হেনরিক রুডলফ হার্জ (জার্মান: Heinrich Rudolf Hertz; জার্মান: [hɛʁʦ]); ২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৭ – ১ জানুয়ারি ১৮৯৪) একজন জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী যিনি প্রথম প্রত্যয়জনকভাবে তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন যা জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের আলোর তড়িৎ-চুম্বকীয়তত্ত্ব দ্বারা অনুমান করা হয়। ১৮৮৮ সালে তিনি সর্বপ্রথম একটি যন্ত্রের সাহায্যে অত্যন্ত উচ্চ কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গ তৈরি ও শনাক্ত করেন এবং এর সাহায্যে তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। তার নামেই কম্পাঙ্কের আন্তর্জাতিক এককের নামকরণ করা হয়েছে হার্জ[1]

দ্রুত তথ্য হেনরিক রুডলফ হার্জHeinrich Rudolf Hertz, জন্ম ...
হেনরিক রুডলফ হার্জ
Heinrich Rudolf Hertz
Thumb
হেনরিক রুডলফ হার্জ
জন্ম(১৮৫৭-০২-২২)২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৭
হামবুর্গ, জার্মানি
মৃত্যু১ জানুয়ারি ১৮৯৪(1894-01-01) (বয়স ৩৬)
বন (জার্মানির শহর), জার্মান সাম্রাজ্য
জাতীয়তাজার্মান
মাতৃশিক্ষায়তনমিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়
বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণতড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ
আলোক তড়িৎ ক্রিয়া
পুরস্কাররামফোর্ড পদক (১৮৯০)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রপদার্থবিজ্ঞান
ইলেকট্রনিক প্রকৌশল
প্রতিষ্ঠানসমূহকিল বিশ্ববিদ্যালয়
কার্ল্‌সরুয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
বন বিশ্ববিদ্যালয়
ডক্টরাল উপদেষ্টাহের্মান ফন হেল্মহোল্‌ৎস
ডক্টরেট শিক্ষার্থীVilhelm Bjerknes
স্বাক্ষর
Thumb
বন্ধ

জীবনী

(===মৃত্যু===)

গবেষণা

আবহাওয়াবিজ্ঞান

হের্তসের সবসময় আবহাওয়াবিজ্ঞানের উপর গভীর আগ্রহ ছিল। ধারণা করা হয় ভিলহেল্ম ফন বেজল্ড (১৮৭৮ সালে মিউনিখ পলিটেকনিক-এ হার্টজের প্রফেসর ছিলেন) -এর সাথে যোগাযোগের পর থেকেই এই আগ্রহের সূত্রপাত ৷ কিন্তু হের্ত্স‌ কিছু প্রাথমিক নিবন্ধ বাদে এই ক্ষেত্রে তেমন কোনো অবদান রাখেননি। নিবন্ধগুলি তিনি বার্লিনে হেল্মহোল্ত্‌সের সহকারী হিসেবে থাকাকালীন লিখেছিলেন, যেগুলোর মধ্যে ছিল তরলের বাষ্পীভবনের উপর গবেষণা, এক নতুন ধরনের আর্দ্রতামাপক যন্ত্র এবং একই রুদ্ধতাপীয় পরিবর্তনে আর্দ্র বাতাসের বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের রৈখিক উপায় ৷ [2]

সংস্পর্শ বলবিজ্ঞান

<--তড়িৎচুম্বক -এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য হার্জ সবার কাছে পরিচিত (নিচে দেখুন)-->

১৯৮৬-১৯৮৯ সালের মধ্যে হের্ত্স‌ দুইটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন যা পরে সংস্পর্শ বলবিদ্যা নামে পরিচিতি লাভ করে। বেশিরভাগ প্রতিবেদন যেগুলো সংস্পর্শের মৌলিক ধর্ম নিয়ে আলোচিত ছিল,তাদের মধ্যে হার্টজের ঐ দুইটি প্রতিবেদন উদ্বাহরণস্বরুপ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারনার উৎস হিসেবে পরিচিত ছিল। যোসেফ ভেলেন্তিন বোসিনেস্ক হার্টজের কাজের উপর কিছু জটিল গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেন, যাই হোক,সংস্পর্শ বলবিদ্যার উপর এইসব অধিষ্ঠিত কাজের বিপুল গুরুত্ব ছিল। তার কাজের মূলত সারসংক্ষেপ হলো,দুইটি এক্সি-সিমেট্রিক বস্তু একে অপরের সংস্পর্শে ভারবহনকৃত অবস্থায় কিরূপ আচরণ করে তা বের করা। এইসব কাজের ফলাফল তিনি চিরায়ত স্থিতিস্থাপক এবং সন্ততি বলবিদ্যা তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে সংগ্রহ করেন।

