসংঘের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জন বোল্টন এবং সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লিওন প্যানেট্টা বিবৃতি দেন যে, পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্বকে "কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকট" এর সাথে তুলনা করা যায়।[৫৫][৫৬]
১৪ আগস্ট, ইউক্রেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ওলেক্সান্ডার টারচিনোভ উত্তর কোরিয়াকে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করেন। এর আগে নিউইয়র্ক টাইমস নিবন্ধে লিখেছিল, উত্তর কোরিয়া হয়তো ইউক্রেনের কারখানা ইয়ুঝমাশ থেকে রকেট ইঞ্জিন কিনেছে। ইয়ুঝমাশও রিপোর্টটির বিরোধিতা করে।[৫৭]
১৫ আগস্ট, উত্তর কোরিয়ার নেতা বলেন, তিনি ট্রাম্প পরবর্তীকালে কী পদক্ষেপ নেন দেখার অপেক্ষায় আছেন এবং গুয়ামের মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বিলম্ব করছেন।[৫৮]
২১ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া উলচি-ফ্রিডম গার্ডিয়ান মহড়া'২০১৭ পরিচালনা করে। কোরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর ঘোষণা অনুযায়ী, এতে ১৭৫০০ মার্কিন সৈন্য অংশগ্রহণ করে যা বিগত বছরের তুলনায় কিছুটা কম ছিল।[৫৯] উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদপত্র রোদং সিনমুনের সম্পাদকীয় কলামে এ মহড়াকে "আমাদের বিরুদ্ধে বৈরিতার সবচেয়ে স্পষ্ট অভিব্যক্তি" উল্লেখ করে নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।[৬০][৬১]
২৫ আগস্ট উত্তর কোরিয়া দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কাংওন প্রদেশ থেকে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইউএস প্যাসিফিক কমান্ডের সেনাপতি ডেভ বেনহামের বক্তব্য অনুযায়ী, একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর পরই বিস্ফোরিত হয় এবং অন্য দুটিও চরমভাবে ব্যর্থ হয়- ২৫০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করার পর জাপানের সাগরে ছড়িয়ে পড়ে।[৬২]
২৯ আগস্ট, জাপানের সময় সকাল ৬ টা নাগাদ উত্তর কোরিয়ার উৎক্ষেপিত একটি ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের হোক্কাইদোর ওপর দিয়ে উড়ে আসে। ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রশান্ত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছে এবং প্রায় ২৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। জাপানের সেনাবাহিনী এটিকে গুলি চালিয়ে ভূপতিত করে নি।[৬৩] ১৯৯৮ আর ২০০৯ এর পর, এ নিয়ে তৃতীয়বারের মত উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। তা সত্ত্বেও, বিগত দুইটি ঘটনাকেই উত্তর কোরিয়া স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বলে দাবি করেছিল।[৬৪] ক্ষেপণাস্ত্রটির কারণে তোহোকু ও হোক্কাইদোতে জে-অ্যালার্ট সতর্ক ব্যবস্থা চালু হয়ে যায়, যাতে জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার পরামর্শ দেয়া হয়।[৬৫][৬৬] এই উৎক্ষেপণটি জাপান-কোরিয়া সংহতি চুক্তির ১০৭ তম বার্ষিকী উপলক্ষে চালানো হয়েছিল এবং কেসিএনএ উল্লেখ করে, " জাপানি নিষ্ঠুর দ্বীপবাসীরা যেন নিষ্ঠুর ২৯ আগস্ট নিয়ে মাতামাতি না করে, তা নিশ্চিত করতে এটি একটি সাহসী পরিকল্পনা।"[৬৭] আরও জানা যায়, ২০১৭ সালের প্রথমভাগে পরীক্ষিত ক্ষেপণাস্ত্রটির তুলনায় এটি বেশ সমতল পথ অনুসরণ করে উড়েছিল।[৬৮]
পরের দিন এ ঘটনার বিষয়ে আলোচনা করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়।[৬৯] হোয়াইট হাউজের উৎক্ষেপণ- পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সমাধানের সব ধরনের বিকল্পই আলোচনাধীন রয়েছে। [৭০]
