২০০৮ বন্দর আব্বাস ভূমিকম্প
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
২০০৮ বন্দর-এ আব্বাস ভূমিকম্প ঘটে ১০ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সালে দক্ষিণ ইরানের হোর্মোজগন প্রদেশে, যেটি তেহরান থেকে ৮৫০ কিলোমিটার (৫২৮ মা) দক্ষিণে। এটির কেন্দ্রস্থল ছিল বন্দরনগরী বন্দর আব্বাস, যেখানে দুই বছর আগেও ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল আঘাত তীব্রতায় ৬.১ এবং ব্যাপকতার মাত্রায় ৬। ভূমিকম্পে ৭ জন মারা যায় এবং প্রায় ৪৭ জন আহত হয়। গুরুতর এই ভূমিকম্পে দক্ষিণ ইরানের ২০০টি গ্রাম বিধ্বস্ত হলেও বন্দরনগরী বন্দর আব্বাস প্রায় অক্ষত থাকে। ভূমিকম্পের সময় জনগণ আতঙ্কিত হয়ে পার্কে এবং খোলা জায়গায় আশ্রয় নেয়।
তারিখ | ১০ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ |
---|---|
মাত্রা | ৬.১ Mw |
ভূ-গভীরতা | ১৫ কিমি(৯.৩ মাইল) |
উপকেন্দ্রের অবস্থান | ২৬.৭৪৩° উত্তর ৫৫.৮২৮° পূর্ব |
দেশ/ আক্রান্ত অঞ্চল |
ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত |
হতাহতের পরিমাণ |
৭জন নিহত, ৪৫ জন আহত |
ইরানের ভূমিকম্পের ইতিহাস প্রায় ৮০০ সাল থেকে, এবং প্রায় ২৯টি ঘটনার দলিল পাওয়া গেছে[1] দেশটির প্রত্যেকটি অঞ্চল ছোট থেকে তীব্র ভূমিকম্পে কম্পিত।[1]
ভূমিকম্প ইরানের ভূত্বকের সঙ্গে জড়িত, যেটি ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি।[2] ইরানে ভূপৃষ্ঠের কয়েক চ্যুতি আছে এবং মোটামুটি ৯০% এলাকা ভূমিকম্প প্রবণ।[3] এই ভূমিকম্পটি ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৫ কিলোমিটার (৯ মা) গভীরে।[4]
ভূমিকম্পটির সময় বন্দর আব্বাসের সকল তেল কোম্পানি, বিশেষত অত্যন্ত উৎপাদনশীল এবং ব্যয়বহুল শোধনাগার হুমকির মুখে পড়ে।[5] বিগত ভূমিকম্পে, বিশেষত ২০০৬-এ ভূমিকম্পের পরে শহরের অধিকাংশ বাড়ি নতুন করে ভূমিকম্প সহনশীল করে তৈরি করতে হয়। ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানির সহ-সভাপতি হোজ্জাতল্লাহ ঘানিমিফার্দের মতে ইরানের অধিকাংশ তেল শোধনাগার ভূমিকম্প সহনশীল নয়।[4]
স্থানীয় সময় ৩ টায় ভূমিকম্প শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ১৭টি কম্পন অনুভূত হয়।[6] প্রধান কম্পনটি প্রায় ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল।[5] বিবিসির খবরে বলা হয়, ভূমিকম্পে মৃত্যু মূলত কাসেম দ্বীপেই সীমাবদ্ধ ছিল;[4] ৩০ জন আহত হয়।[7] কাসেম দ্বীপে ১৫ জন আহত হয় এবং বাড়ীগুলো ভূমিকম্প সহনশীল উপকরণ দিয়ে বানাতে হয়।[8] পুরা দক্ষিণ ইরানে অনুভূত এই ভূমিকম্পে হালকা থেকে মাঝারি ক্ষতি হয় এবং মার্কালি স্কেলে এর মাত্রা ইরানের আজমান এবং রাস আল কিমায়াহ শহরে ৬ (মধ্যপন্থী) এবং আবুধাবি, দুবাই এবং শারজায় এর মাত্রা ছিল ৩ (হালকা)। কাতারের দোহাতেও কম্পন অনুভূত হয়।[7]
প্রধান এলাকাগুলো ভূমিকম্পে টিকে থাকলেও অধিকাংশ গ্রাম পারেনি। কাসেম দ্বীপ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে এবং সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়। কাসেমের ১০০টি বাড়ির ৩০ থেকে ৫০ ভাগ ধ্বংস হয়।[9] ২০০টি গ্রাম ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়। [5] যেয়ানবি গ্রামের দেয়ালগুলি মাটিতে মিশে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।[10] ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মী পাঠানো হয়।[5]
বন্দর আব্বাসের বহু নাগরিক কাছাকাছি পার্কে এবং নিরাপদস্থানে সরে যায়, যাদের অনেকে ভয়ে চিৎকার করতে থাকে। কম্পন সম্পর্কে স্থানীয়দের বক্তব্য "ভূমিকম্পের আঘাত সর্পদংশনের মত ছিল"।[11] অন্যান্য অধিবাসীরা তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের হয়ে শহরের রাস্তায় দাঁড়ায়। দুবাই-এ জনগণকে বহুতল ভবন থেকে বের করে ভবন খালি করে দেয়া হয়, তাদের অনেকে শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং কর্মকর্তাদেরকে ভূমিকম্পের কথা জানান হয়।[11] একজন রেডক্রস কর্মকর্তা ভূমিকম্পটিকে দুর্বল বলে বর্ণনা করে বলেন, "ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি খুব বেশি হবে না"।[12]
২০০৪ সালের বিশ্ব ভূমিকম্প সমীক্ষা অনুযায়ী,[13] ইরান বিশেষভাবে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। উপরন্তু, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার অতিরিক্ত মৃত্যুর কারণ; ইরানে প্রতি ৩,০০০ জনে, ১ জন ভুমিকম্পজনিত কারণে মারা যায়। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রজার বিলহাম বলেন, "অধিকাংশ ইরানের পুনর্গঠন প্রয়োজন। ইরানের জনগণকে যদি বাছাই করতে দেয়া হয়, তেল বিক্রির টাকা যুদ্ধোপকরণ বা নিরাপদ বাড়ি কোন খাতে খরচ করতে দেয়া হবে, তাহলে আমার বিশ্বাস তারা নিরাপদ বাড়ি বানাবে। এজন্য ভূমিকম্পের ব্যাপারে শিক্ষা প্রয়োজন"[13] জাতিসংঘ ইরান সম্পর্কে মুল্যায়ন করে বলেছে, "বড় শহরগুলোর জন্য নির্মাণ ব্যবস্থাপনা থাকলেও, সাধারণভাবে এগুলো প্রতিপালিত হয় বলে কেউ মনে করে না... অন্তত ছোট শহর বা গ্রামে বাসিন্দারা, যারা সাম্প্রতিক বড় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। ঐসব এলাকায় ভূমিকম্পসহনশীল নির্মাণ খুবই বিরল এবং পর্যাপ্ত ভবন নিয়ম নীতি মানা হয় না।"[14]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.