তড়িৎচৌম্বক গবেষণা

Thumb
1887 experimental setup of Hertz's apparatus

১৮৭৯ সালে হার্টজের গবেষণার সময় হেল্মহোল্টজ প্রস্তাব করেছিলেন যে, হার্টজের গবেষণামূলক প্রবন্ধ ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্ব পরীক্ষা করতে পারে। এটা ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত যা তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে অনুমান করেছিলো। এটি ভবিষ্যতবাণী করেছিলো যে, তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ আলোর দ্রুতিতে চলে এবং আলো নিজেই ঠিক একটি তরঙ্গের মতো। এছাড়াও হেল্মহোল্টজ সে বছর প্রুসিয়ান একাডেমী অব সাইন্স একটি সমস্যার উপর 'বার্লিন পুরস্কার' প্রস্তাব করেছিলেন। যে পরীক্ষামূলকভাবে অপরিবাহী/ অন্তরক(insulator) এর সমবর্তন(polarization) এবং অসমবর্তন এর মধ্যে তড়িৎচুম্বকীয় প্রভাব প্রমাণ করতে পারবে এই পুরস্কার তার জন্য। ম্যাক্সওয়েল এর তত্ত্ব থেকে এই প্রভাব সম্পর্কে কিছু একটা আভাস পাওয়া গিয়েছিলো। [3][4] হেল্মহোল্টজ প্রায় নিশ্চিত ছিলেন যে, এটা জেতার জন্যে হার্টজই ছিলেন সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী। [4] হার্টজের ধারণা ছিলো এটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণের জন্য যন্ত্রপাতি তৈরি বেশ কষ্টকর। অন্য কোন উপায় না পেয়ে তিনি এর পরিবর্তে তড়িৎচুম্বকীয় আবেশন এর উপর কাজ করেছিলেন। কিয়েল এ তার সময়ে প্রচলিত 'একশান এট আ ডিসটেন্স' তত্ত্বের তুলনায় তাদের অধিক বৈধতা রয়েছে দেখাতে হার্টজ ম্যাক্সওয়েল এর সূত্রের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছিলেন। [5]

কার্লশ্রুহে অধ্যাপনা শুরু করার পর ১৮৮৬ সালের এক হেমন্তে যখন হার্জ এক জোড়া রেইস স্পাইরাল নিয়ে পরীক্ষা করছিলেন তখন তিনি দেখতে পেলেন এই কয়েলগুলোর মধ্যকার একটি লেইডেন জার আধানমুক্ত করার প্রক্রিয়া অন্য একটি কয়েলে স্ফূলিঙ্গের সৃষ্টি করে।ম্যাক্সওয়েল এর তত্ত্ব প্রমাণ করার সমস্যা সমাধানের জন্য হার্জ একটি নতুন যন্ত্র তৈরীর উপায় বের করেছিলেন যা তাকে ১৮৭৯ সালের 'বার্লিন পুরস্কার' এনে দিয়েছিল (যদিও আসল পুরস্কারটি গ্রহণ না করার জন্য ১৮৮২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছিল)। [6][7] তিনি একটি রামকর্ফ কয়েল চালিত স্ফূলিঙ্গ ফাঁক এবং এক জোড়া এক মিটার লম্বা তারকে প্রস্তুতকারী হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। বর্তনীর অণুরণন সমন্বয়ের জন্য ধারক গোলক ব্যবহার করা হয়েছিল।তার গ্রাহকযন্ত্রটি ছিল একটি সরল অর্ধ-তরঙ্গ ডায়াপোল এন্টেনা যা ভূমির সাথে তড়িৎসংযোগ ছাড়াই কাজ করত, এটিই ছিল বর্তমান ডাইপোল এন্টেনার পূর্বরূপ।এই যন্ত্রটি অতি উচ্চ কম্পাংক সীমায় বেতার তরঙ্গ সৃষ্টি ও ধারণ করতে সমর্থ হয়েছিল।