৩০ আগস্ট, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটার বার্তায় বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৫ বছর ধরে উত্তর কোরিয়ার সাথে কথা বলে আসছে এবং তাদের চাঁদা প্রদান করছে। কথা বলার মানে জবাব দেয়া নয়!"[৭১] যাই হোক, সংবাদকর্মীরা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সং ইয়ং মু এর সাথে এক আলোচনা সভায় কূটনৈতিক সমাধানের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে কি না জানতে চাইলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাট্টিস বিবৃতি দেন, " আমরা কখনোই কূটনৈতিক সমাধানের পথ রুদ্ধ করি নি" এবং " আমরা সবসময়ই আরও সমাধানের খোঁজে আছি। আমরা কখনোই আত্মতৃপ্তিতে ভুগি না।" [৭২]
৩১ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৯ আগস্টে "উত্তর কোরিয়ার মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সরাসরি প্রতিক্রিয়া" হিসাবে দুটি পারমাণবিক শক্তিবিশিষ্ট বি -১ বি এবং চারটি এফ-৩৫ সমেত এক ঝাঁক বোমারু বিমান উড্ডয়ন করে।[৭৩]
৩ সেপ্টেম্বর, ইউটিসি সময় রাত ৩ টা ৩১ মিনিটে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা রিপোর্ট করে, এটি উত্তর কোরিয়ার ফুংগিয়ে-রি পারমাণবিক পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প শনাক্ত করেছে।[৭৪] ভূমিকম্পের অগভীর অংশের গভীরতা এবং উত্তর কোরিয়ার মৌলিক পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধা থেকে অনুমান করে বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, দেশটি ২০০৬ সালে প্রথম পারমাণবিক ডিভাইস বিস্ফোরিত করার পর এ নিয়ে ষষ্ঠবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করেছে।[৭৫] উত্তর কোরিয়া দাবি করে, তারা আইসিবিএম-এর ওপর স্থাপিত হতে পারে এমন একটি হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা চালিয়েছে।[৭৬] স্বাধীন ভূতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা নোরসার অনুমান করে, বিস্ফোরণের মাত্রা প্রায় ১২০ কিলোটন ছিল।[৭৭] ৩ সেপ্টেম্বরের কেসিএনএ-র অফিসিয়াল বিবৃতিতেও উত্তর কোরিয়ার "সুপার-শক্তিশালী ইএমপি আক্রমণ "পরিচালনা করার ক্ষমতা আছে বলে দাবি করা হয়।[৭৮]
একই দিনে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিস হোয়াইট হাউসের পক্ষে বক্তব্য রাখেন এবং সতর্ক করে দেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গুয়াম এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার যে কোন হুমকির জবাব "বিপুল সামরিক প্রতিক্রিয়া" প্রদর্শন করে দেয়া হবে।[৭৯]
৬ সেপ্টেম্বর, ডোনাল্ড ট্রাম্প, চীন এর প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং এর সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথন শেষে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার জ্বালাতন সহ্য করবে না, যদিও সামরিক আগ্রাসন তার "প্রথম পছন্দ" ছিল না।[৮০]
১০ সেপ্টেম্বর, সেক্রেটারি জেনারেল এর উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গ বিবিসি টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন: "উত্তর কোরিয়ার বেপরোয়া আচরণ এক প্রকারের বৈশ্বিক হুমকি এবং এ ব্যাপারে ন্যাটো সহ বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া জানানো প্রয়োজন "; গুয়ামে মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আক্রমণের ওপর ন্যাটোর ৫ নম্বর আর্টিকেল প্রযোজ্য হবে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "৫ নম্বর ধারা সে রকম ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে কী না, অতদূর জল্পনাকল্পনা আমি করব না।"[৮১]
