১৯৩৫-এর কোয়েটা ভূমিকম্প
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
১৯৩৫ সালের কোয়েটা ভূমিকম্প ৩১ মে রাত ২:৩৩ থেকে ৩:৪০-এর ভিতরে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান পাকিস্তান) বেলুচিস্তান এলাকায় সংঘঠিত হয়। ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭.৭ মেগাওয়াট[3] এবং এতে প্রায় ৩০,০০০ থেকে ৬০,০০০ লোকের প্রানহানি ঘটে।[2] ২০০৫ সালের কাশ্মীর ভূমিকম্পের পূর্ব পর্যন্ত এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ছিল।[3] ভূমিকম্পটি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের আলী জান, বেলুচিস্তানসহ দক্ষিণ-পশ্চিম ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[3]
ইউটিসি সময় | ৩১-০৫-১৯৩৫ ২১:৩২:৫৭ Needs 'yyyy-mm-dd hh:mm' |
---|---|
আইএসসি ইভেন্ট | ৯০৪৩১১ |
ইউএসজিএস-এএনএসএস | কমক্যাট |
স্থানীয় তারিখ | ৩১ মে ১৯৩৫ |
স্থানীয় সময় | ২:৩৩ ও ৩:৪০ এর মধ্যে (PKT) |
মাত্রা | ৭.৭ মেগাওয়াট |
গভীরতা | ১৫ কিলোমিটার (৯.৩ মা) |
ভূকম্পন বিন্দু | ২৯.৫° উত্তর ৬৬.৮° পূর্ব[1] |
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা | বেলুচিস্তান, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান পাকিস্তান) |
সর্বোচ্চ তীব্রতা | এক্স (চরম)[1] |
হতাহত | ৩০,০০০–৬০,০০০[2] |
চমন ও চিল্টান ফল্টের উপরে কোয়েটা এবং পার্শ্ববর্তী শহরগুলো পাকিস্তানের সক্রিয় ভূমিকম্প অঞ্চলে অবস্থিত। চমন ফল্টের কারণে[4] ১৯৩৫ সালের ৩১ মে ভোরবেলা ভূমিকম্পের সূত্রপাত হয় সকাল ২:৩৩[3] থেকে সকাল ৩:৪০ এর মধ্যে,[5] যা কোন কোন জায়গায় একটানা আফটারশক দিয়ে তিন মিনিট পর্যন্ত অনুভূত হয়। যদিও ভূমিকম্পের মাত্রাটি নিখুঁতভাবে পরিমাপ করার মতো উপযুক্ত কোনও সরঞ্জাম ছিল না, বর্তমানে অনুমান করা হয় তা ছিল ন্যূনতম ৭.৭ মেগাওয়াট এবং ৮.১ মেগাওয়াটের ধারণার মতো পূর্ববর্তী অনুমান এখন অতিমাত্রা বলে বিবেচনা করা হয়। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু ব্রিটিশ ভারতের কোয়েটা থেকে প্রায় ১৫৩ কিলোমিটার দূরে, বেলুচিস্তানের আলী জান শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল। ভূমিকম্পের ফলে শহরটি সহ কোয়েটার নিকটবর্তী প্রায় সমস্ত শহরে ধ্বংসস্তূপ সৃষ্টি হয়েছিল এবং ভারতের আগ্রা পর্যন্ত এই কম্পন অনুভূত হয়েছিল। বৃহত্তম আফটারশকটি পরে ১৯৩৫ সালের ২ জুনে অনুভূত হয় যা ছিল ৫.৮ মেগাওয়াট।[3] আফটারশকটি অবশ্য কোয়েটায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি করেনি, তবে মাস্তুং, মাগুচর ও কালাত শহর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।[3]
হতাহতের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছিল কোয়েটা শহরে। সরকারের জারি করা প্রাথমিক খসড়া অনুসারে ধ্বংসস্তুপের নিচে প্রায় ২০,০০০ লোক নিহত হয়েছিল, ১০,০০০ বেঁচে গিয়েছিল এবং ৪,০০০ আহত হয়েছিল। শহরটি খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার পরামর্শের সঙ্গে সঙ্গে সামরিক প্রহরার নিয়ন্ত্রণে সীলমোহর করার জন্যও প্রস্তুত ছিল।[5] কোয়েটা এবং কলাতের মধ্যবর্তী সমস্ত গ্রাম ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ব্রিটিশরা আশপাশের শহরগুলোতে হতাহতের সংখ্যা বেশি হওয়ার আশঙ্কা করেছিল। অন্যান্য শহরের ক্ষয়ক্ষতি কোয়েটায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তার কাছাকাছি যায়নি বলে অনুমান করা হয়।
ভূমিকম্পের পরপরই ব্রুস স্ট্রিট ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং নির্জন হয়ে পড়েছিল। কাবারি মার্কেট ও ফলের বাজারের সম্পূর্ণ ধ্বংসের পাশাপাশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলোও বন্ধ হয়ে যায়। অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। রেললাইন ধ্বংস করা হয়েছিল এবং সরকারি স্থাপনা বাদে সমস্ত বাড়িঘর মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেনানিবাসের এক চতুর্থাংশ অঞ্চল ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল তবে সামরিক সরঞ্জাম এবং রয়্যাল এয়ার ফোর্সের গ্যারিসন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জানা গেছে যে প্রাথমিক ভূমিকম্প ঘটার পরে ২৭টি মেশিনের মধ্যে কেবল ৬টি মেশিন কাজ করছিল।[5] ১৯৩৫ সালের নভেম্বর মাসে কোয়েটায় অবস্থিত কুইনের রয়্যাল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়নের একটি রেজিমেন্টাল জার্নাল জানিয়েছিল,