হার্টজ 1886 থেকে 1889 সালের মধ্যে কিছু পরীক্ষণ সম্পাদন করেছিলেন। পরীক্ষণগুলো প্রমাণ করেছিল, তিনি যা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তা ছিল মূলত ম্যাক্সওয়েল এর পূর্ব অনুমিত তড়িতচৌম্বক তরঙ্গের ফলাফল। ১৮৮৭ সালের নভেম্বরে শুরু করে তিনি তার রিসার্চ পেপার "On Electro Magnetic Effect Produced by Electrical Disturbances in Insulators" সহ পর্যায়ক্রমে আরো পেপার বার্লিনের একাডেমির হেল্মহোল্টজকে পাঠিয়েছিলেন। ১৮৮৮ এর পেপারগুলো দেখিয়েছিল যে মুক্ত স্থানে অনুপ্রস্থ তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ একটি নিদিষ্ট দূরত্ব সসীম বেগে যায়।[7][8] হার্টজ যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ছিলেন সেখানে তারগুলো থেকে তড়িৎ ও চুম্বক ক্ষেত্র অনুপ্রস্থ তরঙ্গ আকারে বের হয়।তিনি জিংক প্রতিফলক প্লেট থেকে ১২ মিটার দূরে দোলক স্থাপন করেছিলেন,যাতে তিনি স্থির তরঙ্গ পান।তরঙ্গগুলো ছিল দৈর্ঘে ৪মিটার।তিনি ম্যাক্সওয়েলের তরঙ্গ পরিমাপ করেছিলেন এবং দেখালেন তরঙ্গগুলোর বেগ আলোর বেগের সমান।তিনি ঐ তরঙ্গগুলোর তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতা,পোলারিটি এবং প্রতিফলন পরিমাপ করেছিলেন।এই পরীক্ষণগুলো এটি প্রতিষ্ঠিত করে ছিল, আলো এবং এই তরঙ্গগুলো ছিল তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ যা ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণগুলো মেনে চলে।তিনি "hertzian cone" নামের একটি তরঙ্গমুখের কথা বলেছিলেন যেটি বিভিন্ন মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়।

নাৎসি বাহিনীর অত্যাচার

হেনরিক হার্টজ সারা জীবন এক জন লুথেরিয়ান ছিলেন এবং সে কখনই নিজেকে ইহুদি ধর্মালম্বীদের এক জন বলে মনে করেননি৷ কারণ ১৮৩৪ সালে তার বাবার পরিবারের সবাই তাদের ধর্ম পরিবর্তন করে লুথেরানিজম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন [9] যখন তার বাবার বয়স সাত বছর ছিল৷ [10]

তা সত্ত্বেও হার্টজের মৃত্যুর অনেকদিন পর যখন নাৎসি শাসনতন্ত্র ক্ষমতায় আসে তখন তারা তার ছবি হ্যামবার্গ সিটি হলের (রাথাউস) বিখ্যাত সম্মানজনক স্থান থেকে সরিয়ে নেন৷ এর মূল কারণ ছিল তার আংশিক ইহুদী বংশানুক্রম৷ ( এর পর তার ছবি জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য রেখে দেওয়া হয়[11]) ১৯৩০ সালে হার্টজের বিধবা স্ত্রী এবং তার কন্যারা জার্মানি ছেড়ে ইংল্যান্ড চলে যান।

পদক ও সম্মাননা

Thumb
হেনরিক হার্টজ

হেনরিক হার্টজের ভাগ্নে গুস্তাভ লুডভিগ হার্টজ ছিলেন একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, এবং গুস্তাভের ছেলে কার্ল হেলমুট হার্টজ চিকিৎসা বিজ্ঞানের আল্ট্রাসনোগ্রাফি আবিষ্কার করেছিলেন।

১৯৩০ সালে আই ইসি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সম্মানে ক্ম্পাংকের এস আই একক হার্জ, প্রতি সেকেন্ডে একটি ঘটনার সংখ্যার পুনরাবৃত্তির অভিব্যক্তি। ১৯৬০ সাল সি জি পি এম কর্তৃক সরকারি ভাবে আগের নামের জায়্গায় সাইকেল পার সেকেন্ড নামে প্রতিস্থাপিত হয়।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.