১৪ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়া জাপানকে "ডুবিয়ে দেয়ার" এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে "অন্ধকার ভস্মে" পরিণত করার হুমকি দেয়। ইয়োশিহিদে সুগা এমন বিবৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এমন বক্তব্য ""অত্যন্ত উত্তেজনা সৃষ্টিকারী এবং গুরুতর"।[৮২] পরের দিন, পিয়ংইয়ং এর কাছ থেকে হোক্কাইদোর উপর দিয়ে একটি আইআরবিএম উড়ে যায় যেটি স্থানীয় সময় আনুমানিক সকাল ৭ টা ১৬ মিনিটে কেপ এরিমো থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে আছড়ে পড়ে।
ক্ষেপণাস্ত্রটি ৩,৭০০ কিলোমিটার (২,৩০০ মাইল) অতিক্রম করে, আর এর ১৯ মিনিটের উড্ডয়নকালে অর্জিত সর্বাধিক অপভূ ছিল ৭৭০ কিলোমিটার (৪৮০ মাইল)। উত্তর কোরিয়া থেকে উৎক্ষেপিত আইআরবিএম ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে এটাই সর্বাধিক দূরত্ব অতিক্রম করে, জাপানের বাইরেও এর বিস্তৃতি ছিল।[৮৩] ১৮ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়া ঘোষণা দেয় যে, আরও নিষেধাজ্ঞার দরুন তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির কেবল প্রসারই ঘটবে।[৮৪]
১৮ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউস জানায়,প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রুপ এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং উত্তর কোরিয়ার অব্যাহত পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন এবং উত্তর কোরিয়া বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের "জোরালো প্রয়োগের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর" ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন; উত্তর কোরিয়া জানায়, এসব নিষেধাজ্ঞা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করবে।[৮৫]
১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তার প্রথম ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে "যদি নিজেদের বা মিত্রদের রক্ষা করার জন্য বাধ্য করা হয়" তবে উত্তর কোরিয়াকে পুরোপুরি ধ্বংস করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন উপায় থাকবে না। রকেট মানব কিম জং-উন নিজের ও নিজের শাসনব্যবস্থার জন্য আত্মঘাতী অভিযানে নেমেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে প্রস্তুত, ইচ্ছুক এবং সক্ষম, কিন্তু আশা করি, এর দরকার হবে না।"[৮৬][৮৭] এছাড়াও ডোনাল্ড ট্রাম্প নাম উল্লেখ না করে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য চীনের সমালোচনা করে বলেন, "এটি এমন এক আগ্রাসন অথচ কিছু দেশ শুধু এই ধরনের শাসনব্যবস্থার সাথে বাণিজ্যই করছে না, বরং পারমাণবিক সংঘাতে বয়ে এনে বিশ্বের পতন ঘটাচ্ছে এমন একটি দেশকে অস্ত্র সরবরাহ এবং অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন যোগাচ্ছে।"[৮৬][৮৭]
২০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন যার দরুন উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করা হয়: মার্কিন রাজস্ব বিভাগকে উত্তর কোরিয়ার সাথে ব্যবসা পরিচালনাকারী সংস্থা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে নজর রাখার অনুমোদন দেয়া হয়।[৮৮][৮৯] এই কার্যনির্বাহী আদেশ নিয়ে রাজস্ব বিভাগের সচিব স্টিভেন ম্যানুচিন মন্তব্য করেন, "বিদেশী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে বার্তা পাচ্ছে যে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা উত্তর কোরিয়ার সাথে ব্যবসা করতে পারবে, কিন্তু উভয়ের সাথে নয়।"[৯০][৯১]
