২২ নভেম্বর ২০০৬ খ্রীস্টাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্তর্গত তোপসিয়ায় "ট্যানিক্স ইন্টারন্যাশনাল" নামের একটি চামড়া কারখানায় ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

দ্রুত তথ্য তারিখ, সময় ...
২০০৬ কলকাতা চামড়া কারখানা অগ্নিকাণ্ড
তারিখ২২ নভেম্বর ২০০৬
সময়২:৩০ IST
স্থানপশ্চিমবঙ্গ, ভারত
নিহত ১০
আহত ১৮
বন্ধ

অগ্নিকাণ্ডে ১০ জন লোক মৃত্যুবরণ করেন,যারা মূলত দরজা বন্ধ থাকার কারণে কারখানার ভিতরে আটকা পরেছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের সমালোচনার মুখে কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেন যে কারখানাটির অগ্নি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা খুবই নিম্নমানের ছিল। ঘটনা তদন্ত করার জন্য দুটি ভিন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দুটি তদন্তই এখনো চলমান অথবা তদন্তের ফলাফল জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।

পটভূমি

তদন্তকারীরা নিশ্চিত করে যে কারখানাটি অবৈধ চামড়ার ব্যাগ তৈরীর জন্য ব্যবহার করা হতো।[1] কারখানাটি ৪ তলা দালানের ৩য় তলায় ছিল,[2][3] যেটি একটি আবাসিক বাসাও ছিল।[4] তদন্তকারীরা নিশ্চিতভাবে আরো বলেন যে, দালানটির ১ম ও ২য় তলায়ও অবৈধ কারখানা ছিল।[3] অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কারখানাটি "টেনেক্স এক্সপোর্ট" দ্বারা পরিচালিত হতো।[3] অগ্নিকাণ্ডে যারা আহত বা নিহত হয়েছেন তারা সবাই রাত্রে কারখানায় ঘুমাতো যেটি মূলত ভারতে অস্বাভাবিক বলে গন্য করা হয় না। কারখানাটির মাত্র একটি জরুরি নির্গমণ ছিল এবং অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানাটিতে ৪০ জন শ্রমিক ছিল।[5] কারখানার মালিক দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে রেখেছিল যাতে করে শ্রমিকরা চামড়াজাত পণ্য নিয়ে পালিয়ে না যেতে পারে।[6]

দালানটি বৃহ্ত্তর কলকাতার দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্তর্গত তোপসিয়ায় অবস্থিত।

ঘটনা

স্থানীয় সময় ২ঃ৩০মিনিটে,[2] যখন কারখানার কর্মচারীরা ঘুমিয়েছিল,অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যখন তারা অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে জ্ঞাত হয় তখন তারা দেখে যে কারখানার দরজাটি বাহির থেকে বন্ধ। পাচঁজন দমকলকর্মীকে ঘটনা স্থলে পাঠানো হলেও[2] স্থানীয় লোকজন তাদের পৌঁছানোর পূর্বেই বন্ধ দরজা দুটি ভেংগে ফেলে এবং জীবিত শ্রমিকদের উদ্ধার করেন।[3] উদ্ধারকারীদের একজন যখন চাবি দিয়ে দরজা খুলতে যান তখন তিনি ঘাবড়ে যেয়ে চাবিগুলো ফেলে দান যার ফলস্বরুপ উদ্ধার অভিযানটি বিলম্বিত হয়।[3] উদ্ধারকারীরা কারখানার ভিতরে পৌছানোর পূর্বেই ১০ জন কর্মচারী মৃত্যুবরণ করেন[7] এবং আরো ১৮ জন আহত হন। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকের শরীর ৭০ ভাগের বেশি পুড়ে গিয়েছিল। তাদেরকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়ে থাকলেও অপর্যাপ্ত বেডের কারণে তাদেরকে হাসপাতাল ত্যাগ করতে হয়।[8] তাছাড়া হাসপাতালটির কোনো বার্ন ইউনিট ছিল না, তাদের শুধুমাত্র মলম ও স্যালাইন ছিল। রোগীদের দ্রুত অন্য একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।[5] স্থানীয় এম.এল.এ. জাভেদ খান মৃতের স্ংখ্যা ১২ বলে দাবি করেন কিন্তু এর কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নি।[2][9] এলাকাটিতে শান্তি বজায় রাখার জন্য র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স মোতায়ন করা হয়েছিল।[2][8]

অবৈধ কারখানাটির আশেপাশের বাসিন্দারা বলেন যে,দমকল বাহিনীদের দ্রুত কাজ করার ফলে মৃত্যুর স্ংখ্যা কম হয়েছে। তারা দাবি করেন যে,ফায়ার ব্রিগেডকে খবর দেওয়ার ১ ঘণ্টা পরেও তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল পাঠাতে ব্যর্থ হন,তা ছাড়া তারা আরো দাবি করেন যে,শুধুমাত্র পুলিশ এসে ফায়ার ব্রিগেডকে অনুরোধ করার পরেই তারা সাহায্য পাঠান।[2] তাছাড়া ঘটনা স্থলে অপর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স ছিল না বলেও তারা দাবি করেন।[9] স্থানীয় মেয়র এই ঘটনার সত্যতা পরের দিন সকালে স্বীকার করেন।[9] স্থানীয় জনগণ আরো অভিযোগ করেন যে ক্ষতিগ্রস্থদের কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া উচিত হয় নি বরং তাদেরকে বার্ন ইউনিট রয়েছে এমন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।[10]