ব্যাটালিয়ন যখন ভূমিকম্পের পর শহরটিকে প্রথম দেখেছিল তখন নগরীর অবস্থা বর্ণনা করার মত ছিল না। নগরী মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল। প্রচণ্ড রোদে সর্বত্র মরদেহ পড়ে ছিল এবং কোয়েটার প্রতিটি যানবাহন আহতদের পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল… সংস্থাগুলোকে মৃত ও আহতদের সাফ করার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। ব্যাটালিয়নের সদর দফতর রেসিডেন্সিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পঞ্চাশজন লোকের একটি দল তৈরী করার আহ্বান করা হয়েছিল এবং তার চেয়ে কম জনবল নিয়েই আমরা আমাদের কাজ শুরু করেছিলাম, পরে এই জনবল বেড়ে একশ হয়েছিল যারা কবর খননের কাজে নিয়োজিত ছিল।[5]
ঘটনার পরবর্তী দিনগুলোতে নগরীতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। রাস্তায় মানুষ মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল, অনেকে ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে ছিল, আবার কেউ কেউ তখনও জীবিত ছিল। ব্রিটিশ রেজিমেন্টগুলো উদ্ধারকার্যে শহরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিল। প্রথম রানি এই উদ্ধারকার্যকে অসম্ভব কাজ বলে মন্তব্য করেছিলেন।[5] উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তা করার সময়, ২৪তম মাউন্টেন ব্রিগেডের ল্যান্স-সার্জেন্ট আলফ্রেড লাংগেলি সর্বোচ্চ বীরত্বের জন্য এম্পায়ার গ্যালান্ট্রি পদক অর্জন করেছিলেন।[6]
সে সময়কার আবহাওয়াও খুব একটা অনুকূল ছিল না এবং প্রচণ্ড গ্রীষ্মের উত্তাপ সবকিছুকে আরো খারাপ করে তুলেছিল। ইউরোপিয় এবং অ্যাংলো-ভারতীয়দের দেহগুলো উদ্ধার করে একটি ব্রিটিশ সমাধিতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল যেখানে সৈন্যরা খাদ খনন করেছিল। সৈন্যরা দ্রুত সমাধিকার্য শেষ করার জন্য পাদ্রি তাড়াহুড়োয় সৎকারকার্য সম্পাদন করেছিলেন।[5] অন্যদের একইভাবে অপসারণ করা হয়েছিল এবং তাদের পোড়ানোর জন্য নিকটবর্তী শ্মশানঘাটে নেওয়া হয়েছিল।
জীবিতদের খোঁজে সৈন্যরা ধ্বংসস্তুপ খনন করে। সরকার গৃহহীন জীবিতদের জন্য একটি উঁচু তাঁবু তৈরি করেছিল। উদ্ধারকারীদেরকে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য কোয়েটা প্রশাসন নির্দেশনা প্রেরণ করেছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ওষুধযুক্ত প্যাডের একটি নতুন সরবরাহ আনা হয়েছিল। সমাহিত মৃতদেহ থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে সৈন্যরা তাদের মুখের উপরে প্যাডগুলো পরিধান করে মৃতদেহ খোঁড়াখুঁড়ো করেছিল।[5]
বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে এটিকে ২৩তম সর্বোচ্চ মারাত্মক ভূমিকম্প হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ২০০৫-এর কাশ্মীর ভূমিকম্পের পরে, ইসলামাবাদে আবহাওয়া অধিদফতরের মহাপরিচালক, চৌধুরী কামারুজ্জামান এই ভূমিকম্পকে দক্ষিণ এশিয়ার চারটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের মধ্যে একটি বলে উল্লেখ করেন; অন্যগুলো হল ২০০৫-এর কাশ্মীর ভূমিকম্প, ১৯৪৫ সালে পানসি, ১৯৪৫-এর বেলুচিস্তান ভূমিকম্প এবং ১৯০৫-এর কংরা ভূমিকম্প।
৮ বছর বয়সী একটি ছেলে, বর্তমানে ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক যশ পাল ভবনের নিচে আটকা পড়েছিলেন এবং তার ভাইবোনও তার সাথে ছিল এবং তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল।[7]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.