২১ সেপ্টেম্বর, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার স্বরাষ্ট্র বিষয়ক চেয়ারম্যান থাকাবস্থায়[৯২] প্রথমবারের মত রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের হুমকির সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানান।[৯৩] তিনি ট্রাম্পকে "ভীমরতিগ্রস্ত উন্মাদ বৃদ্ধ " (কোরিয়ান : 늙다리 미치광이 উচ্চারণ-'নূকদারি মিচ্ছিখোয়াংই') বলে অভিহিত করেন এবং "ইতিহাসের সবচেয়ে কট্টরপন্থী ও সর্বোচ্চ স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা" নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।[৯৪][৯৫][৯৬][৯৭] পররাষ্ট্র মন্ত্রী রি ইয়ং-হো একইভাবে ট্রাম্পকে ঘেউঘেউ করা কুকুর হিসেবে আখ্যায়িত করেন[৯৮] এবং আরও মন্তব্য করেন, উত্তর কোরিয়া প্রশান্ত মহাসাগরে হাইড্রোজেন বোমার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা চালানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে [৯৬] যা হবে ১৯৮০ সালের (চীন কর্তৃক সম্পাদিত) পর বিশ্বের প্রথম বায়ুমণ্ডলীয় পারমাণবিক পরীক্ষা।[৯৭]
২৫ সেপ্টেম্বর, উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়ং হো তার দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার জন্য ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেন।[৯৯] এ প্রসঙ্গে তিনি ট্রাম্পের সাম্প্রতিক টুইটটি উল্লেখ করেন যাতে বলা ছিল, উত্তর কোরিয়া "আর বেশি দিন টিকবে না।" হোয়াইট হাউস প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন যুদ্ধ ঘোষণা করেনি।
৩০ শে সেপ্টেম্বর, রেক্স টিলারসন চীন ভ্রমণের সময় বিবৃতি দেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে "সরাসরি যোগাযোগ" ছিল।" পিয়ংইয়ংয়ের সাথে আমাদের যোগাযোগে আছে" জানিয়ে তিনি বলেন, "আমরা অন্ধকারে নেই"। তিনি আরো বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনা "খতিয়ে" দেখছে। "সুতরাং সঙ্গেই থাকুন"।[১০০] সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম দাবি করে, 'নিউ ইয়র্ক চ্যানেল' নামের দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত একটি ব্যাক-চ্যানেল গত মাসে পুনরায় খোলা হয়েছে, যা ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ং মধ্যে যোগাযোগের ব্যবস্থা করছে ।[১০১] কিন্তু পরের দিন, ট্রাম্প টুইটারে ধারাবাহিকভাবে পোস্ট তৈরি করেন যাতে টিলারসন এর প্রচেষ্টা অবদমিত হয়ে যায় বলে মনে হয়। তিনি দাবি করেন, টিলারসন উত্তর কোরিয়ার সাথে সমঝোতার চেষ্টা করে "তার সময় নষ্ট" করছিলেন এবং " আমরা তাই করব যা করতে হবে"।[১০২]
১৮ অক্টোবর ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বের সময় সিআইএর সাবেক পরিচালক জন ও ব্রেনান মন্তব্য করেন, "কোরিয়ান উপদ্বীপের সাথে সামরিক দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা কয়েক দশকের তুলনায় অনেক বেশি ... আমি মনে করি না এটা সম্ভবত বা সম্ভাব্য, কিন্তু সম্ভাবনা যদি ৪ ভাগের ১ ভাগ বা ৫ ভাগের ১ ভাগ হয়, তাও খুব বেশিই হবে।" [১০৩]
উত্তর কোরিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো দেশ দুটিকে রক্ষা করার ব্যাপারে ইতস্ততঃ করতে পারে- সে ভয় থেকে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান উভয় দেশেই পারমাণবিক বিকল্প নিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু হয়।[১০৪] দক্ষিণ কোরিয়ায় পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তোলার পক্ষ সমর্থন করে এবং প্রায় ৭০ শতাংশই চায়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ১৯৯১ সালে প্রত্যাহার করা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র আবার চালু করুক।[১০৪][১০৫] অক্টোবরে, দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় বিরোধী দলীয় নেতা হোং জুন-পিয়ো যুক্তি দেখান, "দক্ষিণ কোরিয়াতে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের মাধ্যমেই আমরা উত্তর কোরিয়ার সাথে সমান তালে আলোচনা করতে পারি।"[১০৬] রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন আহ্বান জানিয়ে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়াতে পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র স্থাপনের বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনা করা উচিত।[১০৬] যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার উল্লেখ করেন, " উত্তর কোরিয়ায় যদি পারমাণবিক অস্ত্র বহাল থাকে, তবে এশিয়ার বাকি অংশেও পারমাণবিক অস্ত্র ছড়িয়ে পড়া উচিত।"[১০৪]