ঘটনা তদন্ত

আগুন লাগার কারণ ও বাড়িটি বাহির থেকে বন্ধ থাকার কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত শুরু করা হয়েছিল।[10] বাড়িটি কলকাতা পৌর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং পরবর্তীকালে বাড়িটি ভেংগে ফেলারও পরিকল্পনা করা হয় যদিও বাড়িটি ২০০৭ সাল পর্ন্তত অক্ষত অবস্থায় ছিল।[5] যদিও আগুন লাগার প্রকৃত কারণ উৎঘাটন করা সম্ভব হয়নি,অতিরিক্ত দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন লেগেছিল বলে তারা মন্তব্য করেন।[2] কারখানাটিতে ২ বছর আগেও একবার আগুন লেগেছিল বলে তারা জানান,যদিও অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।[6]

ঐ এলাকার প্রায় সবগুলো বাড়ি ও কারখানা অবৈধ ও অননুমোদিত[5] এবং বাড়িগুলো বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরী করা হয়েছিল।[6] বাড়ি ও কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে মেয়র বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য মন্তব্য করেন। তাছাড়া বাড়ির মালিককে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ পরিদর্শক মন্তব্য করেন।[8] তদন্তে প্রকাশ করা হয় যে,কলকাতা পৌর কর্তৃপক্ষ বাড়ির মালিককে যথাক্রমে ১৯৮৮,১৯৮৯,১৯৯২ সালে মোট ৩ বার নোটিশ প্রদান করেছিলেন।[5] বাড়ির মালিক খুরশিদ আলমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাড়ি নির্মানের কারণে একটি মামলা করা হয়েছিল। টেনেক্স এক্সপোর্টের মালিক মোঃ ছগির আহমেদ ও মোঃ আসিফ-এর বিরুদ্ধেও একই মামলা করা হয়েছিল ।[3]

ফলাফল

দূর্ঘটনার পরের দিন তোপসিয়া এলাকার চামড়া কারখানার শ্রমিকগণ মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ,উন্নত কার্য পরিবেশ দাবি করে সমাবেশ করেন।[11] কলকাতার মেয়র ঘটনাটি আলোচনা করার জন্য সর্বদলের সমন্বয়ে একটি মিটিং আয়োজন করেন এবং অবৈধ নির্মাণ ধ্বংস করার জন্য কাজ শুরু করবেন বলে ঘোষণা দেন।[11] বিল্ডিংটি অবৈধ ও অনিরাপদ ঘোষণা করা সত্ত্বেও একমাস পর পুলিশ বিল্ডিংটি পরিদর্শন করে খুজে পান যে আরেকটি অবৈধ চামড়া কারখানা সেখানে কার্যক্রম শুরু করেছে।[12] পৌর কর্তৃপক্ষ ঐ বিল্ডিংয়ে যেকোনো ধরনের কাজকর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি নোটিশ জারি করেন।[12] যদিও এলাকাবাসী যুক্তি দেখান যে এই অবৈধ কাজকর্ম এম.এল.এ. জাভেদ খানের সাহায্যে হতো কিন্তু জাভেদ খান পুলিশকে এটির জন্য দায়ী করেন।[12]

২০০৮ সালের মার্চ ও জুন মাসে ঐ এলাকায় আরো দুইটি অগ্নিকাণ্ড স্ংঘটিত হয়। দুইটি ঘটনায় সর্বমোট ৯ জন লোক আহত হয়।[13] যদিও ২০০৬ সালের অগ্নিকাণ্ডের পর চামড়া কারখানা শ্রমিকদের জন্য বিমা ও অগ্নিনিরাপত্তা লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়,তবুও এইগুলো সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কি না তা কর্তৃপক্ষ যাচাই করেনি।[13] স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন যে ২০০৬ সালে স্ংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের কারখানার মালিক এখন ঐ এলাকার ভিন্ন একটি ঠিকানা থেকে কারখানা পরিচালনা করেন। [13] ফায়ার ব্রিগেডের কর্মকর্তাদের তথ্যানুযায়ী তিলজলাট্যাংরাসহ তোপসিয়া এলাকাটি খুবই অগ্নিপ্রবণ একটি এলাকা,এবং প্রত্যেক সপ্তাহে প্রায় ৩ থেকে ৪ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকে যা স্থানীয় বাসিন্দারা মিডিয়াতে জানানো থেকে বিরত থাকেন,কেননা এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটে না।[13]

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.