১৩ নভেম্বর উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা সংযুক্ত সীমান্ত এলাকায় ও ছং সং নামের এক বিদ্রোহীকে সীমান্ত অতিক্রম করতে বাধা দেয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়। জাতিসংঘের কমান্ড বিবৃতি দেন যে, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা অসামরিকীকৃত এলাকায় ৪০ টির বেশি গুলি চালিয়েছে এবং একজন সৈনিক অল্প সময়ের জন্য সামরিক প্রভেদ রেখা পার হয়েছিল-এ ঘটনায় তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করেছে।[১০৭]
২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়াকে আবারো সন্ত্রাসবাদের একটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক হিসাবে তালিকাভুক্ত করার ঘোষণা দেন, উত্তর কোরিয়া এই পদক্ষেপকে "গুরুতর উপদ্রব" বলে অভিহিত করে।[১০৮][১০৯]
২৮ নভেম্বর উত্তর কোরিয়া দুই মাসের বিরতি শেষে এর তৃতীয় আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়।[১১০][১১১][১১২][১১৩][১১৪] হোয়াসং-১৫-র ছবিগুলো দেখে তিনজন বিশ্লেষক তাল ইনবার, কিম দং-ইয়ুব ও চাং ইয়ং-গুন একমত হন যে, ক্ষেপণাস্ত্রটির বুস্টার ইঞ্জিন ছিল দুটি হোয়াসং-১৪ ইঞ্জিন যেগুলো প্রথম ধাপে বান্ডেল অবস্থায় ছিল।[১১৫] বলা হয়ে থাকে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে রেকর্ড পরিমাণ ২৮০০ মাইল উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং ৬০০ মাইল দূরত্বে অবস্থিত জাপান সমুদ্রের স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবতরণ করানো হয় যেখানে এটি তিন খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়।[১১৬] পেন্টাগন এবং পরবর্তী সব বিশ্লেষণের প্রাথমিক মূল্যায়ন এর পরিভ্রমণের উচ্চতা পর্যালোচনা করে ইঙ্গিত দেয়, এটি একটি আইসিবিএম ছিল এবং এর সাধারণ কক্ষপথ দিয়ে নিক্ষেপ করা হলে সহজেই মহাদেশীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে।[১১৬] দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, একটি আইসিবিএম সম্ভবত চালু করা হয়েছিল-যেটি উচ্চতর কক্ষপথ পরিভ্রমণ করেছে। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইৎসুনরি ওনোদেরা আরও বলেন, স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্তর্গত পানিতে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ার আগে ক্ষেপণাস্ত্রটি কমপক্ষে তিনটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে[১১৬] যা থেকে বোঝা যায়, এর পুনঃপ্রবেশ যানটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করে টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়েছিল।[১১৫] এটি চীন থেকে কেনা ৮-এক্সেলের যান নয়, বরং আরও বড়-৯ এক্সেলের একটি লঞ্চার যান থেকে চালু করা হয়েছিল। এই তিনটি আই.সি.বি.এমকে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে নিক্ষেপ করা হয়।[১১৫]
এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কিছু সময় পরেই এক প্রেস কনফারেন্সে, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার আইসিবিএম নিক্ষেপের ব্যাপারে বলেন, "আমরা পরিস্থিতি আয়ত্তে নিয়ে আসব।"[১১৭]
২০১৭ সালের ডিসেম্বরের শেষভাগের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে গত বছরজুড়ে চীন ও রাশিয়ার পতাকাবাহী ট্যাঙ্কার জাহাজগুলোকে উত্তর কোরিয়ার নৌ-জাহাজগুলোর সাথে তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য আদানপ্রদান করতে দেখা গেছে। ট্রাম্প তার টুইটার বার্তায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা ও উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন জুগিয়ে চলার জন্য চীনকে অভিসম্পাত দেন। জাহাজগুলোর মধ্যে একটি, হংকং এ ২৩ জন চীনা ক্রু নিয়ে নিবন্ধিত "দ্যা লাইটহাউজ উইনমোর"-কে উত্তর কোরিয়ার জাহাজ সামজং-২ কে অবৈধভাবে ৬০০ টন তেল সরবরাহ করার অভিযোগে- অক্টোবর মাসে, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা পশ্চিম সাগর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা বাজেয়াপ্ত করেছিলেন।[১১৮][১১৯][১২০][১২১]
২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উত্তর কোরিয়ার প্রায় ১৪৭,০০০ কর্মী এখন বিদেশে কাজ করে এবং পিয়ংইয়ং এর শ্রমিক ইউনিয়ন পরিষদ এসব শ্রমিকদের বেতনের ৩০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ ভোগ করে।[১২২] পোল্যান্ডের একটি জাহাজ নির্মাণ কারখানা, একটি শিপিং কন্টেইনারের প্রস্তুতকারক এবং গ্রীনহাউসগুলো এই শ্রমিক ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত।[১২৩]
এই সংকটের দরুন দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচাং-এ অনুষ্ঠিতব্য শীতকালীন অলিম্পিক ২০১৮-র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।[১২৪] তখন অনেকের মনে বিশ্বাস জন্ম নেয়,উত্তর কোরিয়া যদি এই গেমসে অংশ নেয়, তাহলে নিরাপত্তা ঝুঁকি দূর হবে।[১২৫] এই তত্ত্ব পরীক্ষার মুখোমুখি হয় যখন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন তার নববর্ষ'২০১৮ উপলক্ষে দেয়া ভাষণে গেমসে অ্যাথলেটদের পাঠানোর সম্ভাব্যতার ব্যাপারে সবুজ সিগন্যাল দেন। তিনি বলেন, "শীতকালীন গেমসে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণ জাতীয় গর্ব প্রদর্শন করার জন্য ভাল সুযোগ হবে এবং আমরা গেমসটির সফলতা কামনা করি। দুই কোরিয়া থেকে কর্মকর্তারা অবিলম্বে আলোচনা করতে দেখাতে পারেন।"[১২৬] এই ঘোষণার পরে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের পর এই প্রথমবারের মত দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার সাথে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় বসতে সম্মত হয়। ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি এই আলোচনার দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়।[১২৭] উত্তর কোরিয়াও আইওসি-র সাথে উক্ত সপ্তাহে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত হয়।[১২৮] উত্তর-দক্ষিণের এই আলোচনা প্রস্তুতির মাঝে, দুই দেশ প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ থাকা সিউল-পিয়ংইয়ং হটলাইন পুনরায় চালু করে এবং ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নথি বিনিময় করে।[১২৭][১২৯] এ ধরনের অগ্রগতির পর, উত্তর কোরিয়ার আইওসি সদস্য চাং উং বলেন, উত্তর কোরিয়ার ফিগার স্কেটাররা এই গেমসে সম্ভবত অংশগ্রহণ করতে পারে। [১৩০] আবার কিম জং উনের সাথে বিবাদে জড়ানো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বার্তা প্রেরণ করা হলে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণের সম্ভাব্যতার দরুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই গেমস বয়কট করার সম্ভাবনা মাথাচাড়া দেয়।[১৩১] ৯ জানুয়ারি আলোচনার পর, উত্তর কোরিয়া ঘোষণা দেয়, তারা শীতকালীন অলিম্পিকে অংশগ্রহণের জন্য একটি প্রতিনিধিদল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ক্রীড়াবিদ পাঠাবে।[১৩২]
উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একসাথে মার্চ করে এবং একটি যৌথ মহিলা আইস হকি টিম গঠন করে।[১৩৩] এথলেটদের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া নজিরবিহীনভাবে একটি উচ্চস্তরের প্রতিনিধিদল পাঠায়, যার নেতৃত্বে ছিলেন কিম জং-উনের বোন কিম ইয়ো-জং, প্রেসিডেন্ট কিম ইয়ং-নাম এবং সামজিইয়ন অর্কেস্ট্রা-র মত একদল বাদক-শিল্পীরাও তাদের সঙ্গী ছিলেন।[১৩৪] প্রতিনিধিদল দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন-কে উত্তর কোরিয়ায় আসার আমন্ত্রণ জানায়।[১৩৪]
উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ সং ইয়ুন লি-র মতে, অলিম্পিক গেমসকে কেন্দ্র করে উত্তর কোরিয়ার গৃহীত নীতির উদ্দেশ্য ছিল- উত্তর কোরিয়ার মর্যাদা বৃদ্ধিঃ " উত্তর কোরিয়া কী করছে তা দেখার জন্য কাউকে খুব চতুর হতে হয় নাঃ যুদ্ধের মত পরিবেশ, সঙ্কটাবস্থা সৃষ্টির পর, কিম জং উন এক ধাপ পেছালেন আর সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন যে, কোন যুদ্ধ হচ্ছে না। ব্যাপারটি উত্তর কোরিয়ার ভাবমূর্তি নিয়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।[১৩৫]
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের রাজধানী বাসিন্দা ও পর্যটকরা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আতংকিত হয়ে পড়েন যখন ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮-তে আসন্ন ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকির ব্যাপারে একটি জরুরী সতর্কতা জারি করা হয়। ৪০ মিনিট পর আরেকটি বার্তা আসে যাতে বলা হয়, প্রথম সতর্কবার্তাটি "ভুল অ্যালার্ম" ছিল। ঘটনাটি তদন্তাধীন আছে।[১৩৬][১৩৭][১৩৮]
তিন দিন বাদে, জাপানের সম্প্রচার সংস্থা এনএইচকে-ও ভুলবশত উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ সতর্কবার্তা পাঠায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে ভুলটি সংশোধন করা হয়েছিল।[১৩৯]
স্টেট ইউনিয়নে তার দেয়া প্রথম ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে অনেক সময় নিয়ে কথা বলেন, উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, আমেরিকায় হামলার বিষয়টি সে সময় গুরুতরই ছিল, শুধু সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত ডক্টর ভিক্টর ছা-কেও অব্যাহতি দেয়ার ঘোষণা দেন।[১৪০] তার এই ভাষণ ২০০২ সালে স্টেট অফ ইউনিয়নে জর্জ ডব্লিউ বুশের দেয়া ভাষণের অনুরূপ ছিল।[১৪১]
অলিম্পিক গেমস চলমান থাকাবস্থায়, মধ্য ফেব্রুয়ারিতে, বেশ কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশের পর,[১৪২] ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার নিউক্লিয়ার কর্মসূচীর ওপর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রক্তক্ষয়ী হামলা চালানোর পরিকল্পনার কথা নাকচ করে দেয়। পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহকারী পররাষ্ট্র সচিব সুসান থর্নটন নিশ্চিত করেন, নিউক্লিয়ার অস্ত্র নির্মূলের ব্যাপারে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার ওপর " সর্বোচ্চ চাপ" প্রয়োগই তাদের প্রশাসনের নীতি রূপে বহাল আছে। থর্নটন অবশ্য এ কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন যে, সামরিক উপায়ে সমাধানের বিষয়টি এখনো আলোচনাধীন রয়েছে এবং পিয়ংইয়ং-কে "যে কোন উপায়ে হোক" তাদের নিউক্লিয়ার অস্ত্র ত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।[১৪৩][১৪৪][১৪৫]
২০১৭ সাল জুড়ে বলে আসা বৈরি কথাবার্তা ছেড়ে ৮ মার্চ ট্রাম্প বিস্ময়করভাবে ঘোষণা দেন, তিনি উত্তর কোরিয়ান নেতা কিম জং উনের সাথে আলোচনায় বসবেন এবং তাদের এ বৈঠক আসন্ন মে মাসে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রেস সচিব সারাহ হাকাবি স্যান্ডার্স জানান, "এই সময়ের মধ্যে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা এবং সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে।"[১৪৬]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.